বিদায় - পথের নয়, পথিকের...
একটা যন্ত্র তৈরি প্রক্রিয়া চলছে কোন খুট খাট শব্দ ছাড়াই, সব কিছুই ঠিক ঠাক, বাঁধ সাধছে মন নামক একটি অংশ। হৃদয়ের মত একটি মটর খুবই দরকার পুরো কল-কব্জাকে চালনার জন্য, কিন্তু মন নামক লজিকাল পার্টটি এটিকে সংক্রমিত করে ফেলে, মন কে ফিক্স করা দরকার। মনটাকে ফিক্স করতে পারলেই পুরোটাই একটি যন্ত্র। যন্ত্র আসলে কি? যা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারে এবং এটির কোন ইমোশনাল অংশ থাকবে না , কোন স্বপ্ন থাকবে না, কোন আশা থাকবে না, অতি-আচরণ বলে কিছু থাকবে না। কিন্তু লজিকাল পার্ট বা মনটিকে কিভাবে যন্ত্রের ক্রাইটেরিয়া অনুসরন করানো যায়? খুঁজছি খুঁজছি... একটি পথ পেতেই হবে, যন্ত্রটা আমাকে তৈরি করতে হবেই।
এক কাজ করলেই হয় স্বপ্ন, বিশ্বাস, চেতনা, অনুভূতি গুলো ছুড়ে ফেললেই হয় মন কে পুরো অকেজো করে ফেলতে হবে! তাহলেই তো ইউরেকা!
স্বপ্ন কি? গত কয়েকদিন ধরে একটি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে চাইছি মেঘ ছুঁয়ে দেখবো, এটা স্বপ্ন। স্মৃতির যে যাযাবর মনের দুয়ারে কড়া নাড়ে তা আবার রঙ চড়াতে শেখায় এটি স্বপ্ন। চোখ যতগুলো রঙ দেখতে পায় সেগুলোকে, গুলিয়ে মিলিয়ে নতুন রঙ তৈরি করা। কারো হাত ধরে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে চলা। এগুলো স্বপ্ন।
স্বপ্ন কে নির্বাসন দিলে সে ঠিক আবার পথ খুঁজে এসে মনে জায়গা করে নিবে তার থেকে বরং তাকে মেরে ফেলা হোক, মেরে ফেলার কাজটা একটু জটিল হবে মনে হচ্ছে, এই গরাদের বাইরের ঐ চাঁদটা ছাড়া অন্য কোন ভূমি দেখতে পাই না, স্বপ্নকে ওখানটাতে কবর দেয়া হবে। চাঁদের বুকে স্বপ্ন কবর।
ঝিমুনি আসে, একটু ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে, কিন্তু স্বপ্নের ব্যাপারটার একটা দফা রফা না করলে তো ঘুমানো যাবে না, স্বপ্নকে না মেরে ঘুমালে, ঘুমের মধ্যে হাজির হবে!
[ ফাইল নং ৭৪৪|| দুপুর ১২:০৫:২৫ >> সাবজেক্টটি অনেক ক্ষন ধরে ছোট জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে, বেশ কিছুক্ষন ধরে হাই তুলছে। সিডেটিভের ডোজ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। ]
স্বপ্ন কে মেরে ফেলতে কেন চাইছি? হুমম মেরে ফেলবো কারন এই চার দেয়ালের বাইরে ঠিকই সে যাওয়া আসা করছে আমাকে নিয়ে বেরুতে পারছে না, সো সেল্ফিস! সো মাচ সেল্ফিস! অনেকক্ষন ধরে আরেকটি আমার মতো যন্ত্র-মানুষ আমাকে ডেকেই চলেছে, এত্ত বোকা কেন এরা বুঝতে পারছে না যে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না?
~ মিঃ আকমল, মিঃ আকমল
- (তাকালাম ওর দিকে মনোযোগের দৃষ্টিতে)
~ কেমন আছেন? শরীর কেমন লাগছে?
