আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Need-Want-Demand এর গোলক ধাঁধা ঃ বাংলাদেশে গ্যাস সংকট নাকি গ্যাসের বাজার সংকট?



এক প্রচন্ড শীতের রাত। এক হতদিরদ্র শ্রমিক পল্লীতে একটি অভুক্ত শিশু মায়ের শরীরের ওমেও থরথর করে কাঁপছে। একটু উত্তাপের আশায় নিভানো ঊননের দিকে তাকিয়ে শিশুটি মাকে প্রশ্ন করে। শিশুঃ মা! আজ ঊননে আগুন নাই কেন? মাঃ ঘরে কয়লা নেই তাই। শিশুঃ ঘরে কয়লা নাই কেন? মাঃ ঘরে কয়লা কেনার পয়সা নেই তাই।

শিশুঃ পয়সা নেই কেন? মাঃ তোমার বাবার কাজ নেই তাই। শিশুঃ বাবার কাজ নেই কেন? মাঃ কয়লা খনিতে কয়লার তোলা কাজ বন্ধ তাই। শিশুঃ খনিতে কয়লা তোলা বন্ধ কেন? মাঃ কয়লা তোলা বন্ধ কারণ কয়লা খনিতে কয়লা বেশি তোলা হয়ে গিয়েছে তাই। দুই আমার আজকের লেখাটির শিরনাম Need-Want-Demand এর গোলক ধাঁধা। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা শব্দত্রয়কে যত্রতত্র একই রকম অর্থ প্রায়সই ব্যববহান করি।

কিন্ত, অর্থনীতি কিংবা বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যাদের সাধারণ ধারণা রযেছে তারা জানেন Need-Want-Demand শব্দত্রয় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। Need হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের জন্য মৌলিক প্রয়োজন। যেমন ঃ আপনার ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। You need Food . উপরের অনুগল্পের শিশুটির শীত নিবারণের জন্য উত্তাপ প্রয়োজণ (Need) । Want হচ্ছে মানুষের ঐ মৌলিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য একাধিক বিকল্প হতে যে টি সে গ্রহণ করবে।

যেমন ঃ আপনার ক্ষুধা নিবারণের একাধিক বিকল্প রয়েছে। আপনি ভাত খেতে পারেন কিংবা আপনি রুটি খেতে পারেন অথবা আপনি বার্গার খেতে পারেন। You want Rice.উপরের অনুগল্পের শিশুটির শীত নীবারণের জন্য কয়লা প্রয়োজণ (Want) । Demand হচ্ছে Need ও Want এর সংমিশ্রণ যার সাথে ব্যক্তির ক্রয়ের সামর্থ্যের প্রশ্ন অত্যাবশ্যক ভাবে যুক্ত। যেমন ঃ আপনার যদি ক্ষুধা নিবারণের জন্য বার্গার খেতে ইচ্ছা করে এবং আপনার পকেটে যদি বার্গার ক্রয়ের মত অর্থ থাকে, তবেই আপনি দোকানে গিয়ে বলতে পারেন ,' আমার একটি বার্গার প্রয়োজন।

(Demand) .উপরের অনুগল্পের শিশু টির উত্তাপের জন্য কয়লা প্রয়োজন , কিন্তু তার পিতার কয়লা ক্রয়ের সামর্থ্য না থাকার কারণে সে কয়লা Demand করতে পারে না। পুজিবাদী মুনাফা কেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যববস্থায় সমগ্র উৎপাদন কর্ম পরিচালিত হয় Demand কে কেন্দ্র করে। সমাজিক প্রয়োজন ( Need ও Want ) এখানে নিতান্ত গৌণ বিষয়। অনুগল্পের শিশুটির মত লক্ষ-কোটি মানুষের শীত নিবারণে উত্তাপের জন্য কয়লার প্রয়োজন থাকলেও কয়লা খনিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হযে যায় কেননা এই সকল শীতার্ত মানুষের বাজারে এসে কয়লা Demand এ যোগ্যতা নেই। তিন বাংলাদেশে বর্তমানে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে।

আমাদের অনেক গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু , আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। এই প্রয়োজনে গ্যাস পাওয়া জাচ্ছেন , এই অজুহাতে অনৈতিক- অসম পিএস সি -র মাধ্যমে সমূদ্রবক্ষের গ্যাসসম্পদ আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তড়িঘড়ি করে। কিন্তু প্রথমেই দেশের গ্যাস সংকট কে Need-Want-Demand এর গোলক ধাঁধায় ফেলে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কে পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। ১৯৯৩ সাল হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত স্থল ভাগ ও সংলগ্ন এলাকার ২৩ ব্লকের মধ্যে ১২ ব্লকে পি এ সির আওতায় আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীর নিকট ইজারা দেওয়া হয (সূত্র ঃ বার্ষিক প্রতিবেদন ২০০৭ , পেট্রোবাংলা)।

চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ৮ থেকে ১৫ বছর সময় কাল অতিবাহিত হলেও ১২ টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ৫টি ব্লকে আন্তর্জাতিক তেল কোস্পানীর কর্মকান্ড পরিরক্ষিত হয়। শেভরণ -ব্লকনং১২,১৩ ও ১৪ , কেয়ার্ণ এনার্জী-ব্লক নং ১৫ এবং টাল্লো ব্লক নং - ৯। প্রশ্ন হচ্ছে অবশিষ্ট ৭ টি চুক্তিবদ্ধ ব্লকের অবস্থা কি? পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদন ২০০৭ কর্মকান্ডে চরম হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্লকগুলোতে তারা সম্ভাবণা হীন মনে করে? দীর্ঘ সময় তারা কতটুকু ভুতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিযেছে? এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদন ২০০৭ এ ইজারাকৃত ব্লকগুলোতে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীর কর্মকান্ডে চরম হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত ২ বছরে সে অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয় নি।

