আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ-আফগান মাটিতে এক সপ্তাহ-

munirshamim@gmail.com
বিমান থেকে নেমেই আরেকবার হোচট খাওয়া। নতুন করে। বিমানবন্দরের পুরো মাঠজুড়েই কড়া নিরাপত্তার চাদর। জলপাই রঙে শরীর ঢাকা বহুজাতিক সৈন্যরা সুসজ্জিত অস্ত্রে প্রস্তুুত রয়েছে। দলে দলে।

কাতারে কাতারে। এ বুঝি আক্রমনে নেমে পড়তে হবে। তার জন্য সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। নামে বহুজাতিক হলেও এসব সৈন্যদের বড় অংশই আমেরিকান। দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকার নেতৃত্ত্বাধীন বহুজাতিক সেনাসদস্যদের দৃশ্যমান পোষাকী চাকচিক্য বাদ দিলে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর গায়ে কোথাও বিমানবন্দরের স্বাভাবিক লেবাসটুকুও নেই।

চারিদিকে ক্ষতের চিহ্ন। ভাঙা, জোড়া লাগানো। যুদ্ধের হিংস্রতার জলন্ত স্বাক্ষী হয়ে যেন তথাকথিত সভ্যতাকে উপহাস করছে। এখানে ওখানে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুুপের কাছে আমাদের গুলিস্তান-সদরঘাটও পরাজিত। এবার নিজের ব্যাগ-লাগেজ খুঁজে নেয়ার পালা, বুঝে নেয়ার পালা।

এগিয়ে দেখি বেল্ট সিস্টেমও কাজ করছে না। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত চরিত্র আব্দুর রহমানের মতো লম্ব-চওড়া কয়েকজন আফগানী বিমান থেকে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে আসছে। আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে পুকুরের মতো একটি জায়গায়। বিষয়টি দেখেই আমার চক্ষু ছানাবড়া। নিজের লাগেজের শরীর-স্বাস্থ্যের কথা, আসন্ন পতনের কথা ভেবে মনটা কেমন যেন হয়ে উঠলো।

যা হোক শেষ পর্যন্ত আসন্ন পতন ঠেকানো গেল। লাগেজ ছুঁড়ে মারার আগেই দৌড়ে গিয়ে বলি, এগুলো আমাদের লাগেজ। মানে আমার ও বসের। টিকেটের সাথে থাকা ট্যাগ নম্বর মিলিয়ে নিশ্চিত হন। এবং আমাদের হাতে তুলে দেন একটু আগে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া নির্জীব লাগেজগুলো।

আগের দিন রাতে সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছিল। এয়ারপোর্টে থেকে বাইরে এসে যেটুকু পথ ট্রলি টেনে নিয়ে তারপর গাড়িতে উঠতে হয় তার পুরোটাই ভেজা। এদিকে ওদিকে পানি জমে আছে। তার মধ্যে রাস্তাটা আবার উচু-নিচু। খানাখন্দকে ভরা।

তবে ট্রলি টানার লোকের অভাব নেই। অনেকটা আমাদের সদরঘাটের মতো। একজন বেরুলে দশজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার ওপর। চাহিদাও বেশি নয়, দু –এক ডলার। ৫০-১০০ আফগানি।

তবে সদর ঘাটের মতো ঝাকেঝাকে শিশু-কিশোররা নেই। অন্তত এ মুহূর্তে আমার চোখে পড়ছে না। অনেক বয়স্ক পুরুষ আছেন। তাদের সারা শরীর জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ। দেখলেই আঁচ করা যায়, এরা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন।

সামান্য বেঁচে থাকার তাগিদে। জানি না, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে হারাবার ক্ষত কতখানি গভীর। প্রিয়জন, বাড়ি-ঘর, সম্পদ, আবেগ-অনুভূতি সহ আর কী কী হারিয়ে আজ জীবন চক্রের শেষ ধাপে এসে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রলি টানছেন। জীবন ও জীবিকার ট্রলি। অনেকটা জীবন-মৃত হয়ে জীবন প্রদীপটাকে নিবু নিবু করে আরও কয়েক দিন জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা।

পথের শত ক্লান্তির পরও আমার ইচ্ছে হয়, খুব ইচ্ছে হয়, এ মানুষগুলোর সাথে দু’চারটে কথা বলি। জিজ্ঞেস করি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আপাত: পরাক্রমশালী আমেরিকা এ সাধারণ মানুষগুলোর জীবনে যে দারিদ্র, যন্ত্রণা ও কষ্ট কে চাপিয়ে দিয়েছে, দারিদ্রের একটা টেকসই ব্যবস্থা করেছে, তার অভিঘাতের টুকরো টুকরো গল্পগুলো। জিজ্ঞেস করা হয় না। সময়ের কাছে ইচ্ছেরা বন্দী থাকে। আমরাও এগিয়ে যাই।

আরেকটু সামনে। যেখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন আফগান তরুন রেজা হাবীব। তার দলবল নিয়ে। আমাদের শুভেচ্ছা জানাবেন বলে। (এ সিরিজ শুরু করেছিলাম অনেক আগে।

অলসতা, অলসতা আর অলসতা.....আপদমস্তক জুড়ে। ফলে শম্ভুক গতিতেই চলছে......) আগ্রহীরা আগের কিস্তির জন্য ক্লিক করুন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।