আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: বব ডিলানের একটি যুদ্ধবিরোধী গান ও একটি মানবিক কবিতার খসড়া ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

আফগানিস্তানের আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। হেলিকপ্টারের অভ্যন্তরে মজুদ সিআরভি ৭ রকেট; এম টু ২৩০ চেইন গান; এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার মালটি-প্ল্যাটফর্ম, মালটি-টারগেট মডুলার মিসাইল সিসটেম । এখুনি এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার নামক মিজাইলের আঘাতে গুঁড়িয়ে যাবে একটি পশতুন গ্রাম; নিহত হবে পাহাড়িয়া এলাকার বেশ ক’জন নিরীহ আফগান শিশু ।

এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। এটি লেজার গাইডেন্স সিসটেমে নিয়ন্ত্রিত হয় । দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক বলেই প্রশ্ন উঠতে পারে-কারা ঐ হেলিকপ্টার এর মালিক? এবং কি তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য? কেন তারা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এবং এসব প্রশ্নগুলি জরুরি ... আলেকজান্ডার জ্যাকব; মার্কিন আমর্স ম্যানিউফ্যাকচার কোম্পানী “রিচার্ড মার্শাল” এর একজন সাবেক পরিচালক ; বয়স ৬৫; এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির রাজধানী ট্রেনটন শহরের গিভসন জেনারেল হাসপাতালের একটি কক্ষে শুয়ে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। বৃদ্ধের শুভ্র কেশ আর বলিময় চৌকো তামাটে মুখে জীবনঅভিজ্ঞতার ছাপ। তবে মুখটি এখন পান্ডুর আর বির্বন দেখায় ।

কে যেন সমস্ত জীবনীশক্তি শুষে নিয়েছে। মৃত্যুর আগে প্রত্যেক মৃত্যুপথযাত্রীই সম্ভবত ক্ষণিকের জন্য হলেও সুস্থ্য বোধ করে। আজ দুপুরের পর থেকে সেরকমই বোধ করছেন আলেকজান্ডার জ্যাকব। কোণে একটি টিভি। শব্দ কমিয়ে অন করা।

সি এন এন। মনিটরে ধূসর একটি আকাশ। আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। আফগানিস্তান? আলেকজান্ডার জ্যাকব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান “রিচার্ড মার্শাল” এর একজন ডিফেন্স কনট্রাক্টর।

এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার তার প্রতিষ্ঠানের সফল উদ্ভাবন। তিনি জানেন: এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। গুলি করে ধ্বংস করে ভুলে যাও ধ্বংসের স্মৃতি। আলেকজান্ডার জ্যাকব ভুলে যেতে পারছেন না। কারণ তিনি এখন একা ...নিঃসঙ্গ।

এ সময় মানুষের ওপর স্মৃতি ভর করে। তার মনে পড়ে মার্কিন সরকার যাতে এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কেনে সে জন্য রাজী করাতে সিনেটরকে ৩ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, মার্কিন সরকার এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কিনেছিল। এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার এর আঘাতে কতজন এশিয় মারা গেল? এখন সেই ভাবনা উঁিক দিচ্ছে। কারণ, এখন তিনি ট্রেনটন শহরের গিভসন জেনারেল হাসপাতালের ৫১২ নং কক্ষে শুয়ে রয়েছেন।

সুস্থ্য থাকলে তিনি এখন হয় তো থাকতেন মনোরম কোনও ভিলার সুইমিংপুলের পাশে কিংবা টেনিস কোর্টে; দেশিবিদেশি বন্ধুদের উষ্ণ সান্নিধ্যে। কবে যেন বেহনাম ফারশাদ-এর ভিলায় পার্টি ছিল ...কবে? বেহনাম ফারশাদ অভিজাত আফগান মিলিয়নিয়ার। আফগানিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -দু’জায়গায় বাস করেন এই দুদে ব্যবসায়ী। বেহনাম ফারশাদ-এর স্ত্রী আফসান আরা। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই সুন্দরী মহিলার গায়ের রং ইরানি গোলাপের মতন।

