আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তি-তর্কে Reference Frame

O Allah! Please lead me from unreal to The Reality!!

বিতর্কে তো বটেই, যে কোন অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদানের আগেও, উভয়ের আলোচনার "রেফারেন্স ফ্রেম” বা মাপকাঠি তথা পটভূমিটা একই কিনা তা নিশ্চিত করাটা খুবই জরুরী। তা না হলে ব্যাপারটা ”দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা” বা ”দোঁহার ভাষা দুই মত” হয়ে যেতে পারে। আমি একটা ইংরেজি শব্দ বেছে নিচ্ছি সাধারণ উদাহরণ হিসেবে। আমরা যখন port শব্দটি বলি, তখন সাধারণভাবে যে কেউ বুঝবেন যে, এই শব্দ দিয়ে "বন্দর” বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তিভেদে এই শব্দটির মানে "বাম দিক” বা "বাম পার্শ্ব” হতে পারে আবার "ছিদ্রপথ” বা "নির্গমন পথ”ও হতে পারে।

এখানে সমস্যাটা অত বড় না, কারণ আমার উল্লেখ করা বাকী দু'টো অর্থের চেয়ে, সাধারণ অর্থটা অনেক বেশী পরিচিত। কিন্তু সমস্যাটা আরো প্রকট হয়, যখন কোন একটা শব্দের বা অভিব্যক্তির সব ক’টা অর্থ একই রকমের পরিচিতির দাবীদার হয়। যেমন ধরুন GSM কথাটা - ফোন কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত কেউ একথা দিয়ে যা বোঝাবেন, আর গার্মেন্টস ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত কেউ যা বোঝাবেন তা একদমই ভিন্ন হতে পারে। "রেফারেন্স ফ্রেম" কথাটা আমি শিখেছি পদার্থবিদ্যা ও গণিত থেকে, তবে দৈনন্দিন ও বাস্তব জীবনে এই "ধারণাটা” অত্যন্ত জরুরী। ধরুন আপনি দু’জন মানুষের মাঝে একটা কথোপকথন সম্বন্ধে জানলেন যে, একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ”আপনার বাড়ী কোথায়?” এবং দ্বিতীয়জন উত্তর দিয়েছিল, "১০ মাইল দূরে।

” তথ্য হিসেবে, আপনার কাছে এই সংলাপগুলো একেবারেই অর্থহীন - কারণ এই সংলাপের "রেফারেন্স ফ্রেম” আপনার জানা নেই। প্রথমত, আমরা জানিনা তারা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে কথাটা বলছিলেন। দ্বিতীয়ত, যদি আমরা তা জানতেও পারি, তবু আমরা জানবো না যে, ঐ সংলাপের দ্বিতীয় ব্যক্তির বাড়ী কোথায়, কারণ, সংলাপ-স্থল থেকে বাড়ীটা ঠিক কোন দিকে ১০ মাইল তা তিনি বলেননি। এজন্যই কো-অর্ডিনেট জ্যামিতিতে origin এবং axes-এর ব্যবস্থা রয়েছে - যেন যে কোন একটা বিন্দুর সঠিক অবস্থান আমরা জানতে পারি। উপরের উদাহরণের দু’জন লোক যদি ঢাকার 0-point-এ [যা কিনা ঢাকার জি,পি,ও] দাঁড়িয়ে ঐ কথাগুলো বলে থাকতো এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি বলতো যে, তার বাড়ী ঐ জায়গা থেকে পূর্ব দিকে ১০ মাইল - তবে আমরা বুঝতাম যে, তার বাড়ী হয়তো কাঁচপুরের দিকে কোথাও হবে।

somewhereinblog-এ আমরা প্রায়ই কিছু মন্তব্য বা বিতর্ক দেখি যেখানে এই "রেফারেন্স ফ্রেম” সম্বন্ধে কোন ঐক্যমত হয়নি বা হয়ে থাকলেও তা টিকে থাকে নি। এরকম অবস্থায় যুক্তি প্রদর্শন বা তর্ক-বিতর্ক অর্থহীন বাক্যব্যয় হয়ে দাঁড়ায়! যেমন ধরুন প্র্যাক্টিসিং মুসলিমদের সাথে নাস্তিকদের বিতর্ক। যিনি আল্লাহয় বিশ্বাস করেন না, তাকে কুরআন বা হাদীসের দলিল দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা কেবলই সময়ের অপচয় হতে পারে। আমরা যদি প্যারিসের বেশ্যালয় সংলগ্ন কোন পানশালায় ঢুকে "সৎ কাজের আদেশ” দিতে গিয়ে মদ্য পানরত নারী-পুরুষকে বলি, "মদ খাওয়া হারাম, আপনারা মদ খাবেন না”; তাহলে এই কথাটা বা আমাদের প্রচেষ্টা, কত অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে!! ক্ষেত্রবিশেষে কারো কাছে তা হাস্যকরও মনে হতে পারে। এখানে ঐ পানশালার অতিথিদের আল্লাহর পথে ডাকতে হলে, প্রথমে তাদেরকে এই ব্যাপারে convince করতে হবে যে, আল্লাহ্ আছেন।

তারপর তাদের আরো convince করতে হবে যে, কুর’আন আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে - অথবা - রাসুল (সা.) সত্যিই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল [দু'টো ব্যাপার মূলত একই। যদি কুর’আন সত্যিই আল্লাহর কাছ থেকে এসে থাকে, তবে মুহাম্মদ (সা.) তো অবশ্যই সত্য রাসুল, কারণ কুর’আনেই তা লেখা আছে। আবার যদি মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকেন, তবে কুর’আন অবশ্যই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে - কারণ, তিনি তেমনটাই বলেছেন! ] একটু ভেবে দেখলেই যে কেউ বুঝবেন যে, এই দু'টো বিষয়ই ইসলামে প্রবেশ করতে গিয়ে যে কেউ প্রথমেই প্রত্যয়ন করেন - দুটো ”শাহাদা” বা সাক্ষ্যের মাধ্যমে। একবার যখন কেউ এ’দুটো ব্যাপার মনে প্রাণে ধারণ করবেন, তখন তিনি/তারা কুর’আন ও সুন্নাহ্কে সকল বিষয়ে "রেফারেন্স ফ্রেম” হিসেবে গ্রহণ করবেন। "আমার মনে হয়”, "হয়তো”, "মিশেল ফুকোর লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে” - এধরনের কথা বলার আগে তিনি চিন্তা করবেন যে, আলোচ্য বিষয়ে কুর’আন-সুন্নাহর কোন দিক নির্দেশনা রয়েছে কি না।

যদি থেকে থাকে, তবে ঐ বিষয়ে সেটাই হবে তার জন্য চূড়ান্ত দিক-নির্দেশনা। আমরা যখন কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে বা বিশেষ interest group-এর জন্য কোন গ্রুপ খুলি, তখনও সেখানে কি করা যাবে বা কি করা যাবে না সেটাও একদম স্পষ্ট হওয়া উচিত - যাতে অহেতুক বচসা বা সময়ের অপচয় না হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।