নভেরা হোসেন
কবি সেলিনা পারভীন ৩১ মার্চ ১৯৩১ সালে ফেনী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন, কবিতা লিখতেন, ছবি আঁকতেন আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার প্রতি ছিলেন বীতশ্রদ্ধ। ছোটবেলায় তাঁর অসম্মতিতে বিয়ে দেয়া হলেও তিনি অসহযোগিতা করার ফলে দ্রুত বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি লেখালেখির সাথে আরও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। নিজে কিছু করার জন্য ও সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করার প্রবল ইচ্ছে থেকেই ১৯৫৫ সালে ঢাকায় চলে আসেন।
নার্সিং ট্রেনিং নেন, তারপর চাকরি খুঁজতে থাকেন ঢাকা শহরে। যখন যেমন চাকরি পেতেন করতেন কিন্তু আত্মমগ্ন থাকতেন বেশিরভাগ সময়, সর্বত্রই তার স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য সমালোচিত হতেন, চাকরি হারাতেন। এক সময়ে চাকরি নিয়ে চট্রগ্রাম চলে যান, অনেকটা সমাজে টিকে থাকার জন্যই সমবয়সী এক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন, একটি ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু এখানেও অসম চিন্তা আর স্বামীর দায়িত্বহীন আচরণের ফলে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। ছেলে সুমনকে নিয়ে এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
এ সময়ে নানা চাকরির মধ্যে বেগম পত্রিকাতে কিছুদিন কাজ করেন। সাহিত্য পত্রিকা ললনাতে যোগ দেন এবং কঠোর পরিশ্রম করে অর্থকষ্টের মধ্যে তাঁর নিজের পত্রিকা শিলালিপি প্রকাশ করেন। এ পত্রিকায় মুনির চৌধুরী, জহির রায়হান প্রমুখ লেখকরা লিখতেন।
তিনি ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন আর পাশাপাশি নিজের পত্রিকা প্রকাশের কাজ করতে থাকেন । এক পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার প্রকাশনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সেলিনা পারভীনকেও সামরিক মন্ত্রকে তলব করা হয়।
নিজের লেখা এবং সম্পাদিত পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু ও মুক্ত চিন্তা চর্চার জন্য তাঁকে সাবধান করে দেয়া হয় । ঐ সময় হতেই বাঙালী বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাতে সেলিনা পারভীনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর ৭১ তারিখে কারফিউর মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী আউটার সার্কুলার রোডের বাসা হতে সেলিনা পারভীনকে চোখ বেঁধে একটা মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যায় স্বাধীনতা বিরোধীপক্ষ। ছেলে সুমনকে ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তিনি নির্ভীক আচরণ করেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে চোখে ও কানে বুলেট এবং বেয়নেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শ্বেতশুভ্র সেলিনা পারভীনকে পাওয়া যায়; সাদা শাড়ি, জুতা মোজা দেখে তাকে চেনা সহজ হয়। শিলালিপির প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা শিলালিপির মাধ্যমে পাঠকের সাথে কবি সেলিনা পারভীনের আবার সংযোগ ঘটুক এই প্রত্যাশায়।
শিলালিপি
জুলিয়াস।
তুমি তুরিনাসের বন্ধু, ক্যাটুলাসের ভক্ত
ক্যাপ্রি দ্বীপে, এত মহানুভব সওগাত পাঠালে
খাঞ্জাভরে যখন মহানুভব মৃত্যুর সওগাত এল
তখন চিনেছিলে
প্রতারণার মুখ।
কত রক্ত স্রোতের
উৎস মুখ হয়ে তুমি
তুমি আজ নিজেও
ভেসে গেলে.
অপরিণত-
একটি অবৈধ রক্তধারায়
অথচ
একটি ক্লীব কোমল
বিশ্রামের চেয়ে
বলিষ্ঠ মৃত্যু
অনেক মহৎ, তা তুমি-পেলে না
অনেক সেনা নায়কের
রাজচক্রবর্তী সম্রাট....হায়।
তোমারই ইচ্ছা কার্য়করী হল না।
কাইয়ুস। কাইয়ুস.....ঐ দেখ
ইতিহাস
ক্লিওপেট্রা। ।
ব্রুটাস্.....অপঘাত.....আহ।
।
ধ্বনি.....
শিলালিপি
শিলালিপি। ।
প্রকাশিত : শিলালিপি, ১ম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ’৬৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।