আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন ৪০০ বছরের ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখি



ঢাকায় যারা ৮০ সালের পূর্ব থেকে আছেন তারা এখনকার ঢাকায় বসবাস করে নিদারুন কষ্টে আছেন । এত গাড়ী, এত মানুষ, দোকান-পাট, প্রতিষ্ঠান,সুবিশাল অট্টালিকা আর সব'চে বিস্তৃত যান-জট। অনিয়ম, দুর্নীতি, খুন-খারাবি, ছিনতাই এসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । অথচ আমাদের ছেলেবেলার ঢাকা এমন ছিলো না । খুবই পরিচ্ছন্ন, দুষনমুক্ত ছিলো সেই পরিবেশ।

খেলার মাঠ ছিলো পর্যাপ্ত, পুকুর মাঝে মধ্যেই দেখা যেতো । লালবাগ কিল্লারমোড় বাজারের পিছনে থেকে নবাবগন্জ বাজার হাজারীবাগ পর্যন্ত ছিলো বহমান বুড়িগংগা নদী । মাঝে মাঝে নদীতে গোসল করতে যেতাম । বর্ষাকালে বুড়িগংগার এই শাখাটি এত বড় আকার ধারন করত, সামনে গেলে ভয় পেতাম । বালুঘাট থেকে কামরাংগীর চর যেতে নৌকায় প্রায় ১৫ মিনিট লাগত।

একসময়ের ঢাকা বিখ্যাত ছিলো মসজিদের নগরী হিসেবে আজ আমর মনে হয় ঢাকা "প্রাইভেট কারের নগরী" । পৃথীবির অন্য কোন রাজধানীতে এত অল্প সড়কে এত অধিক সংখ্যক প্রাইভেট কার আছে বলে আমার জানা নেই । কারের চাপে ঢাকা আজ বেসামাল ! বেসামাল তার ট্রাফিক ব্যবস্হা । অবৈধ গাড়ী , বেপরোয়া গতির কার, ভূয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ কার , অপরিপক্ক, অল্প বয়েসি ড্রাইভার হাজারো রকম -সকম ! বেচারা ট্রাফিক পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে প্রাইভেট কার না ধরেই বিষয়টি এড়িয়ে যান কারন মনে ভয় " না জানি আবার কোন এমপি, মিনিস্টার,আমলার গাড়ী শেষতক না চাকুরীই চলে যায় কিংবা খাগড়াছড়ি পোস্টিং !!! অফিস টাইমে যানযট , আমার মতো বাসে যারা অফিস যাতায়াত করেন নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন পিক আওয়ারে মাত্র ১টি বাচ্চা নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে ছুটেছে ১টি গাড়ী । আবার অনেকে বেগম সাহেবা রান্না শুরু করতে গিয়ে দেখেন বাসায় পেয়াজ নেই , চললেন ১কেজি পিয়াজ কিনতে প্রাইভেট কার নিয়ে ।

আমার জন্ম পুরানো ঢাকায়, লালবাগে । ৭৭- ৭৮ সালের দিকে যখন আমি ছোট তখন আমাদের আশে পাশে প্রাইভেট বলতে ছিলো "আনোয়ার গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজের" মালিকের ১টি ভক্সওয়াগন প্রাইভেট কার । যাকে আমি "কাউট্টা গাড়ী" বলতাম কারন গাড়িটি দেখতে কচ্ছপের মত ছিলো । ঐ গাড়ী সকালে বের হবার সময় আমরা ছোটরা দলবেধে গলির মুখে হাজির হতাম শুধু গাড়ীটিকে একনজর দেখার জন্য । মাত্র ৩দশকের মাথায় ঢাকার রাজপথে আজ হাজার হাজার গাড়ী ।

কেউ কি জানেন গাড়ী বেড়েছে কতগুণ ? বিত্তবানেরা কোটি টাকা দামের লেক্সাস, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিই, পাজেরো গাড়ীতে বেড়িয়ে দারিদ্রতার মুক্তি, দেশের মুক্তির নানা সুমধুর বক্তব্য দেন। শুনতে ভালো লাগে , আশা জাগে কিন্তু ফল আর হয় না । দেশের অর্ধেক মানুষ আজ চরম দারিদ্যসীমার নীচে বাস করছে । ঢাকা ক্রমে ক্রমেই অবসবাসযোগ্য হচ্ছে । তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিয্য, জৌলুস হারিয়ে সে আজ এক ইট পাথরের জংগলে পরিনত হয়েছে ।

তারপর ও মানুষ স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসছে, রাজধানীর বুকে জীবিকার তাগিদে থেকে যাচ্ছে লাখো মানুষ । ঢাকাকে ছাড়তে চায়না কেউ ! কিন্তু ঢাকা এখন মূমুর্ষ তাকে বাঁচাতে হলে ঢাকাকে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রত্যেক জেলায় , সমগ্র বাঙলাদেশে । ঢাকায় একটি মাঝারী ভুমিক্ম্প হলেই ভয়াবহ অবস্হার সৃষ্টি হবে । ইদানিং হাল্কা ভুমিকম্পের পদচারনা হচ্ছে । ক'বে যে বড় আঘাত হানে? অপরিকল্পিত অট্টালিকায় পূর্ন ঢাকা নগরীতে ভূগর্ভের পানির স্তর কমে গিয়েছে ।

ঢাকার চতুর্দিকে ১০০ কি:মি: পর্যন্ত দ্রুত গতির এমআরটি (ম্যাস র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট ) সিস্টেমে নতুন ট্রেন চালু করা উচিত । যাতে করে ঢাকার আশে পাশের জেলার লোকেরা অফিস করে নিজ বাড়ীতে চলে যেতে পারবেন । অহেতুক ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে না । প্রত্যেক জেলা শহরে কর্মসংস্হান, চিকিৎসা, নাগরিক সুবিধা, বিচার-সালিস ব্যবস্হা, বিভাগীয় শহরগুলো থেকে সরাসরি বিদেশে আসা-যাওয়ার রিক্রুটিং, মেডিকেল টেস্ট সহ যাবতীয় বন্দেবস্ত, বিমানবন্দর আধুনিকীকরন ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাইভেট কারের নিয়ন্তন করতে হবে যে ফ্যামিলিতে ১টি কার আছে তারা ৫ বছরের পূবে ২য় গাড়ী ক্রয় করতে পারবেন না ।

নতুন গাড়ী রেজিস্ট্রেশনের সময় ক্রেতার পূর্বের গাড়ীর তথ্য যাচাই -বাছাই করা হবে । গাড়ী ক্রয়ের অর্থের সঠিক উৎস এনবিআর কতৃক যাচাই করতে হবে । বিলাসবহুল গাড়ীর ট্যাক্স বাড়াতে হবে । সরকার এবং জনসাধারনকে বিনীত অনুরোধ যে যেখানে আছেন যার যার অবস্হান থেকে কাজ করি আসুন ৪০০ বছরের ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।