আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোয়েল ও যুদ্ধদিনের উপাখ্যান[দ্বিতীয় পর্ব]



বাড়িতে এসে জগলু ভাইকে বললাম একটা খাঁচা বানিয়ে দিতে। জগলু ভাই শুধু আমাদের চাষ-বাসই দেখাশোনা করেনা ওর নানা ধরণের গুণ আছে। বাঁশ কেটে খাঁচা বানানো তার মধ্যে অন্যতম। জগলু ভাই বললো খাঁচা সে বানিয়ে দেবে তবে তা তৈরী হতে সময় লাগবে। অগত্যা আপাততঃ একটি খলুইয়ের মধ্যে খড় বিছিয়ে বাচ্চাগুলোকে রেখে দিলাম।

জগলু ভাই বাঁশ কেটে একটি চোঙ বানিয়ে দিল। আমরা মহা উদ্যমে ধান ক্ষেত থেকে অনেকগুলো ঘাসফড়িং ধরে নিয়ে এলাম। দোয়েল বাচ্চাদের খাবার। জগলু ভাই বললো,'পিঁপড়ের ডিম খাওয়াতে পারো। 'আমরা হতাশ হয়ে বললাম,'পিঁপড়ের ডিম পাব কোথায়?' জগলু ভাই বললো,'চিন্তা করোনা,আমি জোগাড় করে দেবো।

' আমি ও সজল ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বাচ্চাগুলোকে চোখে চোখে রাখতে লাগলাম। ইতোমধ্যেই আমাদের বিড়াল তুষি আড় চোখে চাইতে শুরু করেছে,কিন্তু সাহস পাচ্ছে না আমাদের ভয়ে। ঠিক করলাম খঁচা হবার আগ পর্যন্ত আমরা পালা করে পাহারা দেবো। পরদিন বিকেলের মধ্যে জগলু ভাই খাঁচাটি তৈরী করে ফেললো।

আমরা বাচ্চাগুলোকে পরম যত্নে খাঁচার ভেতরে তুলে দিয়ে বারান্দায় ঝুলিয়ে দিলাম। হঠাৎ কোথা থকে তারস্বরে চেঁচাতে চেঁচাতে হাজির হলো দোয়েল দম্পতি। তারা খাঁচার কাছাকাছি এসে উড়ে উড়ে ঘুরতে থাকলো এবং চেঁচাতে থাকলো। আমি সজলকে বললাম ,'চল আমরা দূরে সরে যাই। ' সজল অবাক হয়ে বললো,' কেন?' -দেখিনা ওরা কি করে? -কি করবে ওরা! -দেখা যাক না।

আমরা বেশ কিছুটা দূরে সরে গেলাম। দোয়েল দুটো উড়ে এসে খাঁচার উপর বসলো। বাচ্চাগুলো মহা উল্লাসে ডানা কাঁপাতে কাঁপাতে চিঁচিঁ করে শব্দ করতে থাকলো। খানিকক্ষণ এভাবে চলার পর দোয়েল দুটি উড়ে চলে গেল। আমরা খানিকটা অবাক হলাম।

কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আরো বেশি অবাক হয়ে দেখতে পেলাম দোয়েল দুটো ঠোঁটে ঝুলিয়ে খাবার নিয়ে এসেছে। তারা সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে খাবারগুলো খাঁচার ফাঁক দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াতে লাগলো। আমরা অবাক ও বিস্মিত হলাম। খুব স্বস্তিও পেলাম। ধানক্ষেত দাপিয়ে আর ঘাসফড়িং ধরতে হবেনা আমাদের।

আর ধরতে গেলামও না। পাখি দুটোর আনাগোনা আমরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। ওরা উড়ে যাচ্ছে, পালা করে খাবার নিয়ে আসছে এবং যথারীতি খাইয়ে দিচ্ছে বাচ্চাদের। দিন আমাদের খুব ভালো যাচ্ছিল। এ সময়ই খবর এলো ঢাকায় খুব গন্ডগোল হয়েছে।

রাতের আঁধারে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে বহু সাধারন মানুষ মেরে ফেলেছে। বড়দের মুখে শুনি,'কী জানি কী হয়!' আমাদের তেমন একটা স্পর্শ করেনা। বরং আমরা আনন্দেই থাকি। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়ার পর থেকেই স্কুল বন্ধ। আমরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছি এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে? কিন্তু উৎকন্ঠা একসময় শুধু বড়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা,আমাদেরও ছুঁয়ে যায়।

[চলবে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।