আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দর আচরণঃ উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক

চলার পথ অনেক, সত্য পথ একটাই

ইসলাম একটি পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্হা। মানব জীবনের এমন কোনো দিক বা বিভাগ নেই, যা নিয়ে ইসলাম আলোকপাত করেনি। ইসলামের সেই আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মানুষের সঙ্গে সর্বদা ভালো কথা বলা এবং সুন্দর আচরণ করা অন্যতম একটি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেনঃ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরুপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন উত্তম পন্হায়। (সুরাঃ নাহল-১২৫) ইসলামের পথে যে ব্যক্তি মানুষকে আহ্বান করে সেই ব্যক্তি ও তার কথাই হচ্ছে সর্বোত্তম।

এরশাদ হচ্ছেঃ ‘যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা ভালো কথা বা উত্তম কথা কার? (সুরাঃ হা-মীম, সিজদাহ-৩৩) ভালো কথা, ভালো ব্যবহার, সুন্দর আচরণ, যাই বলি না কেন, এগুলো হচ্ছে একটি শিল্প। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তির সার্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে, তার উন্নত ব্যক্তিত্বের প্রমাণ মেলে। সুন্দর আচরণ কাকে বলেঃ সুন্দর আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারো সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলা, দেখা হলে সালাম দেয়া, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কর্কশ ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের সুরে কখনো কথা না বলা, গিবত বা পরনিন্দা না করা, অপমান-অপদস্ত না করা, উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা, গম্ভীর বা কালো মুখে কখনো কথা না বলা, সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বিপদে পড়লে দেখা করে সহানুভুতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। সুন্দর আচরণের গুরুত্বঃ সুন্দর আচরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্হ আল কোরআনের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-কে সুন্দর আচরণ শিক্ষা দিয়েছেন। আর দয়ালনবী সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই পথহারা-দিশেহারা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। তাদেরও শিক্ষা দিয়েছেন উত্তম আচরণ। আল্লাহপাক বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। (সুরাঃ আহযাব-৭০) আল্লাহর নবী ছিলেন সুন্দর আচরণের মুর্তপ্রতীক।

মানুষের সঙ্গে তিনি কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলেননি। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রুঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।

(সুরাঃ আল ইমরান-১৫৯) অন্যত্রএরশাদ হয়েছে, মুমিনদেরজন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন অর্থাৎ কোমল আচরণ করুন। (সুরাঃ হিজর-৮৮)। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমুলক সম্ভাষণ জানাবে, প্রতি উত্তরে তুমি তাকে তার চেয়েও সুন্দর ধরনের সম্ভাষণ জানাও কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও। (সুরাঃ নিসা-৮৬) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, মুমিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী, তিরস্কারকারী হতে পারে না। অশ্লীল বাক্যব্যয়ী ও অহেতুক বাক্যব্যয়ীও হয় না।

(তিরমিজি) সুন্দর আচরণের সুফল সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ ভালো বাসেন। বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণ থেকেও সম্পুর্ণরুপে বঞ্চিত। (মুসলিম) সুন্দর আচরণের ফলে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রেমপ্রীতি সুদৃঢ় হয় এবং অনেক সময় চিরশত্রু বন্ধু হয়ে যায়।

সুন্দর আচরণের ফলে পিতামাতা, ভাই-বোন, ওস্তাদ, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি সবাই তাকে ভালোবাসে। তার আগমনে মানুষ খুশি হয়। সুন্দর আচরণকারীর সামনে ও পেছনে মানুষ তার প্রশংসা করে। তার জন্য মন খুলে দোয়া করে। ফলে আল্লাহ এবং আসমান -জমিনের ফেরেস্তারাও তাকে অত্যন্ত পছন্দ করে।

অপরদিকে খারাপ ব্যবহারে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। অপ্রীতিকর অবস্হার বৃষ্টি হয়। সমাজের মানুষ তাকে অবহেলা, অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখে। তার কথার কোনো দাম দেয় না। আমাদের নবী ছিলেন সদা সত্যভাষী, হিতভাষী, শুদ্ধভাষী, সুভাষী এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণকারী।

তাই তিনি ছিলেন সব মানুষের সেরা। আল্লাহ আমাদের সমাজে বসবাসরত সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করার তাওফিক দান করুন। দৈনিক আমার দেশ, ১০ মে ২০০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.