আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামকরণ-০২ নামকরণ আর নামবদলের রাজনীতি

Only I know what is my goal, My heart is my temple.

কাজী সায়েমুজ্জামান: নামকরণ এদেশে নতুন কোন বিষয় নয়। তবে এবার শুরু হয়েছে পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞ। জোর করে কোন ব্যক্তিকেই ইতিহাসে তার প্রাপ‌্য মর্যাদার উর্ধ্বে স্থাপন করা যায়না। ইতিহাসের নানান পর্বে নানান ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, নতুন নতুন গবেষণার ভিত্তিতে, নানান ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মূল্যায়ন হয়- হতে বাধ্য। একে অস্বীকার করেই চলছে নামকরণ আর নামবদলের রাজনীতি।

একই সঙ্গে ভিন্ন দলের নেতাদের ম্যুরালও ভেঙ্গে ফেলার কাজটি সেরে ফেলা হয়েছ। ক্ষমতা ছাড়ার আগ মূহর্তে চার দলীয় জোট সরকারের স্থাপিত ভুয়া ভিত্তি প্রস্থর আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। চট্টগ্রামে নামকরণ চট্টগ্রামে নাম করণ নিয়ে অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএ আজিজের নামে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্র“তি ছিল। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বিমানবন্দরকে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নানের নামে রাখে।

রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ দাবী করে এমএ হান্নানই সর্ব প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ঢাকাস্থ বিমানবন্দরকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণের পাল্টা জবাব দিতেই এমএ হান্নানের নামে এ বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়। এতে এএম আজিজ বাদ পড়েন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামকে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম নামকরণ করে। এমএ আজিজ স্বাধীনতার পরপরই মারা যান।

এ কারণেই বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় গিয়ে এর নাম পরিবর্তন করেনি। তবে পাকিস্থান আমলে এর নাম ছিল নিয়াজ স্টেডিয়াম। স্বাধীনতার পরপরই এর নাম পরিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম হয়ে যায়। ওদিকে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় গিয়েই চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এম এ হান্নানের নাম মুছে বিখ্যাত সুফি শাহ আমানতের নামে রাখে। সুফি সাধক হিসেবে শাহ আমানত রহ. চট্টগ্রামবাসীর কাছে সম্মান ও ভক্তির একটি নাম।

রাজনৈতিক কারণে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করতেই তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এটি পরিবর্তন করে এমএ হান্নানের নামে দেয়ার নানা উদ্যোগ থাকলেও এর সঙ্গে একজন সর্বজনপ্রিয় সুফীর নাম থাকায় নাম পাল্টানো সহজ হচ্ছেনা। এর জবাব দিতেই ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দেশের আরেক সুফি সাধক হযরত শাহজালালের নামে নাম করণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে বিএনপি কোন কালে ক্ষমতায় গিয়ে নাম পাল্টাতে গেলে একই বাধার সম্মুখিন হয়। জিয়াউর রহমানের নামে নগরীর সার্কিট হাউজে রয়েছে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর।

এখানেই তিনি সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। এছাড়াও যেখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঐতিহাসিক স্থান কালুরঘাটে বিএনপি সরকার নির্মান করেছে জিয়াউর রহমান কমপ্লেক্স। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে জিয়ার নামে একটি সার কারখানা রয়েছে। খুলনায় জিয়ার নামে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। রক্ষা পায়নি সাফারি পার্কও কক্সবাজারে স্থাপিত দেশের প্রথম সাফারী পার্কের নাম নিয়েও পাল্টাপাল্টি অব্যাহত রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার এর নামও বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক রাখে। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে এর নাম পাল্টে দুলাহাজারা সাফারী পার্ক দেয়। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে ফের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক রেখেছে। হাজারীর বিজয় ফেনীতে একটি কলেজের নামকরণ নিয়ে জয়নাল হাজারী ও বিএনপির মধ্যে টানাটানি শেষে হাজারীর জয় হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর ফেনী পাবলিক কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে যায়।

