আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো বাসার খোঁজে - উপক্রমনিকা



পেশাগত লেখালেখি কখনো করা হয়নি এর আগে। শুরুর পেছনের কারণটা এমন: বাসা বা অফিস সাজাতে গিয়ে; অর্থাৎ 'ইনটেরিয়র' এর কাজ করতে গিয়ে; ভালো ' ওয়ার্কিং ম্যানুয়েলের' অভাব বোধ করেছি প্রতিবারই। ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়েছে অনেক কিছু। প্রায়ই মনে হতো নোট নিয়ে রাখি, লিখে রাখি সমস্যা ও তার সমাধান গুলি। সেটার কথা মাথায় রেখেই এই লেখাটার সূচনা।

তবে এই সিরিজে হয়তো ইনটেরিয়রটা এতোটা বিস্তারিত আনা সম্ভব হবেনা। এই সিরিজটা লিখছি মুলত তাদের জন্যে, যারা মাথা গোঁজার জন্য ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম মহানগরে একটি নিজস্ব্য ছাদের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখার সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় কারা দেখতে পারবেন একটি নিজের আবাসের স্বপ্ন? প্রথমেই, জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ যাদের আছে, তাদের এই তালিকা থেকে বাদ দিতে চাই। তারা স্বপ্ন দেখেন না- কিনেন চাকুরীতে ঢুকেছেন বছর কয়েক হলো; প্রজেক্টের কাজ করে হাতে এককালীন কিছু টাকা এসেছে এমন কেউ; বিদেশ থেকে বড় ভাই কিছু টাকা পাঠিয়েছেন এপার্টমেন্ট কেনার জন্য - এমন অনেকেই আছেন এই ঢাকা শহরে। আজকাল ব্যাংকও ৯% সুদে হাউজিং ঋণ দিচ্ছে।

আমি একটা গড় হিসাব করে বলছি- যারা এককালীন লাখ দশেক টাকা ম্যানেজ করতে পারবেন; আর মাসকাবারী ব্যাংকে ন্যুনতম হাজার বিশেক টাকা জমা দিতে পারবেন, তারা অনায়সেই স্বপ্ন দেখতে পারেন-খুব বেশী বড় নয়; দুই বা তিন বেডরুমের, হাজার থেকে তেরশ বা এমন সাইজের বাসা। বাসায় যদি উপার্জনকারী একাধিক হয়; তাহলে হয়তো এটা খুব বেশী কষ্টকর হবেনা। তাছাড়া, যারা ব্যাংকে কাজ করেন, তারা খুব অল্প সুদে লোন পেয়ে থাকেন। তাদের পক্ষেও এটা সম্ভব। এসব ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে খুব একটা নেই, তবে কেউ জানতে চাইলে তার জবাব আশাকরি খুঁজে দিতে পারবো।

কে দেখাবে স্বপ্ন? এককথায় উত্তর ডেভেলপারওয়ালারা! ঢাকায় জমির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। তাছাড়া আপনি যে জায়গার আশেপাশে থাকতে চাচ্ছেন সেখানে বিক্রয়যোগ্য জমি থাকতে হবে তো? সুতরাং ডেভেলপারের কাছে যেতেই হবে। ঢাকায় ( আসলে সারা দেশেই) এখন এই ব্যাবসাটাই রমরমা। হাতে কিছু নগদ টাকা থাকলেই লোকজন নেমে পড়ছে এই ব্যবসায়। কর্পোরেট কালচারও ডেভেলাপ করে ফেলেছে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানই।

এদের যে কারো কাছেই যাওয়া যেতে পারে। সমস্যাটা হলো- পণ্যের গুণগত মান ও কমিটমেন্ট রক্ষা করার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কেউই তাদের সুনাম ধরে রাখতে পারেনি। না বড়, না ছোট। বরং ছোট ছোট ডেভেলপারদেরকেই ক্লায়েন্টের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে বেশী সচেতন থাকতে দেখা গেছে। বড় কোম্পানীর এমডি আর চেয়ারম্যান স্যারের এপয়েন্টমেন্ট তো মিলেই না! সে সব প্রসঙ্গও এখানে আপাততো আনছি না।

তবে ডেভেলপার বাছাই এর টিপস দিয়ে দিলাম কিছু এখানে। ১। আপনার পরিচিতদের কাছ থেকে খবর নিন। অর্থাত যারা ইতিমধ্যে ফ্লাট কিনেছে, বসবাস করছে, তাদের ডেভেলপাররা কেমন? নতুন কী প্রজেক্ট তারা অফার করছে। তাদের কমিটমেন্ট ঠিক ছিল কিনা।

