আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৮৭ কোটিপতির দুর্নীতির ফাইল 'নিখোঁজ'!



দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ধামাচাপা পড়ে গেছে ৮৭ কোটিপতির দুর্নীতির ফাইল। দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব ব্যক্তির কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছিল। অধিকতর অনুসন্ধান ও মামলা করার অনুমতি চেয়ে এসব ফাইল পরে পাঠানো হয় দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো নির্দেশনা আসেনি ঢাকা থেকে। এসব মামলার তদন্ত ও অনুসন্ধান কর্মকর্তারাও জানেন না কোথায়_ কার কাছে আছে ফাইল ।

অনুমোদন নিতে গিয়ে ঢাকায় আটকে থাকা ফাইলের মধ্যে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে ৫১টি ও মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে পাঠানো ফাইল ছিল ৩৬টি। ৮৭ কোটিপতির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফাইল রয়েছে সর্বোচ্চ ৪০টি। বাকি কোটিপতিরা হচ্ছেন ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), পিডিবি, সিটি করপোরেশন, বনবিভাগ ও রেলওয়েসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের। দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করায় দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি বিভাগীয় কার্যালয়। এ সুযোগে অনেকেই ট্রুথ কমিশনে গিয়ে নামমাত্র জরিমানা দিয়ে নিয়ে এসেছেন 'শুদ্ধতার সনদ'।

এদের অনেকে চাকরিও করছেন বন্দর, কাস্টম, সিটি করপোরেশন ও চউকসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে । 'দুদক আইনে বাধ্যবাধকতা থাকায় বহুক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে ঢাকায় পাঠাতে হয় সব মামলার রেফারেন্স। এ জন্য বেশকিছু দুর্নীতিবাজের অনুসন্ধান কার্যক্রম আটকা পড়ে আছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা না আসায় অভিযোগের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা।

এক বছর অপেক্ষা করার পরও মামলা করার অনুমোদন পাওয়া যায়নি এমন উদাহরণও আছে। ' দুদক সূত্র জানায়, যেসব কর্মকর্তার ফাইল ঢাকায় আটকে আছে তাদের মধ্যে আছেন সীতাকুণ্ড সার্কেলের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ইকবাল হোসেন। তার বিরুদ্ধে ৯ এপ্রিল মামলা করার সুপারিশ করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হলেও এখনও জবাব আসেনি। কালুরঘাট রোডের সম্প্রসারণে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে চউকের ১৬ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে ২২টি মামলা করার অনুমোদন চাওয়া হয় ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর। ঢাকা থেকে এ ব্যাপারে পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় চলতি বছরের ৯ মার্চ।

পুনর্তদন্ত শেষে রিপোর্টও পাঠান তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু এর পাল্টা জবাব আর আসেনি। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেলায়েতের স্ত্রী সানজিদা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ পাঠানো হয় ২১ জুন। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে মতামত জানায়নি ঢাকা দুদক। সরকারি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়ে ফটিকছড়ির ড. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন চাওয়া হয় চলতি বছরের ২০ জুলাই।

প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কক্সবাজারের ব্যবসায়ী আবদুছ ছালাম কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন চাওয়া হয় চলতি বছরের ৯ আগস্ট। একই অভিযোগে মিরসরাইয়ের শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন চেয়েও কোনো জবাব পায়নি চট্টগ্রাম দুদক। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জহির আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন চেয়েও অজ্ঞাত কারণে হতাশ হতে হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে। চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগটিও ধামাচাপা পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও থেমে গেছে মাঝপথে।

চট্টগ্রাম দুদক অফিস বোয়ালখালীর মোঃ নুরুল হকের দুর্নীতি প্রমাণ পাওয়ার পরও অনুমোদন না পাওয়ায় মামলা করতে পারছে না। চট্টগ্রাম জজকোর্টের জিআরও খায়রুল আমিনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাটিও ঝুলে আছে অনুমোদন জটিলতায়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এআইআর শাখার কর্মকর্তা ছাদেকুর রহমানের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করার কার্যক্রমও অজ্ঞাত কারণে ঢাকায় আটকে আছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একইভাবে ঝুলে আছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডের ওয়ারল্যাস অপারেটর হাসান শরীফ খান, ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ খান ও জসিম উদ্দিনের সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের কার্যক্রম। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ার পরও চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রিন্সিপাল অ্যাপ্রেইজার (রফতানি) এসএম ফরিদ উদ্দিন ও লক্ষ্মীপুর পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনের দুর্নীতির তদন্তও থেমে আছে রহস্যজনক কারণে।

