আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল ইজ ওয়েল- ইন্দ্রের কাহিনি

আমার বলার কিছু ছিলনা,চেয়েচেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে,----ঠিকানা না রেখে ভালই করেছো বন্ধু.

"কাহাঁ সে আয়া থা বো -- দোস্ত্ হামারা থা বো"--- এই গল্পের কোনো চরিত্রই কাল্পনিক নয়। জানুয়ারির ২১ তারিখ হঠাৎ কি মনে করে অরকুটের পেজ টা খুলে বসেছিলাম। মাঝেমাঝে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের জন্য বেশ ভাল পথ। আচমকাই একটা ফ্রেন্ডশিপ রিকোয়েস্টে এসে ব্রেক কষতে বাধ্য হলাম। একটি ছেলে ফ্রেন্ডশিপ রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।

উস্কোখুস্কো চুল,চাপদাড়ি, চেহারায় মনে হোতেই পারে বয়স চল্লিশ। প্রথমেই ভাবলাম "নো "অপশনে ক্লিক করে দিই। কিন্তু ছেলেটি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। এমন একটা সোশ্যাল ওয়েবসাইট যেটা কিনা দিবারাত্র কয়েকলক্ষ লোক ঘেঁটে বেড়াচ্ছে, সেখানে এই ধরনের ছবি লাগানোর সাহস যার আছে, তাকে অগ্রাহ্য করার মত মনের জোর কোথায় পাবো আমি?অতঃ কিম্‌ ? বন্ধুত্ব স্বীকার করে নেওয়াই বুদ্ধিমতির কাজ। দুদিন স্ক্র্যাপে এবং চ্যাটে কথা হলো,ছেলেটি আমায় জানালো সে একটি লোক্যাল ইংরেজি দৈনিকে "ক্রাইম" নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার এছাড়া-ও একটি ম্যাগাজীনে লেখে।

তবে বয়েসটা একেবারেই কম। শহরের স্বনামধন্য একটি কলেজে ইংলিশে সাম্মানিক স্নাতক স্তরের লেখাপড়াও চালাচ্ছে। এই শহরে ভাড়া থাকে। মূলতঃ দক্ষিণ ত্রিপুরায় বাড়ি তার। পরের রবিবার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সাথে দেখা করলাম।

সেদিনই তাকে নিয়ে এলাম আমার বাড়িতে। শুরু হল আমার বাড়িতে ইন্দ্রের নিত্যদিনের যাওয়া আসা। কথায় কথায় জানতে পারলাম ও আমার বাড়ির খুব কাছেই ভাড়া থাকে , এবং বাড়িতে রান্না-বান্না, তেল-জল-সাবানের কোনো পাটই নেই। আরো জানতে পারলাম ওর পরিবার বিষয়েও। সে যে শুধুমাত্র ভাষা-সাহিত্যে সাবলীল ও দক্ষ ছিল তাই নয়,বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের গলা অসাধারণ নকল করতে পারত।

তার তবলার হাত এবং গানের গলাও ছিল অসাধারণ। এমনকি তার নিজের ভাড়া বাড়িতে রান্না-বান্নার কোনো পাট না থাকলেও, যে কোনো রান্নায় সে ছিল রেসিপিতে সিদ্ধহস্ত। মার্কস-লেনিন-স্তালিনের মতবাদ তার ছিল কন্ঠস্থ। এমনকি স্কুলে সে ছিল ছাত্রনেতা। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সে বামপন্থী নেতাদের বর্তমান আদর্শ ও কার্যলাপ কে রীতিমতো ঘৃণার চোখে দেখতো , তীব্র ভাবে এদের বিরোধীতা করতেও কুণ্ঠা বোধ করতো না।

সে ছিলো নৈরাজ্যবাদে বিশ্বাসী। আধুনিক তথাকথিত সভ্য সমাজের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নীতি সে মানতোনা। কালো রংয়ের প্রতি তার ছিল প্রবল আসক্তি। অ্যানর্কিজমের রং তো কালই হয় চিরকাল। ধীরে ধীরে তার চোখ দিয়ে আমি পৃথিবীটাকে নতুনভাবে দেখতে শুরু করলাম।

তার মুখের প্রতিটি কথা আমার কাছে হয়ে উঠলো বেদবাক্য। বয়সে সে ছিল আমার ৭ বছরের ছোটো। মাত্র মাস দেড়েকের মধ্যেই সে হয়ে উঠলো আমার বাবা-মেয়ে -র সংসারের আরেকজন। তার মধ্যে আরেকখানা অসামান্য গুণ যা আমাকে মুগ্ধ করেছিল, সেটা ছিল- যদিও সে সমাজের ধরাবাঁধা নিয়ম কিছুই মানতনা,তবু-- বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি তার ছিলো অসামান্য শ্রদ্ধা, সমবয়সীদের জন্য অকুণ্ঠ সাহায্যের আশ্বাস এবং ছোটোদের প্রতি বুকভরা ভালোবাসা। সে তার বক্তব্যের সপক্ষে যে ধরনের যুক্তি উপস্থাপিত করতো,তা খণ্ডাবার সাহস স্বয়ং ভগবান-ও করতেন বলে মনে হতোনা।

অসাধারণ মেধাবী ইন্দ্র যা একবার পড়তো,প্রতিটি শব্দ তার মগজে ছাপা হয়ে যেতো। প্রথাসিদ্ধ কোনো কোর্স না করেও সাংবাদিকতা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি,কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট,দেশবিদেশের যে কোনো বিষয়ে তাবৎ পণ্ডিতদের অনায়াস দক্ষতায় ও যৌক্তিকতায় টেক্কা দিতো সে; দিনে দিনে ইন্দ্র হয়ে উঠলো আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙগ। তার জাদুকাঠির ছোঁওয়ায় আমার সমাজ সংস্কারের সব বেড়াজাল ভেঙে গেল আমার। আমি হয়ে উঠলাম ইন্দ্রের অনুরক্তা- অনুগামীনী। হঠাৎ-ই একদিন সে আমাকে তার সুপ্ত আকাংখা দৃপ্ত কণ্ঠে জানালো- তাকে নাকি একজন বান্ধবী বা প্রেমিকা খুঁজে দিতে হবে.... কেমন হবে সেই মেয়ে???(ক্রমশঃ)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।