আফসান আরার সঙ্গে আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর অনেক অনেক দিনের সম্পর্ক। আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর বয়স ষাট ছাড়িয়ে গেছে। তাতে কি? আমেরিকানা বাঁচতে জানে। তবে আজকাল তার মনে হল-আফগানিস্তান ধ্বংস হলেও এই আফগান অভিজাত দের কিছু যায় আসে না বরং পূর্ব উপকূলের নির্জন ভিলায় গোলাপি রঙের আফসান আরা এশিয় রতিকৌশল আর গোপন রোমাঞ্চ নিয়ে উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে। কালো রঙের পুরু সোফার ওপর প্রেমহীন আনন্দর জন্য ঘাম ঝরে।

হ্যাঁ, এইসব শারীরিক বোঝাপরায় প্রেম ভালোবাসারও একটা ব্যাপার আছে বৈ কী। দার্শনিক এরিক ফ্রম ‘দি আর্ট অভ লাভিং’ গ্রন্থে লিখেছেন: ‘ দ্য প্রিন্সিপালস অভ দ্য ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটি অ্যান্ড দ্য প্রিন্সিপালস অভ লাভ আর ইনকম্পাটিবল। ’ দরজায় মৃদু শব্দ । আলেকজান্ডার জ্যাকব ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন। ৩২/৩৩ বছরের একজন শান্ত চেহারার যুবক রুমে প্রবেশ করল।

নীল রঙের ব্লেজার পরা য্বুকটির চোখে চশমা, হাতে ফুলের তোড়া। আলেকজান্ডার জ্যাকব মাথা নাড়লেন । ফিসফিস করে বললেন, এস এটহ্যান। দানিয়েল এটহ্যান, আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর মেয়ের জামাই । আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর একটাই মেয়ে।

মুহূর্তেই জানেট-এর একমাথা সোনালি চুল আর সুন্দর মুখটি মনে ভেসে ওঠায় আলেকজান্ডার জ্যাকব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জানেট দু-বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তারপর থেকে দানিয়েল এটহ্যান-এর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীন হয়ে এসেছিল। ছেলেটি আজ এল বলে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেন তিনি। ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে ঝুঁকে পাশের টেবিলে ফুলের তোড়া রেখে দানিয়েল দাঁড়িয়ে থাকে।

আলেকজান্ডার জ্যাকব বললেন, দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বস। দানিয়েল বসে। তোমার মা কেমন আছেন? আলেকজান্ডার জ্যাকব জিজ্ঞেস করলেন। আছে একরকম। শুনেছি- আলেকজান্ডার জ্যাকব কথা শেষ করলেন না।

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। দানিয়েল বলল। ট্রিটমেন্ট চলছে ঠিকঠাক? হ্যাঁ। চলছে। দানিয়েল বলল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলেকজান্ডার জ্যাকব বললেন, কাল জিম মারা গেল। জিম-এরও ক্যান্সার হয়েছিল। জিম? দানিয়েল -এর ভ্রুঁ কুঁচকে ওঠে। জিম ফষ্টার। বৈজ্ঞানিক।

এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার মিজাইল-এর মেইন কনসেপ্টটা ওরই। ওহ্। ঘরটিতে স্তব্ধতা জমে ওঠে। একটু পর আলেকজান্ডার জ্যাকব ফিসফিস করে বললেন, সারা জীবন আমর্স ডিল করলাম ... নিজের মৃত্যুর কথা যে ভাবিনি তা নয়। এখন ...এখন ...নিজের মৃত্যুর মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।

কথাগুলি আলেকজান্ডার জ্যাকব এমন ভাবে বলছেন যেন দানিয়েল এটহ্যান একজন পুরোহিত। আর তিনি কনফেস করছেন। যেন জীবনে অনেক পাপ করেছেন, এখন স্বীকারোক্তির সময় এসেছে। দানিয়েল চুপ করে থাকে। সে তার শ্বশুরকে পছন্দ করে না।

দানিয়েল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ঘৃনা করে। ট্রেনটন-এর থমাস এডিসন স্টেট কলেজে শিক্ষকতা করে সে; র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন পড়ায়- যিনি বলেছিলেন: Children are all foreigners. ঈযরষফৎবহ ধৎব ধষষ ভড়ৎবরমহবৎং. কেন বলেছিলেন? দানিয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শ্বশুরের মুখের দিকে তাকায়। জানেট এর বাবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। লোকটা এখন অনুতপ্ত।