- জ্বি ভাল আছি, শরীরও ভালো আছে
~ কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
- সমস্যা হচ্ছে এবং ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে আপনি সেটা সল্ভ করতে পারবেন না ডক্টর।
~ ওহ! আইম সরি! মিঃ আকমল, যাই হোক আমার সাথে শেয়ার করুন দেখি কি করতে পারি আপনার জন্য।
- আমি একটু ঘুমুবো কিন্তু ঘুমুতে পারছি না।
~ কেন আপনার কি ঘুম পাচ্ছে না?
- ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু ঘুমুবো না সমস্যাটা সমাধানে না আসলে।
~ তাহলে তো আগে সমাধানই করতে হয় কি বলেন? আসুন আমি আর আপনি চেষ্টা করে দেখি একটা সমাধানে আসা যায় কিনা। বলুন কি সমস্যা?
- চাঁদের বুকে স্বপ্ন কবর দিতে চাই, নাসার সাথে একটা যোগাযোগের ব্যাবস্থা করেন।
চাঁদের কোন জায়গাটিতে কেমন ওরাই ভাল জানবে হয়ত। স্বপ্নটিকে কবর দিয়ে তারপর একটু শান্তি মতো ঘুমুতে চাচ্ছি।
~ হুমম! কিন্তু স্বপ্ন কে কবর দিতে চাচ্ছেন কেন? ওটা কি মুমূর্ষু?
- নাহ! ওটাকে মেরে ফেলা হবে। আমি আপাতত আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
[ দুপুর ১২:৩৪:১২ >> সাবজেক্ট ঘুমিয়ে পড়েছে, দুর্বলতা আছে, কাঁপছিল, "চাদের বুকে স্বপ্ন কবর দিতে চাই" - এটা বলার পর, কারন জিজ্ঞেস করতেই চুপ হয়ে গেছে, প্রচুর ঘুম দরকার।
]
একটা খুব পরিচিত শব্দ হচ্ছে কোথাও রুমঝুম টাইপের, নাকি ঝুমুর ঝুমুর? আমার আশে পাশে কোথাও আমি দেখতে পাচ্ছি না শব্দের উৎস কে। আমি এখন সেই রাস্তার উপর দাড়িয়ে! যেটা আমি এক সময় আমি স্বপ্নে দেখতাম! কিভাবে এখানে এলাম ঠিক মনে করতে পারছি না, চারপাশে একবার চোখ বুলালাম, হ্যা! একদম সেরকম চারপাশে! চারপাশে খোলা প্রান্তর, দীগন্ত দেখা যায়! দূরে ঐ তো পাহাড়টা যার জমে থাকা মেঘেদের আমি ছুঁয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত ধরল, চমকে গেলাম, পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলাম একটি মেয়ে আমাকে দেখে ঝিলমিলিয়ে হাসছে, অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে মেয়েটিকে, অনেক বেশি পরিচিত! হ্যা! এর হাত ধরেই তো আমি অনেক হেঁটেছি, শুধুই হেটেছি, এত কিছু ভাবার আর অবকাশ নেই, হাঁটা শুরু করলাম পাহাড়ের দিকে মেঘ ছুয়ে দেখব, সাথে সেই পরিচিত রুমঝুম অথবা ঝুমুর ঝুমুর শব্দ, এটা ওর পায়ের নুপুরের। পাহাড়টির কাছে আমরা মেঘ ছুঁতে যাবো..
স্বপ্ন অবশেষে আমাকে নিয়ে এসেছে বাইরের আকাশে, চাঁদের বুকে আমরা না হয় একদিন ভ্রমনে যাবো...
[ রাত ৮:২৫:৪৬ >>সাবজেক্ট ডেড। মস্তিস্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, অনেক দিন ধরে পর্যবেক্ষনে যা বোঝা গেল তিনি স্বপ্নকে এড়াতে চাইতেন এবং মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন, এই কনফ্লিক্ট তাকে অসুস্থ করে তোলে ]
ফাইল নং ৭৪৪
ক্লোজড
সাইক্রিয়াটিস্ট সিগনেচারঃ
ডঃ রায়হান ইকরাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।