আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ মুহুর্ত



৬ বছর পর আজ কে রাহাত এর সাথে সায়রার কথা হয়। হটাৎ করে সায়রার ফোন পেয়ে অবাক হয় রাহাত, ঘুম ঘুম চোখে রাহাত ফোন টা রিসিভ করে। সায়রার গলা শুনেই রাহাত এর ঘুম টা ছুটে যায় । লাফ দিয়ে উঠে বসে, যদি ও ব্যাপার গুলো বুঝতে দেয় না ফোনের ওই প্রান্তে থাকা সায়রা কে। হ্যালো বলার পরে সায়রা এখন পর্যন্ত কিছু ই বলে নি ।

এত বছর পরে কেনো ফোন দিয়েছে সায়রা? কি চায় সায়রা ? রাহাত এর মনে হাজার টা প্রশ্ন জেগে উঠেছে কিন্তু কিছু ই জিজ্ঞাস করা হচ্ছে না। সায়রা আর রাহাত এর পরিচয় সেই ছোট বেলা থেকে , যখন থেকে সায়রা বেণী দুলিয়ে স্কুলে যেতো ঠিক তখন থেকে, সায়রা আর রাহাত এক সাথে স্কুলে যেতো , ফিরার সময় রাহাত প্রতিদিন ই সায়রার চুলে টান দিয়ে বেণী খুলে দিত, এই নিয়ে খুনসুটি ঝগড়া , আবার পরের দিন সকালে ই হয়ত সব ঠিক হয়ে যেতো, এই ভাবে ই ছিলো তাদের পথ চলা। কলেজের শুরুর দিকে ই দুই জন ই বুঝতে পারে তাদের মনের মাঝে কিছু একটা হতে যাচ্ছে, সেটা প্রকট আকারে ধারন করে যখন দুই জন ই আলাদা কলেজে ভর্তি হয় , সায়রা কোনো একটা গার্লস কলেজে ভর্তি হয় আর রাহাত নটরডেম কলেজে চান্স পেয়ে যায় , এই ভাবে ই সময় যাচ্ছিলো , কিন্তু মুখ ফুটে বলা ছাড়া যেনো শান্তি পাচ্ছিলো না। সেই দিন সকাল থেকে ই আকাশে মেঘ ছিলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো , আজ কে সায়রার মন অনেক বেশী ই উদাস, কিচ্ছু ভালো লাগতেছে , ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতেছিলো, বাস থেকে নেমে একা একা উদাস মনে হাটছে সে। সেই আগের মত রাহাত আজ কে পিছন থেকে এসে চুলে টান দিলো।

চুলে টান পড়ার সাথে সাথে সায়রা বুঝতে পারছে এই রাহাত এর কাজ । সায়রার চুলে টান দেয়ার সাহস এক মাত্র রাহাত এর ই আছে। রাহাত সায়রা কে বলে চলো যাই আজ কে বিকাল টা রিকশায় ঘুরি। শুনে সায়রা খুশিতে লাফিয়ে উঠে । এমন দিনে সায়রা রাহাত কে একান্ত নিজের পাশে পাবে ভাবতেই তার ভালো লাগতেছে।

ঘন্টায় রিকশা ভাড়া করে দুই জনে । দুই জনে ই চুপ চাপ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হুড ফেলে দেয়া, মিহি মিহি বাতাস। অসাধারন আবহাওয়া । সায়রা কি মনে করে রাহাত এর হাত টা নিজের কাছে টেনে নেয়, এই প্রথম রাহাত সায়রা কাছে লজ্জা পাচ্ছে । সেই দিন সায়রা ই প্রথম রাহাত কে তার ভালোবাসার কথা জানালো।

রাহাত ও অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু সাহস পাচ্ছিলো না। কি করে পাবে যদি ফিরিয়ে দেয়। সেই দিন থেকে শুরু তাদের পথ চলা। ভালোবাসার দিন গুলো ছিলো রঙ্গিন।

