আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো মন্দের ঈদ অনুষ্ঠান : নজর কেড়েছে লাইভ সঙ্গীতানুষ্ঠান

গভীর কিছু শেখার আছে ....

প্রতিবারের মতো বিটিভিসহ এবারো দেশের এক ডজন চ্যানেল ঈদে আয়োজন করেছিল পাঁচ থেকে সাত দিনব্যাপী ঈদ অনুষ্ঠানমালার। বিটিভি এ ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে ছিল। তারা ১০ দিনব্যাপী ঈদ অনুষ্ঠান প্রচার করে। তবে এসব অনুষ্ঠানে ভেতরে তেমন বৈচিত্র্য না থাকায় এবং বিজ্ঞাপনের ভারে দর্শকদের টিভি অনুষ্ঠান দেখতেই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছিল। সব চ্যানেলেরই সর্বাধিক ঈদ অনুষ্ঠান হিসেবে প্রচারিত হয়েছে এক পর্বের নাটক।

তবে কয়েকটি চ্যানেল আবার তিন-চার পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচার করে ঈদ অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রম আনতে চেয়েছে। যেমন একুশে টিভিতে ঈদের দিন রাত থেকে তিন পর্বের ধারাবাহিক নাটক নীলাঞ্জনা প্রচারিত হয়। একটি টেলিফিল্ম দৈর্ঘের নাটককে তিনটি পর্বে ভাগ করে প্রচারের সার্থকতা কোথায় তা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারলেও দর্শকদের কাছে তা বিরক্তিকরই ঠেকেছে! অনুরূপভাবে বিজ্ঞাপনের চাপে অনেক ঈদ অনুষ্ঠানই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান নির্মাতাকে না জানিয়েই কাটছাঁট করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন নির্মাতাকে দেয়া নির্দিষ্ট সময়েই তিনি তার অনুষ্ঠানটিকে আবদ্ধ রাখেন। এ ক্ষেত্রে সেই অনুষ্ঠানের ওপর নতুন করে কাঁচি চালানোর অর্থই হলো অনুষ্ঠানটি নষ্ট করে দেয়া।

ফলে বিজ্ঞাপনের জন্য যদি কোনো অনুষ্ঠানের মানের ক্ষতি হয় বা দর্শক সেই অনুষ্ঠানটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে তার দায়ভারও চ্যানেল কর্তৃপক্ষেরই ঘাড়ে এসে পড়বে। এর চেয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানের ফাঁকে এক বিজ্ঞাপন তিন-পাঁচবার না দেখিয়ে বরং বিজ্ঞাপনের রেট বাড়াতে পারেন। ফলে ২২ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে দর্শকদের আর ৪০ মিনিট বিজ্ঞাপন দেখতে হবে না। নাটকের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি উল্লেখ করার মতো, তা হলো গত কয়েক বছরের মতো এবারের ঈদ অনুষ্ঠানে অন্তত স্থূল কাহিনী সংবলিত টিভি নাটক কমে এসেছে। বরং জীবনধর্মী ও সিরিয়াস কমেডি নাটকই বেশি ছিল।

নাটকের পরেই উল্লেখ করা যেতে পারে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলোর কথা। তবে সংখ্যায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কম ছিল। বরাবরের মতো এবারো দর্শক প্রশসিংত হয়েছে বিটিভিতে প্রচারিত ঈদের ইত্যাদি। এছাড়া মাহী বি চৌধুরীর পদ্মা পাড়ের হাসি, আনজাম মাসুদের পরিবর্তন, খন্দকার ইসমাইলের ঈদের বাজনা বাজেরে, আড্ডা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উৎসব, ঈদ আনন্দমেলা দর্শকদের ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম যে বিষয়টি, যা না বললেই নয় তা হলো, এবার প্রায় অনেক চ্যানেলেই রাতে লাইভ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।