এ প্রতিষ্ঠানটিকে গায়ের জোরেই হাজারী কলেজ নাম দেয়া হয়। তবে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েই ফের পাবলিক কলেজ নাম দেয়। হাজারী এলাকায় ফেরার পর এর নাম হাজারী কলেজ করার জোর প্রক্রিয়া চলে। শেষ খবরে হাজারীর জয় হয়েছে। সিলেটে অন্যরকম নামকরণ সিলেট বিভাগীয় শহরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বা বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে কোন স্থাপনা নেই।

তবে সম্প্রতি পরলোকগত সাইফুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান। তিনি কয়েকবার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বরাদ্দ প্রদাণ ছিল তা হাতেই। ভুক্তভূগীরাই জানেন তার কাছ থেকে অর্থ নিতে হলে কি ঝক্কিঝামেলাই পোহাতে হতো। কিন্তু তার নামে কোন স্থাপনা দেয়া হলেই অর্থের কোন ঘাটতি থাকতোনা।

এ কারণেই তার আমলে দেশের একটি বিভাগে তার নামে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে। সিলেট নগরীতে সাইফুর রহমানের নামে একটি অডিটোরিয়াম, মদনমোহন কলেজে একটি ছাত্রবাস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ে একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড.আলাউদ্দিন আহমেদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রাবাস থেকে সাইফুর রহমানের নাম বাদ দেয়ার আবেদন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সিলেটে সাইফুর রহমানের স্ত্রীর নামে দুররে সামাদ রেড ক্রিসেন্ট মহিলা মেডিকেল কলেজ রয়েছে।

মৌলভী বাজার জুড়েই রয়েছে বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক। মৌলভীবাজার শহরে সেন্ট্রাল রোডের নাম পরিবর্তন করে সাইফুর রহমান সড়ক নাম দেয়া হয়েছে। তবে পাঁচ বছরেও বেশিরভাগ দোকানীরা তাদের সাইনবোর্ডে এ নাম লেখেননি। এভাবে এ নগরীতে সাইফুর রহমান স্টেডিয়াম ও তার স্ত্রীর নামে নগরীর মহিলা কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নাম দুররে সামাদ রহমান রাখা হয়েছে। এছাড়াও হেলারপুর সড়কের নাম পরিবর্তন করে দুররে সামাদ রহমান সড়ক রাখা হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই নদীর ওপর তিনটি সেতুর একটি সাইফুর রহমানের নামে। আরেকটি আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া ও মেজর জেনারেল এমএ রবের নামে রাখা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের নামে হবিগঞ্জ শহরে জিয়া চত্বর রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে একটি বাইপাস সড়ক আওয়ামী লীগ নেতা কমান্ডার মানিক চৌধুরীর নামে দেয়া হয়েছে। বরিশাল বিভাগ বরিশালের বেলস পার্কের নাম নিয়েও টানা হেচড়া হচ্ছে।

বর্তমান সরকার এর নাম ফের বঙ্গবন্ধু উদ্যান রাখেছে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একে বেলস পার্ক নামকরণ করা হয়। বরিশালে কোন স্থাপনার নামকরণে প্রাধান্য পান বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তার নামে নগরীর কাউনিয়ায় একটি কলেজ, কাশিপুরে একটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও আগৈলঝাড়ায় একটি কলেজ রয়েছে। দপদপিয়া সেতুর নামও পরিবর্তন করে আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু রাখা হয়েছে।