২। আপনার পছন্দসই এলাকায় যারা ডেভেলপ করছেন, বা আপনার বর্তমান বাসা আশেপাশে যাদের সাইট, তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করুন। ৩। সরাসরি মুল মালিক বা এমডি র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। দেখুন তারা আপনাকে সহজে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে কিনা।

৪। যারা বলে, "সব ফ্লাট বেচা শেষ; আর মাত্র পেছনের দিকের তিনটা খালি আছে; তাও দেখতে হবে দেয়া যাবে কিনা...। " চোখ বুঝে এভয়েড করুন এদের। ৫। পছন্দসই জমির মালিকের সাথে কথা বলুন, তার মাধ্যমে নেগোশিয়েটও করতে পারেন।

তাছাড়া, সব সময় মনে রাখবেন জমির মুল মালিক লোকটা কেমন, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ দীর্ঘ মেয়াদে তিনিই হতে যাচ্ছেন আপনার প্রতিবেশী। ( মুরগী মিলনের জমি বা ঝাপটা হাসানের জায়গাতে ডেভেলপ হওয়া বিল্ডিং এর দিকে না যাওয়াই ভালো ) স্কোয়্যার ফিটের মারপ্যাঁচ ডেভেলপার পছন্দ হলো, এখন প্লট বাছাই করে, ফ্লাট পছন্দের পালা। প্রায় সবাইকেই অভিযোগ করতে দেখেছি- "ভাই, ছিল ১৮০০ এসএফটি, মেপে পেলাম ১৩০০!!" "ব্রোশিয়রে রুম বড় বড় লাগতো। উঠে দেখি খাট ছাড়া কিছু রাখা যায় না!" এই হিসেবগুলিতে কিছু শুভংকরের ফাঁকি থাকে, কিছু আপনাদের ক্রেতার অজ্ঞানতা থাকে।

একটা ১৮০০ বা ১২০০ এস এফটি ফ্লাটে; যে মাপেরই বলিনা কেন কয়েক ধরনের স্পেসের হিসাব থাকে। ১। কার্পেট এরিয়া- অর্থাত রুমের ভেতরকার মাপ; এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল পর্যন্ত। ২। ওয়াল এরিয়া- যে ৫ ইঞ্চি বা ১০ ইঞ্চি দেয়াল দিয়ে আপনার ফ্লাট টা তৈরী হয়েছে তাদের দখল করা জায়গা।

৩। আপনার ফ্লোরের সিড়ি, লিফট ও এন্ট্রি লবির জায়গাটুকু- যেটা সমানুপাতে বন্টিত হবে ঐ ফ্লোরের সব এপার্টমেন্টের মধ্যে। ৪। নীচ তলায় অফিসরুম/ইউটিলিটি রুম/ ওয়েটিং রুম/ইলেক্ট্রিক রুম/গার্ডরুম/টয়লেট- ছাদের উপর কমিউনিটি রুম; লিফট রুম- এসবের আনুপাতিক অংশ। একটা গড় হিসাব নীচে দেয়া গেলো।

১৯০০ এস এফটির একটা ফ্লাটে আমরা এভাবে পেয়েছি- ১। কার্পেট এরিয়া-১৩৩০ এস এফটি ২। দেয়াল- ২১০ এস এফটি ৩। লিফট, সিড়ি- ১৯০ এস এফটি ৪। বাকি থাকলো ১৭০ এস এফটি; ১,২ ও ৩ আপনি সহজেই হিসেব করে নিতে পারবেন।

শুভংকরের ফাঁকিটা হয় ৪ নং হিসেব নিয়ে এখানে সব ডেভলপাররাই কিছুটা হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবে! আমার পরামর্শ হচ্ছে, একবার পুরো মাপের উপর রেট ফায়সালা করার পর, আপনি ১,২ বাদ দিয়ে বাকি দুটার কথা ভুলে যান। ধরে নিবেন এটুকুই আপনার প্রকৃত প্রাপ্তি। (আপাততো এখানে বিরতি। আপনাদের উপকারে আসলে এটা নিয়ে এগিয়ে যাবার ইচ্ছে থাকলো। এখানে আরেকটি কথা বলে নেয়া ভালো , ব্লগের অনেকেই ডেভেলপার ফার্ম বা ব্যাবসার সাথে জড়িত থাকতে পারেন; তাদের যেকোন মতামত খুব প্রয়োজনীয় বলেই গণ্য হবে)



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.