আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : সহমরণ



গ্লাসের পানিও শেষ হয়ে আসছে। এদিকে জানালায় তখনও হালকা বৃষ্টির ঝাপটা, সারারাত তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। সারারাত আমার চোখেও বৃষ্টি ঝরেছে। আজ ভোরে মেঘেরা যেমন ছুটি নেবে, আজ ভোরে আমিও ছূটি নেব। কোন আগুন হাওয়া বিকেল জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার বুক জুড়িয়ে দিতে আবারও আকাশের চোখের জল বৃষ্টিই আবার ফিরবে ছুটি শেষে, বেলা শেষে........কিশোরীর ঘুম জাগা রাতে শিয়রের জানালা খুলে বৃষ্টির ঘ্রাণে ছুঁয়ে যাবে প্রিয় মানুষের মুখ....বৃষ্টি আবার ভিজিয়ে দেবে উত্তপ্ত পথ, আজন্ম দাঁড়িয়ে থাকা গাছ, আমার সাধের দোলনা এবং আমার ছোট কবর! বৃষ্টি ফিরলে আমি ভিজে যাব, মাটির কণা ছুঁয়ে ঢুকে যাবে জল.....আমি জানব এইরকম কোন এক রাতে তোমাদের পৃথিবী খেকে আমি বিদায় নিয়ে আপন করে শুয়েছি আমার ঘরে.....বৃষ্টি আমাকে জানিয়ে দেবে তোমাদের পৃথিবীতে কোন মেয়েই মানুষ নয়, পণ্য....আমি পণ্য হতে চাইনি বলে ভোর আসার আগে আমি পাড়ি দিচ্ছি......পাড়ি দিচ্ছি বন্ধন ছেড়ে মুক্তির অন্বেষায়.....এই গলায় রশিটা লাগালাম বলে........।

অপরাধ কাকে বলে? ভালবাসা যদি অপরাধ হয় তবে সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছি ঈশ্বরকে ভালবেসে। এই জীবনে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাকেই তো বেশি ডেকেছি! তাকেই তো ডাকে সবচেয়ে বেশি মানুষ! তারপর যাকে সবচেয়ে বেশি ডাকে মেয়েরা (মানুষ নয়) তার প্রিয়তম মানুষকে। ঈশ্বরের কাছে জল ফেলার পর প্রিয় মানুষটির জন্যেই জল ফেলতে হয় সবচেয়ে বেশি তাকে। সেই দেবতা মানুষটি কতবার ভুলে ডাক দেয় মেয়েটিকে? ডাকে কেবল প্রয়োজনে, দিনভর ফরমায়েশ খাটা, রাতে নরম বেডে শরীর তুলে দেয়া। ব্যস, একটা মেয়ের জীবনে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি কী? এইতো গতকাল একগ্লাস পানি আনতে দেরি হচ্ছে দেখে আমার দেবতা (সব মেয়েই স্বামীকে দেবতা ভাবে) বলল, পায়ে কি পেরেক ঢুকেছে হাঁটতে পারছোনা, খুবতো বিয়ের আগে এখানে ওখানে দৌড়ে বেড়াতে।

এখন নেচে নেচে পানি আনতে পার না? দেবতার কথা আংশিক সত্যি। বিয়ের আগে আসলে আমি প্রজাপতিই ছিলাম। সারাণ ছুঁটোছুটি, লাফালাফিতেই কেটে যেত সময়গুলো। বিয়ের আগে আমি খুব ভাল নাচও করতাম। অথচ বিয়ের পরে কেবল একবার ঘুঙুর পরেছি পায়ে, রেকর্ডারে যে গান ছেড়েছি নাচার প্রস্তুতি নিচ্ছি ওমনি শাশুড়ি বলে দিল এই সব নাচ টাচ এই ঘরে বন্ধ।

বৌয়েরা করবে রান্নাবান্না, নাচতো করবে বাঈজীরা-তুমি কি বাঈজীর মত জলসা ঘরে নাচবা। সেই যে খুলে ফেললাম ঘুঙুর। আর কখনো পরা হয়নি। নাচ সেই থেকে বন্ধ-তবুও খোঁটা চলছে। দেবতা স্বামীকে পুঁজো দিতে দিতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি।

