আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ আর সেদিনের তারা

রাতের আকাশের নগ্নতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি কিন্তু পারি না মনের আকাশ দেখতে।

জেমস, ডলির খুব কাছের বন্ধু । তাদের এই চেনা পরিচয়ের পালা পাঁচ বছরের । অন্য রকম দাবী তাদের এই বন্ধুত্বের । সেই প্রচণ্ড দাবীই একটা সামান্য ঘটনাতে সূচনা করে, জীবন সঙ্গীতের এক নতুন সুর ।

অল্প সময়ের ব্যবধানে ডলির বিয়ে হয়ে যায় । জীবন কাব্যের নতুন সংকলন হয় বিয়ের বছরটি ঘুরতেই । জেমসের অস্তিত্ব স্থায়িত্বের ছবি আঁকে । যে ছবির সমাপ্তি ঘটে আর একটি জীবন ছবির জন্মে । সেদিন পূর্ণিমার রাত ।

আকাশে মেঘ ছিল না। তারপরেও চাঁদটা যে খুব উজ্জ্বল তা নয়। এক ঠান্ডা নিস্তব্ধ পরিবেশে যেখানে সময় কচ্ছপের পিঠে চড়া সেখানে জীবন যে কতটা বৈচিত্রময় তা ভাবা প্রশ্নাতীত । হয়ত সেজন্যে জীবন, জীবন কাব্যে এক ছত্রে গাঁথা সত্ত্বা, একঘেয়েমি জীবনানুভূতির শুকিয়ে যাওয়া বিনিসূতার মালা । আকাশের ঐ দূর পথে চাঁদের যেমন পথ চলা, ঠিক সে রকম এক নির্মম পথচলা।

ভাবাবেগের এই আবহ সঙ্গীতের মাঝে বেসুরে বেজে ওঠে ফোন। অলস সময়ের নিষ্ঠুর পেষনে ফোন রিসিভ করার ব্যাপারটিও যে ডলির অগ্রাহ্যের তালিকায় আছে তা একবার পূর্ণ রিং কেটে যাওযা থেকে আঁচ পাওয়া যায়। ২য় বারের মত ফোন হচ্ছিল........ {বিদ্র: বাঁকা লেখা ডলির কথা নির্দেশক এবং সোজা লেখা জেমস নির্দেশক} জেম্স: হ্যালো। ... ... ... এটা কি ০৮২৭৬#### ? হ্যালো ......... হ্যালো ? ... ... ... যদি সেরকম না হয়, আমার ধারণা, তুমি ডলি। ... ... হ্যালো ডলি।

হ্যালো কথা বলছ না কেন? ডলি: হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। তুমি বল। জেম্স: চিনতে পেরেছ ? ডলি: না চিনতে পাবার কী আছে ? জেম্স: হ্যাঁ, না চিনতে পাবার কী আছে ? এই তো মাঝখানে মাত্র একটি বছর- খুব কম সময়; যে সময়ে সাত সমুদ্র তের নদী শত সহস্রবার পাড়ি দেয়া যায়। ... ... এতো দেরীতে ফোন রিসিভ করলে যে? -- ডলি: ... ... ... ... ... একটু ব্যস্ত ছিলাম। এখনো সেই ব্যস্ততা।

অবিশ্বাস্য! তোমাকে বিশ্বাস করানোর ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। হবে হয়ত। এটাও হতে পারে আমি কখনও তোমাকে চিনতে পারিনি। এখনো নিজেকে নিজে সঙ্গ দিয়ে চলেছ? অদ্ভূত মেয়ে তুমি। আর কত দিন? ... ... ছাদে গিয়েছিলে? ... ... ... ------------------------------- কথা বল না কেন? এত দিন পর ফোন করেছ, নিশ্চয় কথা বলার আগ্রহটা তোমারই বেশি।

তুমি বলতে থাক আমি শুনছি। কিন্তু আমাকে ডানে বামে যাবার অধিকার না দিলে আমি কথা বলব কীভাবে? আমি কি নাটকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসেছি যে আয়নার সামনে দাড়িয়ে শুধু নিজের মুখস্ত ডায়ালগ বলে যাব? ------------------------------------- ------------------------------------ এক মূহুর্তের জন্যে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম। মাঝখানে যে এতগুলো দিন পার হয়ে গেছে মনে ছিল না। কী যেন বলছিলে। ও হ্যাঁ, অনেক দিন পর আজকে ছাঁদে গিয়েছিলাম।