কখন ও এক সাথে হারিয়ে যাওয়া কখন ও খুনসুটি লেগে থাকা। কখনো মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে রাহাত সায়রা কে কখন ও সায়রাটা কেড়ে নিচ্ছে রাহাত। দিন গুলো ছিলো দুই জনের কাছে ই স্বপ্নের মত। যে দিন সায়রা রাহাত এর জীবনে এসেছিলো সেই দিন যেমন বৃষ্টি ছিলো যে দিন চলে গেলো সেই দিন ও বৃষ্টি ছিলো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো সকালে ।

রাহাত ঘুমাচ্ছিলো ,মোবাইলে ম্যাসেজ টোন এ ঘুম ভেঙ্গে যায় রাহাতের। সায়রার ম্যাসেজ। রাহাত চোখে অন্ধকার দেখে। আজ কে সায়রার বিয়ে। হবু বর প্রবাসী , সন্ধ্যায় বিয়ে , ১৫ দিনের মাথায় সায়রা কে নিয়ে চলে যাবে ।

রাহাত যেনো সায়রাকে মাফ করে দেয় । কারন সায়রার কিছু ই করার নেই। ম্যাসজ টা পড়ার পর রাহাত হাজার বার সায়রা কে ফোন করে ও পাচ্ছে না। সায়রা ফোন বন্ধ করে রেখেছে, সায়রা দিব্বি দিয়েছে যাতে করে রাহাত সায়রার বাসায় না যায় সায়রা কে খুজতে। সেই দিন এর পর থেকে রাহাত জানে না সায়রা কেমন ছিলো কই ছিলো।

লোক মুখে শুনেছে বিয়ের কয়েক দিন এর মাথায় সায়রা স্বামীর সাথে অস্টেলিয়াতে চলে গেছে। আজ কে যখন ৬ বছর পরে সায়রার গলা শুনলো রাহাত ঠিক যেনো আগের সায়রা। তবে গলা টা অনেক মলিন ছিলো। সায়রা গতকাল কে বাংলাদেশে ফিরলো , গতবছরের শুরুর দিকে সায়রার হাজব্যান্ড রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়, গুছিয়ে নিতে সময় লাগলো তাই এই বছর এর শুরুতে ই চলে আসছে , সায়রা জানত রাহাত এখন ও বিয়ে করেনি সায়রার জন্য , তাই সায়রা আসার আগে ভেবে রেখেছিলো রাহাত কে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, আবার ফিরে যাবে দুই জনের সুন্দর সময় গুলোর কাছে। আবার এক সাথে হাটবে।

পাশাপাশি বসে থাকবে হাত হাত রেখে। হয়ত দুস্টামির ছলে রাহাত খুলে দিবে সায়রার খোপা। কিন্তু আসার তিন দিন আগে তার শরীরে মরন ব্যাধি "ক্যান্সার" ধরা পড়ে, কি থেকে কি হয়ে গেলো। ফোন করে রাহাত কে সব খুলে বলে সায়রা । সায়রা রাহাত এর কাছে কিছু সময় চায়, যে কয়দিন বাচবে যেনো রাহাত এর পাশাপাশি থাকতে পারে, আগের মত এক সাথে রিকসায় ঘুরা, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে হুড ফেলে দিয়ে হাতে হাত রেখে চলা।

সায়রা জানতে চায় রাহাত কি তাকে জীবনের শেষ সময় গুলো আগের অনুভুতি গুলো দিবে? রাহাত কিছু বলতে পারে না। হাত কাপছে রাহাত এর। এতো দিন পরে যায়রা কে পেয়ে ও হারাতে হচ্ছে। রাহাত ছুটে যায় সায়রার কাছে। কিন্তু গিয়ে দেখতে পায় সায়রা আর নেই।

রাহাত কে ফোন দেয়ার কিছুক্ষন পর ই যমদূত এসে নিয়ে যায় সায়রা কে। থমকে যায় রাহাত। দাঁড়িয়ে আছে রাহাত সায়রার প্রানহীন দেহটার সামনে , সাদা কফিনে সায়রা । সামনে দাঁড়িয়ে নির্বাক রাহাত। এই টা একটা গল্প , কাকতলীয় ভাবে কার ও সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।

View this link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।