আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পাদকীয়--শাশ্বতিকী



সম্পাদকীয় ফেব্রুয়ারি ২০১০। মাসিক রুটিনে এটা বাঙ্গালীদের ভাষা উদ্‌যাপনের মাস। বটেই। উদ্‌যাপন চলছে মাঠে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে। দেখে বুঝবার উপায় নেই, এদের অনেকেই আবার এই ভাষার জন্যই প্রতিনিয়ত নিজের ভাগ্যকে দুষে থাকে ’৪৭, ’৫২, ’৭১ খুব বেশিদিন আগের কথা নয়।

’৫২-এ যে ভাষাকে অর্জন করা হল রক্ত দিয়ে, আজ সেই ভাষাতে কথা বললে নিজেকে ‘ক্ষ্যাত’ মনে হয়। যে দেশকে আমরা পেয়েছি লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, সুযোগ পেলেই সেই দেশ ত্যাগ করে আমরা বাবা-মার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। এ দেশ মেধার কদর (মূল্য!) বোঝে নাকি! খুবই সত্যি কথা; যে দেশে কাকের মত ফকিরের উৎপাত, চলতে ফিরতে হোঁচট খেতে হয় চাষা-ছোটলোকদের নোংরা শরীরের সাথে, সে দেশে বাস করা যায়? দেশ যেদিন স্বাধীন হল, পরদিনই বাঙ্গালী উপলব্ধি করলো তারা এখন কি পেলো- একটি তৈলাক্ত কাঁথা, যার মধ্যে আবার অনেকগুলো ছিদ্র- স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধযুক্ত! বুদ্ধিদীপ্ত বাঙ্গালী জেগে উঠল, শুরু হল বাঙ্গালীর শিল্প-সংস্কৃতির রিমিক্স বানানো। ইউরোপীয় কালচার এখন স্বদর্পে লেফট্‌-রাইট করতে করতে এসে আমাদের সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে যাচ্ছে; আমরা হাত তালি দিয়ে উপভোগ করছি। জন্ম হচ্ছে একটি বিকৃত কালচারের।

সবথেকে বেশি ধর্ষণ করা হচ্ছে আমাদের ভাষাকে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য হারাচ্ছি, ভাষাহীন হয়ে পড়ছি ক্রমশ। প্রগ্রেসিভ(!) বাঙ্গালী বিশ্ববাজারে মাতালের মত টলে বেড়াচ্ছে- বেওয়ারিশ, পরিচিতিহীন। ‘বাঙ্গালি হয়ে উঠছে সংস্কৃতিগত ভাবে জারজ। ’ আজকের প্রজন্ম ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করে বাংলাও বলছে ইংরেজী এ্যকসেন্টে।

রেডিও-টেলিভিশন-এ তরুণ উপস্থাপকদের ভাষা চিনতে আমাদের কষ্ট হয়- ইংরেজী না হিন্দি, বাংলা তো নাই-ই! ইংরেজী অবশ্যই শিখতে হবে, এটা এখন প্রয়োজনের ভাষা। প্রয়োজনের তাগিদেই একে আত্মস্থ করতে হবে। ইংরেজী শেখা কখনো প্যাশন হতে পারে না, এটা চূড়ান- পর্যায়ের ভন্ডামি। আমরা (শাশ্বতিকীর শুরুর দিকের সব কর্মী) ইংরেজী বিভাগের ছাত্র হওয়ার সূত্র ধরে অনেকেই বলেন, আমরা ইংরেজীতে লিখছি না কেন? কেন বাংলা পত্রিকা করছি? অনেক শুভাকাঙ্খী এটা দেখে বেশ কষ্টও পান। আমি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলব, কেনো এবং কাদের জন্য ইংরেজীতে লিখবো? কি পেলেন মাইকেল? আর, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাস, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমীয় চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁরা যদি ইংরেজীতে লিখতেন তাহলে কি দশা হত বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির? ২০১০ সালের শুরু থেকে আমরা শাশ্বতিকীর বেশ কয়েকটি বিশেষ সংখ্যা করার কথা ভাবছি।

নাটকের মাধ্যমে তার সূচনা হল। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে অবহেলিত শাখা এটি। নাটক নিয়ে আরো কাজ দরকার। বর্তমানে কবিতা নিয়ে যে ভাবে কাজ হচ্ছে সেই ভাবে গল্প-নাটক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না। সাহিত্য ময়দানে এখন শুধুই কবিদের উল্লাসধ্বনি।

অনেকের ভালো গল্প লেখার হাত থাকলেও কবিতা (যা-তা) লিখে মেধার অপচয় ঘটাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘গল্প লিখবো, এত সময় কোথায়?’ কেনো? কবিতা লেখাটা কি এতই সহজ? হ্যাঁ, বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই এতটা সহজ হয়ে গেছে কবিতা লেখা। এজন্যে, যাঁরা মেধা খাটিয়ে, পরিশ্রম করে কবিতা লিখছে, তাঁদেরকে চিনতে আমাদের বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। অনেকের সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে শাশ্বতিকীর দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হল। প্রাপ্তিতে প্রত্যাশা বাড়ে; তাই ভবিষ্যতে আরো সহযোগিতা কামনা করছি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।