নগরীতে সরকারী জায়গায় অবৈধ মৎস্য কেন্দ্র স্থাপন করেও পাল্টাপাল্টি নামকরণ হয়েছে। জোট সরকারের আমলে শহরের কীর্তন খোলা নদীর পাশে মৎস্য কেন্দ্র স্থাপন করে তার নাম শহীদ জিয়াউর রহমান মৎস্য কেন্দ্র রাখা হয়। ওয়ান ইলিভেনের পর তা উচ্ছেদ করা হয়। তবে কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা একই স্থানে মৎস্য কেন্দ্র স্থাপন করে আবদুর রব সেরনিয়াবাত মৎস্য কেন্দ্র নাম দেয়। শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে বরিশাল শহরের পাশে কলাতলির একটি চর দখল করেও বঙ্গবন্ধু মার্কেটের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।

তবে ক্ষমতা ছাড়ার পর দখলকারীরাও চর ছেড়ে দেয়। শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণের চরামদ্দি এলাকায় সরকারী সড়কের পাশ দখল করে বঙ্গবন্ধুর নামে বেশকিছু দোকানপাট তৈরী করা হয়েছিল। স্থানীয় এমপি মাসুদ রেজা এতে সহায়তা করেন। বঙ্গবন্ধুর নাম দেয়ায় খুব সহজেই জেলা প্রশাসন থেকে জমির লিজ অনুমোদনও পাওয়া যায়। তবে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তার নামও পরিবর্তন হয়ে যায়।

বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ মার্কেটকে বেকারবন্ধু মার্কেট নাম দেয়া হয়। বর্তমানে এ নামটিও নেই। দখল নিশ্চিত করতেই বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। পিরোজপুরে গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ইন্দুরকানি উপজেলার নাম পরিবর্তন করে জিয়ানগর রাখা হয়। আর নারায়নগঞ্জের চাষাঢ়ায় জিয়া হল নামে একটি বিশাল অডিটোরিয়াম রয়েছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দুটি আবাসিক হলের নাম বদলে গেছে। ছাত্রদের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের নাম বদলে শের-ই-বাংলা হল এবং ছাত্রীদের একমাত্র হল চাঁদ সুলতানা হলের নাম বদলে রাখা হয়েছে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল। এর মধ্যেই হল দু’টির নামফলকেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিসক্রমে ১৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় হল দু’টির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার স্বারিত এক নোটিশে শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও চাঁদ সুলতানা ছাত্রী হল দু’টির নাম পুন:স্থাপন করার আদেশ জারী করা হয়।

ভোলার মনপুরার পচা কুড়ালিয়া নামের একটি স্থানে শেখ মুজিব চিন্তা নিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এখানে বসে মুজিব জাতীয় বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন। রাজশাহী, যশোর, রংপুর, বগুড়া রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সরকার একটি পার্কের নাম রেখেছিল শহীদ কামরুজ্জামান পার্ক। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে রাখে রাজশাহী পার্ক। এবার কামরুজ্জামানের নামই ফিরে এসেছে।

নগরীতে জিয়াউর রহমানের নামে শহীদ জিয়া শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি সরকার। যশোরের চৌগাছা ডিগ্রি কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নাম রাখা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রাবাস। তবে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা এর নাম পাল্টে শরীয়তুল্লাহ হল নাম দেয়। এ নগরীতে একটি সড়কের নাম দেয়া হয়েছে শেখ মুজিব সড়ক। স্বাধীনতার আগে এর নাম ছিল স্মিথ সড়ক।

এরশাদের নয় বছরের আমলে তার নামে টঙ্গী, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে দু:স্থদের পুণর্বাসন কেন্দ্র ‘এরশাদ নগর’ স্থাপন করা হয়েছিল। এর একটি রয়েছে রংপুরে। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের বাসভবনে যেতে ব্যবহার করা হয় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোক্তার সড়ক। একসময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এর নাম পাল্টে এরশাদ সরণী নাম দেয়। তবে স্থানীয়রা এ নাম প্রত্যাখান করায় নামকরণ সফল হয়নি।

এরশাদ তার পিতা মকবুল হোসেনের নামে এখানে একটি এতিমখানাও করেছেন। রংপুর পৌরসভার অধীনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল রয়েছে। বগুড়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয় বঙ্গবন্ধু কৃষি কলেজ। তবে বিএনপির আমলে কোন পৃষ্ঠপোষক না থাকায় এটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ফের কলেজটি চালু করেছে।

