আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত - তামিল - সিংহলীজ - শ্রীলংকা!! আমাদের ভাগ্য ভাল, পাকীরা রামছাগল ছিল!!

এহহামিদা'র ব্লগ!!

শ্রীলংকায় গৃহযুদ্ধের কথা সকলেরই জানা!! এই যুদ্ধ হয়েছিল সিংহলীজ ও তামিলদের মধ্যে!! সিংহলীজ ও তামিলদের ভাষা ভিন্ন!! সিংহলীজরা ছিল প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও তামিলরা হিন্দু ধর্মালম্বী!! তামিলদের প্রধান অভিযোগ ছিল তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভাষাগত বৈষম্যের স্বীকার!! ১৯৫৬ সালে সিংহলীজরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সিংহলীজকে শ্রীলংকার একমাত্র রাষ্ট্র বা অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষনা করে এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে!! সংখ্যালঘিষ্ঠ তামিলরা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং সেই সময়ে এক মাত্র সিংহলীজ ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা বা অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষনার প্রতিবাদে শ্রীলংকায় সিংহলীজ ও তামিলদের মধ্যে রায়ট হয় শ্রীলংকায়!! তাছাড়া ১৯৭২ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলীজদের ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়!! মোটামুটি ভাবে শ্রীলংকার স্বাধীনতার পর থেকেই শ্রীলংকার বেশীর ভাগ উন্নয়ন কাজই পরিচালিত হত সিংহলীজ অধ্যুষিত এলাকায়!! এবং তামিল প্রধান এলাকা ছিল উপেক্ষিত!! ১৯৭৭ সালে তামিল রাজনীতিবিদরা তাদের প্রতিশ্রুত "তামিল এলাম" নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে, তামিল তরুনরা স্বাধীন তামিল এলাম প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহযুদ্ধ শুরু করে দেয় ১৯৮৩ সালের জুলাই মাস থেকে!! ভারত মোটামুটি প্রথম থেকেই তামিলদের অস্র-সামরিক ট্রেইনিং দিতে শুরু করে!! তবে ভারতের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করছিল!! তা হল ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের অধিবাসীরাও তামিল এবং তাদের ধর্মও হিন্দু!! এই সামন্জস্যতা ভারতের কাছে একটা সমস্যা হয়ে দাড়ায়!! তামিলরা শ্রীলংকার কাছ থেকে যদি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে তবে ভারতের তামিল নাড়ুর তামিলরাও (শ্রীলংকা ও ভারতের তামিলদের ভাষা ও ধর্ম একই) ভারতের কাছ থেকে স্বাধীনতার দাবী জানিয়ে বসতে পারে!! একদিকে ভারত চাচ্ছিলনা তামিলরা স্বাধীন হোক, আরেকদিকে শ্রীলংকা ভারতের প্রভাববলয় থেকে বের হয়ে যাক, এইটাও ভারত চাচ্ছিল না!! এরপরও শ্রীলংকার তামিল বিদ্রোহী বা স্বাধীনতাকামীদের ভারত সবরকমের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিল!! এর অন্যতম কারন ছিল, ১৯৭৭ সাল থেকেই শ্রীলংকার পররাষ্ট্রনীতি পশ্চিমামুখী হয়ে পড়ে!! শ্রীলংকা মার্কিন নৌযুদ্ধ জাহাজ গুলোকে শ্রীলংকার সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করে, পশ্চিমা কোম্পানিদের কাছে শ্রীলংকা তার বৃহত্তম অয়েল ট্যাংক এলাকা লীজ দেয়, ভয়েস অব আমেরিকাকে শ্রীলংকায় কমিউনিকেশন টাওয়ার নির্মানের অনুমতি প্রদান করে!! এই সব কারনে ভারত শ্রীলংকার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বা শ্রীলংকাকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করে!! সেই সময়ে শ্রীলংকার আসিয়ান সদস্যভুক্ত হওয়ার চেষ্টাও ভারত ভালো চোখে দেখেনি!! তার উপর ছিল শ্রীলংকার উপর ভারতের প্রাধান্য কমে যাওয়ার ভয়!! পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শ্রীলংকার অস্র সংগ্রহের চেষ্টারও তীব্র বিরোধীতা করতে থাকে ভারত!! ভারত শ্রীলংকার সকল কাজে নাক গলানোর চেষ্টা করে এবং শ্রীলংকাকে ভারতের অণুগত রাখার সকল প্রয়াস অব্যাহত রাখে!! তবে, ১৯৮৭ সালে যখন শ্রীলংকার সেনারা তামিলদের প্রায় পরাজিতই করে ফেলেছিল ঠিক তখনই ভারত সরাসরী হস্তক্ষেপ করে!! ভারতের মুল উদ্দেশ্য ছিল গৃহযুদ্ধ বা তামিলদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটুক!! ভারত এইবার সরাসরি তামিল এলাকায় খাদ্য ও অন্যান্য সরন্জাম এয়ারড্রপ করতে থাকে এবং শ্রীলংকাকে বাধ্য করে ভারতে সাথে সমঝোতায় আসতে!! শ্রীলংকাও তখন আর উপায়ন্তর না দেখে ভারতের কথায় সায় দেয়!! এবং ভারত ও শ্রীলংকার মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়!! ১৯৭৭ সাল থেকেই ভারত এই চুক্তির জন্য চেষ্টা করে আসছিল এবং অবশেষে সফল হয়!! এবং ভারত নিশ্চিত করে যে শ্রীলংকা তার পোর্টে মার্কিন নৌসেনাজান গুলোকে জায়গা দিবে না, শ্রীলংকার অয়েল ট্যাংক প্রজেক্ট পশ্চিমা কোন কোম্পানীকে দেয়া হবে না বরং তা ভারত-শ্রীলংকা যৌথ উদ্যোগে করা হবে এবং ভয়েস অব আমেরিকাকে কমিউনিকেশন টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি শ্রীলংকা রিভিউ করবে!! এখানে ভারতের উদ্দেশ্য ছিল শ্রীলংকা ভারতের কথামত চলবে এবং তামিলরাও যাতে স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারে!! মোটামুটি সাপও মরবে, লাঠিও ভাংগবেনা অবস্থা!! তবে, এই চুক্তি সিংহলীজরা প্রথম থেকেই পছন্দ করে নি!! কারন এটা ছিল তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের নাক গলানোর সামিল!! এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত শ্রীলংকায় শান্তিবাহিনীর নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঠায়!! সিংহলীজদের কাছে মনে হয়েছিল যে ভারত শ্রীলংকার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে!! চুক্তির পরে ভারতের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী শ্রীলংকা সফরে গেলে গার্ড অব অনার নেয়ার সময় শ্রীলংকার এক সেনা সদস্যের রাইফেলের বাটের বাড়ি খায়!! তবে তামিলরা ভারতীয় সেনাদের বরন করে নেয় অন্তরের অন্তস্থল থেকে!! উল্লাসে ফেটে পড়ে তামিলরা!! ভারত তামিল স্বাধীনতাকামীদের অস্র সমর্পনের আহ্বান জানায়!! তামিলরা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তামিলরা প্রথম প্রথম অস্র সমর্পন করলেও কিছুদিনের মধ্যেই স্বাধীনতাকামী তামিলরা ভারতের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তামিল টাইগারদের নেতৃত্ব বেকে বসে!! ভারতকে তারা বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে অভিহিত করে!! এই পর্যায়ে শ্রীলংকায় অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনী ও স্বাধীনতাকামী তামিলদের মধ্যেই যুদ্ধ লেগে যায়!! জাফনা অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক তামিল জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়!! এক স্টেডিয়ামে প্রভাকরনকে ধরতে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যাপক হত্যাযগগ চালায়!! তামিলরা IPKP মানে Indian Peace Keeping Force কে Innocent Peaople Killing Force ণামে ডাকা শুরু করে!! আর এই দিকে ভারত ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তামিলনাড়ুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী-তামিলভাষী তামিলদেরকে শ্রীলংকার থেকে স্বাধীনতাকামী হিন্দু ধর্মাবলম্বী-তামিলভাষী তামিলদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়া তুলে!! আগেই বলেছি যে, সিংহলীজরা প্রথম থেকেই এই চুক্তির বিরোধী ছিল!! ১৯৮৮ সালে শ্রীলংকার নির্বাচনে প্রেমাদাসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শ্রীলংকার মাটি থেকে বিতারন ও চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে!! প্রেমাদাসা তার প্রতিশ্রুতি রেখেছিল!! ভারতীয় সেনাবহিনীও পরবর্তীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে শ্রীলংকা থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়!! এমনও ধারনাকরা হয় যে, প্রেমাদাসা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শ্রীলংকা থেকে বিতারন ও নিজেরা চুক্তি থেকে সরে আসার জন্য তামিল গেরিলাদের সহায়তা পর্যন্ত দিয়েছিল!! সুত্র:Hennayake, Shantha K, "The Peace Accord and the Tamils in Sri Lanka", Asian Survey, Vol 29, No 4 (Apr.,1989), pp. 401-415. শ্রীলংকার স্বাধীনতাকামী তামিল ও ভারতের বিরোধ এমন পর্যায়ে পোছে যে শেষ পর্যন্ত এক নির্বাচনী প্রচারনার সময়ে রাজীব গান্ধীকে প্রান দিতে হয়েছিল স্বাধীনতাকামী শ্রীলংকান তামিলদের হাতে!! তবে শ্রীলংকার তামিলরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পায় নি!! কিছুদিন আগে, শ্রীলংকার সেনাবাহিনী তামিল টাইগারদেরকে পরাজিত করে!! আমাদের ভাগ্য ভাল, পাকীরা রামছাগল ছিল!! (একযোগে আমুব্লগেও প্রকাশিত!!)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.