এরই প্রতিষ্ঠানের তৈরি মারনাস্ত্রের আঘাতে কত নিরপরাধ এশিয় শিশুর প্রাণ ঝরে গেছে। প্রাণ কি রহস্যময় নয়? এই প্রশ্নটিই জানেট করেছিল। তরুণী জানেট এর সঙ্গে পরিচয় ইউরোপে; জারমাট নামে সুইজারল্যান্ডের এক গ্রামে। স্কী করার সময় দূর্ঘটনায় পড়েছিল জানেট; দানিয়েল জানেট এর অচেতন দেহটি পাইন বনের ভিতর থেকে উদ্ধার করে ঘন তুষারের ওপর দিয়ে তিন মাইল হেঁটে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর জানেট সব শুনে ভীষন থমকে গিয়েছিল।

ফিসফিস করে বলেছিল: বেঁচে থাকা কি ভালো। আর ... আর প্রাণ কি রহস্যময় নয়? দানিয়েল, আমি ... আমি আপনার মত কারও জন্যে অপেক্ষায় করছিলাম। জানেট এর নীলাভ নর্ডিক চোখ আর জাইলোফনিক কন্ঠস্বরে দানিয়েল মুগ্ধ। তরুণী জানেট এর সর্বাঙ্গে কী এক মধুময় আবেশ। আর সে আবেগ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারঙ্গম সে।

জানেট সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা নির্জন পাইনবনের ভিতর একটা কাঠের কেবিনে দু সপ্তাহ ছিল । চৌদ্দটা দিন গভীর প্রেমে মগ্ন হয়েছিল তারা। সুইজারল্যান্ডেই বিয়েটা সেরে ইউ এস ফিরল তারা ... আলেকজান্ডার জ্যাকব কী যেন বলছেন। দানিয়েল কান পাতে। ... আমি ছিলাম ডিফেন্স কনট্রাক্টর।

মার্কিন সিনেটরদের ঘুষ দিতাম রিটার্ড মার্শাল এর ওয়েপন কেনার জন্য। বলে চুপ করে থাকেন আলেকজান্ডার জ্যাকব। একটু পরে বললেন, তোমার প্রভাবেই সম্ভবত জানেট আমাকে “রিচার্ড মার্শাল”-এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পেনসিলভানিয়ায় জমি কিনে খামার করতে চাপ দিয়েছিল। ওর কথা আমি শুনিনি। কেন? ওই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার নেশা।

মাসে দু-একবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডিনার, ঘন ঘন পেন্টাগনে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং, সিনেটরদের জমকালো পার্টি। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছোনো আমার জীবনের লক্ষ ছিল। আমার জন্ম নিউ ইয়র্কের এক দরিদ্র পরিবারে। রেলওয়েতে চাকরি করতেন আমার বাবা; যখন কলেজে পড়ি, হঠাৎ বাবা মারা যান, বছর না ঘুরতেই মা আবার বিয়ে করেন; আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। নিরাপদ আশ্রয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাতারাতি নিউ ইয়র্ক শহরের হোমলেস দের কাতারে নেমে গেলাম।

শীতের রাতে গরম কাপড় পাইনি, বছরের পর বছর একবেলা খেয়ে কাটিয়েছি। তিক্ত জীবন সংগ্রাম কাকে বলে আমি জানি। জীবনে যাতে তিক্ততার মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছোনো আমার জীবনের লক্ষ ছিল। কী করে যে পড়ালেখা শেষ করেছি তা আমিই জানি। পড়ালেখার পাশাপাশি এমন কোনও কাজ নেই করিনি।

পড়াশোনা শেষ করে ফেডারেল কার্টিজ কোম্পানীতে জয়েন করি। “রিটার্ড মার্শাল” এ জয়েন করি আরও অনেক পরে। সেই বয়েসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই মনে করতাম পৃথিবী। “রিটার্ড মার্শাল” অস্ত্র তৈরি করে; সে অস্ত্র মার্কিন সরকার কেনে; যুদ্ধ না বাধালে অস্ত্র বিক্রি সম্ভব না, আমার বেতন জুটবে না -এতসব তখন ভাবিনি ... বলে আলেকজান্ডার জ্যাকব চুপ করে থাকেন ।

মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। দানিয়েল বৃদ্ধের তামাটে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিলের মুখের সঙ্গে মিল আছে মুখটার। স্যাম বিল। দানিয়েল এটহ্যান এর ছোটবেলার বন্ধু।

