আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোঁজ..............(একটি গল্প)



খোঁজ সেবু মোস্তাফিজ হঠাৎ করেই ঘটনার সূত্রপাত। যেন বান ডেকেছে,লন্ডভন্ড করা ঝড় আঁছড়ে পড়েছে কোন সমুদ্ররে বুকে। ইতিহাস স্বাক্ষী-এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে অতলে।

বারো বাই বারো ঘরটির সমস্ত দরজা জানালা আটা। ভারী র্পদায় সজ্জতি তারা। প্রচন্ড দাপট স্বত্তেও এক বিন্দু শীত ঢোকার কোন উপায় নেই। তবু ভিজে যাচ্ছে বালিশের কাভার..বিছানার চাদর..পরনরে লুঙ্গি...এমন কি সাড়ে পাঁচ বাই সাড়ে সাত বক্স খাটের কাঠ-গজাল। গলার রগ চিরে, জিহ্বা চিরে এমন কি সমস্ত শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে কি এক অব্যক্ত ভাষা।

এ যেন ভয়ানক এক যুদ্ধ। অবশেষে গগণ ফাটানো আওয়াজে কেবল একটি শব্দই উচ্চারতি হলো,- কুত্তার বাচ্চা...। ভয় পেয়ে ঘুম ভেঁঙ্গে গেলো নাজ বেগমের। ছয় বছরের মেয়ে অর্চি কেঁদে উঠলো। -কী হলো কী হলো..স্বামীর মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে নাজের ভর্য়াত প্রশ্ন।

বাবা..বাবা বলে আরো জোড়ে কেঁদে উঠলো অর্চি। ধড়ফড় করে উঠে বসলো মেসবা। বউয়ের দিকে তাকালো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো..কিছু হয়নি মা,ঘুমাও। ব্যস এই।

আবার শুয়ে পড়লো সে। স্বামীর এমন চেহারা আগে দেখেনি নাজ বেগম। মেয়ে কে বুকে নিয়ে স্বামীর গা ঘেঁসে বসে থাকলো অনেকক্ষণ। কিছু বলার সাহস পেলো না সে। মরার মতো পড়ে থাকলো মেসবা।

চোখ বন্ধ কিন্তু ঘুম আর এলো না। পুরো বিষয়টা একবার শুরু থেকে ভাবতে লাগলো সে। একটু পরেই ফজরের আজান ভেসে এলো। তার কানে যেন শতবার বাজলো -ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম। দুনিয়াতে এতো শক্তিশালী উত্তম থাকতেও অধমদের দৈরত্ব কেনো-এ প্রশ্ন জাগলো তার মনে।

অগোছালো কিছু ভাবনা এক সময় তার চোখে নিয়ে এলো তন্দ্রা। কতক্ষণ পর তা ঠিক বোধগম্য নয়, হঠাৎ তার কানে ভেসে এলো..বউয়ের কাঁপা কাঁপা গলা... হ্যালো মা শোনেন..হ্যা..হ্যা..। তারপরের শব্দগুলো আর শোনা গেলো না। তবে সে বুঝলো এতক্ষণে খবরটা রাষ্ট্র হয়ে গেছে। ভাড়া বাসায় বউ আর মেয়ে কে নিয়ে থাকে মেসবা।

কিছুক্ষণ পরে গ্রীলের সদর দরজার শব্দ পেলো সে। শুনতে পেলো মায়ের কণ্ঠ। -অর্চি...........অর্চি.....। তারপর ফিঁসফিঁস.। মার আকুলতা আর একবার নতুনভাবে নাড়া দিলো তার মনে।

ভাবতে লাগলো..মা..কেবল সন্তানদের দুধে-ভাতে রাখতে কী অমানবকি পরশ্রিম করেছে জীবন ভর। এখনো ছোটে মাঠে-প্রান্তরে । হ্যা-তার মা একজন জাত কৃষক। পীরগঞ্জ সদর থেকে বারো কিলোমিটার দুরে শোলাগাড়ী গ্রাম। মেসবাদের আদি নিবাস সেখানে।

