আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি এবং নি:সঙ্গতা

আমি একজন সাধারণ মানুষ

বেরিয়ে ছিলাম বাসার সামনের খেলা মাঠটায় একটু হাটব। কিন্তু কে যেন পা দু’টোকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে সে দিকে না নিয়ে পশ্চিমের খোলা প্রান্তরে নিয়ে গিয়েছিল। জায়গাটা একটা বিরান ভূমির মত। দিনের বেলাতেই লোকজন তেমন একটা যেতে চায়না। কোন ফসল ও করেনা কেউ।

খালি পড়ে থাকে সারা বছর। এলাকার লোকজনের খাবারের অভাব নেই তো! প্রথম যখন এখানে আসি মাঝে মাঝে কয়েকজন মিলে মাঠে ঘুরতে যেতাম। দূরের গ্যাস ফিল্ডের আলোয় রাতের বেলায় পরিবেশটা বেশ মায়াবী লাগত। তখন কী স্বপ্ন দেখতাম জান? প্রিয় কোন মানুষকে নিয়ে রাতের এমন নির্জন আধারে গল্প করতে আসব। দু’জনে হাত ধরে এই প্রান্তর ধরে হেঁটে চলব অনেকটা সময় ধরে।

আজ সে স্বপ্ন গুলো বিবর্ণ হতে চলল। জানিনা কত দিন এখানে থাকা হবে। আমার জীবনে আর প্রিয় মানুষ এল কই? এক বছরের বেশি পরে এই মাঠে গিয়েছি। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। কী বড় বড় জোঁকরে বাবা।

জোকেঁর ভয়ে তো পুকুরে গোসল করা ছেড়ে দিয়েছি। কেবল শীতকালে এই মাঠে বেড়াতে যাওয়া যায। এবারের শীতকালটা যে কখন চলে গেল! আমি তো প্রায় দুইমাস হতে চলল এখানে অনিয়মিত। ব্যস্ততাও একটা বড় কারণ। আজ বের হয়েছিলাম একা।

সঙ্গী তেমন কেউ নেই। প্রথম এখানে এসে যাদের পেয়েছিলাম অনেকেই নেই। লোকজন আসে আবার যায়। কেবল আমি পড়ে আছি অচল পয়সার মত। কোথায় একদিন পড়েছিলাম’ভাত আর ভালোবাসা মিলে হয় জীবন’ আমি এখানে ভাতের জন্য না ভালোবাসার জন্য পড়ে আছি ভেবে পাইনা।

সর্বশেষ সঙ্গী যা একজন ছিল( আমার সুখ দু:খের সাথী) তাকেও বিদায় দিলাম দুইমাস পূর্বে। তার পরও আমি একা নই। ঢের মানুষ আছে আমার পাশে। কিন্তু মিশতে পারিনা সবার সাথে। মাঠে যখন বেরোলাম হঠাৎই নিজেকে নি:সঙ্গ বলে মনে হল।

আর তখনি মনের কোণে আসন গাড়লে তুমি। ভাবনার আগাগোড়ায় কেবল তুমি আর তুমি। আচ্ছা নি:সঙ্গতার সাথে তোমার সম্পর্ক কি? তুমি কি তার সহোদর না পরিপূরক? এমন আধার রাতে একাকী কেউ সেখানে যাবার চিন্তাও করবেনা। আমার মত ভাবুক তো কেউ নেই এতল্লাটে। তাছাড়া সাপ,শেয়াল,এমন কি মেছো বাঘের ভয় ও ছিল।

ভূতের ভয় ও নাকি থাকে। আমি অবশ্য এসব বিশ্বাস করিনা। তার পরও ভয় যে মনে আসেনি তা নয়। তবে এমন ভয় জাগানো পরিবেশে মনে একটা রোমাঞ্চ আসে তা বেশ ভাল লাগে। বিপদ তো থাকবেই।

তাই বলে ঘরে থাকব নাকি? তুমিতো আমার চলার পথের প্রতি পদে পদে সতর্ক করে দিতে। আজকাল কেউ আর বলে দেয়না ’এভাবে চলিও না;ওইটা ভাল না কিংবা সেটা কেন করলে’। তুমি হলেতো লাখ বার মানা করতে এমন নির্জন অন্ধকারে একা বেরোনোর...। ওই খোলা প্রান্তরটার বিশেষত্ব কি জান? সেখানে গেলে আকাশটা মনে হয় মাথা থেকে মাত্র কয়েক হাজার গজ উপরে। মিথ্যে বলছিনা।

জীবনে অনেক খোলা প্রান্তর দিয়ে হেঁটেছি কিন্তু এমনটি কোথাও পাইনি। জোছনা ছিল বেশ যদিও পূর্ণিমা না। মেঘের আড়ালে লুকুচুরি খেলতে থাকা চাঁদের আলোয় বেশ ভাল লাগছিল। অনেকটা পথ পেরিয়ে গিয়েছিলাম। প্রান্তরের মাঝামাঝি তখন পৌছি দেখি দূরে একটা আলো জ্বলছে।

আমাকে খুব টানছিল মনুষ্য প্রজ্জুলিত আলোটা। সেটা অনুসরণ করে সামনে বাড়লে হয়তোবা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পারিনি। সেখানেও যে বাধা তুমি। একদিন বলেছিলে কোথাও হারিয়ে যেতে চাইলে.......।

অথচ আজ তোমার কোন সন্ধান নেই। কিন্তু আমি প্রতিনিয়ত তোমায় খুজিঁ,তোমার পথ চেয়ে...। আমাদের জীবনটা হয়ে গেছে “সপ্তপদী” উপন্যাসের রীণা আর কালাচাদেঁর মত। রীণা যেমন তার ঈশ্বরকে কালাচাঁদের নিকট দিয়ে বিদায় নিয়েছিল তেমনি তুমিও তোমার সকল ভালোবাসা আমাকে দিয়ে নিরুদ্ধেশ হয়ে গেছ। এ ভালোবাসা রাখি কোথায়?আমি যে ভার বইতে অক্ষম!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।