আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই টাকায় এক কয়েন আর পাঁচ টাকায় তিন কয়েনের মোস্তফাকে মনে পড়ে



এক কয়েন দুই টাকা। তিন কয়েন পাঁচ টাকা। যেহেতু জামা-কাপড়, বই-খাতার মতো ভিডিও গেমস বাবদ বাবার কোনো বরাদ্দ নাই সেহেতু এক টাকা বাঁচিয়ে পাঁচ টাকায় তিন কয়েন কেনা-ই ছিল তখনঅর্থোনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী প্রকল্প। তিন কয়েনে অনেকক্ষণ গেমস খেলা যেতো। বন্ধুদের সাথে একটা সময় নেশার মতো বুদ হয়ে থাকতাম এই গেমসে।

আমাদের গেমস জীবনে তখনকার হিরোর নাম, মোস্তফা। দেখলেই ভালো লাগতো। দিনভর এই মোস্তফার সাথেই মিলেমিশে হয়ে যেতাম একাকার। ফার্ষ্ট বস, সেকেন্ড বস(কসাই বস)...চার নাম্বার বস(ব্লেড বস) এরকম একেকটি বস পার করা মানে ছিল তখন জীবনের সবচেয়ে সফলতম ঘটনাবলী। প্রথম বসের কাছে মরে যাওয়া, কিংবা সেকেন্ড বসকে চ্যাক দিতে না পারার ব্যার্থতাতে তখন কী যন্ত্রণায় বিদ্ধ করতো, কি যে দুঃসহ বেদনায় দিন যে কাটিয়েছি সে অকৃতকার্যতায় সেটা ভাষায় বলা যাবে না।

চার নাম নাম্বার বস পার করে পাঁচ নাম্বার ষ্টেজ-এ যাওয়া ছিল তখন চরম আনন্দময় ক্ষণ। কাঁপাকাঁপি অবস্থা। এভাবে মোস্তফার সাথে আমাদের দিনগুলো বেধে গিয়েছিল। রাস্তায় মারামারি দেখলে মনে হতো মোস্তফার মতো মারামারি। অপছন্দের মানুষের সাথে খুঁজে বের করতাম মোস্তফা গেমসের বসদের চেহারার মিল।

যে কোনো সাফল্যের আনন্দ পরিমাপ করা হতো মোস্তফা গেমসের বসদের পার করার আনন্দের সাথে। আজব সে সময়। আর একটা কয়েন খেলেই চলে যাবো। এমন করতে করতে যে কতো কয়েন গেমসের ভেতরে ঢুকিয়েছি ইয়াত্তা নেই। পরীক্ষার আগের রাতেও পড়ার বই ওপেনের আগে মোস্তফা গেমস ওপেন করে খেলে এসেছি।

স্যারের আগে খুজেছি গেমসের দোকনে কয়েন হাতে বসে থাকা আঙ্কেলকে। হায়! মোস্তফা। কতদিন এক কয়েন খেলে চলে আসবো ভেবে গিয়ে দিন পার করে এসেছি। আমাদের কত টাকার শ্রাদ্ধে যে গেমসের আঙ্কেল পেটের দাবী পুরণ করেছে সে হিসেব কী করে দেই? ওই মোস্তফাময় জীবন আমাকে কতটা পিছিয়ে দিয়েছে সে হিসেব করিনি কখনো। ওই মোস্তফাময় জীবন কি করে আমার কৈশোরের সঞ্চয় ভেঙ্গে ভেঙ্গে নিয়েছে পাই পাই করে সে হিসেবও করিনি কখনো।

শুধু টের পেয়েছি সবুজ রঙ শার্ট পড়া ওই মোস্তফা আমার সবুজ কৈশর আরো কীভাবে রঙচঙে করে দিয়েছিল। মোস্তফাকে মনে পড়ে। অনেকদিন দেখা নেই মোস্তফার সাথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।