আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষ গহবর (একটি সত্য ঘটনার উপস্থাপনা)-তৃতীয় পোষ্ট

নীল পাঁচ. সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে বিপ্লব তার সাধ্যের বাইরে গিয়েও চেষ্টা করেছে। কিন্তু হয়নি। ফারিয়ার যেসব সার্কেলের সাথে বিপ্লব পরিচিত ছিল তাদের সাহায্য নিতে গিয়ে বিপ্লব ভেতরে ভেতরে আরো কষ্ট পায়। ভালবাসার কারনে ফারিয়ার খারাপকেও খারাপ বলার শক্তি বিপ্লবের নেই,তবে বিপ্লব অসামাজিক না,ব্যক্তিত্বের সেন্স ওর ওনেক ধারলো। কিন্তু বাস্তবতার কিছু কিছু সমীকরনের সহজ হিসেব করাই থাকে।

ফারিয়ার সার্কেলের মানুষগুলো ফারিয়ার উপযুক্তই। প্রত্যেকেই খুব নীচ ভাবে বিপ্লবের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিতে শুরু করে। হৃদয়ের বিধ্বস্ততা নিয়ে ও ফারিয়ার এই সার্কেলের কাছে যায় যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে বা দুজনকে মিলিয়ে দিতে,কিন্তু হয় না,বিপ্লব যেন এক গু এর ভাগাড়ে পড়ে যায়। বিপ্লব আরো মুষড়ে যেতে থাকে। নিজের দ্রুত অবনতি একটু একটু টের পায়।

বিপ্লব দেখে,ফারিয়ার সার্কেলের প্রত্যেকেই ফারিয়াকে সোস্যাল প্রস্টিটিউট ভাবে এবং ফারিয়ার অনুপস্থিতে প্রকাশ্যেই এসব নিয়ে আমোদে মেতে উঠে। বরিশালে ফারিয়ার মায়ের বাড়ির পাশের এক এলাকাবাসীকে ফারিয়া আত্মীয় বলে। কাকতালীয় ভাবে এক ইফতার মাহফিলে তার সাথে ও আরো কয়েকজনের সাথে বিপ্লবের দেখা হয়। চা খেতে খেতে তিনি কোন কারন ছাড়াই বলে উঠলেন,ফারিয়া সেক্স এর বিনিময়ে লোকজনকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়,প্রয়োজনের জন্য তাদের বাধ্য রাখে। দিলু রোডে ফারিয়ার কাছের এক বড়ভাই ফারিয়া সম্পর্কে যা বলেছেন তা বিপ্লব দ্বিতীয়বার মনে করতে চায় না।

একদিন আরেকজন বিপ্লবকে বলে,মেয়েটার সাথে পরিচিত হতে না হতেই সে আমার সাথে খুলনায় ট্যুর দিতে চায়। একদিন ওর আরো একজন কাছের মানুষ খুব বিশ্রী ভাবে বলে উঠে,মাগী। ও ভাবে কেউ কিছু বোঝে না। আসলে সবাই সব বোঝে ওই বোঝে না যে ও একটা মাগী। খারাপের আবার খারাপ-ভাল‘র ভাবনা থাকে নাকি।

ও কখন কার সাথে আর যার তার সাথেই মারা দিতে যায় তার ঠিক ঠিকানা আছে ? বিপ্লব পাশে দাড়ানো ছিল,এক কথা শুনে ওর বমি আসে। এত বিশ্রী ভাবে মানুষজন ফারিয়াকে নিয়ে আলোচনা করে! বিপ্লব এক মুহুুর্ত সেখানে থাকে না। জাকী পর্যন্ত একদিন ফোনে বলে ফেলেছিল,ফারিয়ার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কত মানুষ বসে আছে। হিসেব ছাড়া কত জনের সাথে ওর কত সম্পর্ক আছে তাতো আমিই জানি না। বিপ্লব জাকীর এই মন্তব্যের ভঙ্গিতে খারাপ কিছুরই ইঙ্গিত পায়।

রবিন সেই কথিত কাজিন ওর এত কাছের,এত ছোট্ট বেলা থেকে ওদের বোঝাপড়া। সেও ফারিয়াকে সরাসরি বলে,তুইতো অফিস নিয়েছিস সেক্স করার জন্য। বিপ্লবের দুঃখ লাগে মানুষ কেন এভাবে বলবে ফারিয়াকে নিয়ে,তাও আবার ওরই চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষ। এরা কেমন সার্কেল ফারিয়ার ? ফারিয়া খারাপ হলেও ওর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েতো ওকে অসম্মান করাটা অন্যায় ও অভদ্রতা। যদি ফারিয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন অধিকার না দিয়ে থাকে তাহলে এরাতো ভয়ংকর খারাপের পর্যায়ে পরে,ঠিক রাস্তার কুকুরের মত।

বিপ্লবের অবাক লাগে,ফারিয়ার সার্কেলের যাদের কাছেই ও গেছে প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে কোন না কোন সময় বিপ্লবের কাছ থেকে এটা সেটা সুবিধাতো নিয়েছেই টাকাও নিয়েছে নানা অজুহাতে। অদ্ভুত ব্যাপার,এদের প্রত্যেকেই বিপ্লবের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তাহলে বাকী সার্কেলের স্টাটাসটা কী হতে পারে! বিপ্লব অবাক হয়,এই মানুষগুলোর সাথে না ফারিয়ার ভাল সম্পর্ক । তাদের বিষয়ে না কত বড় বড় কথা বলত ফারিয়া। কিন্তু এরা এসব কি বলছে,কী করছে।

অথচ ফারিয়ার এত অত্যাচারের পরও,ভাঙ্গনের যন্ত্রনার পরও,এত কিছু জানার পরও বিপ্লব ফারিয়া সম্পর্কে সম্মান দিয়ে কথা বলেছে। ফারিয়ার প্রশংসার জন্য নিজেকে পর্যন্ত অপমানিত করতে দ্বিধা করেনি বিপ্লব। বিপ্লব এতটাই ভয়াবহতা অনুভব করে যে,ওর মরে যেতে ইচ্ছে করে। ও পালাতে চায় বা নিশ্চিন্ন হয়ে যেতে চায়,মুক্তি চায়, মুক্তি চায়। ফারিয়া নিজের চারপাশ মিলিয়ে জীবনটাকে অনেক অনেক কমপ্লেক্স করে ফেলেছো।

