আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখ---- মোজাফফর হোসেন



চোখ মোজাফফর হোসেন রাত জেগে চাঁদ দেখার মধ্যে কোন স্বাধ খুঁজে পাইনা হিসাম। ওর কাছে ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, ক্ষুধা পেলে খুব ঘুম পাই তার সেই প্রেক্ষিতে সুকান্তের ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ আলটিমেটলি হয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়! তাছাড়া চাঁদ দেখা ভাবুক শ্রেণীর কাজ, রসবোধও থাকা চাই- সেই প্রেক্ষিতে এই শ্রেণীতে পড়ে না সে যদিও এ কয়দিনে তার ভাবনাগুলোর বেশ ডালপালা গছিয়েছে, কারণ অকারণে অনর্থক অনেক কিছুই ভাবছে সে. এমনকি রুমের একান্ত পরিচিত প্রাণীটিও একবারের বেশি টিকটিক করলেই ভাবনার উদগ্রীব ঘটছে, ভাবনার এত অপচয় বোধকরি ঘটেনি কখনো। এখন অনেক সময় অনেক কিছু না ভেবেই ভাবনার অথই জলে সাঁতার কাটছে সে এবং ডুব দিতেও যে বেশিদিন বাকি নেই বুঝতে পারলো বাজারে আবিষ্কার করে প্যান্টের জিপার লাগানো হয়নি তখনো। এ যে ভাবনার বিস্ময়কর বিপ্লব! সামনের ফ্লাটে আসা ঐ মহা মায়ার কারণেই হিসামের ভবে ভাবনার অদ্য অভাবনীয় ঘনঘটা। হিসাম এখন বারান্দায় বসে চাঁদ দেখছে এবং খুব ভালো লাগার সাথেই দেখছে।

থেকে থেকে চাঁদের সাথে কথাো বলছে সে, নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিংস, এডুইন অলড্রিন চাঁদে গিয়েও যে কাজটি করতে পারেন নি হিসাম এখন তাই করছে, এ নিয়ে বাসায় বেশ মজার কান্ডও ঘটে গেছে- হিসামের ভাগ্নে, বড় আপার ছেলে ডাইনিং টেবিলের সামনে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রেখেছে- মামার দেখা পৃথিবীর প্রথম আশ্চর্য হল, মামার রাত জেগে তারা দেখা। মেয়েটি বারান্দায় আসা মাত্রই হিসাম নড়ে চড়ে বসল। না দেখার ভান করে না এই ভেবে পাছে ধরা পড়ে যায় আগ্রহের বাহুল্যতা আবার স্বাভাবিকও হতে পারছে না পাছে ধরা পড়ে যায় অকারণ ব্যকুলতা। অথচ মেয়েটি দিব্যি বসে আসে যেন হিসামের অবস্থান তার পাশের পাতা বাহার গাছটির মতই স্বাভাবিক। হিসাম পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে দেখে নেই সত্যি সত্যি সে ভ্যানিশ হয়ে গেছে কি-না! মানুষের মন বড়ই সন্দেহ প্রবণ।

কেমন ড্যাব ড্যাব করে হিসামের দিকে তাকিয়ে আছে- আজকাল শহরের ছেলে আর মেয়ে সমানে সমান। হিসাম যা ভাবছে মেয়েটিও কি তাই ভাবছে? হয়ত ভাবছে, ভাবছে- হিসামকে সাদা প্যান্ট আর কালো লাল জামায় বিশ্রি দেখাচ্ছে, কিম্বা হিসামের অর্ধ টেকো মাথার দিকে তাঁকিয়ে ভাবছে, লোকটি নাকি ছেলেটি! আবার এও ভাবতে পারে- আজ বিকালে ঐ মেরুন রঙের পোশাকটি কিনতেই হবে সাথে জলপাই রঙের পোশাকটির জন্য ম্যাচিং কসমেটিকস্‌ , কিম্বা আজ এই গোমড়ামুখো আবহাওয়াকে কাচকলা দেখিয়ে ক্যাম্পাচ যাওয়া উচিৎ হবে কি-না! চোখে চোখ পড়তেই হিসাম দৃষ্টি নামিয়ে নেই। বাড়াবাড়ি রকমের রুপ না থাকলেও লাবণ্যে কার্পন্য ঘটেনি। এ যেন ভীষণ এক মায়ার তীব্র ঝলকানি। অফিস থেকে লাঞ্চ করতে এসে আজ আর অফিসে গেল না হিসাম, এমনটি হয় না কখনো।