একুশে টিভির প্রতিবারের ঈদের বিশেষ ফনো লাইভ কনসার্র্টের জনপ্রিয়তাই হয়তো এর অন্যতম কারণ হতে পারে। সঙ্গীতানুষ্ঠানে দর্শকরা ফোনে আমন্ত্রিত শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন, তাদের কাছে প্রিয় গানটির জন্য রিকোয়েস্ট করতে পেরেছেন। আরটিভিতে পার্থ বড়–য়া, হায়দার হোসেন ও বাপ্পার অংশগ্রহণে অ্যাকুয়াস্টিক সন্ধ্যাকে বলা যেতে পারে ঈদের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এছাড়া একুশে টিভির ঈদের বিশেষ ফনো লাইভ কনসার্র্টে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে হৃদয় খান, ব্যান্ড গ্রুপ ব্ল্যাক, দলছুট, অবসকিউর, এলআরবি ও ব্যান্ড গ্রুপ মেটাল বেইজ। দেশটিভিতে ঈদের বিশেষ লাইভ কলের গানে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে আর্টসেল, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, মমতাজ, রিংকু, রন্টি ও রাজিব।

বিটিভিতে ঈদের দিন প্রচারিত হয় নাটক দি বাঘা টি স্টল। বৃন্দাবন দাসের রচনা ও শেখ রিয়াজ উদ্দিনের প্রযোজনায় নাটকে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, আরফান আহমেদ, লারা লোটাস প্রমুখ। বিটিভি যে চাইলে ভালো নাটক বানাতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে এ নাটকটি। বহুদিন পর বিটিভির নিজস্ব এ নাটকে ক্রেন ব্যবহার করা হয়। ফলে নাটকে তা প্রতিফলিত হয় এবং দর্শক নন্দিত হয়।

জানা গেছে, বিটিভির সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া অনুষ্ঠানও ছিল এ নাটকটি। তবে সেই পুরনো যুগের পারিশ্রমিক ও সম্মানীর উন্নতি না হলে এ ধরনের নাটক আবারো হবে কি না তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ এ নাটকের শিল্পী-কলাকুশলীরা অন্য চ্যানেলের নাটক করে যে পারিশ্রমিক পান, সেটির ৫ থেকে ১০ গুণ কম পারিশ্রমিক পেয়েছেন এ নাটক করে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে নজর দেয়াটা জরুরি। দেশটিভিতে ঈদের দিন প্রচারিত টেলিফিল্ম উপন্যাসের নাম অবয়বে।

সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা খুবই বাস্তবসম্মত বলে অনেকের কাছেই টেলিফিল্মটি ভালো লেগেছে। তবে নাটক রচয়িতারা একতরফাভাবে সাংবাদিকদের যে চিত্র তাদের নাটকে তুলে ধরেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত। উদাহরণ স্বরূপ, চ্যানেল ওয়ানে ঈদের চতুর্থ দিন রাতে প্রচারিত ইনসান ইমনের ভ্যাম্পায়ার অ্যান্ড মি নাটকে দেখানো হয়, একজন সাংবাদিক একটি বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে গেটে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন। এখানে নাট্যকার ও সংশ্লিষ্টরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন, একজন সাংবাদিক কখনই অন্তত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় থেকে রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়বে না। বাস্তবতা বিবর্জিত এসব নাটক কীভাবে চ্যানেলে প্রচারিত হয় বা চ্যানেলের প্রিভিউ কমিটিই বা কি প্রিভিউ করে তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আগে নাট্যকার আনিসুল হক বিনোদন সাংবাদিকদের নিয়ে নিতান্তই ফালতু ও বাস্তবতা বিবর্জিত ধারাবাহিক নাটক দৈনিক তোলপাড় লিখেছিলেন। পরে এটি নিয়ে বিনোদন সাংবাদিকদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠলেও থেমে নেই সাংবাদিকদের হেয় করার বিষয়টি। নাট্যকার, পরিচালক ও চ্যানেলের প্রিভিউ কমিটির কাছে অনুরোধ সাংবাদিকদের হেয় করে এমন বাস্তবতা বিবর্জিত নাটক নির্মাণ ও প্রচার থেকে বিরত থাকুন। নইলে নতুন প্রজন্ম মিসগাইড হবে এবং সাংবাদিকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হবে। নোমান রবিন গত ঈদের ধারাবাহিকতায় এবার নির্মাণ করেন তার সিটি বাসের সিকোয়েল সিটি বাস-২।