আজকের চাঁদটা কী সুন্দর! দেখেছ? ভরা পূর্ণিমা। চারিদিক জোছনার কোমল আলোর থৈ থৈ। গায়ে মাখতে ইচ্ছে করে সে পরশ। আমি অন্ধের মত বলতে পারি, এই অস্বাভাবিক ভাললাগাকে তুমি দু’হাতে আলিঙ্গন করতে না পার, দূরে ঠেলতে পার না। কী ঠিক বলেছি? কবিত্বের ভাব ধরে রেখেছ - ঠিক আছে।

অনেক কিছুই ভুলে গেছ দেখছি। এত তাড়াতাড়ি! পুরুষরা আশ্চর্য। আগে ভাবিনি, চাঁদের কলঙ্কটাও এত কুৎসিত লাগবে। হ্যাঁ, হয়ত সত্যিই আমার মনটা আমার অস্তিত্বে কুৎসিত। কিন্তু এটা তো ঠিক – কিছূ আগেও তুমি সেই কলঙ্কিত চাঁদের দিকে আনমনে চেয়ে ছিলে।

আর ভাবছিলে, মেঘগুলো কেন বারবার চাঁদটাকে ঢেকে ফেলছে, আবার সরে গিয়ে কেনই বা মুক্ত করছে; ভাবছিলে - মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা উঁকি দিলে কেন এত ভাল লাগছে? ......................... অ্যাই মেয়ে, হ্যালো মিষ্টি মেয়ে – কি হয়েছে তোমার? এত গম্ভীর ভাব দেখাচ্ছ যে; আমি কি ভুল বললাম?---------------------------- কিছুই কি বলবে না। এতটুকু কথা বলার ইচ্ছে নেই? আচ্ছা তুমি আমার কবে পিছু ছাড়বে বল তো? রেগে যাচ্ছ কেন? না রাগ করিনি। অবাক হয়েছ? আসলে তেমন কিছু না। মনে হল তাই বললাম। আগে তো আমার কবিতায় চাঁদের উপমা থাকলে বলা নেই কথা নেই ঘচাং করে কেটে দিতে, ছিড়ে টুকরো টুকরো করতে পৃষ্ঠাগুলো।

এখন সেটাই ভাললাগছে? তা কবে থেকে শুরু করলে চাঁদ দেখা দেখির নাটক? নাটক ! আসলে জীবন তো নাটকেরই পট। তবে এই নাটকের শুরুটায় কোন নাটকীয়তা ছড়াই, যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারলাম সেদিন। .........এই তো সেদিন – তবুও একে একে চলে গেছে বারটা পূর্ণিমা। কী ভীষণ নি:সঙ্গ। অসহ্য প্রতিটা রাত।

আমার প্রতিদন্দ্বী, আমাকে সময় দেবার নীভৃত্য সহচারী - এই চাঁদ - আমার মতই... বৃথা হয়নি। কোন অপূর্ণতাও রাখিনি। জানো - হ্যালো জেমস্; হ্যালো ... হ্যা শুনছি। চুপ করে আছ যে? না, কিছু না। এই তো শুনছি তোমার কথা।

মনে হচ্ছে কত শত বছর পর তোমার কণ্ঠস্বর শুনলাম। ঠিক আগের মতই। কিন্তু কী যেন একটা নেই। ------------------------------ কী হল? আবার নিশ্চুপ হলে যে। হু ! বলবার মত কিছু পাচ্ছি না ।

কোথায় যেন সব হারিয়ে ফেলেছি। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো, এ মনটা এখনও ময়ূরী-ই রয়ে গেছে। আগে ভাবতাম, বেঁচে থাকাটা কঠিন, বেচেঁ থাকলে ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে হয়। কিন্তু এখন? এখন তো আমার ভেতরে সেই আমাকেই খুঁজে পাই। এতটুকু বদলায়নি - কেন বলতে পার? আচ্ছা আমার কথা না হয় বাদ দিলাম, তুমি কেমন আছ ডলি? --------------------------------------------- -------------------------------------------------- জানতাম নীরবতা তোমার প্রত্যুত্তর হবে।

