আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সূরা আল ফাতিহা'র তাফছির

সত্যের পূজারী

تفسير سورة الفاتحة সূরা আল ফাতিহা'র তাফছির بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ আমি মহান আল্লাহর নামে এবং তার সাহায্য কামণা করে শুরু করছি,যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। (1)الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ সকল প্রশংসা আল্লাহর তা'আলার জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক, যিনি আসমানসমূহে ও জমিনের সকল স্থানে সকল সময় প্রশংসিত। অর্থাৎ যার প্রশংসার তাছবিহ পাঠ করে বিশ্ব জগতের সকলে। আর প্রশংসা হল পরিপূর্ন ভালবাসা ও সম্মানের সাথে গুণগান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যা পূর্নাঙ্গরুপে পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা'আলা-ই। আর যে সমস্থ কারণে আল্লাহ তা'আলার এই প্রশংসা প্রাপ্য, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে; তিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

তিনি বিশ্ববাসি কে প্রতিপালন করেছেন তার নেয়ামতসমূহ দ্বারা। তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, খাদ্য দিয়েছেন এবং নেয়ামতসমূহ দ্বারা রক্ষা করেছেন, যা মহান আল্লাহর পূর্নাংতার ইংগিত করে, এবং তিনিই যে সম্মানের যোগ্য ও বান্দার ডাকে সারাদানকারি এই কথা বলে দেয়। (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। অর্থাৎ যার রহমতের ব্যপ্তি মানুষ (মুমিন/কাফির), জ্বিন, পশু-পাখি সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করে। তিনি স্বয়ং পরম দয়ালু এবং তার সকল সৃষ্টি বিভিন্নভাবে তারই দয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।

(3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ যিনি বিচার দিনের মালিক। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার কামালিয়াত (স্বয়ংসম্পূর্ণতা) এবং প্রশংসিত হওয়ার অন্যতম কারণ হল; তিনি বিচার দিনের মালিক। আর বিচার দিন হল কিয়ামত দিবস, যে দিবসে কোন মানূষ অপর কোন মানূষের কোন কাজে আসবে না, এমনকি কোন ব্যক্তি তার নিজের জন্যেও কোন কিছু করতে পারবেনা। বরং সেদিন সর্বময় ক্ষমতা থাকবে আল্লাহর। আর কিয়ামত দিবসের মত দীর্ঘ ও কঠোর দিবসে যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি দুনিয়ার সকল ক্ষমতার অধিকারী।

(4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِين আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। অর্থাৎ আমরা আল্লাহ ব্যতিত আর কারো উদ্দেশ্যে কোন ধরনের ইবাদত করিনা, চাই সে ইবাদাত দোয়া-ই হোক, বা নামাজ, রোজা, মান্নত, ক্বোরবানী কিংবা অন্য যে কোন ইবাদাত হোক, সে ইবাদত আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করি। কেননা তিনিই তা পাওয়ার একমাত্র যোগ্য। আর একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা সাহায্য চাই, তারই উপর ভরসা করি, দৈনন্দিন জীবনে চলার সকল পাথেয় তিনিই দান করেন, আর সকল পাথেয় বা উসীলা তার সৃষ্টিরই অংশবিশেষ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া একটি ইবাদত।

(5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ আমাদের সরল পথ দেখাও। অর্থাৎ আমরা ঈমান আনার পর এবং আপনাকে সম্মান প্রদর্শন করার কর আপনার কাছে এটাই চাই যে, আপনি আমাদেরকে দ্বীনের সহজ সরল পথ, যে পথে কোন বক্রতা নেই, তা প্রদর্শন করুন, আর তার ঊপর অটল থাকার তৌফিক দান করুন। কেননা আরবী "হেদায়াত" শব্দটি কখনো পথ প্রদর্শনকে বুঝায়, আবার কখনো পথ চলার ক্ষমতাদানকে বুঝায়। আর এ দুই জিনিসই একমাত্র আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়। (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ সে সমস্থ লোকের পথ যাদেরকে তুমি নে'য়ামত দান করেছো।

অর্থাৎ ঐ সমস্থ লোকের পথ যাদের প্রতি আপনি এই মহা নেয়ামত (হেদায়াত) দান করেছেন। আর তারা হলেন নবীগণ, সিদ্দীক্বীনগণ, শহীদগণ এবং ন্যায়পরায়ণ উত্তম বান্দাগণ। উপরোক্ত আয়াত এই কথাও বলে দেয় যে, হেদায়াত আল্লাহ প্রদত্ত অন্যতম একটি নেয়ামত, যে নেয়ামত শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া হয় এবং আল্লাহ ছারা আর কেউ তা দিতে পারেওনা। (7) غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّين তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং তাদের পথেও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ আর আমাদেরকে ঐ সমস্থ লোকদের পথ থেকে দূরে রাখুন যাদের ঊপর আপনার গজব অবর্তির্ণ হয়েছে, যেমন ইহুদিরা যারা তাদের নবী মুসা (আঃ) এর আনুগত্য থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর সাথে শিরক(ইবাদাতে অংশিদার স্থাপন) করেছিল, আর আমাদের নবী কে অস্বিকার করেছিল অথচ তারা জানত যে, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য নবী যা তাদের কিতাবে উল্লেখিত ছিল।

সুতরাং তারা যা জানত তা কাজে লাগায়নি। আর আমাদেরকে ঐ সমস্থ লোকের পথ থেকে দূরে রাখুন যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, যেমন নাসারারা (খৃষ্টানরা) তারা তাদের নবী ঈসা (আঃ) এর আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। এমনকি তারা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর ইবাদতে শরিক করা শুরু করে দিয়েছে, তারা ধরে নিয়েছে যে, ঈসা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ, অথচ এটা তাদের নিজেদের বানানো কথা ছাড়া আর কিছু নয়। **সূরা আল ফাতিহাকে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তার প্রত্যেক নামাজে পড়া আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। এই সূরা আল্লাহ তা"লার রাবুবিয়াত (প্রভূত্ব), মাহাত্ত্ব, বিশ্বের সবকিছুর ঊপর তার কতৃত্ত, এবং সব ধরনের ইবাদতের তিনি একমাত্র যোগ্য এসবই বর্ণনা করে।

আরো বর্ণনা করে যে আল্লাহর কাছে সাহায্য এবং হেদায়াত চাওয়ার গুরুত্ব অপরিসিম। যেহেতু এই সূরাতে এই মহান দোয়া (আমাদের সরল পথ দেখাও) কে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছে, তাই প্রত্যেক বান্দা নামাজে এই সূরা পাঠ করার পর "আমীন" বলবে। "আমীন" অর্থ হ্ল "হে আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন"।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।