এত বহু সম্পর্ক,না দেনা পাওনা,পরিবার,সত্য মিথ্যা,অফিস,নিজের জীবনের অনিশ্চিত ভবিষ্যত সব মিলিয়ে এত অসম্ভব জটিলতার মধ্যে ডুবে গেছো যে এখন তোমার পক্ষে ফেরা বা স্বাভাবিক জীবনে পথ চলতে চাওয়াটাও প্রায় অসম্ভব। বিপ্লবের বলতে ইচ্ছা করে,একবার সাহস করে আমার হাতটি শক্ত করে ধরো। আমি বদলে দেবো সব । উপহার দেবো তোমায় স্বাভাবিক জীবন। তোমার সংকোচ কেন? আমিতো সবই জানি।

তুমি,তোমার পরিবার,তোমার সমস্যা,তোমার ভাবনা,তোমার চরিত্র,তোমার সার্কেল,তোমার বর্তমান অবস্থা। সব জেনেই আমি তোমাকে ভালবাসি। যে ভালবাসা নিখাদ যে ভালবাসা রেসপন্সিবিলিটির। না হয়,বয়সে ছোটই আমি তাতে কী? একবার সাহস করে দেখো,ঠকবে না। ফারিয়া এখন তোমার বয়স বত্রিশ।

আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো,নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখোতো। তোমার শরীর ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। তোমার শরীর তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে অবয়বে। বাস্তবতা তোমাকে গ্রাস করে ফেলছে।

মানুষ তোমাকে ভুল বলছে,মিথ্যা প্রশংসা করছে,তাদের কাছে তুমি শুধুই লালসার উপকরণ,বিনোদিনী। এরা তোমার দায়িত্ব নেবে না কখনই। প্রয়োজন ফুরালে থাকবে না কেউই। ফারিয়া, তোমার সর্বস্বে জরা। তোমার বুকে টিউমার।

জরায়ুতে টিউমার,শরীরের হেপাটাইটিস-বি,কিডনীতে সমস্যা,মাথার নার্ভে সমস্যা। তুমি কি বুঝতে পারছো না,কিসের জীবন যাপন করছ তুমি? ফারিয়া,তুমি হারিয়ে ফেলছো নিস্পাপতা। হারিয়ে ফেলছো সক্ষমতা। স্বাত্ত্বনার যুক্তি দিয়ে নিজেকে আর কত প্রবোধ দেবে! তুমি এখনও আপনজন চিনলে না। সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে,টের পাচ্ছ না এখনও।

তৃতীয় মেইল ঃ বিষ গহবরের অতলে ফারিয়া, এটা খুব সাধারণ চরিত্র যে সম্পর্কের দূরত্বের সময়ে, ভাঙ্গন অথবা বিচ্ছেদের পর পারস্পরিক বিষেদগার। আমি বিস্মিত! এতটা সাধারণ আমি ভাবিনি তোমায়। প্রিয়, যে কাঁটা তুমি আমার পথে বিছিয়ে চলেছো যে কাঁটায় ক্ষরণ হওয়া রক্তের ছাপতো আমি রেখে যাব না। আমি জানি লাল তোমার রঙ,রক্তের লালও তোমার প্রিয় হতো। আচ্ছা বলতÑকী এমন প্রয়োজন ছিল ? কিইবা লাভ হচ্ছে তোমার ? কতটাই বা সুখ পাচ্ছ তুমি? নাহয় শেষ পর্যন্ত আর ফিরব না,রইব না তোমার পাশে।

তবুও দেখো তোমার কাঁটার বিপরীতে মখমলময় গালিচা বিছিয়ে চলেছি আমি তোমার পথে। কতটা কোমল উষ্ণতায় বারবার বলেছিলাম থাম,থাম। সাবধান হও - এসবের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে তোমাকে। হলোতো এখন,ভরা জলের উত্তাল টেউ শেষ পর্যন্ত আর সামলাতে পারলে না। উম্মাদের মত দ্বিগি¦দিকে শুধুই ভেঙ্গেছো।

তুমি ভাঙ্গবে আবার ভাঙ্গনের আর্তনাদ শুনবে না,তা কি করে হয় বল। আর্তনাদ তোমাকে শুনতেই হবে,আজ হোক বা কাল। প্রিয়, ভেঙ্গেছোতো তোমাকে আগলে রাখা নিজেরই মঙ্গল সীমানার দুইপার। এখনও টের পাচ্ছ না,তোমার ভরা জীবন শুষে নিতে বুক ফুঁড়ে যে বেড়িয়ে আসছে কত নৈশব্দের বালু চর। শোন, তারপর যদি অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে পার,মেপে রেখো শেষ পর্যন্ত কতটা গভীরতা আছে তোমার? গুণে রেখো,কতটা খণ্ডিত হয়ে বেঁেচ আছো তুমি? যদি কখনও ফিরে আসো অথবা দেখা হয় কোন অপেক্ষমান সময়ে-তখন খুব জানতে ইচ্ছা করবে যে,বলো কিন্তু।

ফারিয়া সম্পর্কের ভুল বোঝাবুঝিটা স্বাভাবিক,ভাঙ্গন ও দূরত্বও সম্পর্কের শরীর। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর কিছু মানুষ থাকে যারা এই সম্পর্কের ভুল বোঝাবুঝিটা বাড়িয়ে দিয়ে,দূরত্বের দিকে ঢেলে দিয়ে আনন্দ পায়,নিজের অবদমিত সুবিধা নিতে চায়। বিপরীতে এটাও সত্য, এমন কিছু মানুষও থাকে যারা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কটিকে মিলিয়ে দিতে চায়-যাদের কাছে মুখোমুখি দুটি হৃদয়ের হাসি অমূল্য। নিঃসন্দেহে এরাই ভাল মনের মানুষ। শোন,সম্পর্ক এমন যুক্তিহীন বিলীনতা নিয়েই।

সেখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও স্বচ্ছতা-অস্পস্টতা আপেক্ষিক। ভালবাসার মত সম্পর্কের অস্থিত্বই টিকে আছে ধারণা প্রসূত বিশ্বাসের উপর। তবে অতিইন্দ্রিয় ও অদ্ভুত ব্যাপাটা এখানেই। যদি ভালবাস তবে এই ধারণা প্রসূত বিশ্বাসেই তোমার বিন্দুমাত্র ধারণার অস্থিত্ব থাকতে পারবে না। এ বিশ্বাস হতে হবে অন্ধ এককথায় শর্তহীন নিখাদ।

এরপরও সম্পর্ক যে ভাঙ্গবে না এমন নিয়শ্চয়তা কিন্তু নেই। বুঝলাম,ভেঙ্গে গেছে,হারিয়েছ -এখন অস্থিত্বজুড়ে প্রতিটি নিশ্বাস বিদীর্ণ করে স্মৃতি আসা যাওয়া করে। সবটুকু শূণ্য করেই সম্পর্ক আমার। প্রতিটি স্পন্দনে স্পন্দনে মিশে গিয়ে কখন যে ভেসে গেছো এক মহাশূণ্যতায় তা অনুভবেরও ফুসরত হয়নি। হ্যা,শূণ্যে ফেরা যায় না।

তাই বলে,একে মেরে ফেলবো, না। জীবন,এক অনিন্দ্য সুন্দর উপহার আমার। চলে গেলাম তো হেরে গেলাম,হারিয়ে গেলাম। আত্মহত্যা কেন? কাল কি হবে তাতো আমি জানি না। অপেক্ষা করি,এগিয়ে যাই,না হয় থেমেই থাকলাম।

সময় আমাকে ফেলে যাবে না কারন আমি তোমার মতো প্রাণী নই মানুষ। ফিরে আসবে দুটোই,সময় এবং আমার প্রিয় মানুষ। নিজে হারিয়ে আমি হারাবো না। থাকব,শেষ পর্যন্ত। ফারিয়া, সত্যিটা কখনও মিথ্যা হয়ে যায় না।

বড়জোড় চেপে রাখতে পারবে কিছুদিন। মোহময়ী, বহুগামী সম্পর্কের ব্যবস্থাপনায় অনেক সিদ্ধহস্ত তুমি। সেখানে অস্পস্টতা আর দমিয়ে রাখাটা অন্যতম কৌশল। নিশ্চিতভাবেই স্বচ্ছতাকে অনেক ভয় পাও। সেটাও তুমি ভাল পার।

তারপরও গোলমালতো কিছুটা পাকাবেই। আর তাতে ফেঁসে যায় স্পর্শকাতর কোন মন। তোমার শরীরী উদযাপন শেষে ফিরে যায় সবাই কিন্তু পড়ে থাকে এমন কোন মন। যে পুড়ে পুড়ে ভস্ম হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে মোহময়ীর বিষ গহবরে । কষ্ট নিয়ে হাসতে পারাটা এখন অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উদযাপন করাটা নিত্যনৈমিত্তিক। অবিশ্বাসী জেনেও বিশ্বাস করাটা অতিইন্দ্রিয় বাধ্যবাধকতা,সেখানে কেউ ক্রমাগত বিশ্বাস ভাঙ্গে আর কেউ বিশ্বাসের স্তম্ভ দীর্ঘ করে। আমি আশাকরি না সে কুমারী হবে তবে সে যেন তোমার মত দুশ্চরিত্রের না হয়। তোমার মত ওমন নিখুঁত চুমু দিতে হবে এমন নয়, চুমুর শিল্প আমি শিখিয়ে নেব শুধু ভালবাসার আদ্রতাপূর্ণ কম্পিত ঠোঁট যেন তার থাকে। তোমার মত শাড়ী পড়ার আধুনিক কৌশল সে না জানতেই পারে শুধু ভালবাসার জড়তা মাখানো আবেদন যেন সে বোঝে।

আমি বলব না যে সে সবসময় সত্য বলবে তবে তোমার মত ওমন মিথ্যা সে বলবে না,যে মিথ্যায় পাপ হয়। আমি আশাকরি না যে,সে তোমার মত আহ্লাদ বলতে জানবে শুধু লজ্জাবনত চোখে এইটা-ওইটা বলতে পারলেই হবে। তোমার মত ঢংয়ে ঢংয়ে হয়ত হাঁটবে না সে, তাতে কি খুব বঞ্চিত হব,কোন অসুবিধা নেই আমিই নাহয় তাকে দু‘হাতে তুলে বারান্দার বৃষ্টিভেজা গ্রীল ছোঁয়াব। হয়ত সে বর্ধিত সকালে নাকে নাক ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলবে না-একটু থাকনা, আমার এক চোখে আরেকটু ঘুম আছে। অথবা,সকালের আয়নায় নিজের গাল ঠোঁট পেস্টফোমে মাখিয়ে চুমুর ভয় দেখাতে আড়াল খুজঁবে না আমার উল্টোপথে।

তবুও...সে যেন তুমি না হয়। (গুণ দা এটা পার্থক্য নয় পৃথকতা,মুক্তি বৃত্ত আমি আকেটু বড়িয়ে দিয়েছি মাত্র। ছন্দটা তোমার) ফারিয়া,কিছু কিছু প্রশ্ন এখন আর আমি করি না,কারন এসব প্রশ্নের সত্য-মিথ্যা উভয় উত্তরই আমি বুঝতে পারি। সত্যটা তুমি কখনও বলনি,বলবেও না। উল্টো প্রশ্নের গলা চেপে ধর তুমি।