আচ্ছা এই তুমি, তোমার জানতে ইচ্ছে করে না, কেন এতদিন তোমাকে ফোন করিনি, এই কাপাকাপা ঠোটে বলিনি, ’ডলি’। ইচ্ছের সাগর শুকিয়ে গেছে ,এখনও মরে যায়নি জেম। খুব ইচ্ছে করে, খু.....ব। কিন্তু কিভাবে? একে তো যোগাযোগ করতে পারি না, তার উপর ভয় হয়, যদি তোমার সাথে আমার ভাবনাগুলো না মেলে? আমার শান্ত মনটা যদি আবার অশান্ত হয়ে ওঠে? তখন –? ঠিক আছে বাবা বলব না । সেই ভাল।

গাছে চড়িয়ে মই টানছ। কেন এই ছেলে খেলা, আমাকে জানতে হবে জেমস। সত্য এরকমই হয়। তুমি তোমার জন্যে না হোক আমার জন্যে বলবে। জান না, কী ভয়ঙ্কর একাকীত্ব, তার মাঝে এই একটা প্রশ্নই আমি বারবার লিখেছি প্রতিটি পূর্ণিমাতে।

মনে মনে কত স্বপ্ন গড়েছি, চাঁদের হলুদ খামে পোষ্ট করেছি সন্ধ্যায়;ভোর পর্যন্ত স্থির বসে থেকেছি, তুমি পাবে বলে। তুমি আমাকে বলবে। বল জেমস্, থেমে থেকো না। প্লিজ......? তোমার গলা কাঁপছে ডলি। তুমি থাম।

আমি ভাবতেও পারছি না, তোমার ব্যথার সাগর এতটা নীল, এতটা গভীর। যতটা বুঝতে পারছ, তার চেয়ে বেশি। অ-নেক বেশি। তোমরা ছেলেরা বোঝ না, হয়ত বুঝতেই চাও না। কিন্তু তুমি আমাকে বল কেন? কেন তুমি--------- আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, বলছি।

একে একে তোমাকে সব বলছি। ---- তবে জেনে রাখ, আমি তোমাকে মিথ্যা বলব না। কবিতার মত করে বলব না, বেলা শেষের প্রহর সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। কিংবা বলব না, তুমি অন্য সবার মত। একসঙ্গে তোমার সব উত্তর দেব।

----- তার আগে আমায় একটি সুযোগ দেবে? আজ এক্ষণি ? চাঁদের আলোয় তোমার মুখটি দেখতে চাই। সত্যি বলছি, এ রকম আবদার আমি আর ২য় বার করব না। আমি শ্রেফ নিজেকে জানাতে চাই ঐ চাঁদটা এখনও লজ্জায় মুখ ঢাকে তোমার সৌন্দর্যে। সুন্দরী শব্দটা তোমার জন্যে না, জন্মেছ রুপসী হয়ে। প্লিজ ডলি একবার, শুধু একবার তুমি বেলকুনিতে আস ।

তোমাকে আজ একটিবার দেখি। জেমস্ ! অ্যাই তুমি কোথায় বল তো। তুমি আমাকে দেখছ? হ্যা দেখছি। তবে মনের আয়নাতে আর নয়, এবার দেখতে চাচ্ছি পূর্ণিমার চাঁদের আলোয়। আসবে না দখিনের বারান্দায়, শুধু একবার।

--------------------- ------------------------------------ তুমি কোথায়? কোন বিল্ডিং এ? আমাকে খুঁজে লাভ নেই। পাবে না। তোমার সামনের অসংখ্য বাড়ির কোন এক অন্ধকার রুমে, চোখে বাইনোকুলার কানে ফোন চেপে ঘাপটি মেরে বসে আছি। শুধু মনটাকে তোমার পাশে রেখেছি। তুমি সেই মনটার সাথে কথা বল।

ক্লান্তিহীন সুরে। তুমি যেমন, তোমার পাগলামিও সেরকম। আমাকে মেরে ফেল না কেন? তাহলেই তো সব শেষ হয়ে যায়। আর কত ! জানি না। --------------------- একটু বামে এসে লক্ষ্মী মেয়ের মত রেলিং ঘেষে দাঁড়াও।

এবার দূরের ঐ আকাশটার দিকে দেখ- কত তারার মেলা -– এ সব তোমার জন্যে। এই যে এইমাত্র একটা তারা খসে পড়ল। সবার ভাগ্যে দেখা মেলে না। কিন্তু তুমি দেখলে। আমিও দেখলাম।

