আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামাজ



একবার বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মসজিদে নববীতে বেশ প্রফুল্ল চিত্তে উপস্থিত হলেন। কিছুক্ষণ পর মুসল্লীদের সমাবেশে তিনি নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া সুসংবাদ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তোমরা কি জানো মহান আল্লাহ নামাজীদের জন্য কি সুসংবাদ দিয়েছেন? উপস্থিত সাহাবীরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ)ই ভালো জানেন, আমরা শোনার জন্য প্রস্তুত। তখন মহানবী (সাঃ) মহান আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত আদায় করবে এবং নামাজের যত্ন নেবে বা নামাজকে কম গুরুত্ব দেবে না ও এই অবস্থায় আমার অর্থাৎ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশের ওয়াদা দিচ্ছি। আর যে নামাজ আদায় করবে না, তার সম্পর্কে আমার এ ধরনের কোনো ওয়াদা নেই।

আমি চাইলে তাকে শাস্তি দেব, অথবা ক্ষমা করবো। এই সুসংবাদ শোনার পর মুসলমানদের চোখ থেকে আনন্দ-অশ্রু গড়িয়ে পড়লো এবং এই নেয়ামতের জন্য তারা কৃতজ্ঞতা জানালো মহান আল্লাহর প্রতি। এরপর সবাই আরো সুশৃঙ্খলভাবে ও বেশি উদ্দীপনা নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করলো এবং নামাজের প্রতি আরো যত্নবান হলো। এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ নামাজীকে কত বেশী ভালবাসেন। নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির অংশ ও সবচেয়ে সেরা এবাদত বলে অন্য অনেক এবাদতের চেয়ে এর পুরস্কারও অনেক বড়।

মহান আল্লাহর সাথে সংযোগের সুনিশ্চিত পথ এবং আত্মাকে উন্নত করার মাধ্যম এই নামাজ। এই উন্নত এবাদতের ইতিবাচক শিক্ষা নামাজীর মন-মানসিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং সবচেয়ে উন্নত গুণবালীর সমাবেশ ঘটে তার মধ্যে। পবিত্র ইসলাম ধর্মে নামাজের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম কারণ এটাই। পবিত্র কোরআনের সূরা আহক্বাফের ১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেকের স্থান তার কর্ম অনুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না। একজন নিষ্ঠাবান নামাজী সুখে ও দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রেমে মত্ত থাকেন এবং তাঁরই সাহায্য কামনা করেন।

মহান আল্লাহও তাঁর বিনম্র ও ভীত-বিহ্বল বান্দাদের জন্য নিজ রহমতের অসীম দিগন্ত খুলে রাখেন। সূরা নূরের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, " সেইসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামাজ কায়েমসহ যাকাত দান থেকে বিরত রাখতে পারে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়বে। তারা সৎ কাজ করে বা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে আরো বেশি দান করেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুজি দান করেন। " অবশ্য প্রকৃত নামাজীরা পুরস্কারের আশায় বা দোযখের শাস্তির ভয়ে নামাজ আদায় করেন না।

তারা একমাত্র আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়েই নামাজ পড়েন। আল্লাহর স্মরণ তাদের অন্তরকে সজীব করে এবং তারা মহান আল্লাহর নৈকট্যের সুবাদে ব্যাপক কল্যাণের অধিকারী হন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল বৃথা যেতে দেন না। আর তাই তিনি সৎকর্মশীল ও নামাজীদেরকে ব্যাপক নেয়ামত ও পুরস্কার দান করে থাকেন। নামাজীদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো তাদেরকে নিজের নৈকট্য দান।

পবিত্র কোরআনের সূরা আলাক্বে মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সাঃ)কে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নামাজ ও সিজদা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ একটি তুলনাহীন ও অমূল্য নেয়ামত। আর এই নৈকট্য নামাজের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। হযরত ইমাম জাফর সাদেক্ব (আঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত কী? উত্তরে তিনি বলেছেন, আল্লাহকে জানার পর নামাজের চেয়ে বেশী মূল্যবান কোনো এবাদতের কথা শুনি নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.