ছোটবেলায় বোঝা যায় না বড় হয়ে কে কবি হবে আর কে সৈন্য হবে। গিটার বাজিয়ে চমৎকার গান করত বিল। বিশেষ করে বব ডিলানের যুদ্ধবিরোধী গান মাস্টার্স অভ ওয়র ... Come you masters of war You that build all the guns You that build the death planes You that build all the bombs You that hide behind walls You that hide behind desks I just want you to know I can see through your masks. তার পরও সৈনিকের জীবন বেছে নিল বিল। জয়েন করল ইউএস মিলিটারিকে । বিল এর বাবা ভিয়েতনামের যুদ্ধে পঙ্গু; বিল নিহত আফগানিস্তানে।

অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার পাইলট ছিল। তালিবান লকেট লাঞ্চার আঘাতে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল সেটি। আলেকজান্ডার জ্যাকবএর তামাটে মুখের সঙ্গে বিল এর মুখের অদ্ভুত মিল। ঘুমন্ত কিংবা মৃত লোকটা দিকে তাকিয়ে আছে দানিয়েল ... লোকটা খুনিদের একজন। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই খুনি; মহাকালের কাছে অপরাধী।

(কথাটা দানিয়েলের মা বলতেন, ভদ্র মহিলা একজন কবি ...) আলেকজান্ডার জ্যাকব খুনিদের একজন। বৃদ্ধের ঘুম ভাঙছে না। বেঁচে আছেন তো? নাকি কনফেসন শেষ বলে চলে গেছেন? আমার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ? দানিয়েল কাঁধ ঝাঁকালো। তারপর উঠে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে ।

বৃদ্ধের জীবনকাহিনী শোনার ধৈর্য্য নেই তার। তিনি কী বলবেন তা দানিয়েল জানে। তার দায়িত্ব শেষ। জানেট এখন স্বপ্নে এসে অভিযোগ করে বলবে না: বাবা হাসপাতালে। বাবাকে তুমি দেখতে যাচ্ছো না।

লোকটা যতই খুনি হোক। মৃত্যুপথ যাত্রী। একবার গেলেও তো পার ...এজন্যই আজ হাসপাতালে আসা। দানিয়েলের মা কবি রবার্টা অ্যালিসন; তিনিই আজ জোর করে ছেলেকে হাসপাতালে পাঠালেন; কবি বলেই মহিলা হয়তো অসম্ভব সংবেদনশীল, ছেলের স্বপ্নে এসে অভিযোগ করে মৃত পুত্রবধূ জানেট । জীবনে এ এক শিহরণ জাগানো ঘটনা।

হাসপাতালের বাইরে শেষ বিকেল ঝলমল করছিল। ট্যাক্সি নিল দানিয়েল । মা আর ছেলের গাড়ি নেই-কোনওকালেই ছিল না; দুজনেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে, দুজনেই নিরামিশাষী, দুজনেই ব্যাতিক্রমী আমেরিকান। দানিয়েলের বাবা চাকরি করতেন পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে। স্বামীর মৃত্যুর পর দানিয়েলের বিধবা মা আর বিয়ে করেনি।

... তখন কী বললেন জানেট এর বাবা? যখন কলেজে পড়ি, হঠাৎ বাবা মারা যান, বছর না ঘুরতেই মা আবার বিয়ে করেন; আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এই জবানবন্দিতে একজনের অস্ত্রব্যবসায়ী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত রয়েছে কি? দানিয়েল ভাবল। ... না, দানিয়েলের বিধবা মা কবি রবার্টা অ্যালিসন স্বামীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি। কলেজের শিক্ষকতা আর কয়েক হাজার বইয়ের ভিড়ে জীবনের এক কঠিন তাড়নাকে ভুলে ছিলেন-যাকে বলে সেক্স; যা চিন্তাশীল মানুষের জন্য এড়িয়ে চলা কঠিন নয় ... একমাত্র ছেলেকে শৈশব থেকেই কাব্যমূখি করে গড়ে তুলেছেন কবি। তার প্রিয় কবিদের একজন র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন।

