আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১ হাফ মুরগী, ১ হাফ গরু আর ১ হাফ ...

যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে চলা স্রোতের শব্দ কম।

রেস্টুরেন্টে খাইতে গিয়া আজ জব্বার মিয়ার চক্ষু খুইল্লা গ্যাছে। গেরাম থেকে শহরে আসছে। সুতরাং ভাল একটা হোটেলে মোটামুটি না খাইলে গেরামে গিয়া গল্প করার কিছু থাকে না। বেয়ারা আইসা কইলো, মামা কী খাইবেন ? জব্বার মিয়া আড় চোখে তাকালো।

বললো -আমারে মামা ডাকলা ক্যা ? তোমার বাড়ি কই? বেয়ারা কইলো -এইহানে যারা খাইতে আহে সবাই আমগো মামা। জব্বার বুঝতে পারলো। বললো - কী কী আছে ? - আছে নান রুটি, চিকেন বিরানী, কাচ্চি বিরানী, সাদা ভাত (জব্বার মিয়া তার সারা জীবনেও লাল ভাত, কালা ভাত, হলুদ ভাত, নীল ভাত, কইচ্চা ভাত দেখে নাই !) মুরগীর ঝাল ভূনা, গরু, খাসি, (মহিষ আর ভেড়ার মাংস পাওয়া যায়না ? এট্টু কম দামে ...) , কবুতর, রুইমাছ, ইলিশ, কই, বোয়াল, সেরপুটি, পাঁচ মিশলী সবজি, চিংড়ি ভর্তা, টাকি ভর্তা..... খাবারের বিবরন শুনিয়া জব্বার মিয়ার দিকবিদিক জ্ঞান হারাইবার উপক্রম। এত্তো খাবার ইহজন্মেও সে শ্যাষ করতে পারবোনা। বললো -ঠিক আছে আগে সাদা ভাত নিয়া আসো।

চিন্তা কইরা দেখি কী খামু। ভাইগ্না খানা আনতে গেল। জব্বার মিয়া চিন্তা ভাবনার কিঞ্চিত অবকাশ পাইলো। কী খাওয়া যায় ? আশে পাশের খদ্যেরদের (যারা খায় তারাই তো থদ্যের হবে- তাই না ?) জব্বার মিয়া ইতিউতি দিতে লাগলো চারপাশে। এক টেবিলের পাশ থেকে বেয়ারা হাঁক দিল -এই, এক হাফ কাচ্চি।

কাচ্চি আসলো। জব্বার ভাবছিল হাফ প্লেট কাচ্চি আসবে। দেখলো প্লেট ভর্তি। হাফ প্লেটের যদি এই অবস্থা হয়, তবে ফুল প্লেটের দশা কী হবে ? প্রসঙ্গত বলিয়া রাখি, রেস্টুরেন্টে আইসা হাফ কিছু চাইতে জব্বার মিয়ার লজ্জাই লাগতেছিল। বেয়ারার হাঁক -এই, এক হাফ মুরগী আসলো মাত্র এক পিস রান।

একটু ঝোলটোল। অন্য টেবিলে আরেক বেয়ারার হাঁক -এক হাফ গরু জব্বার আতকে উঠলো। খাইছে ! আস্ত একটা গরুর অর্ধেক অই টেবিলে উঠে আসবে ? টেবিলে রাখবে ক্যামনে আর খাইবই বা ক্যামনে ? নাহ। ভুল ভাঙলো। আস্লো এক ছোট্ট প্লেটে পাঁচ সাত টুকরা মাংস ভূনা।

এইটাই কি হাফ গরু ? এইহানে তো দেখি পূরা ডাকাতি ! জব্বার মিয়ার টেবিলে খানা আসলো। ভাইগ্না বললো -কী খাইবেন কন। জব্বার মিয়া চিন্তা করল, আর যাই হোক হাফ চাহিয়া সে গেরামের মান সম্মান ডুবাইবে না। যাই খাবে ফুল খাবে। টাকা পয়সার কোন সমস্যা নাই।

বললো -তোমাগো এইখানে অন্যকিছু খাইয়া জুইত নাই। সাদা ভাত নিয়া যাও আর নানরুটি দ্যাও। সাথে পাঁচ মিশালী সবজি। বেয়ারা হাঁক দিল -এক হাফ নান। আবার হাফের কথা শুনে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো জব্বার মিয়া।

- অই বেটা ফাজিল। খালি হাফ হাফ করছ। তরে হাফ নানের কথা কইছি ? ট্যাকা পয়সা কি কম লইয়া ঢুকছি যে অর্ধেক নানরুডি খামু ? তরে আমি অর্ধেক নানের কথা কইছি ? বেয়ারা টাশকি খাইয়া গেল জব্বার মিয়ার চিত্কার চেচামিচিতে । সে তাঁর বেয়ারা জীবনে এরূপ আশ্চর্যজনক কাস্টমার আর দেখেছে কিনা ঠাহর করিতে পারিল না। পুনশ্চ : নটে গাছটি মূড়ালো।

ঢাকা শহরের রেস্টুরেন্টে যে তুমুল ডাকাতি চলে, এ বিষয়ে জব্বার মিয়ার জ্ঞানচক্ষু খুলিল।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।