আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি ব্লগঃ ইনচ'ন ট্যুর

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!

গত ১৭ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর কোরিয়ার পর্যটন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইনহা এবং ইনচ'ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইনচ'ন ট্যুরের আয়োজন করা হলো। আমার কাছে এটা ঈদের একটা ভাল উপহার মনে হলো, যদিও রোযা রেখে ক্লান্ত হয়ে যাবার একটা ভয় ছিল। তবুও ঠেকায় কে? বিদেশ-বিভুঁইয়ে একটি শহর ফ্রী ফ্রী ঘুরে বেড়ানোর আনন্দও তো কম নয়!! দুটো বাস মিলে প্রায় ১০০ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ১৭ তারিখ সকাল নয়টায় শুরু হলো আমাদের ভ্রমণ, উদ্দেশ্য ইনচ'ন পোর্ট, তার আশেপাশে পর্যটন জায়গাগুলো ঘুরে দেখা, পাহাড়ে চড়া, সমুদ্র ভ্রমণ, রাতে হোটেল যাপন, পরদিন ইনচ'ন গ্লোবাল ফেয়ার এন্ড ফ্যাস্টিভাল ঘুরে দেখা। প্রথমে বাস এসে থামল ইনচ'ন পোর্টের ভিতরে, এখানে লকগেটের বর্ণনা দেয়া হলো, মানে কি করে একটি জাহাজকে সমুদ্র থেকে বন্দরের ভিতরে নিয়ে আসা হয় স্রোত এবং ভিতরে-বাহিরে পানির লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। ভিতরে পানির লেভেল বেশী এবং স্রোতহীন, যখন একটি গেট খুলে দেয়া হয়, পানি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দু'পাশে লেভেল সমান হয়ে যায়, বাইরের জাহাজটি ভিতরে ঢুকে গেলে আবার গেট লক।

ভিতরের পানির লেভেল পুনরায় বেড়ে যায়। জাহাজ বের হবার সময় শুধু গেট খুলে দেয়া হয়, জাহাজ উঁচু লেভেল থেকে নীচের লেভেলে আস্তে নেমে যায়। এটার ছবি দেয়া গেল না, যেহেতু চলমান পদ্ধতি। এরপর যাওয়া হলো পাশে পার্কে, দেয়ালের সাজ-সজ্জা। একটু পরে আমরা এ পাহাড়ে চড়বো, বাঁ পাশে কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাড়ির মডেল।

গ্রামীণ জিনিসপত্র, আগে ভাবতাম কুলা, কুয়া, ঢোল বুঝি শুধু বাংলাদেশেই আছে। কোরিয়ায় আসার পর ভুল ভাঙ্গলো, এদের ঐতিহ্যের মধ্যেও এ জিনিসগুলো সমানভাবে উপস্থিত। লাল-মরিচ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সব তরকারীতে দেয়া এদের খুবই প্রিয়। মোটামুটি সব গৃহস্থ কোরিয়ানরাই মরিচ শুকানোর এ কাজটি করে, আমার বাড়িওয়ালাকেও দেখেছি, স্থানীয় পথে-ঘাটে চলার পথের পাশে প্রায়ই এ চিত্র দেখা যায়। শুরু হলো পাহাড়ে চড়া, এক সিঁড়ি দিয়ে অর্ধেক চড়ার পরে এ রাস্তা, সামনে দ্বিতীয় সিঁড়ি।

