আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ঝাঁক ইশতিয়াকের সাথে ভারত ভ্রমণ-১



[ কবি কালিদাসের এক মালিনী ছিল। ফুল যোগাইত। কালিদাস দরিদ্র ব্রাক্ষণ, ফুলের দাম দিতে পারিতেন না। তৎপরিবর্তে স্বরচিত কাব্যগুলিন পড়িয়া শুনাইতেন। একদিন মালিনীর পুকুরে একটি অপূর্ব পদ্ম ফুটিয়াছিল, মালিনী তাহা আনিয়া কালিদাসকে উপহার দিল।

কবি তাহার পুরস্কারস্বরূপ মেঘদূত পড়িয়া শুনাইতে লাগিলেন। মেঘদূত কাব্য রসের সাগর, কিন্তু সকলেই জানেন যে, তাহার প্রথম কয়টি কিছু নীরস। মালিনীর ভাল লাগিল না। সে বিরক্ত হইয়া উঠিয়া চলিল। কবি জিজ্ঞাসা করিলেন- মালিনী সখি, চলিলে যে! ’ মালিনী বলিল - ‘ তোমার কবিতায় রস কই?’ কবি- ‘মালিনী, তুমি কখনও স্বর্গে যাইতে পারিবে না।

’ মালিনী - ‘কেন?’ কবি - স্বর্গের সিঁড়ি আছে। লক্ষযোজন সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া স্বর্গে উঠিতে হয়। আমার এই মেঘদূতকাব্য স্বর্গেরও সিঁড়ি আছে- এই নীরস কবিতাগুলিন সেই সিঁড়ি। তুমি এই সামান্য সিঁড়ি ভাঙতে পারলে না- তবে লক্ষযোজন সিঁড়ি ভাঙিবে- কী প্রকারে? ’ মালিনী তখন ব্রক্ষশাপে স্বর্গ হারাইবার ভয়ে ভীতা হইয়া আদ্যোপান্ত মেঘদূত শ্রবণ করিল। শ্রবনান্তে প্রীতা হইয়া পরদিন মদনমোহিনী নামে বিচিত্রা মালা গাঁথিয়া আনিয়া কবিশিরে পরাইয়া গেল।

আমার এই সামান্য কাব্য স্বর্গ নয়- ইহার লক্ষযোজন সিঁড়িও নাই। রসও অল্প, সিঁড়িও ছোট। এই নীরস পরিচ্ছদ কয়টি সেই সিঁড়ি। যদি পাঠক শ্রেণীর মধ্যে কেহ মালিনী চরিত্র থাকেন , তবে তাহাকে সতর্ক করিয়া দিই যে, তিনি এই সিঁড়ি না ভাঙ্গিলে রসমধ্যে প্রবেশ করিতে পারিবেন না। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : বিষবৃক্ষ : ৬ ষ্ঠ পরিচ্ছেদ ] হঠাৎ করে বোম্বে যাবার দাওয়াত পেলাম।

আমি অসম্ভব ঘরকুনো টাইপের মানুষ। বাইরে যাবার কথা শুনলে প্রথমে নেচে উঠি, তারপর ধীরে ধীরে মনটা খারাপ শুরু হয়, মনে হয়, ধুর বাইরে গিয়ে কী লাভ? কাজেই বোম্বে যাবার কথা শুনে আমি তেমন পাত্তা দিলাম না। মেইলটা পড়ে ইনবক্সে পড়ে রইল কয়েক সপ্তাহ। এরই মাঝে আমার সঙ্গে রাসেল নামের এক ছেলের পরিচয় হল। ও ইন্ডিয়ায় কী যেন ব্যবসা করে।

ওর কাছ থেকে ইন্ডিয়া সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান নিলাম। ও বলল, মাত্র সাত হাজার টাকায় বোম্বে যাওয়া আসা , থাকা খাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করা সম্ভব। সাত হাজার টাকার কথা শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বোম্বে যাওয়া যেতে পারে। আমি আয়োজকদের একটা মেইল দিলাম। যদি আমি বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসতে চাই , তাহলে তারা আরও ইনভাইটেশন পাঠাতে পারবে কিনা।

ওরা জানালো, কোনো সমস্যা নেই। তবে যারা যাবে, তাদের সকল দায়দায়িত্ব আমার। ব্যাস আমি ভ্রমণসঙ্গী সংগ্রহে নেমে পড়লাম। যার সাথে দেখা হয়, তাকেই বলি, ভাই , বোম্বে যাবেন, মাত্র সাত হাজার টাকা। বাঙালি জাতি হিসেবে খুবই সন্দেহপ্রবণ।

আমার অতি আগ্রহ দেখে তারা ভাবতে লাগল, কী ব্যাপার, সাধাসাধি করছে কেন !!! ধান্ধাটা কী ? সাত হাজার টাকায় বোম্বে যেতে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু তাদের মূল চিন্তা, আমরা না হয় সাত টাকা খরচ করে বোম্বে গেলাম, কিন্তু রবির তাতে কত টাকা লাভ হবে ? পাছে আমার বেশি লাভ হয়ে যায়, এ ভয়ে অনেকেই পিছিয়ে গেল। আমার এক সহকর্মিনী আমাকে বলল, তোমার সাথে একটু কথা আছে, চলো ক্যান্টিনে যাই। গেলাম। ক্যান্টিনে গিয়ে উনি বললেন, আচ্ছা, সত্যি করে বলতো, যদি আমি বোম্বে যাই, তাহলে তোমার কী লাভ ? আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম।

উনি বললেন, আমার কাছে বিষয়টা কেমন যেন ফিশি ফিশি মনে হচ্ছে। আমার আরেক সহকর্মী ইশতিয়াক যেতে রাজি হলো। ইশতিয়াক আহমেদ, নারায়ণগঞ্জে থাকে, সেখান থেকে প্রতিদিন ঢাকায় এসে অফিস। অসম্ভব স্মার্ট ও সাহসী এক তরুণ। সাহস এবং স্মার্টনেস যৌথভাবে তার মধ্যে সর্বদা বিরাজমান।

একটা ছোট্ট নমুনা দেই । শীতের দিনে ঠান্ডা যতোই প্রবল হোক না কেন , ইশতিয়াক সোয়েটার বা গরম কাপড় পরবে না। নারায়ণগঞ্জের মেয়েরা ইশতিয়াককে দেখে ভ্রু ইঞ্চিখানেক তুলে বলে, ওম্মা ভাইয়া, আপনার শীত লাগে না। কী করে পারেন? বলুন তো? ইশতিয়াক ফ্যাল ফ্যাশ করে হাসে। পরদিন তাকে আরও পাতলা শার্ট পরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

ইশতিয়াকের পপুলারিটি নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, চাষাড়া ছাড়িয়ে কাঁচপুর ব্রিজ অবধি ছড়িয়ে পড়ে। শ্যামলী বাস কাউন্টারে ইশতিয়াক এলো। একটু পড়েই বেনাপোলের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে। ইশতিয়াকের পরণে টাইট জিন্স, হাঁটু পর্যন্ত কাটা। মাস দুয়েক আগে প্রথম আলোর ফ্যাশন বিষয়ক পাতা নকশা পড়ে জেনেছি, ওটার নাম ক্যাপ্রি, মেয়েরা পরে।

যাই হোক , ছেড়ে দিল। বোম্বের এই কাফেলা রয়েছে একজন জার্মান নারী সহ মোট ২৬ জন। ছবি পরিচিতি : এই সেই ক্যাপ্রি, যা ইশতিয়াক পরে ছিল, তবে ওটার রং ছিল কালো। ( চলবে )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।