আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১২ই অক্টোবর: কলম্বাস ডে, যেভাবে আমেরিকা আবিষ্কৃত হল

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
১৪৯২ সাল। সময়টা ক্যাথলিকদের জন্য অত্যন্ত শুভ। গ্রানাডা বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা তারা তখন স্পেনে। রানী ইসাবেলা এবং রাজা ফার্ডিনান্ডের নেতৃত্বে ক্যাথলিকরা অবশেষে পরাভূত করতে পেরেছে মুসলিমদের। মুসলিমদের যে অযোগ্য নেতৃত্ব গ্রানাডাতে টিম টিম করে জ্বলছিল, তা সম্পূর্ন নির্বাপিত হয়ে স্পেনে আলোকিত হয়েছে ক্যাথলিকদের বিজয় মশাল।

এই শুভ ক্ষনে একজন ক্যাথলিক নাবিক কলম্বাস দেখা করতে চাইলেন রানী ইসাবেলার সাথে। রানীর সাথে কয়েক বছর আগেও তিনি দেখা করেছিলেন। কিন্তু সেবার রানীকে রাজী করাতে পারেন নি। কিন্তু এখনকার কথা তো আলাদা। এখন তো আমরা বিজয়ী।

এখন নিশ্চয়ই রানী রাজী হবেন। রানী সত্যিই রাজী হলেন কলম্বাসের কথায়। কলম্বাস তাকে আশা দিলেন পশ্চিমের নূতন গতিপথ দিয়ে ভারত আবিষ্কার করতে পারলে প্রচুর সম্পদ পৌছে যাবে রানীর কাছে। পশ্চিমের এ পথ হবে পূবের জ্ঞাত পথের চেয়ে সহজতর। এতে করে ক্যাথলিজম আরো কয়েক গুন বেশী প্রসারিত হবে।

রানী যেন এ যাত্রায় সম্মতি দেন। তার যাত্রা পথের খরচ বহন করেন। রানীর পৃষ্ঠপোষকতার যে বড়ই প্রয়োজন। রানী রাজি হলেন জাহাজের খরচ দিতে। প্রস্তুতি শেষ হল সান্তা মারিয়া, পিন্টা ও নিনার এবং সাথে সাথে সহযাত্রী ৮৭ জন নাবিকের।

শুরু হল তাদের যাত্রা। আটলান্টিকের অসীম জলরাশি তাদের স্বাগত জানাল। কিন্তু হায়। যাত্রাপথের প্রতিকূলতা নাবিকদের সম্পূর্ন হতাশ করে দেয়। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি।

কোথাও স্থলভাগের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কলম্বাস দুটো লগ বুক রাখতেন। গুপ্ত লগবুকে সত্যিকারের দূরত্ব লিপিবদ্ধ করতেন। আর প্রকাশ্য লগবুকে অনেক কম দূরত্ব দেখানো হত। কিন্তু এভাবে করে নাবিকদের খুব বেশী দিন ফাকি দেয়া গেল না।

১০শই অক্টোবর নাবিকেরা বিদ্রোহ করে বসল। কলম্বাস বিদ্রোহী নাবিকদের কথা দিলেন দুই দিনের মধ্যে ডাংগা দেখা না গেলে তিনি ফিরে যাবেন। অক্টোবরের ১১ তারিখ। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আগের চেয়েও আরো বেশী পানি, চারিদিকে পানি, শুধু পানি।

হঠাৎ একজন নাবিক দেখল পানিতে গাছের ডাল ভেসে আসছে। ডালে একদম সরস বেরী। ডাংগা!! খুব কাছে কোথাও রয়েছে ডাংগা!! তাদের হতাশ মনে আবারও জেগে উঠল আশা। কলম্বাস ঘোষনা দিলেন যে প্রথমে ডাংগা দেখবে, সেই লাভ করবে মূল্যবান উপহার সামগ্রী। সবাই অধীর হয়ে আছে ডাংগার জন্যে।

