আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্রিতে সুলভ জিনিস প্রেম-রেজালা

"সোনার বাংলা রূপোর পালে ব্লগের হাওয়া লাগলো বলে, ঘুচল শিকল মুক্ত পাখির ফুটল বুলি যন্ত্রজালে। "

ভালোবাসার ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে এর চেয়ে সুলভ জিনিস এই ডিজুস যুগে আর দুটি নেই। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যখনই ৫০০ ফ্রি এসএমএস-জাতীয় অফার ছুড়ে দেয়, তখনই কয়েক হাজার সম্পর্কের বীজ ঢুকে পড়ে বিভিন্ন নম্বরে। একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এই অসামান্য অবদান সত্যিই প্রবাদতুল্য। এখানে একটা সম্পর্কের রিভিউ তুলে ধরা যায়।

রাত ১২টা বেজে এক। কোনো এক তরুণ আয়েশি ভঙ্গিতে খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে কাঁধের নিচে দুটো বালিশ আর পায়ের নিচে একটা কোলবালিশ রেখে ডায়াল করা শুরু করল তার নিজের নম্বরের উল্টো দিক থেকে। যেমন, তার নাম্বার যদি হয় ৩৬৯, তো সে ডায়াল করল ৯৬৩ নাম্বারে। ওপাশ থেকে গুরুগম্ভীর কোনো এক মাঝবয়সী আংকেলের ভয়েস ভেসে এলে লাইন কেটে দিয়ে ক্রমান্বয়ে একটা বা দুটো সংখ্যা পাল্টে পাল্টে ডায়াল করতে থাকল। মাত্র কিছুক্ষণের ধৈর্যের পরীক্ষা, তারপর— ওপাশ থেকে মেয়েটি প্রথমেই জিজ্ঞেস করবে —কে? ছেলেটি বলবে, —এটা কি নীরার নাম্বার? —না, রং নাম্বার।

—আপনি কে, জানতে পারি? —আপনার নাম? —সেটার কী দরকার? —না মানে, এমনিই, কৌতূহল। —অতি কৌতূহল ভালো না, রাখি। —না, শোনেন শোনেন, একটু কথা বলি। —কেন বিরক্ত করছেন? —কই, বিরক্তি করছি কোথায়? আমি কি কোনো অভদ্র আচরণ করেছি? —এত রাতে আননোন কোনো নম্বরে ফোন করে আলাপ জমাতে চাওয়াটাও কিন্তু কোনো ভদ্রলোকের কাজ নয় (দেখেন পাঠক, দেখেন, মেয়েটাও কিন্তু ফোন রেখে দিচ্ছে না, এখানেই মজা)। —না, আসলে খুব নিঃসঙ্গ লাগছিল তো।

—আচ্ছা, তাই? তো আপনার নীরার নম্বরে ট্রাই করেন (দেখেন পাঠক, দেখেন, মেয়ে তার নিজের অজান্তেই নীরার প্রতি কিঞ্চিত্ জেলাস ফিল করছে, এখানেই মজা)। —নীরা কে? —বারে, আপনি তো ফোন করে নীরাকেই চাইলেন। —তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং তো! —আপনি বলতে চান, আপনি নীরা নাম্নী কাউকে চাননি? —মনে পড়ছে না, চাইতেও পারি। যদিও এ নামে কাউকে চিনি না আমি। —এ নামে কাউকে চেনেন না? তবে যে খুঁজলেন! —না চিনলে কি খোঁজা যাবে না? আমি তো আমাকেও চিনি না, তাই বলে কী প্রতিদিন নিজেকে বয়ে বেড়াচ্ছি না? —বাহ্, আপনি একটা আজব তো (দেখেন পাঠক, দেখেন, মেয়েটা টোপ গিলে ফেলেছে, এখানেই মজা)।

—যা হোক, আচ্ছা, আপনার নাম যেন কী বলেছিলেন...। —সীমা, হায় আল্লাহ, নাম তো বলে ফেললাম। আগে তো কোনো নামই বলিনি, কেন মিথ্যে বলে আমার নামটা জেনে নিলেন? —কে বলেছে আগে বলেননি? বলেছেন, আমার মনে পড়েছে, সীমাই বলেছিলেন নাম। —আশ্চর্য, আমি বলিনি, আমি নিশ্চিত। —বলেছেন, মনে মনে।

—আপনি মনের কথাও ধরতে পারেন? —হুঁ। —আর কী কী পারেন? —আরও অনেক কিছু পারি, আস্তে আস্তে জানবেন। —আপনার নাম তো জানা হলো না। —আমার নাম? আমার নাম যেন কী? দাঁড়ান, একটু দেখে নেই (দেখেন পাঠক, দেখেন, ছেলেটা মেয়েটাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে এবং সে পারছেও, এখানেও মজা)। — নিজের নামটাও ভুলে গেছেন? —না, আসলে অনেক দিন হয় কেউ নাম ধরে ডাকেনি তো, তাই।

—কেন? কেন? কেউ ডাকেনি কেন নাম ধরে? —কে ডাকবে? কেউ-ই তো নেই আমার (দেখেন পাঠক, দেখেন, এই জায়গাটায় একটু বিশেষ নজর দিন, এখানে ছেলেটি মেয়েটির কাছ থেকে সিমপ্যাথি আদায়ের চেষ্টা করছে, মোবাইল রিলেশনের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। ছেলেটা নিজেকে যতটা অসহায় করে উপস্থাপন করবে, মেয়েটা ছেলেটার প্রতি ততটাই ‘আহারেসুলভ মমতায় এগিয়ে যাবে, এখানেই মজা)। —কোথায় থাকেন আপনি? মনে আছে তো? —হ্যাঁ হ্যাঁ, নামটাও মনে পড়েছে। আমার নাম আকাশ, থাকি অমুক এলাকায়, আর আপনি? —আমি তমুক এলাকায়। পাঠক, এরপর ওদের কথাবার্তায় রেখে আপনি দুটো দিন ঘুরে আসুন, যেমন রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানে চুলায় সবকিছু তুলে দেওয়ার পর উপস্থাপক আর অতিথি কিছুটা সময় গল্পগুজব করে কাটায়, তেমন।

দুদিন পর এবার আপনি ঢাকনা তুলে দেখবেন তৈরি হয়ে গেছে সুস্বাদু প্রেমের রেজালা, জিভে ছুঁয়েও অনায়াসে বলতে পারেন—বাহ! চমত্কার! আসুন, আমরা এখান থেকেও কিছু কথোপকথন সংগ্রহ করি। —জান, আকাশের চাঁদটা দেখছ? —হুঁ। —কেমন লাগছে? —ভালো। —শুধু ভালো? —না, তোমার মতো ভালো, তুমি ওই চাঁদের গায়ে একটা চিহ্ন এঁকে দাও না, আমি দেখি! — উঁহু, চাঁদের গায়ে আমি কোনো চিহ্ন আঁকব না, তোমার হাতে আঁকব, দিবে আঁকতে? —দুষ্টু...(দেখেন পাঠক, দেখেন, আর সামনে এগোনো যাচ্ছে না, এখানেই মজা)। সুস্বাদু হালের প্রেম-রেজালা।

তবে কথা একটাই। রাতবিরাতে অপরিচিত মানুষকে ফোন করা চরম অভদ্রতা। আর যে এভাবে কোনো মেয়েকে ফোন করে সে তো চরম আনস্মার্ট। পাঠকেরা কেউ নিশ্চয়ই অভদ্র আর আনস্মার্ট নয়। Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।