আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবে যাব আহারে, হৃদ ঝর্ণা পাহাড়ে

যে কোন প্রয়োজনে স্বরণ কইরেন: hopelessduniya@yahoo.com এই আইডি তে..এড কইরেন...
চারিদিকে পাহাড়, মাঝখান দিয়ে বয়ে যায় নদী , মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে যায় অপরুপ ঝরনা----------এরকম রুপের বর্ননা করার মত দেশ একটাই, আমাদের বাংলাদেশ, বাংলাদেশে যে রুপের অসংখ্য বর্ন আছে, তা উপভোগ করার জন্য আমাদের অবশ্যই চোখে মেলে তাকানো উচিত। তাই প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দয্য উপভোগ করার জন্য দিগন্তের খোঁজে আজ আমি এমন এক রূপনগরী সম্পর্কে বলতে চাই, যেখানে বাংলার সব সৌন্দর্য এসে যেন উছলে পড়েছে। প্রকৃতির এই অপরুপ সৃষ্টি রাঙ্গামাটি। জনপদের মৃত্তিকার রং রক্তিম বা রাঙ্গাঁ আকৃতির বলে, মৃত্তিকার সঙ্গে আবহমান কালের আত্বিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে এর নামকরন করা হয় “রাঙ্গা মাটি” । লাল রংয়ের মাটির শহর এই রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় ৬,১১৬ বর্গকিলোমিটার।

মোট ১১টি উপজেলা দিয়ে গঠিত এই জেলা শহর ঢাকা থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অবারিত সবুজ আর বিশাল পাহাড়ের প্রাচুর্যময় সম্পদে ভরা এই রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটি হয়ে শুভলং কিংবা বরকলে গেলে দেখা যাবে নদীর দুই পাশে পাহাড় আর ঝর্ণা। নৌকায় বসে ঝর্ণার এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করা জীবনের স্মরনীয় মুহুর্ত হয়ে থাকার মতো। পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখা, সে কতটা আনন্দের তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝানো যাবে না।

পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত এই শহরের সৌন্দর্য দেখে পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে মন চায়। মনে হয় পাহাড়ের মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে যাই। ঝরনার কলকল ধ্বনি হৃদয়ের সব কান্তি দূর করে দেয় । পর্যটন কমপেক্স এলাকায় গেলে দেখা যাবে ঝুলন্ত সেতু। এটি পেরিয়ে এপার থেকে ওপারে কয়েকবার গিয়েও মন ভরে না।

বার বার শুধু যেতে ইচ্ছা করে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে দেিন গেলেই দেখা যাবে যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার ব্যবস্থা, যাতে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌর্ন্দয্য উপভোগ করে বিকেলটা পার করে দেয়া যায়। রাঙ্গামাটির একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান হল রাজবন বিহার। এটি রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতে ঘাঘরাতে অবস্থিত। এখানে আছে রাজবন বৌদ্ধবিহার, সেই সাথে আছে বৌদ্ধ মন্দির।

চারিদিকে আরন্যক পরিবেশে বিহার আর মন্দির দুটি অপরিসীম শান্তির জায়গা মনে হয় । রাঙ্গামাটির আরেক আকর্ষনীয় জায়গার নাম কাসালং। এখানে রয়েছে সারি সারি বন উপত্যকা। গিরিচূড়া, হৃদ, ঝর্ণা। রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে ট্রলারে করে কাসালং যাওয়া যায় ।

এই কাসালং এর একটু পূর্বে সাজেক ভেলি যেখানে লুসাই উপজাতিদের বসবাস। পাহাড়ের গায়ে গায়ে আর চারিদিকে হৃদে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্য্যের খনি এই রাঙ্গামাটি শহর । হৃদের পূর্ব তীরে রয়েছে পেজ ট্যাং ট্যাং যেখানে চোখে পড়বে বিচিত্র প্রজাতির অসংখ্যা পাখি আর বুনো হাঁস। চোখ জুড়ানো এই শহরে যেমন রয়েছে নীল সবুজের ছোয়াঁছুয়ি, তার ওপর আছে কাপ্তাইয়ের সুদীর্ঘ শান্তির লেক। বাংলাদেশের পানি বিদুৎ উৎপাদানের প্রধান কেন্দ্রস্থল হল এই কাপ্তাই।

এদেশের সর্ববৃহৎ লেক হল এই কাপ্তাই লেক। রাঙ্গামাটির আরেক সুন্দর দর্শনীয় জায়গা হল উপজাতি সংস্কৃতি জাদুঘর যেখানে রয়েছে উপজাতীয়দের আর্থ সামাজিক জীবনের সুন্দর প্রতিফলন। রাঙ্গামাটির দুরের পাহাড়-আরণ্যঞ্চলে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় ভয় লাগে তারপরও আনন্দ আছে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করার। বার বার এই রাঙ্গামাটিকে নিসর্গের উদার সম্ভারে গরীয়সী মনে হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রাঙ্গামৃত্তিকার এই জনপদে কিন্তু একসময় লোক বসতি তেমন ছিলনা।

১৮৬০ সালে বনাঞ্চল কেটে তৈরি করা হয়েছে এই শহর। এবং পরবর্তীতে খরস্রোতা কর্ণফুলির নদীর বদৌলতে এখানে ক্রমে ক্রমে জনবসতি শুরু হয়। তবে এখানকার মানুষের জীবন যাপন কিছুটা হলেও কষ্ঠের। সবসময় প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই এদেরকে বেঁচে থাকতে হয়। বাংলাদেশের অন্যান্য সব জায়গার তুলনায় এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া খুবই কম।

মাত্র কয়েক দিন আগেও এখানকার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে কিছুই ছিল না। তবে অতিসা¤প্রতিক, এখানকার মানুষের হাতে পৌছে গেছে প্রযুক্তির অন্যতম সৃষ্টি মোবাইল ফোন। কিভাবে যাবেন : পাহাড় ও হ্রদের শহর রাঙ্গামাটি, বেশ কয়েকটি মাধ্যমে যাওয়া যায়। রংপুর থেকে যাত্রা শুরু করলে চট্টগ্রাম হয়ে সরসরি রাঙ্গামাটি যাওয়া যায়। সেখানে রংপুর থেকে চট্টগ্রাম বাসযোগে ভাড়া লাগবে ৪৫০-৬৫০ টাকা।

যারা রংপুর থেকে ঢাকা হয়ে বা ঢাকা থেকে যেতে চায় তাদের জন্য বাস ও ট্রেন উভয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য রয়েছে ডলফিন পরিবহন যা প্রতিদিন সকাল ৮.০০টায় এবং রাত ১০.০০টায় কলাবাগান থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে হানিফ পরবহন, গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, শ্যামলী, কেয়া, টোকিওলাইন। এগুলোর যেকোন একটি পরিবহনে চট্টগ্রাম গিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ট্রেন পথে রয়েছে মহানগর প্রভাতি সকাল ৭.৪০মিনিটে, মহানগর গোধুলি বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে, তৃর্ণা রাত ১১-০০টায় এবং সুবর্ণ বিকাল ৪-৩০ মিনিটে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এরপর চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটিতে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা যার দুরত্ত ৭৬ কিলোমিটার।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।