যা সত্য তা সত্যই-এ আর নতুন কি। তোমার কাছে, বোধকরি তোমাদের কাছে - বারবার মিথ্যা দিয়ে চাপা দেয়ার চেয়ে প্রশ্নের শেকড়ই উপড়ে ফেলা বেশি নিরাপদ। তবে দমন চিরকাল জমতেই থাকে আর একদিন বুকচিরে বের হয়ে আসবে সেই দমিত প্রশ্নের মিছিল। সে মিছিল মুক্তির, সে মিছিল প্রস্থানের। তুমি কি ভাব? আমি কত বোকা তাই না! ....তটস্থ থাকি,পড়ে থাকি বেড়ালের মতো মুখ গুঁেজ ,তোমার রাত্রি যাপনের অন্ধকারে পথ ভুলি বিভ্রমে;এইতো ভাব তুমি! অথচ আমিতো আমার ভুবন থেকে সবই দেখতে পাই,শুনতে পাই।

আমি যে তোমার তৈরি দেয়ালের উপরেও ঠাঁই পাই। তোমার বহুগামিতা আর বহুখোলসে শুধু ক্ষণিক স্তব্ধতার চেয়ে যে বেশি কিছু নয়.. ফারিয়া,আমি নাকি গোরস্থানে? জাকী কে দিয়ে এভাবে বলালে,এভাবে। বিশ্বাস কর,কিই বা বলব-গ্যাংস্টার মুভিতে শুধু জীবনটা হাতে নিয়ে ফিরে আসার পর মেয়েটা যখন ছেলেটাকে পুলিশে ধরিয়ে দিল,সেই সময়ে ছেলেটার সমস্ত জীবন বিদীর্ণ করা বিলাপে আর্তনাদের চিৎকারের কথা মনে আছে তোমার? ঠিক ওইরকম আর্তনাদে আমার কলিজাটা, ভেতরটা বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল তখন। আশেপাশের বারান্দা দিয়ে মানুষজন বেড়িয়ে আসছিল। একসময় কষ্টে আর গলা দিয়ে শব্দও বের হয়নি,বুকে হাত দিয়ে কোনমতে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে বসেছিলাম কতক্ষণ মনে নেই।

অনেক পরে বের হয়ে জাকী কে একটা এসএমএস এ শুধু জানালাম,এইভাবে কত অনায়াসে বলে ফেলতে পারলেন। জাকী বলল,আমি ন্যাকামী করছি। আমি কিছু বলিনি। আমিতো জানি,আমার অবস্থা। জাকী কে কি বলব, আমিতো সবই জানি।

এইসেইদিন না উনি তোমার সাথে কথা বলার জন্য রাত তিনটা পর্যন্ত মশার কামড় খেয়ে বাইরে বসে ছিল। একটার পর একটা ফোন দিতে থাকতো উনি কত। কয়দিন আগেওতো তুমি ফোন ধরনা বলে-তার প্রয়োজন এখন নেই ,আরও কি কি লিখে তোমাকে এসএমএসও করেছে। তুমি তখন বেশ কষ্ট পেয়েছিল,বলেছিলে-ওদের অনেক লোন হয়ে আছে এগুলো যে কবে শোধ দিলে তুমি মুক্তি পাবে। ওইদিন রাতে তুমি যখন আমার বুকে ঘুমাচ্ছিলে- আমি কাঁদছিলাম।

হঠাৎ একফোটা চোখের পানি তোমার কপালে পড়লে তোমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। তুমি অনেক জোর করেছিলে,আমি কাদছিলাম কেন? আমি এটাসেটা বলে কিভাবে যেন এড়িয়ে গিয়েছিলাম। ফারিয়া,তোমার ভাষায় এই জাকী,রবিন,রিসাদ,ডায়মন্ড,আরমান,জালেব সহ তোমার চাররপাশের কত মানুষ সবাই তোমার ভাল চায়। কিন্তু এই একবছরে তুমি বলেছো,আমি কত দেখেছি – আমার চেনা এই স্বল্প মানুষের প্রত্যেকটি মানুষ কতনা কতভাবে তোমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে,ভুগিয়েছে। আমি দেখেছি,মাঝে মাঝে কত মন খারাপ করে থাকতে।

তবুও সব সহ্য করেছো তুমি। আর তারপরও সবার ভালর জন্য,মঙ্গলের জন্য তুমি কতকিছু করবে ভেবে রেখেছো। প্রত্যেককে তার পাওনা বা না পাওনা সব ছাড়িয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়ার বিশাল মনইচ্ছা তোমার। আমি অবাক হই-এত সারভাইভ, এত দায়িত্বের পরও তুমি প্রতিনিয়ত কত দায়িত্ব নিজে থেকেই চাপিয়ে নাও। জাকী কে খুব বলতে ইচ্ছা করছিল ওইদিন।

ভাই, সবপিছুটান পেছনে ফেলে আমি জীবনে দামে আমার জীবন তুলে দিয়েছি ফারিয়া’ র এ হাতে। ও এটা আস্তে আস্তে গড়ে নিয়ে আসছে অনেকদুর। আপনার সব আছে-বাচ্চাকাচ্ছা,সংসার,বাবা-মা,ভাই, আতœীয় স্বজন। সবকিছু মেইন্টেন করে তারপর ফ্রি সময়টুকু ওর জন্য এটাসেটা করার জন্য আপনি পাগল হয়ে যান। আর আমার প্রথম ও প্রথম গুরুত্বপূর্ন হল ও।

তারপর আমি যাপিত জীবনের অন্য কিছু ভাবতে যাই। আমার সকল পথচলা ভাবনা আর না ভাবনা সবকিছুই কোন না কোনভাবে ওকে ঘিরে। ওর প্রছন্ন ,অপ্রচ্ছন্ন সম্মতি আর পরামর্শে। আপনি অনুমানও করতে পারবেন না-এই এক মাসে ভেতর বাহির,শারিরীক,মানুষিক,সামাজিক,ক্যারিয়ার সবমিলিয়ে কতটা ধ্বংস হয়েছি,অতলে নেমে গেছে আমি। কিন্তু জাকী ভাই এবার বলবেন,ন্যাকামীটা আমি করি,না আপনারা।