পীরগঞ্জ সদরে বসতভিটা ছাড়া বাকী সব জমি ওই গ্রামে। চাষাবাদের পুরোটাই দেখে তার মা। জ্ঞানত তারা বাবাকে কোনদিন দেখেনি চাষাবাদের খোঁজ নিতে। অথচ পুরো সংসার,ভাই- বোনদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচের শতকরা ষাট ভাগ আসে কৃষি থেকে। বাবার ব্যবসা আছে।

তবে তা সংসার চালানোর জন্য যথষ্টে নয়। সেই পরিশ্রমী মা পরিশ্রমের ভারে আজ শারীরকিভাবে জরার্জীণ। খবর পেয়েই সেই মা এসেছে ছুঁটে। মনে মনে বড়িবড়ি করে সে কবার ডাকলো..মা..মা..মা..মা......। টেলিপ্যাথিক সূত্রে মা এসে বসলো তার পাশে।

গায়ে মাথায় হাত বুলালো। শব্দ হলো বাতাসের। সে বুঝলো দোয়া পড়ে মা ফু দিলো তার মাথায়। কি হয় জানান বাহে..নাজ কে একথা বলে মা চলে গেলো। একটু বেলা বাড়তেই বাবা এলো মেসবার বড় ভাইয়ের ছেলের হাত ধরে।

বাবার জন্য ভীষন কষ্ট হলো তার। এক বছর আগেও বাবা চোখে দেখতেন। প্রায় এক বছর হলো বাবার দুটি চোখেই ভুল চিকিৎসার জন্য অন্ধ। সন্তানদরে সু-শিক্ষায় শিক্ষত করার জন্যই গ্রাম ছেড়েছিলেন তিনি। মেসবার বয়স তখন আট বছর।

একজন সৎ মানুষ হিসেবে সমাজে তার প্রচুর কদর। অপারেশনের সময় চিকিৎসক নিজ হাতে এক বছরের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ ঔষধ লাগিযে দেয়ায় এক মাসের মধ্যেই একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। বিধির বাম..চার বছর পর অপর চোখটির অপারেশনের একদনি পরেই নষ্ট হয়ে যায় চিকিৎসকের দুরর্দশীতার অভাবে। আজ তিনি দুচোখে কিছুই দেখেন না। ভাবতেই বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো তার।

মাথার ভেতর চাড়া দিতে শুরু করলো রাতের সেই ঘটনা। অন্ধ বাবা আস্তে আস্তে এসে বসলো তার মাথার পাশে। কোন কথা নয়। তিনি বরাবরই কথা কম বলেন। মেসবা কেবল একটা র্দীঘশ্বাসের শব্দ পেলো।

ইচ্ছা থাকলেও সে চোখ খুলতে পারছে না। কে যেন দুচোখে যীশুর মতো পেরেগ ঢুকিয়ে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। ঘুমটা একটু পাতলা হয়ে আসতেই মেসবা বুঝতে পারলো রাতের ঘটনাটা রাষ্ট্র হয়েছে ব্যাপক। বারো মাইল দুর থেকে ছুঁটে এসেছে বড় বোন রিনা।

মেসবা তার বড়ই আদরের ভাই। খুব ছোট বেলায়,মেসবা তখন বড় ওয়ানের ছাত্র। কি এক ঘটনায় ছাড়ু দিয়ে তাকে মেরেছিল এই বোন। পরের দিন থেকেই মেসবার জ্বর শুরু। পরে ডাক্তার জানায় টায়ফয়েড।

এটি শোনার পর অপরাধ বোধ থেকেই সাত দনি ভাত খায়নি সে। ভাইয়ের পাশে বসে শুধু কেঁদেছে সে। সারাটা দিন তার কাটলো ঘুমের ভান-ঘুম এবং তন্দ্রায়। দিন গড়িয়ে রাত এলো। আটটা কি নয়টা।

