আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খরচ করে সিজার করালাম, হল মেয়ে! (রিপোষ্ট)

প্রেম ছিল, আশা ছিল

১০ অক্টোবর ছিল আমার ছেলের জন্মদিন। এই লেখা তার জন্মদিন নিয়ে নয়। ঐ দিনে একই হাসপাতালে জন্ম নেয় আর একটি শিশু। যার পিতা সাদরে গ্রহণ করতে পারেনি নবজাতককে, কারণ সেটি ছিল কন্যা শিশু। ১১ অক্টোবর মাঝরাতে আমার স্ত্রী তীব্র ব্যাথা অনুভব করলে বিষয়টি নার্সদের জানাই কিন্তু আধা ঘন্টার মধ্যেও তাদের খবর না পেয়ে আবার গেলাম নার্স কেবিনে।

আমাকে দেখেই তারা মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু করল। বুঝলাম কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। পরে জানলাম নার্স ভুল করে পেইন কিলার দিয়েছে পাশের ৪০৪ কেবিনের আরেক প্রসুতিকে। সেই সুত্র ধরেই আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শুনলাম কন্যাশিশুর জন্ম নিয়ে তার পিতার ক্ষেদোক্তি- অনেক আশা করছিলাম ছেলে হবে, তাই খরচ করে সিজার করালাম, হল মেয়ে! পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কন্যাশিশুর জন্ম প্রায়শই অনাকাঙিক্ষত হয়। অতি প্রাচীন কাল থেকেই জন্মের পর কন্যাশিশুদের হত্যা করার কথা শোনা যায়।

এই ঘটনা এখনও বিদ্যমান, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে এর রূপ বদল হয়েছে মাত্র। প্রতিবেশী দেশ ভারতে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে খুব কম সময়ের মধ্যেই গর্ভ ধারণকৃত ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়। ফল স্বরূপ গর্ভপাত বেড়ে যায় মাত্রাতিরিক্তহারে এবং এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটে কন্যাশিশুদের বেলায়। বাংলাদেশেও মেডিনোভাতে এই ধরনের প্রযুক্তি আছে বলে শোনা যায়। তবে এই সমস্যা বাংলাদেশে এখনও প্রকট না হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় যথেষ্ট হারে বিদ্যমান ৷ জন্মলগ্ন থেকে বেশির ভাগ কন্যাশিশু অবহেলা বা উদাসীনতার মধ্যে বেড়ে ওঠে।

জীবনের শুরুতেই এই বৈষম্যে শুরু হয় তার নিজের পরিবার থেকেই ৷ পরে আস্তে আস্তে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তার বীজ৷ কন্যা শিশুর জন্মকে সাদরে গ্রহণ না করার পেছনে যে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো কাজ করে সেগুলো অনেকটা এরকম - - কন্যাশিশু পরিবারের শ্রমশক্তিতে কোনো যোগান দেয় না। সে অর্থ উপাজর্নকারী নয়। - অর্থ উপার্জনকারী নয় বলেই তার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা বিষয়ে ব্যয় করা অযৌক্তিক। - কন্যা শিশু হচেছ দায় - কারণ তার বিয়ের সময় বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ থেকে ২৪ শতাংশই হলো ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোর কিশোরী।

যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক (অর্থাৎ ৪৮ ভাগ) কন্যাশিশু। এই কন্যাশিশুরা সমাজ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া কতগুলো নিয়মের পাশাপাশি অবহেলা আর বঞ্চনা মাথায় নিয়েই বড় হয়ে উঠে। এতে একদিকে শিশুটির বিকাশ রুদ্ধ হয়, অন্যদিকে ব্যাহত হয় জাতির আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের প্রয়াস। ছেলে হলে ঘরে ঘরে আনন্দ, নিজ ধর্ম ও বিশ্বাস মতে আনন্দের প্রকাশ- আযান, উলুধ্বনি বা বিশেষ উৎসব ৷ আর কন্যাশিশু হলে বিমর্ষ বেদনাগ্রস্ত চেহারা পিতামাতা ও অনান্যদের৷ পরিবেশ হয়ে উঠে উৎসবহীন ৷ কোনভাবেই সে অনুভাবন করেনা এই সন্তানটি তার নিজের। যার জন্ম ছিল অনাকাঙ্খিত, সেই পিতামাতা কি পালন করছে কন্যার জন্মদিন? যার জন্ম দিতে পারেনি পরিবারের লোকজনকে আনন্দ তার জন্মদিন আর অন্যদিনের মধ্যে পার্থক্য কি! মাগো তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো জানিনা।

কেউ ভুলেও তোমাকে শুভ জন্মদিন বলেছে বা বলে কিনা তাও বলতে পারিনা। আমি একা চিৎকার করে এই সমাজের কানে পৌছাতে পারবোনা তোমার জন্মের শুভ বার্তাটি। দূর থেকে জানাই- শুভ জন্মদিন। পিতা-মাতা কেন ভুলে যায়, শিশু শিশুই- জন্মসুত্রে সে মানব সন্তান ৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।