একইভাবে ঝুলে আছে শওকত আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী তাসমিয়া আম্বরিনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার বিষয়টি । দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও অনুসন্ধান পর্যায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ২৭ কর্মকর্তার দুর্নীতির ফাইল আটকে আছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা এসব কর্মকর্তার মধ্যে আছেন কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মোকাররম হোসেন, প্রিন্সিপাল অ্যাপ্রেইজার হায়দার আলী গাজী, আমদানি শাখার প্রধান সহকারী মোঃ আবদুল বাকি, অ্যাপ্রেইজার আমিনুল ইসলাম, মোঃ আলী চৌধুরী, কামরুল ইসলাম খান, মহসিন ভঁূইয়া, নজরুল ইসলাম আকন্দ, নুর মোহাম্মদ চৌধুরী, আবুল কাশেম, জাকির হোসেন, কামরুল হাসান, মোজাম্মেল হক, কাজী মফিজুল হক, হরিশ চন্দ্র বর্মা, মোঃ আবু মুছা, গোলাম রহমান, মাহফুজ আলী প্রধান, হাফিজুর রহমান, সিকদার মুজিবুর রহমান, প্রিন্সিপাল অ্যাপ্রেইজার হুমায়ুন কবির, শেখ শওকত আলী, কাজী আবদুল বাসিত, সৈয়দ মজিবুর রহমান, এআইআর শাখার মঞ্জুরুল হক চৌধুরী, জাহাঙ্গীর খান, প্রধান সহকারী আবদুস সাত্তার। আরও যাদের দুর্নীতির তদন্ত মাঝপথে থেমে আছে তাদের মধ্যে আছেন সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ হাসান, বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যতত্ত্বাবধায়ক নাদিম সারোয়ার, হাটহাজারী ছাগল উন্নয়ন খামার প্রকল্পের কর্মকর্তারা ও ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মোমেন চৌধুরী এবং তার ভাই ছালেহ আহম্মেদ চৌধুরী । দুদক যথাসময়ে মামলা করতে না পারায় ট্রুথ কমিশনে গিয়ে শুদ্ধ হয়েছেন যেসব কোটিপতি তাদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকল্প পরিচালক খায়রুল মোস্তফা, তার স্ত্রী রোখসানা আক্তার, বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান, তার স্ত্রী আজিজা, চিফ হাইড্রোগ্রাফার হাবিবুর রহমান, মশিউর রহমান বেগ, বন্দরের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার (অব.) আনিসুর রহমান চৌধুরী, কাস্টমসের এমএলএসএস আবুল কালাম, প্রিন্সিপাল অ্যাপ্রেইজার আবদুল মজিদ, অ্যাপ্রেইজার গোফরান ভঁূইয়া, অ্যাপ্রেইজার (অব.) আহমদ সোবহান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ ফজলে হোসেন, চউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদার ও চউকের ঠিকাদার মেসার্স ঐশী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম মোঃ সামসুজ্জামান, মেসার্স ইছাক অ্যান্ড ব্রাদার্সের ইছাক চৌধুরী, মেসার্স ছালেহ-জহুর বিল্ডার্সের ছালেহ জহুর, মেসার্স মদিনা ট্রেডিংয়ের মোঃ ইছমাইল, মেসার্স ন্যাশনাল বিল্ডার্সের শামসুল আলম, মেসার্স আমান করপোরেশনের মোঃ আমান, মেসার্স ফারাহ অ্যান্ড কোংয়ের সৈয়দ মোঃ জহিরুল হক, মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজের ইয়াকুব চৌধুরী, মেসার্স স্ট্রিয়ার এন্টারপ্রাইজের সাইফুল্লাহ চৌধুরী, মেসার্স ইসলাম ট্রেডিংয়ের নুরুল ইসলাম, মেসার্স থ্রি-স্টার সিন্ডিকেটের আবুল কালাম আজাদ, মেসার্স নূর মোহাম্মদ সেনেটারি মার্টের নূর মোহাম্মদ, মেসার্স ফেমাস কনস্ট্রাকশনের আলী আকবর, মেসার্স জসিম অ্যান্ড সন্সের জসিম উদ্দিন, কক্সবাজারের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবদুর রব প্রমুখ।

সূত্রঃ সমকাল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।