কে জানে হয়ত কাল ঠিক ঐ জায়গাতে আর একটা তার খুঁজে পাবে। দেখবে লাল বা নীলাভ আলো ছড়াচ্ছে। ----- কী অকৃত্রিম, ভীষণ সুন্দর জোছনার আলো পড়েছে তোমার মুখে, শরীরে -– সত্যি ডলি, আজ এই তারাগুলোকেও হার মানালে। এই অনিন্দ ভাললাগা, এই অনুভূতি- এর কী নাম দেব? আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ডলি। যদিও বা আমার যোগ্যতা থাকত, তবুও তোমাকে এ আবেগের কথা বোঝাতে পারতাম না।

তুমি জানো, আমি অনেক--------- আমি জানি, আমি যা জানি, তা ভুল। আমি জানি, আমি যা জানতাম তা মরিচীকা। ব্যাস্ । আমাকে ভুল বুঝ না। তুমি বিশ্বাস না করলেও কিছু করার নেই।

-- তোমার প্রত্যেকটা মুহূর্তের খবর আমি নিয়েছি, শুধু ফোন করিনি। সব সময় চেয়েছি, একটু কথা বলি কিন্তু কি করব আমি? যখন ভাবি, তোমার কষ্টের বোঝা বাড়বে, হরিণের মত কাল চোখ দুটো লাল হয়ে থাকবে। আমি কী করতে পারি; বল? কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলাম না, হেরে গেছি। হারলে কোথায়? অন্য পুরুষদের মত হেরে গিয়েও জিতলে। মাঝখান থেকে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিলে।

আর ন্যাপকিনের মত ডাস্টবিনে ছুঁড়লে আমাকে। আমি কি করেছি জানি না। তবে সেদিন কোন ঘটনার ব্যাপারে আমার কোন হাত ছিল না। সে যাই হোক, হারানো অতীত পুরোনই থাক ডেল। অনেক কথা হল।

এবার বল, আমাদের জামাই সাহেব কোথায়? তাকে দাও। এখনও ফেরেনি। রাত বারটা। এখনও ফেরেনি? ও! বেলকুনিতে এসেই সে জন্যে এত পায়চারি করছ? হুম, তবে দু’লাইন বেশি বুঝেছ। আসলে মেয়েদের মন তোমরা ছেলেরা কখনই বোঝ না।

কী? আবার কথা বলছ না কেন? আমাকে কি ভাব তুমি বুঝিনা। ঠিক আছে, আর বোঝাতে চাইব না। আজীবন যখন ভবঘুরে পথিক হয়ে থাকবার সাধ, সেভাবেই থাক। পথিক যখন হয়েছ তখন আমার বাড়ির পথে ভুল করে হলেও একবার পা রাখ। একপলক দেখব তোমাকে।

এত তাড়া কিসের। দেখবে । খুব শীঘ্রই দেখবে। তার আগে যে জন্যে ফোন করা সেই কাজ টা তো সেরে নেই। ও! মনে আছে তাহলে! ফোনেই জানবে? হ্যা ফোনেই।

কিন্তু কি বলব, ভেবে পাচ্ছি না। আগে আস তো; তারপর----------- না আগে বলব, তারপর অন্যকিছূ। এখনও এত দাবী। ঠিক আছে যা খুশি তোমার করো। বুঝতে পারছি একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু এ সুযোগ কোন পাগলে বল? মন খারাপ করলে? কি মনে হয়? আচ্ছা বাদ দাও। তারচেয়ে এক কাজ কর, তুমি আমার সঙ্গে চল? কোথায়? ভয় পেয় না। আমার কল্পনার রাজ্যে। শুধু দু’চোখ বন্ধ করলেই চলবে। ----------- ধর, তুমি চন্দনের পাদুকা পায়ে কামিনী, শিউলী, বেলীর বাগানে হাঁটছ।

একাকী চলছ গন্ধরাজের খোঁজে। শরতের রাতের আকাশ, ঝকঝকে। আকাশের এক কোণে পূর্ণ চাঁদ আজকের মতই সুন্দর। হঠাৎ লক্ষ্য করলে চন্দ্রগ্রহন শুরু হয়েছে। অবাক হয়ে সে দৃশ্য দেখছ।

ঠিক এ সময় তোমাকে চমকে দিয়ে বললাম, ডলি এ ফুলগুলো তোমার জন্যে। তোমার প্রিয় ২৪ টা সিঁদুর গোলাপ আর মাঝখানে এই টকটকে লাল গোলাপটা কশ্মীরী। চারিদিকে ফুরফুরে সতেজ বাতাস। তোমার চুল সে বাতাস উড়ছে। ফুলগুলো তোমার বুকে লেপ্টানো।