আজ ঠিক ১৬ দিন হল আমি বিছানায় পড়ে আছি। ডিপ ভাইরাল হেপাটাইটিস,মানে জন্ডিসটা বেশ গাঢ় হয়ে গেছে। ডক্টও বলেছেন,বেশ রিক্সি করে ফেলেছোরে বাবা। সাথে ডেঙ্গু ,প্লাটিলেট কমে ১০০ এর নীচে নেমে এসেছে। এসজিপিটি(এএলটি) নরম্যাল থেকে ১০৫২ ইউএল বেড়ে গিয়েছে।

লিভারটা সরাসরি অক্রান্ত দেখিয়েছে। আজকে ১২ জুন নিয়ে ৯ দিন হল ট্রিটমেন্ট চলছে। ওনি বলেছেন,পুরোপুরি সেরে উঠতে ১ মাস সময় লাগবে। আজ একটু ভাল লাগছে। গত ৯তারিখ ড. বলেছিলেন অবস্থা উন্নতির দিকে।

উনি স্যালাইন আর ইনজেকশন বদলে ক্যাপসুল,লিকুইড ও ট্যাবলেট ওষুধ দিয়েছেন। তাই চলছে,বেশ কিছুদিন নরম খাবার দাবার খেতে বলেছেন। জাকী‘র ওই গোরস্থান আর ন্যাকামী কথাটা ক্ষণে ক্ষণেই মনে হয়। ঐদিনের পর থেকে তোমাকে আর ফোন বা এসএমএস দিইনি। মাঝে খুব মনে হয় একটা কল দেই,পরে এই কথাগুলো ভাসে।

সারাক্ষন বারান্দায় শুয়ে বসে কাটাই। কোন কিছু প্রয়োজন হলে কারো সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শুয়েবসে কতকিছুযে ভাবি,এখন চারপাশের সবকিছু ভেবে অন্ধকার হয়ে আসে। সম্ভবত শেষ সময়। আশ্চর্যজনক ভাল আছি।

অলৌকিক অদ্ভুত! আমি কী অসম্ভব তৃপ্তি নিয়ে বলতে পারছি ভাল আছি,আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। বুকের ভেতরের দম আটকে থাকা পাথরটা কিভাবে যেন তরল আরামদায়ক প্রসবণে প্রবাহিত হয়ে গেছে। গতকাল ১৬জুন,শনিবারে সন্ধ্যা থেকে রাতভর জাকী র করা এসএমএস বিষয়ে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করার ভাষা নেই। তা যে কতটা বীভৎস,নোংরা আর অকল্পনীয় নীচতাসূচক ভাবনার ছিল! ভালই যে তুমি সব জানছো,আমার এবং তার সব এসএমএস ই তোমার কাছে গেছে। আমার আজও বোধে আসে আসেনা,কেন বা কিভাবে তোমাকে করা এসএমএস জাকী কে ফরওয়ার্ড করেছো বা ওনি পেয়েছে।

আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম একসময়। তখন আল্লাহর কাছে এ জুলুমের ঠিক ঠিক ন্যায্য বিচার চেয়েছি,এ দুনিয়াতেই। জুলুমের অত্যাচারে আমার বুকের ভেতর থেকে যে কষ্ট আর বুক ফেটে চিড়ে যে দীর্ঘশ্বাসের আর্তচীৎকারে ফরিয়াদ চলে এসছিল । অন্যায় বা জুলুমের শাস্তি চাওয়াটা ঐ সময় আমার অধিকার মনে হয়েছিল আমিতো নিজেকে চিনি। জাকী ও কাছে আমার কৃতজ্ঞতা যে ভুলবার নয়।

মমতাময় আতিথিয়তায় উনি নিজ পরিবারের সাথে আমার জীবনের অশান্ত সময়ে খুব প্রশান্তিময় কয়েকটা দিন উপহার দিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে সেই কৃতজ্ঞতাও আমার সারা জীবনের। বাস্তবিক অর্থে ওনার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ বা কোন আক্ষেপ বা কিছুই নেই। উপরে লিখেছি আমি আশ্চর্যজনক ভাল আছি। তার এর বড় অনুসঙ্গ আছে তা হলো-তোমার প্রবলেমটা অবশেষে সমাধান হয়েছে এবং তা একেবারে শেষদিকে শুনে।

তুমি জানো না ফারিয়া অথবা হয়তে জানোই- খবরটা আমার কাছে,পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে সুখকর ও আনন্দদায়ক খবর। তবে কাল থেকে এই সুখবর ও আনন্দের অপরপাশে মানুষ প্রজাতির একটা অংশের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ ,ঘৃণা ও থুথু জমছে প্রতিনিয়ত। মাছের মত কতগুলো রাক্ষস হা করে আছে তোমার পাশে! জাকী কে কাল ছোট্ট করে ওনার একটা এসএমএস’র রিপ্লাই দিয়েছিলাম তোমার প্রবলেম নিয়ে এই একবছরের জীবনযুদ্ধের। পড়েছোইতো। সেই শুরু থেকে আমি,হ্যা আমিই সবচেয়ে বেশি দেখেছি।

কতটা! কতটা কষ্টে,কত বাধা,কত ক্ষতি,কত সময়-অসময়,কত টানাপোড়েন,কত খাওয়া না খাওয়া,ঘুম নির্ঘূম-কী এক অমানুষিক,বিভৎস অমানুষিকতায় নিজেকে ভুগিয়ে,ক্ষয়ে-ক্ষয়ে তুমি আজ প্রবলেমটার সমাধানের শেষদিকে এসেছো। সময়ে সময়ে আমি সহ্য করতে পারিনি,আড়ালে আবডালে বেকুবের মত কেঁদেছি। একটা বছর,একটা বছর-জীবনের কম সময় নয় যে। আর এটা ছাড়া এই একবছরে আরও কত প্রবলেম ও ঝামেলা যে তোমার উপর দিয়ে গেছে-তা নিশ্চিতভাবেই আমার থেকে আর কেউ বেশি কাছ থেকে দেখেনি। এই এতবড় ত্যাগ।

