আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রণা-৮



প্রিয়ন্তী তমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। বাসায় ফিরেও তমা অস্থির হয়ে থাকে। যেকোন সমান্য শব্দেও বারবার চমকে উঠতে থাকে। সন্ধ্যার পরে আম্মাকে রুমে ডেকে আনে, কাগজটা দেখায়, খুলে বলে কি ঘটেছে। সব শুনে আম্মাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে।

বলে, ‘এত ভাবিস না। আল্লাহ আছে। আর আমি তোর আব্বাকে বলবো। তোর ইউসুফ চাচারে জানায় দিবে, যেন কোন ঝামেলা না করতে পারে। ’ তমার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

তমাকে অভয় দেয়ার জন্য বললেও আম্মা নিজেই যে অনেক ভয় পাচ্ছে তমা বুঝতে পারল। ওর কান্না পেতে থাকে। রাতে খাওয়ার সময় আব্বাকে জানানো হল ঘটনা। আব্বা খুবই বিরক্ত হয়ে তমাকে বলল, ‘তুমি কি শুরু করছো? তুমি কি আমারে একটু শান্তি দিবা না?’ ‘আব্বা আমি কি করছি? আমি কি ওদের বলছি নাকি চিঠি দেয়ার জন্য!’ তমার মুখ থেকে ছিটকে বেরোয় কথাগুলো। ‘আবার মুখে মুখে কথা বল।

ওইদিন এতকিছু করলাম তোমার জন্য, ভদ্রলোক আমার হাত ধরে মাফ চাইল আর তুমি এখন বলতেছো ওরা তোমারে চিঠি দিছে। তোমারেই চিঠি দিতে আসে ক্যান? আর কাউরে দেখে না চোখে? এখন আমি কোন মুখে যেয়ে আবার বলবো এইসব কথা!’ তন্ময় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে, আম্মার চেহারায় হতাশা, একটা অপরাধবোধ। তমা উঠে চলে আসে খাওয়া ফেলে। ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। অস্পষ্টভাবে শুনতে পায় আম্মা কি যেন বলছে।

মাঝে মাঝে আব্বা রেগে গিয়ে উঁচু গলায় কিছু বলছে। তমা আর শুনতে চায় না, কিছু জানতেও চায় না। কাঁদতে থাকে অঝোরে। অনেকক্ষণ পরে আম্মা আসে রুমে। হাতে খাবারের প্লেট।

নরম গলায় তমাকে ডাকে, ‘ওঠ তমা, ভাতটা খা। ’ তমা মুখ ফিরিয়ে নেয়, ‘খাবো না, তুমি ক্যান আনছো এইসব? কোন দরকার নাই। ’ ‘খাওয়ার সাথে কিসের রাগ? শরীর খারাপ হয়ে যাবেতো! খেয়ে নে। ’ আম্মা ধৈর্য হারায় না। ‘না, খাবো না।

’ তমা কাঁদতে থাকে। আম্মা এবার একটু ধমকে উঠে, ‘খা তমা, ভালভাবে বলতেছি। খাওয়ারে কোনদিন অবহেলা করবি না। তোর আব্বারে বলছি, ইউসুফ ভাইরে বলে দিবে। কিছু হবে না।

নে মনা, খা। ’ আম্মা মুখে তুলে দেয়। তমা কাঁদতে কাঁদতেই হাঁ করে। তন্ময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে করুনচোখে তাকিয়ে আছে। কাছে আসতে সাহস পায় না।

দেখে মনে হচ্ছে সেও কেঁদে ফেলবে। মায়া লাগে তমার, ডাকে কাছে। তারপর ভাইকে জড়িয়ে ধরে বসে খাওয়া শেষ করে। পরদিন তমা ভয়ে ভয়ে বেরোয় বাসা থেকে। কিন্তু কিছু ঘটে না শেষ পর্যন্ত।

রাস্তায় কাউকে দেখে না তমা। ফেরার পথেও না। তার পর দিনও না। তমার ভয়টা একটু কাটে। প্রিয়ন্তী ওকে সান্ত্বনা দেয়, ‘হয়তো হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেছিল, এরজন্য ওইদিন ঐ কান্ডটা করছে।

আর কোনকিছু করার সাহস পাবে না। ’ তমা নিজেও এটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে। আব্বারও আর ইউসুফ চাচাকে জানানো হল না। ................ ....................... ......................... তমা কলেজের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঠিক করে সবাই মিলে শাড়ি পরবে।

বেলী ফুলের মালা জড়াবে খোঁপায়। আর পাঁচদিন পরেই অনুষ্ঠান। আর তারপরে পরীক্ষা। একদিকে পড়ালেখা আরেকদিকে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে তমা।

মারুফ আর তেমন কোন ঝামেলা করে না। তমা তাই মোটামুটি নিশ্চিন্তই থাকে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক হয় সকালে তমা প্রিয়ন্তীর বাসায় চলে যাবে। তমা নিজে শাড়ি পরতে পারে না, প্রিয়ন্তী পরিয়ে দিবে। ওদেরকে যেতে বলা হয়েছে সাড়ে সাতটায়।

তাই তমা একেবারে ভোরে, সাড়ে ছটাতেই শাড়ি-টাড়ি ব্যাগে নিয়ে বের হয় বাসা থেকে। চারদিক নিরব। লোকজন খুব কম রাস্তায়। গলির যে জায়গাটা সবচেয়ে নিরব সেখানে এসে থমকে দাঁড়ায় তমা। মারুফ আর তার দলবল, প্রায় আট-দশজন হবে দাঁড়িয়ে আছে।

বড় রাস্তার মুখে একটা মাইক্রোবাস, দরজাটা হা করে খোলা। ভিতরেও বসে আছে কয়েকজন। নিমেষেই ওরা সবাই ঘিরে ধরে তোমাকে। মারুফ এগিয়ে আসে। হিংস্র গলায় বলে, ‘বলছিলাম না নিজে রাজি না হইলে তুইলা নিয়া যাবো? কথা শুনো নাই, উল্টা সালিশ করছো।

এখন চল। ’ বলতে বলতে হাত চেপে ধরে। তমা মুচড়ে হাত ছাড়াতে চায় আর চিৎকার করার জন্য মুখ খোলে। কিন্তু কেউ একজন ওর মুখে একটা কাপড় চেপে ধরে, ঝাঁঝালো একটা গন্ধ লাগে নাকে। অল্প কিছুক্ষণ মাত্র, তারপরই তমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

জ্ঞান হারায় তমা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।