প্রশান্তিতে তোমার চোখ আধবোজা তুমি তখন গোলাপের ভাসাভাসা গন্ধ পাচ্ছ। --------- --------------------------------------------------- ------------------------------------------------------------ হ্যাপী ম্যারেজ সিরিমনী। এবার খুশি তো? নাকি বলবে, এখনও ছেলেমানুষ রয়ে গেছি! তোমাকে যে আরও অনেক কিছু দিতে ইচ্ছে করছে। এই যেমন ধর, এখন ইচ্ছে করছে ঐ চাঁদটাকে তোমার কপালের টিপ বানিয়ে বসিয়ে দেই। আচ্ছা ওটা না হয় হিমেল ভাইয়ের জন্যে বরাদ্দ থাক।

তবে আজকের রাতের সমস্ত স্মৃতি কিন্তু এই চাঁদনী খামে তোমার ঠিকানায় পোষ্ট করলাম। প্রতিটি পূর্ণিমাতে তোমার হাতে একেকটা পৌছাবে। ঠিক আছে ম্যাডাম? এ কি তুমি কাঁদছ? আমি শব্দ পাচ্ছি কিসের.... কই না তো। এবার লক্ষ্মী ছেলের মত আপনি আমার বাসায় আসেন। কেমন? ডলি, কলিং বেলের শব্দ পাচ্ছ? সম্ভবত তোমার উঁনি।

এখন রাখি ডলি; পরে কথা হবে। না রেখো না। ও এসেছে তো কী হয়েছে? না মানে; অন্য কিছু ভাববে। ভুল বুঝবে। তোমার সমস্যা হতে পারে।

সমস্যা মনে করলেই সমস্যা। তুমি লাইনে থাক, আমি দেখে আসি। ------------------ -------------------------------------- হ্যালো, হ্যালো-----------------? -------------------------------------------- --------------------------------------------------------- [ ডলির স্বামী হিমেল চৌধুরী, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটে ব্যবসায়ীক কাজে। স্ত্রীকে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না।

ডলি-জেমস সম্পর্কের কথা আগাগোড়া জানা সত্বেও হিমেল ডলিকে বিয়ে করেছে অনেকটা প্যাঁচে ফেলেই। তারপরেও বলা যায় লোকটা বাস্তববাদী। আবার রিং হাচ্ছে। এবার পাশে হিমেল। ] হিমেল: হ্যালো।

জেমস: হ্যালো হিমেল ভাই, আমি জেমস। কেমন আছেন? হিমেল:এই তো আছি। আপনি ভাল তো। হ্যাঁ ভাল ! শুভ বর্ষপূর্তি হিমেল ভাই। হিমেল: ওহ! সিট ! আমি একদম ভুলে গেছিলাম।

অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি এখন কোথায়? আসেন একসাথে ডিনার করি। না; আজকে পারব না। হিমেল:ঠিক আছে- একদিন সময় করে আসবেন। ডলির সঙ্গে কথা হয়েছে? ডলি, এই ডলি, জেমসের ফোন।

----------------------------- --------------------------------------------------- সত্যি বলছি, কাজের চাপে আজকের কথা একদম স্মরণ নাই। ডলি: হ্যালো। কি ব্যাপার ফোন রেখে দিয়েছিলে কেন? এমনি। আজ রাখি। আবার কবে ফোন করবে? জানি না।

এখানে আসবে না। দেখবে না আমার সংসারটা কেমন? নতুন করে আর কি দেখব। তোমার মনের সব স্বপ্ন তো অনেক আগেই দেখেছি। প্রতিটি কোণায় কোণায় তোমার ছোঁয়া, ভালবাসার স্পর্শ। দু জনের ছোট্ট একটা সংসার; হিংসে করার মত সুন্দর।

চারপাশটা সাজানো গুছানো ঠিক তোমার মত। নরম বেডটা বেশ বড়। মন চাইলেই গড়াগড়ি দাও। তখন তোমার খুব ভাল লাগে। সম্ভবত: রুমটা পেইন্ট করেছ হালকা স্কাই ব্লু কালারে, ঢুকলেই কেমন যেন একটা শতীল, মুক্ত, একটা স্বাধীন স্বাধীন ভাব জেগে ওঠে।

