আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয় বাবা ট্রাফিক

এডিট করুন

একদা বাঞ্ছারামপুরে কতিপয় লোক বাস করিত। বাঞ্ছারামপুরের ইতিহাস হইতে জানা যায় উহার গোড়াপত্তন কালে কিছুসংখ্যক লোক উহাকে জনমানবহীন এলাকা হইতে একটি সাধারণ জনপদ হিসাবে উত্তীর্ণ করিতে নিজ নিজ অবস্থান হইতে ব্যাপকহারে চিৎকার চেচামাচি করিত। তাহারা অনেকেই একটি সরব জনপদ হিসাবে বাঞ্ছারামপুরকে তুলিয়া ধরিতে সর্বদা সরব থাকিত। তা তাহাদের চেষ্টা বিফলে যায় নাই। অগ্নিতে আত্মবিসর্জন দিলে, স্বয়ং শিবও ধরাধামে নামিয়া আসেন।

দেবী কাত্যায়নী পর্যন্ত বিক্রমাদিত্যের হাত ধরিয়া ফেলেন কেবল তাহার সরব আবেদন দেখিয়া। আর একটা জনপদ তো নস্যি। তা তাহারা দিনে দিনে জনপদটিকে সাধারণ অজ পাড়াগা হইতে একটি নগরে রুপান্তরের পেছনে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করিয়া যাইতেছিলেন। তাহাদের সহিত দিন দিন নব নব বণিকদল, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, হিজরতকারী, চাকুরীজীবিসহ নানা জাতের, নানা পাতের, নানা, দাদা, ছেলে, নাতনী, সর্বোপরি আম জনতা যোগ দিতে লাগিলেন। তাহাদের লাগামহীন লগ ইন করাতে বাঞ্ছারামপুর দিন দিন সমৃদ্ধশালী হইয়া উঠিল।

জনগণ যেইখানে বসবাস করে জনরব সেইখানে আবশ্যক। জনরব হইতেই জনকোলাহল আর জনকোলাহল হইতেই বিভিন্ন ঝোলাঝুলি। আর ঝোলাঝুলি হইতে শেষ পরিণতি ঝগড়া আর দলাদলি। অধুনা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান, আমরা নাকি সুখী জাতী। ইহার পশ্চাতে আমাদের জাতীগত ঐক্য নাকি জাতিগত ঝোলাঝুলি বা দলাদলি মূল নিয়ামক ভূমিকা পালন করে তাহা তর্কসাপেক্ষ বিষয়।

তবে বাঞ্ছারামপুরে এইসকল কারণহেতু বিভিন্ন বলাবলির উৎকর্ষ বাড়িয়া যায়। তবে সকল বলাই যে শুদ্ধ হইবে তাহা নহে। মানুষ মাত্রই মরনশীল। তাই সুশীলিয় বাণী অমৃত সর্বদা মানব হইতে আশা করা বৃথা। এমনকি ইশ্বরও তাহা আশা করেন না, কেবলমাত্র ঈশ্বর প্রদত্ত পুরুষ হইতেই তাহা আশা করা হয়।

তবে এই সকল বলাবলিতে একান্ত জাতীয়তাবিরোধী এবং অমানবিক আচরণ কাম্য নহে। কারণ বাঞ্ছারামপুর পৃথিবীরই অংশ। সমুদ্রের তলদেশে কি এক কম্পনের দরুন এক হিমালয় আজ দাড়াইয়া দাড়াইয়া পর্যটক ডাকিতেছে। তাহার ডাক এমনই মারাত্মক যে কেউ কেউ সেই ডাকে সাড়া দিতে যাইয়া মৃত্যুবরণও করিয়াছেন। তাই অযথা প্রাণহানীমূলক হিমালয়ের উদ্ভব না ঘটিলে এই সকল বলাবলিতে বল প্রয়োগ করা একান্তই কাম্য নহে।

শ্রেণীহীন মানব সমাজের উদাহরণ দিয়ে যাইয়া আমরা প্রায়ই আদিম সমাজকে টানিয়া আনি, যদিও তাহাতে আদমের কোনরুপ ক্ষতিবৃদ্ধি ঘটে না। অতঃপর সন্দেহকৃত এককালের বাদরদল যখন বদরুল হইয়া চেয়ারে বসিল এবং ছদরুলকে তাহার অধীনস্ত হিসাবে নিযুক্ত করিল তখন হইতেই বিভিন্ন গোলযোগের সৃষ্টি। মানব মনের জিঘাংসা, হিংসা বুদ্ধদেব এত না খাইয়া, কংকালসার হইয়াও দুর করিতে পারেন নাই। সুজাতাও আজ নাই হায়! তাই বদরুল মাঝে মধ্যে ছদরুলকে অতীত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়া বাদর নাচ নাচাইবার উপলক্ষ তৈরী করে থাকে। ছদরুল বেটা বিবর্তনকালে বদরুলের সহিতই শেষ বাদর লম্ফটা দিয়াছিল।

