আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ এবং কিছু ভাবনা

গর্ব করার মত এখন কিছুই চোখে পড়েনা। মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রয়োজন আর একটি বিপ্লব

আজ আর রবিনের গল্প নয় । (কারণ, রবিন অলরেডি আমাকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে ) তাই ভাবছি, আজ নতুন কিছু লিখব । আজকের পোস্টটি গতকাল লিখলেই যথার্থ হত । কিন্তু সময় স্বল্পতা এবং ব্যস্ততার কারণে আর লেখা সম্ভবপর হয়নি ।

একজন প্রিয় মানুষ অসুস্থ শুনে তাকে দেখতে যাবার অভিপ্রায়ে আমার এ যাত্রা । গিয়েছিলাম ধানমন্ডিতে । যাবার বেলায় তেমন একটা অসুবিধা না হলেও আসবার সময় বাঁধল বিপত্তি । ১৩ নং বাস আর পাওয়া যাচ্ছে না । অগত্যা কিছুদূর হেঁটে আসলাম বাস কাউন্টারগুলোর সামনে।

তবে তাড়াহুড়ো করে টিকেট কাটলাম না । কারণ, উদ্দেশ্য যে বাস আগে আসবে, ঐ বাসেই উঠে পড়া । ( আগে অনেক বোকা ছিলাম কি-না ... চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই টিকেট কেটে ফেলতাম ... তারপর দেখা যেত, আধা ঘন্টা পর সেই বাস এসেছে । ) যাই হোক, 'মালঞ্চ' নামের একটা বাস আসছে দেখেই আমি ঝটপট একটা টিকেট কাটলাম । ভেবেছিলাম সাইন্সল্যাব পর্যন্ত যাব ।

তাই টিকেটও কাটলাম সাইন্সল্যাবের । ভাড়া নিল ৮ টাকা । কিন্তু বাসের গায়ে শাহবাগ লেখা দেখে মাথায় একটা দুষ্টুবুদ্ধি চাপল । এই টিকেটে শাহবাগ পর্যন্ত গেলে কেমন হয়? হি হি ... যেই ভাবা সেই কাজ । বাসে চুপচাপ বসে থাকলাম ।

শুক্রবারের দিন । ছুটির দিন । রাস্তা-ঘাটে জ্যাম হবার কথা ছিল না । কিন্তু বিধি-বাম । সাইন্সল্যাবের কাছে আসতেই বুঝলাম, এখন ছুটিরদিনেও জ্যাম হওয়া খুব স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে ।

বাসের কিছু যাত্রীর কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলাম । এখানে তার অংশবিশেষ তুলে দিলাম : ১ম ব্যক্তি : " আমগো দ্যাশ ক্যামনে উন্নতি করবো কন মিয়াবাই? সয়ালবেলা দুই গন্ডা যায় জ্যামে আর রাইতের বেলা যায় দুই গন্ডা । মোডমাড চাইর গন্ডা । ডাকা শওরে এহন মোড দুই কোডি মাইনষের বাস। তাইলে ডেলি হিসাবে আড কোডি গন্ডা টাইম লস অয় আমগো ।

বিদ্যাশ হইলে মাইনষে হাগল হইয়া যাইত । " ২য় ব্যক্তি : "হে হে ... আমরা তো পাগলই, তাই না? কি কন ভাইরা ..." এমন সময় বাসে বেশ কয়েকজন যাত্রী উঠলেন । তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বেশ বয়স্ক একজন ভদ্রলোক । পরনে সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি । মাথার চুলগুলো একদম ধবধবে সাদা ।

একনজরে দেখে খুবই পরহেজগার ধরনের মনে হল। উনি ঠিক আমার সিটের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন । এত ভীড়ের মধ্যে এই রকম একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাবেন, আর আমাদের মত তরুণরা বসে বসে আরাম করে যাব! - আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না । সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বিনীতভাবে বললাম, "চাচা, প্লিজ আপনি আমার সিটে বসেন । " উনিতো প্রথমে খুব অবাক হলেন, তারপর উল্টো আমাকেই বসতে বলতে লাগলেন, "না বাবা, তুমি বসো ।

এই বেশ আছি । " কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা । শেষমেশ উনি বসতে রাজি হলেন আর আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। - বাবা, তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায় ? - জ্বী, খুলনায় । - তো কি করা হয় এখানে ? - জ্বী, পড়াশুনা করি ।

- ওহ...তা বাবা, কোথায় পড় তুমি ? - জ্বী, বুয়েটে । বুয়েটের নাম শুনতেই উনি বেশ খুশি হলেন । বোঝা গেল, হয়ত কোনো বিশেষ কারণেই উনার এই আনন্দ । আমার অনুমান মিথ্যা ছিল না । - বেশ বেশ ।