কারণ-শুধু পরিবারে ফেরা,ফ্যামিলির জন্য কিছু একটা করা। আমিতো জানি ফ্যামিলি কী তোমার কাছে,যার জন্য তুমি সব করতে পার। আরও কত বড় দায়িত্ব তোমার। তারপর তোমার কাজ,নিজের জীবন। অথচ তোমার চারপাশের বেশকিছু মানুষ কীসের আসায় তোমার অপেক্ষায় আছে? বলতে ভাল লাগেনা,আসলে বলা যায় কী? জীবনকে আবার যেন সারভাইভ এর মধ্যে নিও না।

সবার আগে-তুমি,ফ্যামিলি,নিজের জীবন ও তোমার কাজ। তারপর কোর্ট-মামলার পাশাপাশি টুকটাক প্রবলেমগুলো সলভ করো। প্লিজ,এমন সময়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিও না। মাথাটা ঠান্ডা রেখো। আমি যে সত্যি সত্যি আর থাকতে পারলাম না।

একটুও জায়গা দাওনি যে শেষ দিকে তোমার আশেপাশে দাড়িয়ে অমানুষের কোলাহলে তোমায় একটু আড়াল করব। কোন বিরক্তিতেও আমায় আর মনে হবে না তোমার। না করব এসএমএস,না কল,না তোমার সীমানায় মাড়াব কোন ছায়া। আমার ধারণা,তুমি হাসছো-বলছো বোধয়:শেষ পর্যন্ত বিদায় হল লাওয়ারিশ কুকুরটা,জীবন খুটিয়ে খুটিয়ে লেগে ছিল অনেকদিন। অবশেষে রোগে-শোকে, কষ্টে-দূর্ভোগ আর টর্চারে ভুগে জীবনের কত দাম দিয়ে বিদায় হল ছেলেটা।

তোমার সংশ্লিষ্টতায় কোন ধরণের উপস্থিতিতেই আর কখনও জীবন্ত আমি নেই। বলতে পার ভ্যানিশ হয়ে গেলাম। সব রিলেটিভস ও তোমার সম্ভ্যাব্য যোগাযোগের সবই চুড়ান্তভাবে একটা বৃত্তে বন্ধ করে দিলাম। তোমার চেষ্টায়ও কেউ নূন্যতম যোগাযোগ বা কথাও বলবে না,আর ওদেরতো প্রশ্নই আসে না। বলেছি,ভুলে যাবেন না তবে মনে রাখবেন না।

মানুষের জীবনের থেকে ব্যস্ততার দাম বেশি সেখানে। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব তৃপ্তিতে থাকার অধিকার রাখে। সেখানে অযাচিত বিরক্তি তৈরী করার অধিকার অন্যকারো নেই। আমি ও আমরা ’অন্যকারো’ মানুষ। যাক ছোট্ট শহর,কাজ,সার্কেল এটাসেটা মিলিয়ে দেখা হওয়াটা হয়ত খুব স্বাভাবিক।

তবে সেখানেও আমাকে অদৃশ্য মানুষ পাবে,ক্ষণিকের জন্য। চোখে পড়লে বা দেখলে উঠে যাব,অথবা মুখোমুখি হলে স্যোস্যাল কার্টেসী মেইন্টেইন করে শুধু সরাসরি হৃদয় উৎসারিত শুভকামনাই থাকবে। অনেক হালকা লাগছে। আসলে কত বড় একটা ঝড়ে কত ধ্বস আমার গেছে,এখন আমি নিশ্চিত যে তুমি অনুমানও করতে পারনি। এ বিষয়ে আজ আমার কোন অভিপ্রায় নেই,মতামত নেই,আক্ষেপনেই,কষ্ট বা কিচ্ছু নেই।

কেন যে নেই তা জানিনা। জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টদায়ক ও ভোগান্তির অধ্যায় কাটালাম আমি। আমার মা মারা যাওয়ার সময়ের কষ্ট ও দূর্ভাগ্যেরও কোন তুলনা নেই,হয়না। তবে তখন সবাই আমার পাশে ছিল,মৃত্যুর মত চিরন্তন বাস্তবতা ছিল আদি নিয়তি। আর,এই ৪০টা দিন! এক কথায় স্যালুট তোমায়।

এর জন্য পৃথিবীর কোন ব্যাখ্যা বা কারন,অবস্থান ও স্বান্তনার জায়গা নেই। খুব সোজা কথায় তোমায় জানাই-আগের মহারাজা-মহারাণীরা ছোট্ট লোহার খাঁচায় নিরপরাধ মানুষকে আটকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আদিম বীভৎসতায় যেমন মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে উৎসব করত। আমি এই চল্লিশ দিনে সেই রাজকীয় উৎসব দেখেছি,সেই সম্ভ্রান্তদের দেখেছি। এই চল্লিশ দিনে খাঁচায় খুচিয়ে খুচিয়ে মৃত্যু যন্ত্রনার স্বাদের কাছাকাছি ঠেলে দেয়া,দূর্ভাগ্য বরণ করা মানুষটি যে আমি। বিস্তারিততো আমি তোমাকে কখনও জানাব না,আর জানবেও না,জানতে দিবও না এবং আজকের পর থেকে সে সুযোগও নেই।

যত অস্থির আর আবেগী হই,ক্ষেপেটেপে হলেও আমি জাকী র মত বলা তো দূরে থাক,ভাবতেও পারব না,আমার ঘৃণা লাগে। টাকা পয়সা ও পার্থিব বিষয়ে আমার মূল্যবোধ কতটা সম্মানজনক তা তুমি বেশ ভালই জান। মানুষ মানুষের জন্য-এরপর আর কোন কথা থাকতে পারে না। তবে শোন,তুমি যদি পৃথিবীর সব মহাসমুদ্র পরিমান টাকা নিয়ে এসেও আমার কোন লোন বা কোন দেনা পাওনা (যা ভাব তুমি) মেটানোর কথা ভেবে থাক,তোমার জন্য দুঃখিত বলা ছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই। রিপিটেশন করতে চাইনা,চল্লিশ দিনে আমার জীবনের যে দাম তুমি নিয়ে নিয়েছো তা তোমার আয়ত্ত্বের অনন্ত অনন্ত দূরের।

