আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখ-দুঃখের বিজয় মাস

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,

মহান বিজয় মাসের উষালগ্নে বিজয়ের খবরের পাশাপাশি পরাজয়ের খবরে প্রতিটি সংবাদপত্রের শিরোনাম এসেছে দুঃখজনক ভোলার লঞ্চডুবি। স্বজন হারাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। ভোলার লালমোহনে লঞ্চডুবি ৭৬টি লাশ উদ্ধার। উদ্ধার কাজে ঢিলেমির অভিযোগ-নিখোঁজ ৩৬ ( খবর ১ ডিসেম্বর প্রথম আলো)। প্রায় প্রতিটি কাগজে এই দুঃখজনক খবর।

সময় বয়ে যায়। তেতুলিয়া নদীর পানি তার স্বাভাবিক গতিতে চলে কত লাশ ভেসে যায়। নিখোঁজ রয়ে যায় কত জনা। সে খবর নিতে আসা মানুষগুলো ঈদের আনন্দ ভুলে লঞ্চ লঞ্চ ঘাটে শীতের দিন রাত্রিগুলো পার করছে যদি স্বজনদের মরা মুখটা দেখতে পায়। একটি স্বাধীন দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা কতটুকু স্বাধীনতা রা করতে পেরেছি কিংবা পারছি।

তবে কেন বার বার এমন আঘাত পায় এদেশের মানুষগুলো। দূর থেকে তো আর কোন বিদেশী শক্তি আসার সম্ভাবনা নেই। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ওদের তাড়িয়ে দিয়েছে। অর্জিত হয়েছে একটি স্বাধীন দেশ এই ডিসেম্বরে ১৯৭১ সালে। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে একে ধরে রাখা অনেক কষ্টের।

সেই কষ্টকে আমরা সহজভাবে নিতে যেন পারি এই হোক বিজয় মাসের অঙ্গীকার। কবি গুরু বড় দুঃখ করে বলেছিলেন “ সাত কোটি মানুষের হে মুগ্ধজননী। রেখেছ বাঙালী। মানুষ করনি। আজ আমরা ১৪ কোটি বাঙালি সত্যিকার অর্থে কতটুকু মানুষ তথা দেশপ্রেমিক হতে পেরেছি ভাবতে গেলে মনে বড় কষ্ট পাই।

বাংলার বুকে আজো কেন মারামারি, ভাইয়ে ভাইয়ের বুকে ছুরি বসাতে একটুও হাত কাপে না। অধিক লালসায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটাতে পারতাম না। অর্থ লিপ্সা বড় মারাত্মক নইলে ভোলার তেতুলিয়া নদীতে এত বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটত না। যে লঞ্চ এর ধারণ মতা ৩৭০ জন নেওয়া হয়েছে তিন হাজার যাত্রী কেন ? উত্তর শুধু একটি আরো চাই। মানুষের জীবনের মূল্য এখানে কোনো বিবেচনা পায় না।

কবির ভাষায় এ জগতে হায় সেই বেশি চায়। আছে যার ভূরি ভূরি। টাকা-! মালিক প উদাসীন নইলে পরিবহন মালিক (সবাই নয়) তাদের নিজ নিজ গাড়ী, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ কতটুকু ঠিক আছে, তাদের ফিটনেস আদৌ আছে কিনা তাদের ধারণ মতা কতটুকু সে দিকে খেয়াল নেই আছে শুধু টাকার চিন্তায় মগ্ন- এই টাকার নেশায় প্রতিনিয়ত কত দুর্ঘটনা ঘটে যায় কত জীবন অকালে ঝরে যায়-কত পরিবার পথের ভিখারী হয়ে পড়ে মালিক পরে সে দিকে কোন খেয়াল নেই। ওরা শুধু সম্পদের পাহাড় গড়তে ব্যস্ত। যদি বলি এই বিজয় মাসে অতীতের পাক হানাদার বাহিনী আর এই সব বিকারগ্রস্ত মালিক দলের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য নাই-দুদল মানুষ মারা পার্টি।

খুব কি ভুল হল ? বিচার। বিবেকবানদের প্রতি এবং সরকারের কাছে। কত আশা নিয়ে দূর থেকে মানুষগুলো নিজের অতি আপন জনের সাথে ঈদের আনন্দে ভাগ বসাতে ছুটে ছিল নিয়তির নির্মম পরিহাস ওদের আনন্দের সলিল সমাধি হল ভোলার লঞ্চ ঘাটে-তীরে এসেও ওরা নামতে পারল না। তদন্ত কমিটি গঠিত হয় অবশ্য। আলোচনা চলবে - সময় গড়িয়ে যাবে- বিচার সে তো ঐ দূরের আকাশ দেখা যায় নাগাল পাওয়া যায় না।

যে বা যারা তাদের আপজন হারাল কেউ কি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে। হয়তো তিপূরণ মিলবে অভাগা দেশে মায়া-মমতা অর্থহীন মওলার দেওয়া জীবন এখানে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া যায়। গরীব দুখীরা সাময়িকভাবে ভুলে যায় কিন্তু যে সন্তান হল এতিম, যে সব মা-বোন হল বিধবা-স্বামীহীন এদের কি জবাব দেবে এই সব অর্থ লোলুপ মালিকরা (সবাই নন) ? সরকারের কাছে আমরা বরাবরই সুবিচার চাই এবং এই সব দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার নিশ্চয়তা চাই কিন্তু আজ পর্যন্ত সে নিশ্চয়তা মিলে নি-বরং ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে-ভোলার ত শুকাতে না শুকাতে কিশোরগঞ্জের দাইরা নদীতে ট্রলার ডুবে ৪৬ জনের মৃত্যু এবং আটজন নিখোঁজ (খবর প্রথম আলো ৫ ডিসেম্বর) । একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘন কুয়াশা এবং দুই চালকের অদতার কারণেই এ দুর্ঘটরা ঘটেছে প্রত্যেদর্শীরা মনে করেন।