তা বাবা, কোন সাবজেক্টে পড়ো ? - জ্বী, কম্পিউটার সায়েন্সে । - আমার বড় ছেলেটাও বুয়েট থেকে পাশ । এখন আমেরিকায় আছে । - জ্বী, উনি কোন সাবজেক্টে পড়তেন? - মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- এ । এরপর প্রায় একনাগাড়ে উনি বলে চললেন উনার অনেক আশা-হতাশার কথা আর আমি শুধু শুনতে লাগলাম।

বুয়েট, মেডিক্যাল -এর ছাত্রছাত্রীদের কাছে আসলেই সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি - এ কথা আগেও বহুবার শুনেছি, তবে চাক্ষুস দেখার বা শোনার অভিজ্ঞতা হয়নি মোটেই । আজ হল । আমি শুনছিলাম আর ভাবছিলাম কি দিতে পারলাম এই দেশটাকে আর দেশের মানুষকে । শুধুই তো দিনরাত সেই ক্যারিয়ার ভাবনা । উনার সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজছে , "বাবা, তোমরাই আমাদের গর্ব ।

তোমরাই সব । তোমরাই পারো এই দেশটাকে বদলে দিতে ..." এসব ভাবতে ভাবতে আর শুনতে শুনতে কখন যে কাঁটাবনের কাছে এসে পড়েছি খেয়ালই করিনি । চাচার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে আর বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম বাস থেকে । শাহবাগ পর্যন্ত হেঁটেই আসলাম । পথে শুধু সেই কথাগুলোই বারবার ভাবছিলাম ।

আমাদের নিয়ে উনাদের এত আশা, আর আমরাই কি-না সুযোগ বুঝে বাসের ভাড়া ফাঁকি দিই । ছিঃ ...এত নিচে নেমে গেছি আমরা । নিজের উপর খুব রাগ লাগছিল আমার । রাতের বেলা শাহবাগে রিকশা পাওয়াই যে দায় হয়ে পড়েছে কে তা জানত । বিশেষ করে পলাশীর দিকে তো কেউ আসতেই চায় না ।

ভাড়া চাওয়া তো বহুদূরের কথা । যাই হোক, বহু কষ্টে একটা রিকশা পেলাম । কিন্তু মুশকিল হল, রিকশা চাপতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠল, "ভাই, তুমিও কি বুয়েট যাবে? আমাকে নেবে সাথে? আমি তিতুমীর হলে যাবো । " আমি কিছুটা ভয় পেলাম । ছিনতাইকারী টাইপের নয় তো ।

কিছুই বলা যায় না ... এর নাম ঢাকা শহর । অচেনা কারো বিশ্বাস নেই । যাই হোক, শেষমেশ ভাবলাম, নিশ্চয় আমার মত বুয়েটের স্টুডেন্ট কেউ হবে হয় তো । বিপদে পড়েছে । "ঠিক আছে , উঠে পড়ুন ।

" - বলতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি । ভয়ে ভয়ে কথা বলা শুরু করলাম । জানতে পারলাম, উনি সিভিল '০৪ । সবেমাত্র পাশ করে এখন চাকরির জন্য দরখাস্ত করছেন । পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো ।

৭-৮ টা জায়গায় সি.ভি ড্রপ করে এখন পর্যন্ত ১ জায়গা হতে কল পেয়েছেন । দেশের বর্তমান জব-মার্কেটের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বললেন, "আসলে বাইরে থেকে সিভিলের অবস্থা ভালো বললেও ভালো জব পাওয়া এখন বেশ কঠিন"। আমি সি.এস.ই জেনে বললেন সি.এস.ই-দের তো এখন খুব ভালো অবস্থা । তবে এখন থেকেই ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে বললেন । কথা বলতে বলতে আমাদের রিকশা এসে তিতুমীর হলের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল ।

আমি ভাড়া দিতে নাছোড়বান্দা ছিলাম । কিন্তু বড়ভাই হাত চেপে ধরলেন, বললেন, "আমি থাকতে তুমি কেন ভাড়া দেবে?" শুনে ভালো লাগল । সিনিয়ররা জুনিয়ররা একসাথে থাকলে সিনিয়র ভাইরাই সব স্পন্সর - আমরা এখনো এই ট্রেডিশন ধরে রাখতে পেরেছি দেখে ভালো লাগল । আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু পারলাম না ।

লেখাটা বেশি ভালো হয়নি । তবু চেষ্টা করলাম । সবাই ভালো থাকবেন । এই শুভকামনায় শেষ করছি ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।