দেয়ালে দেয়ালে অনেক ছবি। হয়ত আমার আঁকা তোমার সেই পেন্সিল স্কেটাও রেখেছ। হতে পারে ঘুমাতে গেলে ছবিটা বেড থেকে তোমার চোখে পড়ে। আর হাতের কাছেই কোন এক পাশে রেখেছ সেই সো পিছটা, যেটিতে একটু ছোঁয়া পেলেই মিউজিক বেজে ওঠে। কিংবা কর্ণার শেলফ জুড়ে সাজিয়ে রেখেছ রং বে রঙের কাঁচের পুতুল দিয়ে।

আর কিছু যদি বলতেই হয়, তাহলে বলব সোকেজে দেশি বিদেশী লেখকের গল্পের বইয়ের অভাব নেই। আর চকলেট কালারের ডাইনিং স্পেসটার কথা বাদ দিলাম। আচ্ছা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম একটা গিফ্ট, তোমার সেই প্রথম উপহার। ওটা কি এখনও আছে?-- আর না প্লিজ, থাম অনেক হয়েছে। আর পারছি না।

এভাবে আমাকে আর আলতো কর না। বুক ফুঁড়ে কান্না আসছে। না, প্লিজ ডলি না, আজ কেদো না। ------------------ ----------------------------------- হ্যালো। হ্যালো? একেবারে থেমে গেলে যে? ফোনটা রাখতে চাচ্ছি, পারছি না।

কেমন জানি খুব অস্থির অস্থির লাগছে। তোমাকে রাখতে হবে না, সারারাত কথা বল। হ্যা সারারাত। মনে হচ্ছে, তোমার আমার সর্ম্পকের গত পাঁচটা বছর, এই তো কালকের ঘটনা। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারী তাই না? আবার দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা।

মানে? না, কিছু না। আমাদের প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে? সেদিন তোমার বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমাকে খুব সুন্দর, এতটা সুন্দর দেখাচ্ছিল যে, আমি আজও তার উপমা খূঁজে পাইনি। মানুষ এত বিশ্রী সুন্দর হয় কখনও? মাঝে মাঝে মনে হয়, শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যই কী সেদিন আমাকে আকর্ষণ করেছিল, না কি অন্য কোন কিছূ। আচ্ছা তুমি না হয় ভীষণ সুন্দর মানুষ, তোমার কথা আলাদা । আমার তো আকর্ষণীয় কিছু ছিল না।

আবার ভাগ্যটা কী দেখ, আমরা একই জায়গায় ভর্তি হলাম। প্রতিদিনের দেখা সাক্ষাতের মাঝে একদিন মা’র গল্পের সাথে তোমাকে জড়ালাম। মা ছোট বেলায় প্রায়ই আদর করে বলতেন, আমার জিম যে বড় হয়ে কবে ডেলা মনিকে ঘরে নিয়ে আসবে? তিনি নাকি আমার নামটা "দ্যা গিফ্ট অব দ্যা ম্যাজাই” পড়ে তার নায়কের নামে নাম রেখেছিলেন জেমস । আর আমার বাড়ির নাম হবে জেমস ডেলাস হোম। সেদিনের পর থেকে তুমি, তোমার বান্ধবীরা এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে।

বলতে, "এই দেখ দেখ আমাদের জিম আসছে, তোরা দেখ তো ঘড়িটা হাতে, না বুক পকেটে?" তখন খুব রাগও লাগত আবার ভালও লাগত। তোমার সেই উগ্রতা আমার স্মৃতির ভান্ডারে ছিল অমূল্য রত্ন। তারপর হঠাৎ একদিন তোমাকে আমার জীবনে অনুভব করলাম, শহীদ মিনারের চত্বরে। ------------ ---------------- হুম, কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলি, তাই না। কী স্পষ্ট সেসব স্মৃতি, এখনও কত জীবন্ত সে অনুভূতি।

মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের কথা। আচ্ছা জেমস, আমরা সেখানে আবার ফিরে যেতে পারি না; পারি না কৃষ্ণচূড়ার মত রক্তিম হয়ে সাজতে কিংবা কদম ফুলের মত মিষ্টি গন্ধ ছড়াতে? [জেমস দেখতে পেল, সে ক্রমেই ডলির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার আশঙ্কায় ডলির সাথে কথা বলার কোন ইতি না টেনেই ক্যাসেট প্লেয়ার অন করে দেয়, রিসিভারটা সামনে রেখে। সে সিডিতে স্বাভাবিক কণ্ঠে কিছু কথা রেকডিং করা আছে। তার ইচ্ছা, ডলির কণ্ঠ শুনতে শুনতে মৃত্যুর কোলে সে ঘুমিয়ে পড়বে।