শরীর বলে যে একটা নিয়ন্ত্রনহীন জিনিস তা সে বুঝিনি এতদিনে। অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়াতে খুব ছোট থাকতেই সংসারমুখী হয় হিসাম। প্রতিষ্ঠার নেশা তাকে পেয়ে বসে, টপকাতে থাকে মধ্যবিত্তের সিড়ি। কর্ম তার কাধে এমনভাবে জেতে বসে যে তার কোন আবেগ থাকে না, বন্ধু থাকে না, থাকে না যন্ত্রনা- যন্ত্র বলতে যা বোঝায় আর কি! হিসাম হাত মুখ ধুয়ে রুমে আসে। আজ গরমটা পড়েছে একেবারে খাপছাড়া।

সে আগ-পেছ না ভেবেই শার্ট-প্যান্ট খুলে ফেলে এবং সেই সাথে ঘটে যায় ‘অ’ প্রত্যয় যুক্ত চরমতম ‘ঘটনা’। জানালার পর্দা উঠাতেই চেখে চোখ পড়ে যায় মেয়েটির। হিসাম লাল জাঙিয়া পড়ে দাঁড়িয়ে। হিসামের লাল রঙ খুব প্রিয়- নিশ্চয় মেয়েটি এ কথায় ভাবছে এতক্ষণে! আজ অফিস বন্ধ। এরই মধ্যে হিমামের ভাগনে তার দেখা আরো কয়েকটি আশ্চর্যের নাম লিস্টে অন্র্ন্তভুক্তি করেছে- আমার দেখা দ্বিতীয় আশ্চর্য হল: মামার দুপুরে নাস্তা করতে বাড়িতে আসা, তৃতীয় আশ্চর্য হল: মামার হিন্দি সিনেমা দেখা, চতুর্থ আশ্চর্য হল: মামার রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনা, পঞ্চম আশ্চর্য হল: মামার ফুলের টবে পানি দেওয়া।

ছুদির দিনে হিসাম অফিস কাজ গোছতে থাকে অর্থ্যা অবকাশ মিললেও অবসর মেলে না কখনো। আজ সারাদিন বারান্ধায় কাটলো তার। মেয়েটির আসা যাওয়া দেখতে দেখতে হিসাম আবিষ্কার করলো বেচে থাকার এক চরম সত্য। অত্যাধিক গরমেও তার ভেতরটা শীতল হয়ে যায়, পরম তৃপ্তির ঢেকুর ওঠে বেচে থাকার তাগিদে। মেয়েটি অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে হিসামের দিকে।

হিসাম ঠিক পড়ে উঠতে পারে না ঐ চোখের ভাষা। মুখের ভাষা বাদ দিয়েও পৃথিবীতে যত কোটি মানুষ আছে ঠিক ততকোটি ভাষা আছে- তা হল চোখের ভাষা। মুখের ভাষা সে তো শেখানো বুলি, বেচে থাকার তাগিদে তা আত্মস্থ। এখানে কোন আবেগ থাকে না, থাকে শুধু বাড়াবাড়ি রকমের ভন্ডামি। এই ভাষা বুঝতে হলে চাই ভাষাগত দক্ষতা আর চোখের ভাষা বুঝতে হলে চাই বোধগম্যতা।

আজ খেতে বসে হিসাম দেখল, আমার দেখা সপ্তম আশ্চর্য: মামার কবিতা লেখা। এক সপ্তাহ হতে চলল, মেয়েটিকে আর বারান্দায় আসতে দেখে না হিসাম। আজ কাল কোন কিছুই তার ভালো লাগছে না। কারণে অকারণে বাড়র সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। দু’দিন অফিসে যায়নি সে।

অসুখ হলেও বারান্দায় না আসার কারণ দেখছিনা, আবার বাসা যে পরিবর্তন করেনি তাও বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ বিয়ে হয়ে যাবে? হলেও হতেও পারে- এমন অনেক ভালো মন্দ চিন্তা হিসামের মাথায় নাগর দোল্লার মতন ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল। আজ সারারাতও ঘুম হল না, চোখের পাতা যেন বিদ্রোহ ঘোসনা করেছে। সকালে হিসাম কাজের বুয়াকে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটির কথা।

আগের দিন খোঁজ নিতে বলেছিল তাকে। বুয়া জানালো, চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেছে মেয়েটি। গতকাল তার অপারেশন সাকসেসফুল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে দেশে ফিরবে। ছোটবেলাই কোন এক দুর্ঘটনায় অন্ধ হয়ে যায় মেয়েটি। রাত দু’টা।

বারান্দায় বসে হিসাম। অন্ধকারে বসে অন্ধকার দেখসে সে। দূর আকাশে মিট মিট করে জ্বলছে মহাবিশ্বের জোনাকিরা... টেবিলের সামনে এখন লেখা রয়েছে, আমার,দেখা সপ্তম আশ্চর্য: মামা ইজ ইন লাভ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।