এ রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের চারপাশ ঘুরে আসা যায়, এটা অবশ্য সেদিন জানা হয়নি, এরপর আরেকদিন রাস্তা ভুল করে আবিষ্কার করেছি। সে কাহিনী নাহয় অন্যদিন বয়ান করা যাবে। দ্বিতীয় সিঁড়িতে, এ কূল- ও কূল কোন কূল নাহিরে!!!! উপর-নীচে সিঁড়ির কোন প্রান্তই দেখা যাচ্ছে না!!! অবশেষে চূড়ায় উঠলাম, ভীষণ কাহিল, হাঁটু ব্যাথা। একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। দেখি এখানে বেশ কিছু ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি, বুড়োরা ব্যায়াম করছে!! এরপর অবজারভেটরী টাওয়ারে চড়ে আশপাশের বন্দরের অনেকখানি দেখা হলো, সমুদ্র দেখা হলো, দূরে তৈরীরত ২২ কিঃমি দীর্ঘ ইনচ'ন ব্রীজ দেখা হলো, যদিও অত দূরের ছবি ক্যামেরায় ধরা গেল না।

দূরে সমুদ্রের বুকের পাহাড়ি দ্বীপগুলোও দেখা হলো। এই ছোট্ট বাবুগুলো আমাদের আগেই পাহাড়ে উঠে গেল, আর চোখের পলকেই নেমে গেল!!! এরপর দুপুরে কোরিয়ান খাবার খেতে দেয়া হলো। আমাদের দেখেই শান্তি, চেখে নয়। তারপর তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা হলে সবাই মিলে। মেয়েদের পোশাকের নাম 'আহাম্বো' বা 'হাম্বো'।

পোশাক পরে তাদের প্রিয় খাবার 'ত্বক্‌' (রাইস কেক) বানানো হলো। ওই পিটাপিটির কাজ আমাকে বেশ কয়েকবার করতে হয়েছে, যেহেতু একমাত্র আমার চেহারা আর পোশাকই ছিল দক্ষিণ এশীয়, বাকীদের কাছাকছি চাইনীজ চেহারা। সাংবাদিকরা একের পর এক ক্লিক করছে দৈনিকে দেবার জন্য, আর আমারতো রোযা রেখে দশাসই অবস্থা, একটু আগে আবার পাহাড়ে উঠেছিলাম। পোশাকটা নিজেও একটু ট্রাই দিলাম এবার এলাম সমুদ্রের কাছে, আমাদের পতেঙ্গার মতো। জোয়ারের টাইম, তাই লেভেল বেশী, নীচে সিঁড়ির অনেকগুলো ধাপ দেখা যাচ্ছিল না।

পর্যটন জাহাজ, এটাতে করে ব্রীজের কাছ পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সমুদ্র ভ্রমণ হলো। পাশাপাশি জাহাজের নীচতলায় বিভিন্ন দেশের নাচ-গানের অনুষ্ঠানও চলছিল। অনেকক্ষণ ক্যামেরা ধরে রাখার পর আলবাট্রস বাবাজীরা দয়া করে ফ্রেমে ধরা দিলেন। সমুদ্রের মাঝে পাহাড়ী দ্বীপ। আরেকবার ওখানটায় যাবার প্ল্যান আছে।

তারপর হোটেলে ফিরে ব্যুফে। ইফতারের কাছাকাছি সময়ে হওয়াতে ভাল হলো, এবার পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া। তবে তার আগে ঐতিহ্যবাহী ঢোল-বাজনা শুনে কান ঝালাপালা। আমাদের চেয়েও তাদের ঢোলের বাজনার ঐতিহ্য বেশ কড়া!! রাতে হোটেলের চারপাশ ঘুরে দেখা, পিছনেই চায়না টাউন। চায়না টাউন গেট।

এরপর হোটেলে ফিরে ঘুম, আবার ভোররাতে উঠতে হবে। ফাইভ স্টার হোটেলে বিনা-খরচায় এক রাতযাপন। সকালের নাস্তায় আবারো ব্যুফে। এবং যথারীতি মিস। তারপর আমাদের যাত্রা শুরু হলো গ্লোবাল ফেয়ার এন্ড ফ্যাস্টিভালের উদ্দেশ্যে.........।

এতোক্ষণে নিশ্চয়ই টায়ার্ড হয়ে গেছেন। অতএব, ওই পর্ব আরেকদিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।