আমার বিষয়ে তোমার শোধ,পরিশোধ,দায়-দায়িত্ব আরও এটাসেটা সব সব,সবকিছুই একান্তই তোমার ভাবনা। এসব নিয়ে কখনও আমিতো দূরে থাক আমার রিলেটিভস বা দূর সম্পর্কের কারো কাছেও কখনও কিছু চেষ্টা করো না। তুমি তৃপ্তি পাবে না তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। তবে তোমার জেদ পূরণ হবে,তোমার কিছু অর্থ অপাত্রে, অজায়গায় নষ্ট হবে,এই যা। হ্যা,তুমি জেরিন এর ওখানে যেতে পার,আনি’র দোকান চেনো,আমার বাসা বা অন্য রিলেটিভস খুঁজে পেতেও তোমার সমস্যা হবে না।

এটুকু শতভাগ নিশ্চিত আমার রক্ত সম্পর্কের কাউকেই কোনভাবে তুমি পাবে না,আমি এখন পরিবারে প্রবেশ করেছি। তারপরও তুমি সে ট্রাই করলে আমার রিলেটিভসরা একটা জীবন শুষে নেয়া রক্তক্ষরণের হাহাকার শুনতে পাবে,সে টাকার গায়ে যে প্রতিকৃতি ভাসবে-তাতে তুমিই কষ্ট পাবে,আমি তা চাই না। আর অন্য কাউকে,অন্য কোথাও কিছু করে তুমি শান্তি পেলে আমার তাতে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই,বলারও প্রশ্নই আসে না। কোন না কোন ভাবে শুনব তো বটেই,এক পলক ভাবব-ডাস্টবিনে গেল,যার যেমন মনইচ্ছার জিনিস,যেভাবে তৃপ্তি পায়,এই যা। একথায় ভালটা বলি,তুমি এসো না আমাদের নূণ্যতম কোন বলয়ে।

যাইহোক,এমনিতে এই চল্লিশ দিনে তোমার কাছ থেকে অনেক অনেক পুরস্কার ও প্রাপ্তি নিয়ে দাগে দাগে আমার সর্বস্ব আলোকিত । জানিনা ঠিক কতবছর আমার জীবন শক্তির আয়ু কমেছে? পারবে নাকি একটা দিনের আয়ুও ফিরিয়ে দিতে? চল্লিশ দিনের একেক একেক সেকেন্ড যদি আমি তোমার সামনে হাজির করি-কোন উত্তর দিতে পারবে কী? এই দীর্ঘ একবছরে তোমার অজান্তে কত রাতে কত অজস্র হৃদয় উগরানো পবিত্রতম অশ্র“ শুধু তোমার কপালে পড়েছে? দ’ুএকটি বারছাড়া আর কিছুই তো টের পাওনি। সেখানে কি কোন পার্থিবতা ছিল? তা কি করে মুছে ফেলতে পারবে? থাক থাক,আর কিছু বলব না - আয়ুও দিতে হবে না,কোন সময় হাজির করব না,কষ্ট করে কিছু ভাবতেও হবে না,উত্তরতো প্রশ্নই আসে না। তুমি কখনও এসো না,কখনো না,কখনও না। আরেকটা কথা,নীচে অল্পস্বল্প জানবে।

আমার যেকোন অবস্থাতেই আমার মূল্যবোধে,বিশ্বাসে,পাশে দাড়ানো,সততা ও পবিত্র মানুষিকতায় বিষয়টা ঠিক একই নির্ধারিত। যাইহোক তারপরও তোমার জন্য আমার প্রতিটা নিশ্বাসে শুভকামনা ঝড়বে। আমার যতটুকু যা হয়েছে মা’তো জানতেনই সবকিছুর জন্যই দায়ী আমি। তুমি আমার জন্য মা’কে কত গালিগালাজ করতে। তিনি অবশ্যই বুঝতেন,সব আমার অপরাধের জন্যই এসব হত।

আমি সবকিছুর জন্যই ক্ষমা চেয়ে নেব। মা’তো ক্ষমা না করে যাবেন কোথায়? আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি,মা’কে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন,কবরকে জান্নাতের অংশ করে দিক। যদি ইচ্ছা হয়,সম্ভব হয়, তুমিও একটু দোয়া কর-ভদ্র মহিলাটার জন্য। জীবনদ্দর্শায় তিনি নামাজী ছিলেন,পদার্নশীন ছিলেন। মানুষ ও সন্তান হিসেবে বলতে পারি-তিনি সতী ও চরিত্রবান মহিলা ছিলেন।

আমি এক চরিত্রবান মহিলার সন্তান। এ প্রসঙ্গও থাক। এটিও অপ্রাসঙ্গিক। এখন সবকিছু রিকভার করতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। এখন চারপাশের এই ধ্বসটা কাভার দিয়ে সমস্ত প্রজেক্ট আর কাজগুলো সচল করতে হবে।

শোন বাস্তবিক অর্থে তাই। তোমার বিশ্বাসে আমার এখন কিছু আসে যায় না। আমি অবশ্য আজ থেকেই ফাইল ওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছি। হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অযোগ্যতো নই,অসংখ্য থেকে আলাদা করার মত মানুষ না হলে কী তুমি বুকে টেনে নিতে।

তোমায় একনজর দেখতে,কাছে পাওয়ার পাগলামিতে,পাশে থাকার অদম্য ইচ্ছায়,তোমার জন্য কিছু করার দূর্ণিবার টানে- তোমার পিছু নিয়ে,ফোন দিয়ে,জাকী কে ফোন দিয়ে,এসএমএস করে,তোমার বাড়ির দিকে গিয়ে,অফিস গিয়ে,চেম্বারের সামনে গিয়ে,পিছু পিছু গিয়ে আসলেই তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলাম আমি। বুঝতে পারিনি,ভাল চাওয়ার পদ্ধতিরও এদিক সেদিক হলে উল্টো খারাপ হয়। নিজেকে সামলাতে পারিনি,বুঝতে দেরি করেছি। তবুও শেষ পর্যন্ততো তোমাকে শান্তিময়তার প্রতিশ্র“তি দিতে পারলাম। সরে যেতে পারলাম,বিদায় নিতে পারলাম একেবারেই।

