আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রণা-৬



তমা ভুলে যেতে চায় ছেলেটাকে। ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজ, পড়ালেখা নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু তিনদিন পর আবার পড়ে যায় ছেলেটার সামনে রাস্তায়। তেমনিভাবে চেয়ে থাকে ছেলেটা, ঠোঁটে ঝুলানো একটা তেলতেলে হাসি। গা ঘিনঘিন করে তমার।

এমন না যে ছেলেটা দেখতে খারাপ, কিন্তু কি যেন খারাপ কিছু আছে ওর চোখে। পর পর তিন-চারদিন যখন সামনে পড়ে গেল তখন তমার অস্বস্তি চরমে পৌঁছেছে। ওর মধ্যে কেমন যেন একটা আতঙ্ক কাজ করছিল। কাছের বন্ধু প্রিয়ন্তী টের পেল ওর এই অস্বস্তি। বারবার করে জিজ্ঞেস করল তমাকে কি হয়েছে।

তমা এড়িয়ে যেতে যেতেও শেষ পর্যন্ত বলল সব কথা। প্রিয়ন্তী বুঝল না। ‘কিছু বলে না, তাহলে সমস্যা কি! কেউতো তাকায় থাকতেই পারে। তুই কি কম সুন্দর? আমি ছেলে হলেতো আমিও তোর প্রেমে পড়ে যেতাম আর সারাদিন তাকায়ে থাকতাম। ’ তমা এই ধরনের কথা অনেক শুনেছে।

মাঝে মাঝে ওর ভালই লাগে, নিজেরই নিজেকে ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এখন ভাল লাগছে না। ও বিরক্ত হয়, চোখ কুঁচকে বলে, ‘যা বুঝিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না প্রিয়ন্তী। আমি এখন অনেক অশান্তির মধ্যে আছি। ’ তমার বিরক্তি দেখে প্রিয়ন্তী আর কিছু বলে না।

ওইদিন তমা একটা স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফেরে কারণ পথে ছেলেটার সাথে দেখা হয়নি। গোসল, খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুম, সেই ঘুম ভাঙতে বিকাল। ঘুম ঘুম আমেজ চোখে নিয়ে তমা বারান্দায় যায়, আর গিয়েই থমকে দাঁড়ায়। ওই ছেলেটা মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে বাসার সামনের রাস্তার উল্টোদিকে। একা না, সাথে আরো চার-পাঁচজন।

তাকিয়ে আছে ওর বারান্দার দিকে, তারা যে ওকে খুঁজে খুঁজেই এখানে এসে দাঁড়িয়েছে তমা এটা ভালই বুঝতে পারছে। তমা এসে দাঁড়ানো মাত্রই ওরা সচকিত হল। ওকে ইশারা করে কিসব বলতে আর হাসতে লাগল, একজন সিটিও বাজাল। তমা সাথে সাথে ঘরে চলে আসল। এত সুন্দর একটা বিকেল মাটি।

ঘরে বসেও অনেক অনেকক্ষণ ধরে তমা টের পাচ্ছিল ওদের হইচই। বই নিয়ে বসেও স্বস্তি পাচ্ছিল না। রাত প্রায় আটটার দিকে শুনল মোটরসাইকেল স্টার্ট দেয়ার শব্দ। চলে গেল ছেলেগুলো। ঘুম হল না তমার সারারাত।

একটা ভয়, একটা অস্বস্তি ওকে সারাক্ষন ঘিরে ধরে থাকল। পরদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে আবার ওই দলটার সামনে পড়ল তমা। তাদের সেইসব চিৎকার, হাসি। প্রিয়ন্তী ছিল সাথে, ও বুঝতে পারল কেন তমা অস্থির হয়ে ছিল। প্রিয়ন্তী নিজেও টেনশনে পড়ে গেল, কারণ ও ছেলেগুলোকে চিনতে পেরেছে।

ওরা ভাল না, বখাটে হিসেবে পরিচিত। শুধু দলনেতাটাকে চেনা গেল না। প্রিয়ন্তী যাওয়ার আগে তমাকে বলে গেল, ‘সাবধানে থাকিস’। ওইদিন বিকালেও দলবল নিয়ে ছেলেগুলো বাসার সামনে হল্লা করতে লাগল। তমা ভুলেও আর বারান্দায় গেল না।

............. ................. .......................... প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল। মারুফ আর তার দলবলের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। ছেলেটার নাম মারুফ। এই এলাকাতেই তাদের বিশাল বাড়ি, ওর বাবা বিরাট ব্যবসায়ী, অঢেল টাকা। রাজপ্রাসাদের মত বাড়িটা তমারা ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে, কেউ থাকে না।

এতটুকু জানতো মালিক পুরো পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে থাকে, আমেরিকায়। এখন মারুফের মা মারা যাওয়ার পর বাবা-ছেলে দেশে ফিরে এসেছে। মারুফের আরেকটা ভাই আছে, সে রয়ে গেছে সেখানেই। এতটুকু সবার কাছে পরিস্কার টাকা দিয়ে তারা বিরাট বড়লোক হয়েছে, মানুষ হয়নি। বাবা সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত আর ছেলে, মারুফ দলবল যোগাড় করে যত বখাটেপনা আছে, করে বেড়াচ্ছে।

দলবল যোগাড় হতে সময় লাগেনি। কারণ ওর হাতে আছে অনেক টাকা। ওরা রোজ বাসার সামনে এসে হই-হল্লা করে, কলেজে আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায়, আজেবাজে কমেন্ট করে, মাঝে মাঝে ডেকে কথা বলার চেষ্টা করে, চিঠি পাঠায়। তমা ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। একদিন তমা একা একা ফিরছিল বাসায়, সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

মারুফ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল। তমা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। মারুফ ঠান্ডা গলায় বলল, ‘শোনো মেয়ে, আমি সোজা-সাপ্টা কথা বলি। আমি তোমাকে ভালবাসি আর বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজি কি না বল।

’ তমা চোখ তুলে তাকাতে পারে না। চারদিকে তাকায় যদি কোন সাহায্য পাওয়া যায়। তমা কথা বলে না দেখে ক্ষেপে যায় ছেলেটা। হাত চেপে ধরে ওর। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, ‘কথা বল না কেন? একটা কথা বলি শুনো, তুমি যদি স্বেচ্ছায় রাজি হওতো ভাল, না হইলেও আমারেই তোমার বিয়া করতে হবে।

দরকার হইলে তুইলা নিয়া যাবো। ’ চোখ ফেটে পানি আসে তমার। হাত ছাড়ানোর জন্য বেঁকে-চুড়ে যায়। কিন্তু পারে না। ফুঁপিয়ে উঠে বলে, ‘কেন এমন করতেছেন আমার সাথে? আমি চাই না, আমি চাই না আপনাকে।

ছেড়ে দ্যান। ’ এমন সময় উল্টো দিক থেকে একটা রিকশা আসতে থাকে। বেলের শব্দ পেয়ে হাত ছেড়ে দিল মারুফ। তমা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাসায় আসল। রাতে কতবার যে ও সাবান দিয়ে হাতের ওই জায়গাটা ধুল! কিন্তু তবু মনে হচ্ছিল হাতটা নোংরা হয়ে আছে।

গা ঘিন ঘিন করছে। সারারাত কাঁদতে কাঁদতে কেটে গেল। চলবে........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।