চ্যানেল ওয়ানে প্রচারিত এ নাটকটি এবারো দর্শদের বেশ আনন্দ দিয়েছে। তবে একই পরিচালকের মুড়ি খাইলে ঠোঙ্গা ফ্রি নাটকে কমেডি থাকলেও বউ আর শালিকে মুড়ি আর ঠোঙ্গার সঙ্গে তুলনার বিষয়টি অশ্লীল ঠেকেছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরো সাবধানী হবেন। এটিএন বাংলায় ঈদের দিন প্রচারিত হানিফ সংকেতের নাটক তোষামোদে খোশ আমোদে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। একই চ্যানেল প্রচারিত সালাউদ্দিন লাভলুর টেলিফিল্ম পাত্রী চাই কমেডিধর্মী হলেও পরিচালক তার কাজে কোনো ব্যতিক্রমের ছাপ আনতে পারছেন না।

বরং দিন কে দিন তার সব কাজই একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া একই চ্যানেলে ঈদের তৃতীয় দিন প্রচারিত ব্যতিক্রমী নাটক টক শো প্রশংসার দাবি রাখবে। প্রচলিত টক শোতে এলে কি ঘটে সেটিই এ নাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিচালক মাহফুজ আহমেদ নাটকটি পরিচালনায় মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। চ্যানেল আইতে শাইখ সিরাজের ফার্মার্স গেম শো কৃষকের ঈদ আনন্দ ও বাংলাভিশনে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কৃষকের আনন্দমেলা প্রচারিত হয়।

অনুষ্ঠান দুটির জন্য চ্যানেল ও নির্মাতারা ধন্যবাদ পেতে পারেন। চ্যানেল আইতে ঈদের দিন ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের ছবি গঙ্গা যাত্রার। সিনেমাটিতে অনবদ্য অভিনয় করেছেন ফেরদৌস ও পপি। তবে পঞ্চম দিন প্রচারিত টেলিফিল্ম মোল্লা গজনফর আলী নিতান্তই হাস্যকর ঠেকেছে। নাটকে চিত্রনায়িকা রোজিনার অভিনয় ও পরিচালনা দুটোই ভালো হয়নি।

বাংলাভিশনে ঈদের দ্বিতীয় দিন মেজবাউর রহমান সুমনের তারপরও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে টেলিফিল্মটিতে জয়া আহসানের অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছে। তবে একই চ্যানেলে ঈদের দিন প্রচারিত ইফতেখার আহমেদ ফাহমির এ জার্নি বাই লাভ নাটকটির কাহিনীর সঙ্গে বলিউডের জাব উই মেট ছবির মিল দেখা গেছে। অথচ নাটকের কোথাও দেখা যায়নি, বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত কথাটি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও পরিচালক নিজে এ বিষয়ে সচেষ্ট হবেন বলে আশা করি। এছাড়া আরো যেসব নাটক দর্শকদের নজর কেড়েছে সেগুলো হলো ঘোর, যখন বৃষ্টি নামলো, আইসক্রিম, এ জার্নি বাই বোট, ইজ ইকুয়াল টু, দূরের মেঘ, ম্যারাথন, উইল, আমার বউ দারোগা, ফোন বালক ফোন বালিকা, লাল গোলাপ, ফটোকপি, অশ্রু নয়ন তারা, নিম্নচাপ, ভ্যানিটি ব্যাগ, তিনি বুঝলেন এ প্রেম নয়, প্রাইভেট রিকশা, ভাইরাস, অসুখ, অনুসন্ধান, অপরাহ্ণ, পঞ্চমুখ, বরিশাল বনাম নোয়াখালী, সম্পত্তি, মনিকার প্রস্তাব, ছেলে দেখা, হেলিকপ্টার, নীতুর ঘরে ফেরা, হ-য-ব-র-ল, নাটাই, এসএমএস, আকাশ কুসুম, মেড ইন ইতালি, একটি ডায়েরি ও কিছু প্রশ্ন, নির্বাসনে, ভাদু পাগলের বিয়ে, কুসুমের ছবি প্রভৃতি।

দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.