আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন দুঃসংবাদ দিতে হয়



প্রতিদিন অনেক রোগী আসে, কারও জ্বর, সর্দি, কারও পেটে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া, কারও শরীর দুর্বল। এর মধ্যেই কিছু রোগী আসে এমন যাদের বড় ধরণের সমস্যা থাকে, কিন্তু তারা তখনও তা জানে না। জানাতে হয় আমাকে। এক মহিলা একবার এসেছিল মাথা ব্যথা নিয়ে। দেখলাম তার হাই ব্লাড প্রেসার।

তাকে জানালাম কথাটা, সেই সাথে এটাও বললাম যে তাকে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। এইটুকু বলতেই সে হায় হায় করে কপাল চাপড়াতে শুরু করল। দুঃসংবাদটা দিয়ে ভুলই কি করলাম। কিন্তু না জানালেও যে চলে না। মাঝে মাঝে কিছু মা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে আসে সাধারণ জ্বর-সর্দি বা পাতলা পায়খানা নিয়ে, আমি বাচ্চাকে দেখেই বুঝতে পারি বাচ্চাটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি (Down's syndrome)।

কিন্তু বাচ্চার মা তখনও জানে না ব্যাপারটা, বাচ্চা যে দেরী করে বসতে শিখছে, হাঁটতে শিখছে সেটা তারা বড় কোনো সমস্যা মনে করেনি। আমাকেই জানাতে হয় যে তার বাচ্চার কত বড় সমস্যা হয়ে আছে। দুঃসংবাদটা শুনে মায়ের মুখ অন্ধকার হয়ে যায়, বিশেষ করে যদি বাচ্চাটা মেয়ে বাচ্চা হয়। কিন্তু জানাতে যে হবেই। কিছুদিন আগে এক মা তার দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছে, বাচ্চার জ্বর-সর্দি-কাশি।

বাচ্চাটা খুব হাসিখুশী, আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। দেখে মনেই হয় না কোন অসুখ করেছে। তবু কাশির কথা শুনে আমি বাচ্চার বুকে স্টেথো বসালাম। যা শুনলাম আমিই স্তব্ধ হয়ে গেলাম, কল্পনাই করিনি এমন কিছু শুনতে পাব। বাচ্চার মাকে জানালাম, তার বাচ্চার জন্মগত হৃদরোগ আছে (Tetralogy of Fallot)।

তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকায় হৃদরোগ হাসপাতালে নেবার পরামর্শ দিলাম। রোগী মারা গেছে, বা মারা যাচ্ছে এই কথাগুলো জানাতে হয় রোগীর আত্মীয়দের। প্রতিবারই বুক কেঁপে ওঠে, তাদের কান্না দেখে ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তবু দুঃসংবাদটা যে আমাদেরই দিতে হয়।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।