আবার সেই ভোর রাতের ঘটনাটা ঘটলো। মুখ দিয়ে গড়গড় শব্দ হতে লাগলো। চিৎকার করে উঠলো সে, এই ...কুত্তার বাচ্চা। একটি হাত শক্ত করে ধরলো তার হাত। সে বুঝলো এটি তার অন্ধ বাবার হাত।

- বাবা ..বাবা..বাবা মেসবা..-মায়ের কণ্ঠে আকুলতা। - মেসবা.....মেসবা...বোনের অস্থরি কণ্ঠ। - বাবা..বাবা..ও বাবা আদরের মেয়ের ভর্য়াত কণ্ঠ। সে চোখ খুললো। তার চোখ আটকে গেলো বাবার কালো চশমায়।

অস্পষ্ট স্বরে সে আবার বললো,- কুত্তার বাচ্চা..। তার মনে হলো হাতের কাছে পেলে এক্ষনি সে খুন করতো সেই হারামজাদা ডাক্তার কে যার ভুল চিকিৎসায় বাবা আজ অন্ধ। বাবা কিছু বললো না। কেবল খুঁজে খুঁজে তার মাথায় হাত রাখলো। মা বললো-স্বপ্ন দেখছিলি বাবা! সে সবার দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে কেবল মাথা নাড়লো।

মা চিরায়িত স্বভাবে মানত করলো ইউনুস খতমের। একটা খাসি জবাই করে খাওয়াবে গরীব-দুঃখিদের। একটু একটু করে স্বাভাবকি হওয়ার চষ্টো করলো মেসবা। একটু আড়াল হওয়া প্রয়োজন। তাই বললো-বাথরুমে যাবো।

নাজ বেগম তাকে ধরে বাথরুমে নিয়ে গেলো। নাজ বেগমের মুখ শুকিয়ে কাট। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। তার উপর কিছু ভয় কিছু শঙ্কা কাজ করছে তার মাঝে। দীর্ঘ সময় ইচ্ছে করেই বাথরুমে থাকলো মেসবা।

চোখে মুখে ভালো করে পানির ঝাপটা দিলো অনেকক্ষণ ধরে। একটু স্বাভাবিক মনে হতে লাগলো তার। ফিরে এলো ঘরে। সবাই বুঝলো আপাতত আর কোন সমস্যা নেই। -কিছু হলে খবর দ্যান বাহে-নাজ কে একথা বলে সবাই চলে গেলো।

মেসবা অবশ্য তেমন কোন কথাই বললো না কারো সাথে। সে মেয়ের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলো। বউ কে ইশারায় বোঝালো সব ঠিক আছে। সবাই চলে যাওয়ার আধা ঘন্টা পরে সে বউ কে বললো-আমার একটু জরুরি কাজ আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরবো।

বউ একটু গা-গু করলেও সে বরে হলো। বাসা থেকে বরে হয়ে সোজা গেলো বাজারের নিপেন কামাড়ের দোকানে। - কেমন আছো দাদা। - ভালো। এতো রাতে....কি খবর।

- আমাকে একটা দো-ধারা ছুরি তৈরি করে দিতে হবে। - দো-ধারা ছুরি দিয়ে কি হবে। - দরকার আছে। সেটা এক্ষনি দিতে হবে। নিপেন কামাড় মেসবার মুখের দিকে তাকালো।

কি বুঝলো সেই জানে। রাজি হয়ে গেলো। বানিয়ে একটা দো-ধারা ছুরি। শার্টের হাতায় লুকিয়ে রাখা যায় এই মাপর দো-ধারা ছুরি নিয়ে একটু রাত করেই বাড়ি ফিরলো মেসবা। ফেরার পর বউয়ের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলো তার।

গত রাতে ঘটনায় সন্দেহ পোষন করে বউ বললো-আসলে রাতে তোমার কিছুই হয়নি। নেশা--ভাং করে এসেছিলে মনে হয়। -একথা শুনে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। লেগে গেলো ঝগড়া। শেসে মেযের মধ্যস্থতায় ঝগড়া থামলেও অভুক্ত কাটলো সারা রাত।

বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণ পর বউটার জন্য মায়া হলো তার। কেবল তাকে ভালোবেসেই প্রায় তিনশ মাইল দুরে বাবা-মাকে ফেলে এসেছে। জোড় করে বউ কে টেনে নিলো বুকে। তার অভিমানন ভাঙ্গাতে বশে কসরত করতে হলো। অবশেষে নাজও আঁকড়ে ধরলো শেষ ঠিকানা।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মেসবার বালিশের নীচে কি যেন ঠেকলো নাজের হাতে। মুর্হুতে নাজ পাথর হয়ে গেলো। মেসবা তা বুঝলেও কারণ বুঝলো না তখনো। নাজ তাকালো স্বামীর মুখের দিকে। বালিশের নীচ থেকে বের করলো জিনিসটা।

ব্যাপারটা বুঝলো মেসবা। -এটা কি? - দেখতেইতো পাচ্ছো। -এটা এখানে কোনো? -কাজ আছে। -কী কাজ..? উত্তর নাই। -বললে না কি কাজ? নাজের হাত থেকে ছুরিটা কেঁড়ে নিয়ে মেসবা বললো-ঘুমিয়ে পড়ো।

মেসবার চোখে নাজ এমন কিছু দেখলো যে সে ভয পেলো। কথা বাড়ানোর সাহস হলো না। চুপে চুপে নেমে গেলো মেসবার শরীর থেকে। যেমন গাছ থেকে সাপ নামে। সাতদিন সাত রাত অন্য রকম কাটে মেসবার।

দো-ধারা ছুরিটা শার্টের হাতার ভেতর লুকিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। তেমন কোন কথা বলে না কারো সাথে। বিষয়টা নিকট আত্মীয়দের মাঝে জানাজানি হয়ে যায়। অনেকের অনেক প্রশ্ন। মেসবার উত্তর একটাই-আমি একজন কে খুঁজছি।

তাকে বিভ্রান্ত দেখায় -উদ্ভ্রান্ত লাগে। কথা বাড়ানোর সাহস পায় না কেউ। দিনের পর দিন তার চোখ লাল থেকে আরো লাল হয়। সেদিন শুক্রবার। তার শুভ কামনায় ইউনুস খতম হয়ে গেলো।

সে রাতে সে আর বের হলো না। সবাই ভাবলো-যাক বাচা গেলো। রাতে স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে পড়লো সে। হটাৎ ঘটলো আবার সেই ঘটনা। সে যনে স্পষ্ট দেখছে-মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক রাত।

সে ফিঁসফিঁস করে ঘটনার র্বণনা করছে। গোটা শহরে অতঙ্ক। বের হতে চেয়েও বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি তারা। হঠাৎ তাদের বাড়িতে এলো রাজাকার হারু মিয়া। বাবা কে ডেকে বের করলো ঘর থেকে।

কিছুক্ষণ পর জলপাই রং-এর পোষাক পড়া কজন পাকিস্থানী সেনা এলো। বাবা কে বেঁধে ফেললো গাছের সাথে। ঘর থেকে চিৎকার করে বের হয়ে এলো মা। তাকেও বেঁধে ফেললো তারা। হারু যা বুঝালো তা হলো এক রাতে কিছু মুক্তি সেনা কে খেতে দিয়েছিল বাবা।

তাই বাবা জানে তাদের আস্তানার ঠিকানা। যদি বাবা মুক্তির ঠিকানা বলে দেয় তাহলে বেঁচে যাবে। বাবা যতই বলে-আমি জানি না তারা ততই ক্ষিপ্ত হয়। আমরা ভয়ে লুকিয়ে পড়ি চৌকির নীচ। এক সময় রাজাকার হারুর পরার্মশে ঘরে ঢোকে এক সেনা।

চৌকির নীচ টেনে বের করে আমাকে,আমার বড় ভাই ও বড় বোন বীনা কে। সবার বড় বোন রিনা সেদিন নানা বাড়িতে ছিল। বীনার বয়স দশ কী বারো। পাকিস্থানী সেনাদের হাতে অস্ত্র। একজন সেনা এগিয়ে এলো বীনার দিকে।