আর আমার জন্য বিরক্তি,যন্ত্রনা,ঝামেলা,আমার পিছনে কাউকে লেলিয়ে দেয়া,তোমার সার্কেলের কাছে আমাকে পশু বলা,খারাপ বলা বা অন্য যাই কোনকিছুই আর কষ্ট করে করতে হবে না তোমার,এসবে তোমার মূল্যবান ব্যস্ত সময়ও নষ্ট হবে না কখনও। তোমার অতিষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নতো কখনই আসেই না-আমার অস্থিত্বইতো আজ থেকে থাকল না আর। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন আড্ডাগুলোতে মিশে যাচ্ছি। ঘুরে বেড়াব অবসরে,হই হুল্লোড় চলবে,গান,উল্লাস আর মাঝে মাঝে একটু হয়ত এদিক সেদিক সব মিলিয়ে তারুণ্যময় সময়েই পথ চলতে শুরু করেছি। বড় হয়ে উঠা ও মানুষের কল্যাণের প্রয়োজনে কাজ ও ছুটে চলা, উদযাপন,শৃঙ্খলা,প্রার্থনা ও সামাজিক নিয়মের বৃত্ত আমি সচল করে দিয়েছি ইতিমধ্যেই।

অকল্যানকর ও অস্পস্ট জীবনের পথের আশেপাশেও আমার আমি থাকব না,কথা দিয়েছিলাম তোমায় যে-অতীত জীবনে কখনও ফিরে যাব না,সে যাই ঘটুক। হ্যা,খেয়াল করেছো বোধয়-এই পুরো লেখায় তোমার অবস্থার বিষয়ে আমি কিছুই বলিনি। এই চল্লিশ দিনে যেভাবে হোক,তোমার যতটুকু খোঁজ নেয়া আমার দায়িত্ব মনে হয়েছে আমি নিয়েছি, এবং তা সর্বশেষ পর্যন্ত। কোন কিছুতেই কোন মন্তব্য নিসম্প্রয়োজন। কারন-ভাল বা খারাপ থাকা বুঝতে,অনুভব করতে বিশ্লেষক বা জ্ঞানী হয়ে হয়না।

অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত সব সময়ের জন্য শুভকামনা যথারীতি। সু-সময়ের জন্য শুভেচ্ছা জানানোটা ভদ্রতা,আগাম শুভেচ্ছা। সুই হতে শুরু করে তোমার চুলের ক্লিপ পর্যন্ত,জামাকাপড়,শেষ সময়ের কতগুলো ছবিসৃত্মি,শেষ স্যালাইন টিউবটি,জুম মডেম আরও সব সব- তোমার সব জিনিসপত্র একটি এয়ারটাইট বক্সকে প্যাক করেছি। বেশ কনফিডেন্স পাচ্ছি নিশ্বাস নিতে,চল্লিশটা দিন আমি বুকভরা নিশ্বাস নিইনি। ফারিয়া দেখো-আমি প্রাচুর্যকে ভাসাবো কিন্তু প্রাচুর্যে ভাসবো না।

সম্মানজনক ও স্বাচ্ছন্দ্য,সুন্দর,সহজ ও দুশ্চিন্তাহীন জীবন যাপনের জন্য যতটুকু প্রাচুর্য দরকার ঠিক তটতুকুই ব্যক্তিজীবনে গ্রহণ করব। বাকীটা মানুষের। জীবনের ভেতর-বাহিরের কষ্ট আমি দেখেছি। নিজে এতিম হয়েছি, থেকেছি। বাস্তব ,অবাস্তব দুই পারেই ভাসমান জীবনের দায় আমি দেখেছি।

শেষদিকে আরও দেখেছি,প্রত্যেকের কাছেই তাদের নিজস্ব ব্যস্ততা সব। কারো বাঁচার দায়ে,জীবনের সংকটে, ধ্বসে ধ্বসে নিস্তেজ হওয়ার সময়ে কেউ কারো পাশে আসে না,হাতটি বাড়ায় না,ঘুরেও তাকায়না-ভাবনাতো অনেক দুরে। আমি শুধু ভাবব আমি মানুষ। আমার মৃত্যুর পর যেন অসহায়,দুস্থ,এতিম আর বিশুদ্ধ মানুষেরই হৃদয় বিশুদ্ধতার দোয়ায় দোয়ায় যেন চাপা পড়ে থাকি আমি,সেখানে যেন ভুলেও কোন ব্যস্ত মানুষের সময় আটকে না যায়। প্রত্যেকের দায়িত্ব মিটিয়ে জীবনের যা পার্থিব অর্জন থাকবে তা ট্রাস্টি করে, ওয়াকফ করে মানুষের কল্যাণেই রেখে যাব।

সৎ-সুন্দর,ভাল ও মানুষের কল্যাণ করার ইচ্ছা কখনও অপূরণীয় থাকে না। আমি জানি,আমার কোন পথ খোলা নেই। কারন পেছনে যে ভালবাসার দেয়াল আমি গড়েছি স্রষ্ট্রা হয়েও আমি তা ভাঙ্গার ক্ষমতা রাখিনি,আমি বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়। তারপরও এটাও সত্য যে ধ্বংসের পরিনতি নিযেই সৃষ্টির গড়ে ওঠা। ভালবাসার দেয়াল ভাঙ্গার ক্ষমতা যেহেতু রাখিনি তাই তার ধ্বংসের পরিনতিতেই আমার অপেক্ষা।

জানো,কত সহস্রকাল ওপার দেয়ালে অপেক্ষায় আছে,- অফুরন্ত নরোম সবুজ,অসীম আকাশ,চোখের পাঁপড়ি চুমুর বৃষ্টি,কত কোমল আলো আর আমার কুসুম ঘুম। চলবে.. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।