আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কপালে যে কি আছে আল্লাহই জানেন!!!



সকালের নাস্তা করেই দৌড় দিলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। নতুন জায়গা নতুন অফিস তাই দেরী করলে চলবে না। আমাদের মেস থেকে অফিসের দূরত্ব হাফ কিঃমিঃ রিকসা টিকসা পাওয়া যায় না হেটেই যাওয়া লাগে। কিছুদুর গেলেই একটা চায়ের দোকান প্রচন্ড ভীড় থাকে স্থানীয় মানুষের। প্রায় প্রতিদিনই ভিসিডি দিয়ে ছবি দেখে অথবা গান শুনে সবাই বেশীরভাগ সময়ই পালা গান দেখে, ওদিকে না তাকিয়ে সোজা হাটা ধরলাম পেছন থেকে কেউ ডাক দিল- ওবা মেমান, ওবায় আউক্কা, চা খাইয়া যাউক্কা।

পেছনে তাকাতে দেখী আমাদের বাড়ীওয়ালা বসে আছেন। আমি চামড়ার মুখটাকে টেনে হাসি আনার চেষ্টা করলাম, "না চাচা অইন্যদিন, আজ এমনেউ দেরী ওই গেছে" ওনার জবাবের অপেক্ষা না করে অফিসে চলে গেলাম। অফিস ছুটির পর ভাবলাম এখানে একটু চা খেয়ে দেখা যাক, তাছাড়া যদি দু-একজনের সাথে আলাপ পরিচয় হয় ক্ষতি কি, অবসর সময়টা গল্পগুজব করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। চা দোকানে বসতেই দেখি সবাই টিভির দিকে একমনে তাকিয়ে আছে আমি কথা বলা সুযোগই নাই। আমি চায়ের কথা বলে ওদের মতো তাকালাম টিভির দিকে- একটা পালা গানের আসর বসছে মাঝখান থেকে দেখছি তাই তেমন কিছু বুঝতে পারছি না।

পালা গানে একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ গান গাইছে নাচছে কথার মাঝখানে হঠাৎ মহিলাকে উদ্দেশ্যে করে পুরুষটা বলল- মুখ ছুডাইয়ো না কইলাম, শেষে ঠিকতে ফারবা না, ফাড়ায় ফাড়ায় যাও... আমি চায়ের বিল দিয়ে কোন রকমে দুইটা সিগারেট নিয়ে কেটে পড়লাম। বাপরে... গানের কি তাল। রুমে আসতেই আমার বাকি দুই রুমমেট কে দেখলাম বসে বসে কি জানি চিন্তা করছে। আমি আসতেই বলল- তুমি বাড়ীওয়ালাকে কি বলছো? আমি বলল- কই! কিছু নাতো। -ওনি বলছেন তোমাকে দেখা করতে।

- কোথায়? -ওনার বাসায়। এক্ষুনি যাও। (সব কথাই হয় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায়) আমাদের বাসার দুই বাসা পর ওনার বাসা। আমি জামা কাপড় না খুলেই দৌড় লাগালাম, বাবারে নতুন মানুষ তার উপর যদি এই রুমটা হারাই তাইলে তো আমার উপায়ই নাই। দরজায় গিয়ে টোকা দিলাম, ভেতর থেকে একটা সুকন্ঠি আওয়াজ এলো- কে? -আমি - আমি কে? - জ্বি, আমি আপনাদের ভাড়াটিয়া, চাচা কি বাসায়? -জ্বি আছেন, আমি একটু দাড়ান।

আমি দাড়িয়ে রইলাম বন্ধ দরজার বাইরে। আর মনে মনে ভাবছি কি অমানুষের দল এভাবে কাউকে বাইরে দাড় করিয়ে রাখে? কড়াত করে দরজা খুলার আওয়াজ, স্লামুআলাইকুম চাচা। -ওয়ালাইকুম সালাম, আপনাকে আমি ডেকেছিলাম। আসেন ভেতরে আসেন। গম্ভির ভাব নিয়ে কথাগুলো বললেন।

আমি আস্তে আস্তে ভিতরে গেলাম। -বসো। - জ্বি, ধন্যবান -তুমি কি জানো, এই এলাকার লোক আমাকে কত সম্মান করে? -জ্বি, বিনীত গলায় বললাম, যদিও এই প্রথম শুনলাম। - আজ আমার বিরাট কষ্ট হলো যখন আপনাকে আমি ডেকে চায়ের কথা বলার পরও আপনি চা খাননি। - আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি এই অফিসে নতুন তো তাই সময় অনুযায়ী অফিসে যাবার চেষ্টা করছি।

আপনার মনে কষ্ট দেবার জন্য, সত্যি আমি লজ্জিত। তাছাড়া আমি এখনই আপনার বাসায় চা খাবো চাচীর হাতে, খাওয়াবেন না চাচা। (বাতাশ) -হ্যা! হ্যা! কই এখানে চা টা দাও। এরপর আরও কিছুক্ষন খাজুরী আলাপ হলো, আমার বাবা মা চৌদ্দ গুষ্টির খবর নিলো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

এর মধ্যেই চা নিয়ে প্রবেশ করলেন চাচী আমি সালাম দিয়ে উঠে দাড়ালাম উনি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, বসো বসো। চা খেতে খেতে মূল সুর তুললেন, আসলে আপনি তো এখানে নতুন এসেছেন তাই সবার সাথে তেমন পরিচিত নাই তাছাড়া এখানে কে ভালো কে মন্দ তুমি জানোও না। আমার খুব ইচ্ছে ছিল (আপনি থেকে তুমি, ভাবলাম বিয়ে টিয়ে নয়তো) তুমি যদি আমার মেয়েটাকে এক ঘন্টা সময় দাও... আমি হেচকি খেলাম, জ্বি!!! - না মানে, আমার মেয়ে ৮ম শ্রেনীতে পড়ে খুবই ভাল ছাত্রি। তুমি শুধু একটু গাইড দাও। ভাবলাম না করলে বলবে অসম্মান করছি, বাসাটা খোয়াতে হতে পারে।

বললাম, জ্বি আচ্ছা! আপনি যখন বলছেন আমি কি না করতে পারি। আমি ঈদের পর থেকেই আসবো। - সেই ভালো, সেই ভালো। আরো কিছুক্ষান এইসেই গল্প করেই বিদায় নিলাম। আল্লাহই জানেন কপালে কি আছে, ভাবতেছি তিনটা মাস আমার কেমনে যাইবো...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।