টেনে নিয়ে গেলো পাশের ঘরে। একটা চিৎকার ভেসে এলো ঘর থেকে। পরে আর একজন সেনা গেলো...পরে আর একজন..আর একজন..। ঘর থেকে ভেসে এলো বাবা বাচাও...বাবা বাচাও..। বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

মা গগণ বিদারী চিৎকার করলো। আমরা দুই ভাই কাঁদতে লাগলাম হাউমাউ করে। হারু মিয়া পরার্মশ করলো পাকিস্থানী সেনাদের সাথে। ঘর থেকে বের করে আনলো বীনা কে। সে হাটতে পারছিল না।

কথা বলতে পারছিল না..হয়তো দেখতেও পারছিল না কিছুই। তারা মুক্তিপণ হিসেবে বীনা কে নিয়ে গেলো। বলে গেলো-মুক্তি বাহিনীর খবর দিলে ফিরে দেয়া হবে তাকে। বাবা কিছু শ শুনলো না। তখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।

মা কেবল চিৎকার করে বললো-ওই কুত্তার বাচ্চা হারু-তুই নির্বংশ হয়ে যাবি। ওরা চলে যাওযার পর আমরা দুই ভাই কাঁপতে কাঁপতে মার কাছে এসে তার বাঁধন খুলে দিলাম। মা দৌড়ে গিয়ে বাবার বাঁধন খুলে দিলো। মার কথা মতো আমরা ঘর থেকে পানির জগ নিয়ে এলাম। মা বাবার মুখে পানি ছিটা দিলো অনেকক্ষণ।

এক সময় বাবার জ্ঞান ফিরলো। বাবা একবার শুধু বললো-বীনা? মা বললো-নাই। তারপর.......। বড় হতে হতে অনেকবার এ গল্প শুনেছে মেসবা। বড় হয়ে মেসবা হারু মিয়া কে বেশকবার দেখেছে।

দীর্ঘদিন তার কোন খোঁজ নাই। শুনেছে এখন সে ঢাকায় থাকে। আবছা মনে আছে জানোয়ারটার মুখ। সে খুঁজছে তার হারিয়ে যাওয়া বোন কে....। সে খুঁজছে রাজাকার হারু কে..।

সে খুঁজছে সেই ডাক্তার কে যার জন্য তার বাবা আজ অন্ধ। আজ সে হারু কে পেয়েছে। তাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেলো শহীদ মিনারে। পিছে পিছে হাজার হাজার মানুষ। তারা বিভক্ত দুদলে।

সে সবার উদ্দেশ্যে বললো সেদিনের কাহিনী। কাহিনী শেষে সে আবার জনতার উদ্দেশ্যে বললো- -হারু কি রাজাকার? একদল চিৎকার করে বললো-রাজাকার---রাজাকার? একদল নিঃশ্চুপ। মেসবা আবার বললো-তার বিচার কি তার পরিবার করেছে? একদল বললো- না---না। অন্যদল নিঃশ্চুপ। সমাজ কি তার বিচার করেছে? একদল বললো- না---না।

অন্যদল সমেবেত হতে থাকে। রাষ্ট্র কি তার বিচার করেছে? - না-----------না। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যদল সমেবেত হয়। মেসবা বললো আমি তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষনা করলাম। বলেই শার্টের হাতার ভেতর থেকে বের করলো দো-ধারা ছুরিটি।

একদল বললো-জয় বাংলা-------------- অন্যদল বললো-নারায়ের তকবির------------- চারদিকে ধর ধর শব্দ। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ধর-------ধর---কুত্তার বাচ্চারে ধর---। মেসবার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় নাজ বেগমের। ডিম লাইটরে আলোতে সে দেখে রক্ত আর রক্ত।

মেসবার হাতে দো-ধারা ছুরি। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে নাজ। ঘুম ভেঙ্গে যায় ছয় বছরের মেয়ে অর্চির। মায়ের সাথে সেও কাঁদতে থাকে.............। ২৪/১২/০৯ পীরগঞ্জ=রংপুর শেষ##


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।