আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই মন দিয়েছি তোমাকে

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

কয়েক দিন থেকে একটা বাংলা সিনেমার পোস্টার দেখছি। সিনেমার নাম - মন দিয়েছি তোমাকে। এই পোস্টার দেখেই অনেক আগের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমি তখন ছাত্র। জগন্নাথ কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়ি।

হাতখরচের জন্য কিছু টিউশনি করি। আমার এক বন্ধু পরামর্শ দিল, এইভাবে টিউশনী না করে একটা ব্যাচ খুলে ফেল। তার পরামর্শ অনুযায়ী সামান্য কিছু পোস্টারিং করলাম। প্রথম মাসেই একটা ব্যাচ দাঁড়িয়ে গেল। সকালে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র পড়াই আর বিকেলে জগন্নাথে ক্লাশ করি।

ভালই চলছে জীবন। আমার এক এডভোকেট বন্ধু আছে। সে আইন বিষয়ে কোচিং সেন্টার চালায়। আমাকে প্রস্তাব দিল, আয়, দুই বন্ধু মিলে একটা কোচিং সেন্টার খুলি। তুই ইংরেজি পড়াবি আর আমি ল পড়াব।

ফ্লাটের ভাড়া শেয়ার করব। ওর পরামর্শে ২ বন্ধু মিলে একটা একতলা বাড়ির ফ্লাট ভাড়া নিলাম। আমাদের সাথে আরও কম্পিউটার ও কারিগরী প্রশিক্ষকও যুক্ত হল। মোটামুটি ৩ জন মিলে কোচিং চালাই। কারিগরী প্রশিক্ষকের এক পরিচিত লোক সাহিত্য চর্চা করেন।

সাহিত্য চর্চা বলতে তিনি কিছু উপন্যাস লিখেছেন এবং তার মধ্যে ২/১ টা প্রকাশিত হয়েছে। ভদ্রলোক আগে আদমজী পাট কলে চাকুরি করতেন। আমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগেই তিনি অবসর নিয়েছেন তার চাকুরি থেকে। তার ছেলে মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের বাইরে থাকে। ফলে ভদ্রলোকের আর্থিক অবস্থা ভালো।

তিনি মাঝে মাঝে আমাদের কোচিং সেন্টারে আসতেন। গল্প-গুজব করতেন। একদিন তিনি তার একটা উপন্যাস নিয়ে এলেন। উপন্যাসটির নাম - এই মন দিয়েছি তোমাকে। সস্তা ধরনের রোমান্টিক উপন্যাস।

যেহেতু আমি সাহিত্যের ছাত্র এবং অল্প স্বল্প সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা করি, তাই তার খুব আগ্রহ আমি যেন তার বইটি পড়ে মন্তব্য করি। বইটা নিলাম, পড়লাম, খুব সস্তা লেখা এবং কাহিনী ভালো নয়। খুব লদকা-লদকি ব্যাপার আছে। তবুও বয়স্ক মানুষ বলে তেমন কিছু বললাম না। ভালোই লেগেছে বলে এড়িয়ে গেলাম।

ওই ভালোই লেগেই বলাই কাল হল। কিন্তু আমার এডভোকেট বন্ধু বইটার নাম দেখেই লেখক সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করল। বুড়ো বয়সে তিনি কিভাবে এবং কেন এই রগরগে কাহিনী লেখেন সেটা নিয়ে নানা তত্ত্ব জাহির করল। কয়েক দিন পরে লেখক ভদ্রলোক এক গাদা বই নিয়ে হাজির। সবই - এই মন দিয়েছি তোমাকে।

তার অনুরোধ আমি যেন এই বইগুলো আমার কোচিং সেন্টারের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বিলিয়ে দেই। যেহেতু উনি সৌজন্য সংখ্যা দিচ্ছেন, তাই আপত্তি করলাম না। পরের দিন পড়ানো শেষে ছাত্র ছাত্রীদের জানালাম পুরো ঘটনা। এক ফাজিল ছাত্রী জিজ্ঞেস করে বসল, বইয়ের নাম কি ? বইয়ের নাম বলতে গিয়ে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এই মন দিয়েছি তোমাকে - এই কথাটা আমি ছাত্রীটিকে কিভাবে বলি ? যাই হোক, বললাম, নামটা মনে নেই।

পরের দিন বই নিয়ে হাজির হলাম ওদের ক্লাশে। ক্লাশ শেষে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বই বিলিয়ে পাশের রুমে গিয়ে বসলাম। শুনলাম, আমার ফাজিল ছাত্রীটি তার বান্ধবীকে বলছে, ‍এই জন্যই তো কই, স্যারে বইয়ের নাম কয় না ক্যান ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।