ময়মনসিংহ ময়মনসিংহের মেডিকেল কলেজ এলাকায় জিয়াউর রহমানের নামে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান মন্ত্রীসভা। এর নাম ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরশাদ সরকার তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নামে মাসকান্দা এলাকায় একটি মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে এর নাম পাল্টে বেগম রোকেয়ার নামে রাখে।

রওশন এরশাদের নামে নগরীতে আরেকটি আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলেও পরবর্তী সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ভবনে বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের অফিস করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আলতাফ গোলান্দাজ নিজের নামে ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন তার পিতা হাজী কাশেমের নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন। নেত্রকোনা সরকারি কলেজের খালেদা জিয়া হলের সাইনবোর্ডটি মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। টুঙ্গিপাড়া টুঙ্গিপাড়ায় গত আওয়ামী লীগ সরকার শেখ রাসেল দু:স্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পূণর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো।

বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে এ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে তা চালু হয়েছে। এছাড়াও এখানে শেখ কামাল যুব উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। পাকিস্থান আমলে গোপালগঞ্জে কায়দে আজম মেমোরিয়াল কলেজ ছিল। তবে স্বাধীনতার পরেই এর নাম সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ রাখা হয়। ফরিদপুরে বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বাবা মোহন মিয়ার নামে রয়েছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়।

খুলনা খুলনা শহরের নব নির্মিত একটি হাসপাতাল নিয়েও নামকরণের রাজনীতি চলছে। বিএনপি এর নাম রেখেছিল খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল। পরে বর্তমান সরকার তা বদলে দিয়ে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল রেখেছে। ভৈরব সেতু কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব সেতুও নামকরণ নিয়ে টানাটানির মধ্যে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রাথমিকভাবে এর নাম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে বিএনপি এর নাম দেয় চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু। এ সেতুকে নজরুল ইসলামের নামে রাখার জন্য বর্তমানে তোড়জোর চলছে। গত ৯ আগস্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামের পূত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশারগঞ্জ গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সেতুটির নাম পাল্টানোর দাবী করেন। সিরাজগঞ্জে নামকরণ সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের একটি ছাত্রীনিবাসের নাম ছিল শহীদ জিয়াউর রহমান ছাত্রীনিবাস। বর্তমান সরকারের ছয় মাসের মধ্যে এর নাম দুবার বদল হয়েছে।

প্রথমে এর নাম বেগম রোকেয়া করা হলেও তা বদলে এখন জাহানারা ইমাম হয়েছে। এছাড়াও শহরে একটি নতুন অডিটোরিয়াম এখনও চালু না হলেও দুবার নাম পরিবর্তনের মুখে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এর নাম ক্যাপ্টেন মনসুর আলী অডিটোরিয়াম রেখেছিল। পরে বিএনপি এর নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ অডিটোরিয়াম রাখলেও কাজ শেষ করেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় গিয়েই ফের ক্যাপ্টেন মনসুর আলী অডিটোরিয়াম রেখে কাজ শেষ করে এনেছে।

কুষ্টিয়ার সেতু কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর ওপরে স্থাপিত একটি সেতুর নামফলক ভেঙ্গে ফেলার আগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এ সমাবেশ না হলেও সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দেননি। এ সেতু তৈরীর আগেই তা সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেনের নামে রাখার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে আহবান করা হয়। চার দলীয় সরকার এতে কোন কর্ণপাত না করে ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারী এক সরকারী তথ্য বিবরণীতে স্থানীয় বিএনপি এমপির পিতা সৈয়দ মাসুদ আহমেদ রুমীর নামে নামকরণ করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর সেতুর পাশেই বিশাল এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় সমাবেশে অংশ গ্রহনকারীরা রুমীর ফলক ভেংগে মীর মোশারফ হোসেনের নামফলক স্থাপন করে। ম্যূরাল ভাংচুর: গত ১২ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের লাউঞ্জের ম্যূরাল চিত্র থেকে জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমেই শুরু হয় দেশব্যাপী জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ম্যূরাল ভাংচুর। গত ১৬ মে রাতে গাজীপুরের উন্মুতক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গেট সংলগ্ন স্থান থেকে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আরেকটি ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে এখানে অন্য একটি ম্যূরাল চিত্র স্থাপনের কথা ছিল।