যিনি বলেছিলেন:চিলড্রেন আর অল ফরেনার্স। কেন বলেছিলেন? দানিয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন খাবার টেবিলে বসে মার সঙ্গে শিল্পসাহিত্য নিয়ে কত কথা হয়। অস্ত্রব্যবসায়ীর মেয়ে জানেট এর সঙ্গে বিয়ে হোক মা তা চাননি ... মা বলে ...মানুষকে দেখতে শিখতে হবে। আলেকজান্ডার জ্যাকবরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে ... দেবদূতের খুনি হয়ে ওঠে! এশিয়ার বুদ্ধ দেখতে চাইলেন বলে প্যালেস ত্যাগ করলেন।

আজও তাঁর কথা আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। (কবি রবার্টা অ্যালিসন এশিয়াকে বলেন বুদ্ধের মহাদেশ!) ...মায়ের কথাগুলির সঙ্গে দানিয়েল ও একমত ... তবে -জানেট তাকে গ্রাস করছিল; যে কারণে জানেট এর সঙ্গে বিয়ের পর মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল। দু-বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় জানেট নিহত হলে মা আবার ছেলের জীবনে ফিরে আসেন। ট্রেনটন শহরে ছেলের সঙ্গেই থাকেন কবি রবার্টা অ্যালিসন । তিনিও ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী-ট্রিটমেন্ট চলছে।

কবি রবার্টা অ্যালিসন এখন অবসর জীবন যাপন করছেন । জাপানি কবি সাকাকি নানাও এর জীবনদর্শনের ওপর বই লিখছেন । সে বইয়ের নাম: ‘দি অ্যালকেমি অভ অ্যাওয়ারনেস’; সাকাকি নানাও যুদ্ধ বিরোধী ও পরিবেশবাদী কবি হিসেবে বিশ্বময় সমাদৃত । তাঁর কবিতায় প্রাচীন ভারতে উপনিষদের শান্তির বাণী ধ্বনিত হয়। কবি সাকাকি নানাও এর কবিতাগুলির রচনাশৈলী প্রবন্ধের মতন।

তাঁর একটি কবিতা পাঠ করা যাক- ENVIRONMENTAL CASE: NUCLEAR POWER PLANTS AND EARTHQUAKES IN JAPAN Fifteen nuclear power plants north of Kyoto, I visit there many times I stay at Shingon or Zen temples that are anti-nuke. Mostly Japanese Buddhists very conservative, they never talk about nuclear power issue but the monks at those temples shout, "no nukes, no nukes!" Kyoto is so close to the plants, only 100 miles and wind always blowing: Kyoto to Osaka to Kobe Because of wind course if something happens millions of people must die. Already the government thinks 5 million will die if some- thing happens to a power plant. Like an earthquake. আজও কবিতা লেখেন কবি রবার্টা অ্যালিসন । অনেকে মনে করেন কবি রবার্টা অ্যালিসন এর কবিতার ওপর জাপানি কবি সাকাকি নানাও এর প্রভাব রয়েছে। তবে এই প্রভাবের বিষয়টি বড় নয়, বড় হল কবি রবার্টা অ্যালিসন এর প্রত্যয়। পরিশেষে কবি রবার্টা অ্যালিসন-এর সা¤প্রতিক লেখা একটি কবিতার খসড়া পাঠ করা যাক - এরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে ধনী ও সুখি হতে চায়। এরা দেখতে পায় না- এশিয়ার পাহাড়ি দেশের আঙ্গিনায় খেলা করে সফেদ শিশুরা; এরা প্রত্যেকেই দেবদূত - র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন যেমনটা বলেছেন।

এরপরও আফগানিস্তানের ধূসর আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। তোমাদের কি জানা আছে- এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। লেজার গাইডেন্স সিসটেমে এটি নিয়ন্ত্রিত হয় । এটি গিয়ে এশিয়ার পাহাড়ি দেশের আঙ্গিনায় দেবদূত খুন করে; দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক! আর দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক বলেই আজ চিৎকার করে প্রশ্ন তোলো-কারা ঐ হেলিকপ্টার এর মালিক? এবং কি তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য? কেন তারা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এবং সাকাকি নানাও মনে করতেন এ সমস্ত প্রশ্ন তোলা অত্যন্ত জরুরি ... তিনি আরও মনে করতেন, বিশ্বজুড়ে অস্ত্রব্যবসায়ীরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে দেবদূতের খুনি হয়ে ওঠে! উৎসর্গ: সাদা কালো এবং ধূসর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.