তাই সাইলেন্সার লাগাতে লাগাতে সে ভাবছে, ডলির এই ভালবাসার বিপরীতে তার আর কিছুই চাওয়ার নেই, থাকতে পারে না। ] খট্ ---- ---- শো শো ---- ---- ধ্রুম। হিমেল: অ্যাই ইয়ে ডলি, এদিকে একটু আসবে? খুব খিদে পেয়েছে। জেমসকে বরং একদিন সময় করে আসতে বলে দাও। হ্যাঁ বলছি।

হ্যালো জেমস কিসের শব্দ হল? হ্যালো হ্যালো?---- জেমস: ডলি অনেক দিন পর একটা কবিতা লিখেছি। তোমার নামে উৎস্বর্গ করা। শুনবে? হ্যাঁ বল। তুমি কতটা অচেনা, আমার তা অজানা। তুমি কতটা দূর, কাছে এসে শুনলাম সে সুর।

তুমি কতটা আপন, দূরে গিয়ে বুঝলাম তুমি নিপুণ। তুমি কতটা নিরীহ, তোমার আক্রমন তা বোঝাল। তুমি কতটা হিংস্র, তোমার ভালবাসা তা জানাল। কেমন হয়েছে লেখাটা? ডলি: এটুকুই? মনেহল শেষ হয়েও শেষ হয়নি। -------------------- ------------------------------- {কিছুটা নিরবতার পরে আবারও জেমেসের যান্ত্রিক কন্ঠ} জানতাম তুমি এটাই বলবে।

ডলি একটা অনুরোধ রাখবে? না চাইলেও রাখতে রাখতে হবে। যদিও আমি হলে পারতাম না কিন্তু তোমাকে পারতেই হবে। কারণ তুমি আমার একমাত্র ভালবাসা। মেয়েদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। তোমাকেও তাই করতে হবে।

যা ঘেটেছে, সে সবকে মেনে নিয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মত সংসার গড়ো। জানি, এ কথা বলা মানে মৃত্যুদন্ড পাওয়ার মত অপরাধ। এ কথা বলা মানে, তোমার অস্তিত্বকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা। তারপরেও বলছি। ভেবে দেখ একবার, অতীত কখনও ফিরে আসেনা।

তোমার রূপ, গুণ, ঐশ্বর্য্য, ব্যক্তিত্ব সব অসাধারণ, অতুলনীয়। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । তারপরও আমার অনুরোধ, অতীত স্মৃতির মায়াকে জড়িয়ে কী করবে, ভুলে যাও। সময় জীবনকে যা দিচ্ছে তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত কর না। জীবন তো জীবনের পথে চলবেই।

একদিনে অনেক বলে ফেলেছি। আর না। ------ ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ শো শো-------------------- হ্যালো। হ্যালো জেমস। হ্যালো? পুলিশ: সকাল ৬ টায় ঘুম ভেঙ্গে দেবার জন্যে দু:খিত।

আপনিই মিসেস হিমেল? হ্যা। কী ব্যাপার? এখানে একটা কবিতার সিডি আছে। মিস্টার জেমস এই সিডি আর ডাইরী দু’টো আপনাকে দিতে লিখে গেছেন। গতরাতে উনি সম্ভবত: আপনার সাথে শেষবারের মত কথা বলেছেন। [ডলিকে লেখা ডাইরীর শেষ অংশ] ডলি. এই চিঠি তোমার হাতে পৌছাবে কিনা জানি না।

তবে চিঠিটা পড়লে আমার প্রতি তোমার অনুরাগ, অনুশোচনা কিছুটা হলেও কমবে বলে আমার ধারণা। আচ্ছা জেমসের ঐ গানটার কথা তোমার মনে পড়ে ”দুখিনী দু:খ করো না, আঁধারের সিঁধ কেটে আলোয় এসো। ” হ্যাঁ আমি সেই আলোয় আসতে চেয়েছি। কিন্তু তীব্র আলোর ঝলকানিতে আমি আবার অন্ধকারের অতলে হারিয়ে গেছি। এক বছর আগে লেখা তোমার একটা চিঠি পেয়েছি গতকাল।