যদি সঠিক তদন্ত এবং কঠোর শাস্তি হতো তবে অনেক জীবন বেঁচে যেত। এত দুঃখের পর কি গাইতে ইচ্ছে করে এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক তুমি। হ্যাঁ, মানুষ মারার দেশ পাওয়া মুশকিল-সে তো আমাদের দেশ। এখানে মানুষ ডুবতে পারে। মরতে পাবে, জ্বলতে পারে, ছাই হয়ে যেতে পারে-তাতে কি যায় আসে-মালিকদের পকেট ভরলেই হলো-তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়বে-গরীব মেহনতি মানুষ মরলে ওদের কি যায় আসে।

গরীব আরো গরীব হবে। দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসের। এ যেন বাংলার জন্য বিশেষভাবে খাঁটি। সুখের বিষয়- নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ভোলার দুর্ঘটনায় তিনজন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তৃপকে হয়তো ধন্যবাদ জানানো যায়- কিন্তু যাদের অবহেলায় এতটা জীবন পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বরখাস্ত তথা হারিয়ে গেল তারা তো আর এ জগতে পুনবর্হাল হবে না ফিরে আসবে না।

এর উত্তর কে দিবে ? উত্তর টাকা-ভোলার লঞ্চডুবির মৃতের ত্রিশ হাজার টাকা করে পাবে সরকার প থেকে। অন্যদিকে আরো খুশীর খবর শুধু দুঃখ নয় সুখও এদেশে আছে। আনন্দ বেদনার এ দেশ। এবার সাংসদদের গাড়ী কিনে দেওয়ার জন্য সরকারের খরচ হবে সাত শত কোটি টাকা (৭০০) এবং সাংসদরা কোন চিন্তা না করে তাদের গাড়ী রণাবেণের জন্য মাসে চলিশ হাজার টাকা পাচ্ছেন- খবর প্রথম আলো ১ ডিসেম্বর। তবে দুঃখ এই এ দেশে জীবনের মূল্য মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা-একটি গাড়ী জীবনের চেয়েও দামী।

হায়রে দেশ ? এখানে জীবন বড় বিচিত্র নইলে সদ্য সমাপ্ত ঈদে গরু-ছাগলের কোরবানীর ঈদে যেখানে মাংসের ছড়াছড়ি সেই দেশেও মানুষ অভুক্ত-নিরন্ন-নিরানন্দ ঈদ যাপন করেছে। তাদের বাড়িতে ঈদ আসে না। খবর প্রথম আলো ১ ডিসেম্বর ৪র্থ পৃষ্ঠায়। ঘটনা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ঈদ আসে নাই।

দারিদ্রের ভিতর তাদের দিন কাটে। ঈদ আসে, চলেও যায়, তাদের ঘরে আনন্দ উছলায় না। অথচ এদের অনেকে দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবন মরণ লড়ে ছিলেন। আজ দু’বেলা মু’মুঠো অন্ন জোটাতে জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত এরা। এই তো জীবন! এই তো দেশ।

এই কি স্বাধীনতা ! এদেশের কিছু সংখ্যক মানুষ তাদের সমগোত্রীদের কষ্ট দিয়ে ান্ত না হয়ে প্রকৃতির বেড়ে উঠা বৃ নিধনেও এরা মেতে উঠে। গত এক বছরে সীতাকুন্ডের সোনাই ছড়ি এলাকায় ১২৫ একর সবুজ বেষ্টনি উজাড় করা হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে। এই সব ধ্বংস লীলার পর কিছু লোক দেখানো গ্রেফতার হয়। দুঃখ ! জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সিডর, নার্গিস, আইলার মতো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে যখন উপকূলীয় মানুষের কষ্ট চরমে পৌঁছার কিছু অর্থলোভী মানুষের কারণে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই দিনের আশায় উপকূলীয় মানুষেরা।

কিন্তু বর্তমানের দৃশ্যপটে মানুষ দিশেহারা, অসহায়। এদেশে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা গণহারে জামিন পেয়ে যায়। মিনিটে অন্তত একটি করে জামিল দেওয়া হচ্ছে (খবর প্রথম আলো ২ ডিসেম্বর ২০০৯)। তবু সুবিচার আশা করি। এ আমার দেশ।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর মাস। আনন্দের মাস। খুশীর মাস। মহান এ মাস। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এদেশ।

যতই খারাপ হই না কেন আমরা তবু তো স্বাধীন দেশের মানুষ। অনেক গর্বের কারণ এটা ভুললে চলবে না। একটা কথা আমরা মনে করি এ পৃথিবী আমার। এর সব কিছু আমার। এর গাছপালা, লতাপাতা, ভূমি, সব আমার।

সত্য। তবে মনে রাখতে হবে পৃথিবী আমার নয়। আমি পৃথিবী। ভূমি আমার নয় আমি ভূমির। সব পড়ে থাকবে যেমনটি আছে একদিন আমি চলে যাব।

পৃথিবী তার আপন গতিতে চলবে। তাই যাবার আগে সব হিংসা বিদ্বেষ ভুলে পৃথিবীর মানচিত্রে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নির্মল দেশ উপহার দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার হোক আমাদের সবার এই বিজয়ের মাসে। জয় বাংলা। জয় বাংলার মানুষের।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.