এর ভাস্কর ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তবে বিএনপি তা বাতিল করে মৃণাল হকের আরেকটি ম্যূরাল স্থাপন করে। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগেরটি প্রতিস্থাপন করতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠিত ম্যূরালটি ভেঙ্গে ফেলে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট সোমবার গভীর রাতে ভেঙে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্থাপিত জিয়াউর রহমানের দেয়ালচিত্র (ম্যুরাল)। স্টেডিয়ামের ১নং গেট এবং মশাল গেট খোলা থাকায় খুব সহজেই ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে দুস্কৃতিকারীরা।

মুখে কাপড় বেঁধে একদল লোক ড্রিল মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলে দেয়ালচিত্রের প্রতিকৃতি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই একটি মহল এ প্রতিকৃতি ভাঙার পাঁয়তারা করে আসছিল। অবশেষে সেটা বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপের আগে ভিআইপি’র ১ নং এবং মশাল গেটে বঙ্গবন্ধুর দু’টি প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়।

এ সময় এ মাঠে আন্তর্জাতিক সব ম্যাচের আয়োজন করা হতো। ২০০২ সালে বিএনপি সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে জিয়াউর রহমানের দু’টি প্রতিকৃতি তৈরি করে। গত ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের সামনে স্থাপিত খালেদা জিয়ার ম্যুরাল ভেঙে ফেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দুদলের শিক্ষকরা পাল্টাপাল্টি বিবৃতিও দিয়েছেন। ভিত্তিপ্রস্তর উচ্ছেদ: ওদিকে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মূহুর্তে দেশ জুড়ে প্রচুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে যায়।

তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতাকর্মীরা এর বেশিরভাগ ভিত্তিপ্রস্তরই ভেঙ্গে ফেলে। রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতা ছাড়ার ছয় দিন আগে স্বাধীনতা ফলকের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ ফলকটির কাঁচ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ফলকের লেখাও কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। চট্টগ্রামে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।

বর্তামানে ওই ফলকও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ওদিকে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ভেঙ্গে ফেলা নামফলক ও ভিত্তিপ্রস্তর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় গিয়ে ফের স্থাপন করেছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক পুণঃস্থাপন করা হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালের ৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনের পর রাতের আধাঁরে দুঃস্কৃতিকারীরা ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক তুলে ফেলে এবং পরবর্তীতে তা পুণঃস্থাপনের আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বিজয় ও সরকার গঠনের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক পুণঃস্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। নৌকা চত্বর নামে পরিচিত পূর্বের স্থানে এটি লাগিয়ে দেয়া হয়। যশোরের বিভিন্নস্থানে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্থাপিত বিভিন্ন স্থাপনার নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলেছে আওয়ামী লীগের অনুসারীরা। এর মধ্যে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর। শেষ কথা: একটি দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত।

জনগণের প্রত্যাশা- নির্বাচিত সরকার হিসেবে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মেধা, শ্রম ও তৎপরতা অধিকাংশ গরীব মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রাখবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচিত সরকারগুলো নামকরণ আর নামবদলে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে দেশের পারষ্পরিক সংঘাতময় রাজনীতি আরও বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে ওঠেছে যা সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। এজন্য এখনই এর লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন। নামকরণের রাজনীতি-০১ Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।