সেদিন তাড়াহুড়ো করে আসার পথে হুন্ডা এক্সিডেন্ট করি। মোবাইলটা কখন ছিটকে পড়ে গেছে, জানি না। ক্লিনিক থেকে ফিরতে ফিরতে ঘন্টা দু’য়েক দেরী হয়ে যায়। এদিকে তুমি অপেক্ষা করে করে আমাকে না পেয়ে দরজার ফাঁক গলিয়ে চিঠি রেখে যাও। আমি ফিরে এসে না তোমার চিঠি, না তোমাকে পেয়েছিলাম।

তারপরের সবকিছু তো তারপরেই রয়ে গেছে। এরপর গতকাল রূম পরিষ্কার করার এক ফাঁকে বাইরের দরজার কাছে কার্পেটের নীচে তোমার চিঠিটা আবিষ্কার করলাম। চিঠিটা পড়ার পর সমস্ত ঘটনা দুর্ঘনার রূপ নিল। কিন্তু যে আমি তোমাকে ভুল বুঝে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে, তোমাকে অপরাধী করলাম, তোমাকে জীবন্ত লাশে পরিনত করলাম, তোমার সত্ত্বাগুলোকে রোলার চাপা দিলাম, রক্তাত্ব করলাম সুখের স্মৃতিগুলোকে, তার কী হবে। কি শাস্তি এর বিনিময়ে হওয়া উচিত, তুমিই বল? জানি, তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাইলে তুমি নি:শর্তে আমাকে ক্ষমা করবে।

তুমি তো ক্ষমা করবে তোমার ভালবাসাকে, ভাললাগাকে। কিন্তু আমি? এই আমাকে ক্ষমা করব কীভাবে? যে আমি কখনও ফিরিয়ে দিতে পারব না তোমার সেই সুন্দর দিনগুলিকে, পূর্ণ করত পারব না তোমার নিষ্পাপ চাওয়া পাওয়া কে। আমি তো আলোতে আসতে চাই ডলি - এই অপরাধীর উপযুক্ত বিচার চাই। শেষ পর্যন্ত আমার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ব করতে সবচেয়ে সহজ দিকটাই বেছে নিয়েছি। একে তুমি কাপুরুষতা ভেবো না, বল না – জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছি।

বরং এর মাধ্যমে আমি চাই - তোমার ভালবাসার মানুষটির ভালবাসা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক, তুমি নিরপরাধ ছিলে, সে সত্য স্বীকৃতি পাক; অবসান হোক এ দু’টি জীবন নিয়ে ওপর ওয়ালার লীলা খেলা। জীবনের এ দ্বার প্রান্তে দাড়িয়ে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু তুমি আমাকে ক্ষমা কর না। আমার বোঝা আমাকেই বহন করতে দাও। এখন থেকে তোমার আর কোন পিছু মায়া নেই।

সুন্দর সংসার গড়তে গড়তে তোমার জীবনের সার্থকতা বেড়ে উঠবে। সেখানে তোমার সন্তানেরা মা - মা কলরবে চারিদিক মুখরিত রাখবে। স্নেহে আহ্লাদে তোমার বুক ভাসিয়ে দেবে। তাদের ভালবাসায় তৃপ্তিতে হাসতে হাসতে তুমি কাঁদবে। আমাকে ভুল বুঝ না।

আমি তোমারই। ভাল থেকো স্বাভাবিক থেকো। জেমস্ ১৩/০২/২০১০ "জেমস্ ডলি, তারা কেউই এই এক এক রঙে জীবনকে নতুন কিছু দিতে পারেনি। আমরা পারিনা। আসলে এরা আমরা শুধুমাত্র ঘটনার উপস্থাপক।

যার উপস্থাপনা যতটা নিখুঁত সে ততটা স্বার্থক। আর এই সার্থকতা স্পষ্ট হয় যখন কোন কিছুর প্রস্থান ঘটে। ঘটে আমূল পরিবর্তন। যেমন বার্ধক্যে না পৌছালে আমরা বুঝিনা শৈশব সুখের কথা। এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক ।

জন্মের পরই আমরা চলব মৃত্যুর পথে; সভ্যতা চলবে ধ্বংসের দিকে; একইভাবে মহাবিশ্ব চলবে মহাশূন্যের দিকে। তারপরেও এই ছকে বাঁধা চিরাচরিত একঘেঁয়ে জীবনে আমরা চাই একটু অন্যকিছু। হয়তবা এই অন্য কিছু চাওয়াটা অন্য একটা ছক, অন্য একটা জীবন শর্ত। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।