অক্টোবরের ১২ তারিখ। শুক্রবার ভোর দুইটা। রডরিগোয়েজ নামের নাবিকটি প্রথম ডাংগা দেখেন। কলম্বাস তার দলবল নিয়ে সেখানে অবতরন করে দ্বীপটির নামকরন করেন সান সালভাডোর দ্বীপ। এটি আজকের বাহামা দ্বীপপুন্জ্ঞের একটি।

কলম্বাস ভাবলেন তিনি ভারতের কোথাও অবতরন করেছেন। কিন্তু এই ভারতীয়দের গায়ের রং যেন আলাদা - লাল বর্নের। তাই এদের ডাকলেন রেড ইন্ডিয়ানস। আমেরিকার আদিমতম অধিবাসীরা এভাবেই রেড ইন্ডিয়ান নামটি পেল। দ্বীপের অধিবাসীরা নাবিকদের বেশ সম্মান জানালেন।

কলম্বাস তার ডায়েরীতে লিখেছিলেন, "দ্বীপের অধিবাসীদের কোন ধর্ম নেই বলে মনে হচ্ছে, তাই তাদের খুব সহজে খ্রীষ্টান করা যাবে। আমি এখান থেকে ছয়জনকে নিয়ে যেতে চাই। " কলম্বাস যখন পৌছুলেন স্পেনে তার দলবল, রেড ইন্ডিয়ান এবং সেখান থেকে নেয়া দ্রব্যাদি নিয়ে, ইসবেলা এবং ফার্ডিনান্ড তাদের আনন্দ চিত্তে বরন করলেন। এভাবে আবিষ্কৃত হল পশ্চিমের আরেকটি মহাদেশ, যোগসূত্র স্থাপিত হল ইউরোপের সাথে। দুটি ভুলের কারনেই কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।

এক, তিনি ভেবেছিলেন পশ্চিম পথে ভারতের দূরত্বে পূর্ব পথে ভারতের দূরত্বের চেয়ে কম। দ্বিতীয়ত: তিনি ভাবতে পারেন নি পশ্চিমে আটলান্টিকের পরে আরেকটি মহাসাগর অপেক্ষা করছে। প্যাসিফিক পাড়ি দিয়ে ভারতে যেতে হবে। তাই তিনি যার দূরত্ব ৩০০০ মাইল ভেবেছিলেন, তা আসলে ১০০০০ মাইল। ইন্ডিয়ানদের উদ্দেশ্যে দেয়া কলম্বাসের বক্তিতার অংশ: "ইয়োর হাইনেস, যারা স্ক্রীশ্চানিজমকে ভালবাসেন, এবং তাকে বিস্তৃত দেখতে চান, যারা মোহাম্মদীয় বিশ্বাস এবং মূর্তিপূজার শত্রু, তারা আমাকে পাঠিয়েছেন ভারতের এই প্রান্তে, যাতে করে আমাদের পবিত্র বিশ্বাসে অধিবাসীরা ধর্মান্তরিত হতে পারে।

আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যাতে আমি পূবে না যাই, যা প্রচলিত এবং জ্ঞাত একটি পথ। আমি যাতে পশ্চিম ধরে এগোই, যা আজ পর্যন্ত হয়ে রয়েছে অজানা, যে পথে আমার আগে কেউ ভ্রমন করেনি। " কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন ১২ই অক্টোবর। এই দিনটিকে প্রথম স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট। যা আমেরিকাতে কলম্বাস ডে নামে পরিচিত।

এই দিনটি নিয়ে অবশ্য বিতর্কও উঠেছে। অনেকে দাবী করেছেন এরিক লীফ নামে অন্য একজন সত্যিকারের আবিষ্কারক। যাক, সে বিতর্কে আজ না হয় নাই গেলাম। বইয়ের লিংক: Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।