প্রশ্ন হচ্ছে হচ্ছে চরম গ্যাস সংকট কালে কেন এই নির্লিপ্ততা? আর বর্তমানের গ্যাস সংকট তো হঠাৎ করে অদ্ভুত কোন বিষয় নয়। প্রায় এক দশক পূর্বেই ৭% জাতীয় প্রবূদ্ধি এবং ১০% জ্বালানি ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি ধরে বর্তমান সময়ের দৈনিক চাহিদা হিসাব করা হযেছিল ৩৭০ মিলিয়ন ঘন ফুট। বিগত একদশকে স্লথ জাতীয় প্রবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে চাহিদা লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম দৈনিক ২১৮ মিলিয়ন ঘন ফুট আর তাই মিঠাতেও হিমশিম খাচ্ছি। আসুন নির্লিপ্ততার উত্তর খুজি খোদ আই ও সি গুলোর ওয়েব সাইটে। ( যদিও আমরা জানি আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুরো অস্বচ্ছ ।

কিন্তু তার থেকে কত বেশি অস্বচ্ছ এই আইওসিগুলো তার প্রমাণ তাদের ওয়েব সাইট। তাদের অস্ভচ্ছতাকাহিণি অন্য দিন লিখবার আগ্রহ রাখি। ) মে ২০০০ -এ কেয়ার্ণ এনার্জীর সাথে ব্লক-১০ (বৃহত্তর নোয়াখালি ও ভোলা) এর পেট্রোবাংরা তথা সরকারের পিএসসি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তি অনুসারে ব্লক -১০ এ ২৫০০ কিমি সিসমিক সার্ভে ও ৫ টি অনুসন্ধাণ কূপ খনন করার কথা। (সূত্রঃ কেয়ার্ণ নিউজ )।

৪ জুলাই ২০০৬ এ চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্লক-১০ এ সম্পর্কে তাঁদের ওয়েব সাইটে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিদ্যমান মন্তব্য : ''*These production sharing contracts (PSCs) were due to terminate on 4 July 2006 if no viable market existed for gas discovered in Bangladesh blocks. Although this date has passed, each party has agreed to amend work commitments in the PSCs. We have also agreed that a viable market exists in Bangladesh. These amendments now need to be formalised in writing. '' কেয়ার্ণ স্পষ্টই সততার সাথে বলে দিয়েছে বাংলাদেশের গ্যাসের নেই বাজার। যে সময় বাংলাদেশে গ্যাসের তীব্র সংকট বিদ্যমান সেই সময় বাংলাদেশের গ্যাসের বাজার নাই এ উক্তি করার অর্থ বাংলাদেশের গ্যাস ক্রয়ের সামর্থ্য নাই। পি এস সি এর শর্ত লঙ্ঘণ করে এবং .....Or More চাতৃর্যপূর্ণ শব্দদ্বয়ের সুবিধা গ্রহণ করে ডঃ তামিম আর ডঃ তৌফিক এলাহীর মত মুখোশধারী মানুষদের সহায়তায় ব্লক-১৬ হতে আগামীতে উৎপাদিত /প্রাপ্ত গ্যাস অধিক মূল্যে বাংলাদেশেরঅভ্যন্তরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রয়ের অনুমোদন লাভের মাধ্যমে খোদ সরকার কে স্বীকার করাতে বাধ্য করেছে যে , দেশে যতই গ্যাস সংকট থাক না কেন, গ্যাস ক্রয়ের তথা Demand এর যোগ্যতা নেই সরকারে বা রাষ্ট্রের নাই। ২০০০ সালে বিপুল সম্ভারণাময় ব্লক -৭ এর চুক্তি শেভরনের সাথে স্বাক্ষরিত হয়। কেয়ার্ণের মতই শেভরণও বাংলাদেশে গ্যাসের বাজার নেই অজুহাতে ২০০৮ পর্যন্ত ব্লক টিতে কোন কর্মকান্ড পরিচালনা করে নি।

ইতিমধ্যে চুক্তি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে জুলাই ২০০৮ এ চুক্তি নবায়ণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে শেভরণ সীমিত কর্মকান্ড শুরু করেছে অনেকটা 'দেখি কি হয় 'নীতিতে। '' Exploring Block 7 In 2008, Chevron expanded its stake in the production-sharing contract covering Block 7 to 88 percent. We operate the project, which lies in the southwest region of Bangladesh. In June 2008, Chevron reached an agreement with Petrobangla and the Bangladesh Energy Ministry to extend the evaluation of the Block 7 exploration prospect. Additional seismic work and one exploration well are required by 2011. চার সরকারের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে যারা ভাবছেন সমূদ্রবক্ষ হতে আই ও সি গুলো আগামী ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন শুরু করবে এবং সেই গ্যাস আমরা ক্রয় করে দেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবো, তারা এখনও এক ঘোরের মাঝে আছেন। পুজিবাদী মুনাফা কেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় বাজার সৃষ্টি ব্যতিত যে উৎপাদন কখন প্রত্যাশা করা যায় না, এটা অনুগল্পের দরিদ্র মা তার শীতার্ত শিশু টিকে বুঝাতে সক্ষম হলেও আমার মত কম জ্ঞানী 'জেগে ঘুমি থাকা দল' কে বুঝাতে সক্ষম কখনও সামর্থ হব না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।