আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার উপর ইসরায়েলি আক্রমণ ও যেভাবে আমি রক্ষা পেলাম।

আমি বাংলাদেশের দালাল| আকাশপথের দীর্ঘ ভ্রমণে সবারই থাকে আরামদায়ক ভ্রমণের বাসনা। জীবনে বেশ কয়েকবার প্লেনে উঠেছি। সম্প্রতি ব্যাংকক থেকে সিডনি যাবার পথে সহযাত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম দুই তরুনীকে। নাম জানিনা তাদের। বোর্ডিং শুরু হলেই আমার বামপাশের খালি দুই সিটে তারা বসলো।

হাই বলে শুরু করে জানলাম তারা দুজনই ইসরায়েলি। স্কুল ফাইনাল শেষে সিডনি বেড়াতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি কোন মানুষের সাথে এটাই আমার প্রথম সাক্ষাত। বাংলাদেশি হিসেবে ইসরায়েলে গমনের কোন সুযোগ আমার নেই কেননা পাসপোর্টে সুন্দর করে লেখা আছে আমি এই বিশ্বের সব জায়গায় যেতে পারবো একমাত্র ইসরায়েল ছাড়া। প্লেনটা ছাড়তেই তারা আমার দিকে পিঠটা বাকিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

আমি খবরের কাগজ পড়তে শুরু করলাম; সবকিছু ঠিকই চলছিলো। হঠাৎ তীব্র দুর্গন্ধে আচ্ছন্ন হলাম। হাতের কাগজটিকে হাতপাখার রুপ দিলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি সবার হাতই নড়ছে দ্রুতলয়ে। দুটো বাচ্চাও কেঁদে উঠলো।

আশে-পাশের যাত্রীদের লক্ষ্য করলাম তাদের সবার সন্দেহের দৃষ্টি আমার দিকে। আমি বিরক্তির অভিব্যাক্তি প্রকাশ করে সকলকে বোঝাতে চাইলাম যে এই দুর্গন্ধযুক্ত হাওয়ার জননী আমার পাশে অবস্থানরত দুই তরুনীর একজন বিশেষ, আমি নই। কে বোঝে কার কথা। অগত্যা আল্লাহকে স্মরণ করলাম। হে আল্লাহ! তোমার এই পেয়ারে বান্দাকে রক্ষা করো এই দুর্য়োগের হাত থেকে।

বিমানের আকাশে বাতাসে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। মনে মনে ভাবছিলাম না জানি কি গলধঃকরন করে তারা এই বিমানে চেপেছে। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখ হা করে তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। গন্ধের তীব্রতা কমে আসতেই পেপারে মনোনিবেশ করলাম। আবার ইসরায়েলি আক্রমণ হলো কোন প্রকার সাইরেন ছাড়াই।

আবার অনেকের হাত একসঙ্গে নড়ে উঠলো। অনেকের রক্তচোখ আমার দিকে বিদ্রুপের সহিত নিক্ষিপ্ত হলো। আমি আবারও আল্লাহকে স্মরণ করলাম। বললাম, "হে আল্লাহ বন্ধ করো এই ইসরায়েলি আক্রমণ। মান-সম্মান রক্ষা করো তোমার এই অসহায় বান্দার।

" চারিদিকের মানুষের রক্তচোখ আমাকে বাধ্য করলো সিট ছেড়ে টয়লেটে যেতে। ভাবলাম আবার যতোক্ষণ ইসরায়েলি আক্রমণ না হচ্ছে, আমি আর সিটে ফিরে যাচ্ছি না। দুর থেকে লক্ষ্য রাখলাম আবার কখন সকলের হাত একসঙ্গে নড়ে উঠে। এদিকে আল্লাহ হয়তবা আমার আগের প্রার্থণা মঞ্জুর করে ফেলেছেন। সময় পার হয়, সাইরেন ও বাজে না, হাওয়া বোমাও ফাটে না।

আমার আশে পাশের যাত্রীরা টয়লেটে যাওয়া আসার পথে আমার দিকে তাকিয়ে একটু করে হেসে চলে যাচ্ছেন। এক জ্বালায় পড়লাম। আবার আল্লাহকে ডাকলাম। হে আল্লাহ! শুরু করো ইসরায়েলি আক্রমণ। আমাকে আমার স্ব-স্থানে প্রতিস্থাপিত হওয়ার সুযোগ দাও।

এইবার আল্লাহ তার মহানুভবতা দেখিয়ে তাৎক্ষনিক আমার প্রার্থণা মঞ্জুর করলেন। সাইরেনসহ এবার আক্রমণ হলো। দুর থেকে দেখলাম একসঙ্গে অনেকগুলো হাত নড়ে উঠছে। মনে মনে বললাম বোঝো মজা এবার। আমার আনন্দ আর ধরে না।

গোলা বারুদের তীব্রতা কমতেই আমি ডানে, বামে, সামনে, পিছনে তাকিয়ে আমার সিটে উপবেশন করলাম। বারুদের গন্ধকে আমার তখন মনে হচ্ছিল হাস্না-হেনা আর গন্ধরাজের সংমিশ্রণ। লক্ষ্য করে দেখলাম সন্দেহের তালিকা থেকে সবাই আমার নাম কেটে দিয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণ পথে আরো বহুবার ইসরায়েলি আক্রমণ হয়েছে। কয়েকবার ফুল সাইরেন বাজিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে।

প্লেন থেকে নামার সময় দুজনেই বলাবলি করছে কি সুন্দর ঘুমটাই না হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে মনে হলো তাদের ডিনার মেনুটা জেনে নেয়া উচিত ছিলো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।