কিন্তু ছদরুল লম্ফ দিয়া চেয়ারে পতিত আর ছদরুল চেয়ারের নিকটে প্রপাত ধরণীতল। তারপরেও বাঞ্ছারামপুরে সমস্যা হয় না। দুনিয়া সর্বদাই পুজিবাদের নিকটে ভিক্ষার ঝুলি তুলিয়া ধরে। বাঞ্ছারামপুরেও দিন চলিতে থাকে। কিন্তু পুজিবাদের সুখের সাথে নাঙ্গা শরীরে ভুখাও থাকিতে হয়।

সাম্যাবস্থা এইখানে অনুপস্থিত আর বানরের তৈলাক্ত বাশ দন্ড এইখানে সর্বদা নব্বই ডিগ্রী কোণে উল্লম্বভাবে উপস্থিত। যখনই পুজির বাণিজ্য তরী কুল খুজিয়া পায় না তখনই তাহারা একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করিয়া থাকে। কোরবানীর পশু যেমন হৃষ্টপুষ্ট হওয়া চাই, পুজির বাশের বলিও তেমন হৃষ্টপুষ্ট হওয়া চাই। নয়তো লোকে মজা পাইবে না আর মজমাও জমিবে না। মজমা যদি ঠিকমত একবার বসানো যায় আর শরীরের চিপায় চাপায় দাদ, খুজলির ঠিকমত বর্ণনা দেওয়া যায় তবে লোকে মলম কিনিতে বাধ্য।

মলম বিক্রি মানেই ব্যাবসার প্রচার আর পাওয়ার অব ব্রান্ডিং এর ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ অগ্রসর হওয়া। তাই খুজিয়া বাহির কর হৃষ্টপুষ্ট বলিকে, খুজিয়া বাহির কর সে কোথায় কি বলিয়াছিল, খুজিয়া বাহির কর কেন সে ঝরণার নীচে দাড়াইয়া অভিকর্ষ বলের বিপরীতে ঝরণার পানি অপরিষ্কার করিতেছে। অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে যাওয়া, সে কি চাট্টিখানি কথা! এ যে খোদার রাজ্যে খোদার নিয়মের অপমান। আর হৃষ্টপুষ্ট বলি বাহির করিতে চাহিলে প্রথমেই চোখে পরিয়া থাকে কোন বলিগুলান আগে খোয়াড়ে ঢুকানো হইয়াছিল। কারণ গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বাঞ্ছারামপুরে অচল।

কয়েকবার এই ট্যাবলেট প্রয়োগ করিতে যাইয়া বাঞ্ছারামপুরের এক কর্তাব্যাক্তিরই মরণ দশা! তাই শতভাগ প্রাকৃতিক উপায়ে বাড়িয়া উঠা বলিগুলা সর্বদাই বাশ প্রয়োগের লক্ষ্যবস্তু। কারণ এইসকল বলিগুলা প্রাকৃতিকভাবে বাড়িয়া উঠার কারণে উহাদের মাংশ অত্যন্ত সুস্বাদু হয়, যাহা ক্রেতাকে বারংবার একই দোকান হইতে মাংশ কিনিতে প্রলুব্ধ করিয়া থাকে। ইতিমধ্যে বাঞ্ছারামপুরের পুজির তরী চড়ায় আটকাইয়া গিয়াছে। জোয়ার আনা দরকার। আদ্যিকালে রাজা বাদশারা পুকুরে পানি আনিতে স্বীয় রাজকুমারীকেও বলি দিতে কুন্ঠা বোধ করিতেন না।

এত বড় রাজাই যেইখানে এক পুকুর পানির লোভ সংবরণ করিতে পারেন না সেইখানে আমাদের দরিদ্র বদরুল কিভাবে তাহা করিবে। তাহার উপর বদরুলের পুজির তরী চড়ায় আটকাইয়া রহিয়াছে। তাই মজমা হউক। বলি হউক। প্রদর্শনী হউক।

লোক জমায়েত হউক। অবরুদ্ধ তরীতে পানি লাগুক। আবার সচল হউক এই বাঞ্ছারামপুর। ইতিমধ্যে বেশ কিছু হৃষ্টপুষ্ট বলি জমিয়া গিয়াছে। নতুন নতুন বলিও তৈরী হইতেছে।

তাই দুঃচিন্তার কোন অবকাশ নাই। জয় বাবা ট্রাফিক!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।