আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীল শাড়ির রহস্য অমিমাংসিত



You can fool some of the people all of the time, And all of the people some of the time, But you cannot fool all of the people all the time". ছোট বেলা থেকেই অনেক ভূতের বই পড়েছি,ভূতের ছবি দেখেছি। কিন্তু কোনোদিন সত্যিকার ভূত দেখলাম না,আফসোস!কত মানুষ কত কিছু দেখে বেড়ায়,শুনি। অশরীরি দেখার জন্য কত কিছুই না করেছি। সারারাত কবরস্থান এ থেকেছি,কত গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছি,কত পুরনো বাড়িতে রাত কাটিয়েছি। আমি একজন আধুনিক ছেলে।

কোনো কুসংস্কার বিশ্বাস করি না। অনেকে যখন অদ্ভুত কাহিনী শুনায়,আমি তাদের ভুল গুলো কে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেই-যুক্তি দিয়ে। আমি দেখেছি গ্রামের মানুষরা বেশী কুসংস্কার বাদী হয়। তাদের অলৌকিকতা আমি বিজ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দেই। কিছুদিন ধরে আমার কিছুই ভালো লাগছে না।

এই ঢাকা শহর আর ভালো লাগছে না। দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে। অনেক দিন দূরে কোথাও যাই না। অনেক দিন সুন্দরবন যাই না। হঠাৎ ঠিক করলাম সুন্দরবন যাবো।

সুন্দরবনের কাছে একটা গ্রামে আমার বন্ধু থাকে বাবলু। বাবলু'র বাবা-মা আমাকে অনেক আদর করেন। তারা অনেক দিন থেকে আমাকে যেতে বলছেন,সময় আর সুযোগের কারনে যাওয়া হয়ে উঠেনি। ঠিক করলাম আজ রাতের গাড়িতেই বাগেরহাট যাবো। বাসার কাউকে কিছু না বলে রাত দশটার গাড়িতে উঠে পড়লাম।

আমি আগেও এরকম অনেক করেছি। বাসার সবাই আমাকে খুব ভালো চিনে জানে বুঝে কাজেই কোনো সমস্যা নাই। আমি কোনো কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারি না। আর এই জন্য আমার কোনো দুঃখও হয় না। আমি তো আর লেখক না।

তাই,বুদ্ধিমানের মতো এই লেখাটা এলোমেলো হওযায় আগেই আমি আমার মূল কাহিনীতে চলে যাবো। বেশী ভনিতা করতে গেলেই ধরা খাবো। রাত তিনটায় বাস থেকে নেমে বিপদে পড়ে গেলাম। আমি যাবো রসুল পুর গ্রামে। কোনো রিকশা বা ভ্যান নেই।

সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা করতে আমার কোন দিনই ভালো লাগে না। আমি হেঁটেই রওনা দিলাম। সাত মাইল,যেতে ২ ঘন্টার বেশী লাগার কথা না। আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

এক কাপ চা হলে ভালো হতো। এতো রাতে আমার জন্য নিশ্চয় কোন দোকান খোলা থাকবেনা। সুন্দর জ্যোস্না রাত। চারিদিক ফক ফকা। মাটির রাস্তা।

কি সুন্দর পরিবেশ মন ভালো হয়ে যায়। রাস্তার দু'পাশে ধানক্ষেত। একটু পরপর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আমি ফুরফুরা মেজাজে হেঁটে যাচ্ছি। একটা ব্যাপারে আমি নিজেই অবাক হচ্ছি-গভীর রাত আমার ভয় লাগছে না।

নির্জন রাস্তা। আমি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলেছি- ''আমি চাই তোমারে যেমন তুমি চাও তেমনি আমারে- কৃ্তার্থ হইব আশে...গেলেম তোমার পাশে, তুমি এসে বসে আছো আমার দুয়ারে। । " কতক্ষন ধরে হাঁটছি। পথ আর শেষ হয় না,ভুল পথে চলে এলাম নাকি?।

হঠাৎ আমি থমকে গেলাম। দেখি একটা মেয়ে গাছের ডালে দোলনা বানিয়ে বসে আছে আর গুনগুন করে গান গাইছে-'' কবে পরিবে বেলা...ফুরাবে সব খেলা, নিবাবে সব জ্বালা শীতল জল, জানিস যদি কেহ আমায় বল''। আমি কসম খেয়ে বলতে এতো সুন্দর মেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি। মনে মনে আমি তিন বার বলেই ফেললাম-কি সুন্দর!কি সুন্দর!কি সুন্দর!আমি সাহস করে মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। মেয়েটার মাথা ভরতি চুল,চুলে অনেক গুলো ফুল গোঁজা মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি কোন ফুলের ঘ্রান মনে করতে পাচ্ছি না,চোখে কাজল।

কপালে একটা নীল টিপ। আমার মনে হলো চারপাশটা চাঁদের আলো'র চেয়ে মেয়েটার রুপের আলো বেশী অনেক বেশী। যেন চারপাশ ঝলমল করছে। আমি এখন কি করবো? আমি কি মেয়েটার পাশে বসে গল্প করবো নাকি আমার বন্ধু'র বাসায় চলে যাবো?মেয়েটাকে একা ফেলে চলে যাবো!মেয়েটা কি কোন অশরীরি বা মেয়েটার বাসা হয়তো আশে পাশেই ঘুম আসছিল না তাই এখানে বসে আছে। নাকি মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলবে? অনেক ক্ষন চুপ থাকার পর মেয়েটা বললো-তুমি ভুল পথে চলে এসেছো,এটা রসুল পুর যাবার রাস্তা না।

আমার হাত ধরো,আমি তোমাকে রসুরপুর দিয়ে আসি। মেয়েটার গলার স্বর খুব মিষ্টি। আচ্ছা মেয়েটা জানলো কি করে যে, আমি রসুল পুর যাবো? এখন আমার এতো কিছু ভাবার সময় নেই,আপাতত এই নীল শাড়ি পরা মেয়েটার পাশে থাকলেই আমি বেশী আনন্দ পাবো। মেয়েটা আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। আহ্ কি নরম হাত।

যদি একটা জীবন এই মেয়েটার হাত ধরে পার করে দিতে পারতাম! পরিশিষ্ঠ ভোরবেলা আমার বন্ধু'র বাবা ফযরের নামাজের জন্য অজু করতে এসে আমাকে পুকুর পাড়ে অজ্ঞান অবস্থায় আবিস্কার করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।