মুক্তবিহঙ্গ হাঁসফাঁস করছে বন্দীশিবির থেকে। পুরুষের কাছে টাকা না থাকলে পুরুষের পৌরুষ থাকেনা। পুরুষ হিজড়া হয়ে যায়। আমার স্বামীও বোধহয় তেমন হয়ে যাচ্ছে। টাকা গরম কমার সাথে সাথে মুখের ব্যবহারে একটু মিষ্টি ভাব এসেছে।

মাস শেষে কেমন কাতুমাতু করে বলে এই মাসের ঘর ভাড়ার টাকাটা যদি ভাইজানকে বলে ম্যানেজ করতে। আমি হাসি। যে দেবতার পায়ে আমি পরে পরে কাঁদতাম সেই দেবতা এখন পারলে আমার পায়ে ধরে পরে থাকে। যেই না সেই মাস যাই ওমনি কিছুদিন তেজটা আবার জন্মায়। তবু ভাল কিছুদিন অন্তত শান্তিতে থাকা যায়।

এবার দেবতা নতুন ফন্দি এঁটেছে। পার্মানেন্ট টাকা আসার রাস্তা তৈরি করার ষড়যন্ত্র পেতেছে মা ছেলে মিলে। ওর বিজনেস পার্টনার মুনির সাহেব মাঝে মধ্যেই আসত। এই কিছুদিন আগেও উনি আসলে আমাকে একবারের জন্যও ড্রয়িংরুমে দিত না। অথচ আজ বিকেলে তিনি এসেছিলেন আমাদের বাসায়।

কি আশ্চর্য আজ আমার শাশুড়ি নিজের গহনা খুলে আমাকে হাতে দিয়ে বলছে যাও বৌমা, মুনির সাহেবের জন্য নাস্তা নিয়ে যাও। একটু গল্পগুজব কর, উনার ভাল লাগবে। আর শোন নতুন শাড়িটা খুলে থ্রিপিছ পরে যাও। থ্রি পিছে তোমাকে বেশ মানাবে। আমার মনে সন্দেহটা তখন বেঁধেছে।

তারপর যেই না ড্রয়িংরুমে ঢুকলাম তখনই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। এইতো সেই যে আমাকে বিয়ে করার জন্য গুন্ডা পাঠিয়েছিল আমার বিয়ের আগে, এইতো সেই যে রাস্তায় আামাকে বিয়ে করার হুমকি দিয়েছিল আজ সেই কুত্তাটার খাবারের জন্য আমাকে তুলে দিচ্ছে আমার দেবতা স্বামী! সিদ্ধান্তটা তাই নিতে হলো। আমি মুক্তি চাই। দাসী হয়ে দাসত্ব করার যে জীবন সে জীবনকে পায়ে ঠেলে আমি মুক্তির স্বাদ পেতে চাই। কতদিন মুক্ত আকাশ দেখিনা.........সেই যে দু’বছর আগে বৌ হয়ে দাসীর মত মুখার্জী বাবুর ২য় পুত্র রোহানের সাথে সাতপাকে বাঁধা পড়লাম সেই দাসত্বের ইতি টেনে আমি কান্ত হয়ে পড়ছি।

আমার ‘বৌ’ হওয়ার সুযোগে কেউ আমাকে বেশ্যা বানাবে সে আমি হতে দেব না। আর একটু পরে আমি চিরমুক্তির স্বাদ নেব। একটু পরে শুধু পা দিয়ে চেয়ারটা ধাক্কা দেব, তারপর ভোরের প্রথম আলো ফুটতে ফুটতে আমি মুক্ত হব....আহা, শান্তি, শান্তি, শান্তি......। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি আমি আর একটা বিশাল কাজ করেছি। হিজড়া স্বামীটাকেও সারাজীবনের মত মুক্তি দিয়ে দিয়েছি।

আমার নরাধম স্বামীকে আজ রাতেই নিজ হাতে বিষ খাইয়েছি........ একটু পরে আমরা দু’জন সহমরণে যাচ্ছি। .............সহমরণে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.