আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমে-বিভ্রমে ভ্রমণ ১

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

"ভেতো বাঙালি" বলে যে একটা নেতিবাচক বা মাঝে মাঝে অস্তিবাচক বিশেষণ আছে, সেটা আমার বেলায় খুব খাটে। সারাজীবন নিজস্ব পরিচিত গণ্ডিতেই আমি স্বচ্ছন্দ, বাবার চাকরির সুবাদে মাঝে মাঝেই ঢাকার বাইরে জীবন কাটাতে হলেও, আমার খুব বেশি অসুবিধা হত না। সবচেয়ে বেশি থাকা হয়েছে এই ঢাকাতেই, তারপরে বগুড়া বছরতিনেক, যশোরেও তেমন। আর টুকটাক গুটিকয় জেলায় স্বল্পসময় থাকার বাইরে আমার 'হোমলি' পরিবেশের বাইরে থাকা হয়নি বললেই চলে। এছাড়া বাইরে থাকতে হলো স্কুলজীবনের পরের অর্ধেক, ঝিনাইদহে।

ওটুকুও মোটামুটি ঘরের মতোই পরিচিত হয়ে গেছিলো, যেমন হয় টানা ছয়বছর একটা নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে থাকলে। আর ভেতো বাঙালি বলেই আমি খুব অলস, 'পিপু' বলে যদি পিঠ পুড়ছে বুঝানো যায়, তাহলে আমি বেশি শব্দ করতেও নারাজ! এবারে সেটার একটু ব্যতিক্রম হলো। দেশের বাইরে বের হলাম ছয়দিনের জন্য। মজার ব্যাপার, এখনও আমি দেশের বাইরেই! সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে ফ্রি ইন্টারনেট পেয়ে টাইপ করছি!! (জীবনে এমন সুযোগ পাই নাই, একটা বাইটও ফ্রি দেখি নাই। এ সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না! ) সস্তা জিনিশের সমস্যা থাকে, শুনেছি তিন অবস্থা তার।

এখানে ইন্টারনেটের জন্য প্রচুর কম্পু লাগিয়ে রেখেছে, কিন্তু আপ্ত বাক্য সমর্থন করেই ঝামেলা লেগেছে। ফ্রি, পনেরো মিনিট পরপর লগ আউট হয়ে যায়। তার উপরে বাংলা সেটিং নাই। ভাগ্যিস সামুতে সব ঠিকঠাক, তাই টাইপ করতে পারছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যদিও পা ব্যথা হয়ে আসছে খুব! একটু পরপর লেখা সেইভ করছি কারণ পনেরো মিনিট পরেই কুট করে কেটে যাবে! তবে এত অভিযোগ করা ঠিক না, এই যে পাচ্ছি এটাই অনেক! সিঙ্গাপুরের এই এয়ারপোর্টের নাম চাঙ্গি দেখে শুরুতে একটা চিপা হাসি পেয়েছিল।

বাংলায় কাছাকাছি একটা শব্দ আছে, "একেবারে চাঙ্গে তুলে দিবো"। সিঙ্গাপুরের ভেতরে ঢুকে আমি নিজেও চাঙ্গে উঠে গেছি। একটা শহর কীভাবে একটা দেশ হয়, আর সেটাকে কীভাবে সাজাতে হয় সেটা দেখে রীতিমত মুগ্ধ হলাম। তিন দিনের ভ্রমণে মুগ্ধতা কাটেনি। তবে ধীরে ধীরে বেড়েছে দুঃখবোধ।

ঢাকা বা পুরো বাংলাদেশ কবে এমন সবুজ, সুন্দর, একইসাথে উন্নত হবে কে জানে! আপাতত চার ঘন্টার ট্রানজিট। একটা বুথে এতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কঠিন। মা এবং বোন এয়ারপোর্টের ভেতরই টুকটাক কেনাকাটা সারছে। সাথে বাবা ঘুরছে, আর আমি ফাঁকি মেরে এখানে। চারপাশে আরো অনেকগুলো বুথেও মানুষ, নানারঙের, নানা পোশাকের।

সারাজীবন কালো আর "উজ্জ্বল শ্যামলা" মানুষ দেখে বড়ো হয়েছি। এখানে নানারকম চামড়া আর উচ্চতা নিয়ে বিষম বিপদে পড়ে গেলাম। কাউকে চেনা তো দূরে থাক, কে কোথাকার সেটা আন্দাজ করাও অনেকটা অসম্ভব আমার পক্ষে। এরকমই দেখছি গত ছয়দিনের ঘোরাঘুরিতে। তারপরে বুঝলাম এভাবে মানুষ বিচার করাটা কতটা বেহুদা পরিশ্রম।

তার চেয়ে আমি মানুষের মুখ দেখি। লালচে, হলদে, কালচে, (নীলচেও মাঝে মাঝে)। মুখের মাঝে মাঝে যে ভাঁজগুলো, সেগুলোতে আটকে যাই। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমাদের ভেতো মানুষের সাথে এদের খুব বেশি পার্থক্য নাই। সবারই হাসি, বিরক্তি, রাগ, ক্লান্তির রঙটা এক।

মুখের ভাষাও এত বিচিত্র, তারপরেও বুঝে যাই পাশের মানুষটা আসলে একাধিক দিন ধরে ফ্লাই করছে, জামাকাপড় কুঁচকানো, প্লেনের ঘুম। এখন নেট-এ হয়তো জরুরি কাজ সেরে নিচ্ছে। কেউ কেউ নিচু স্বরে কথা বলছে, হয়তো বাসায় বা অফিসের বসের সাথে। বাসার কথায় চোখে ভেসে উঠছে নিজের ঘর। ঢাকা।

মাত্র ছয়দিন ঘুরেই আমি পানি থেকে তুলে আনা মাছের মত হয়ে গেছি। ধুলা আর ধোঁয়া নাই এখানে, এটাই মর্মের পীড়া হয়ে গেছে। হর্ন আর শোরগোলও কম, সবাই ভদ্র অমায়িক এবং মার্জিত- এটা দেখতেও ভালো লাগছে না। এখন দরকার তীব্র জীবন ভরপুর হাউকাউ, বাসের প্যাঁ-পোঁ, মানুষে মানুষের বিশ্রি ধাক্কাধাক্কি। আর দরকার নিজের ঘরের ভেতরে বিছানাটুকু।

বেশি কিছু চাইবার অবসর যেন হারিয়েই গেছে। দেশে ফিরে ব্যস্ততা আঁকড়ে ধরবে তবুও এমনই ভালো লাগে। [[লেখা এলোমেলো আর হুটহাটের কারণ আমি নই, এই চাঙ্গি এয়ারপোর্টের বেরসিক লগআউট আর এনাউন্সমেন্ট! ]] ** পর্ব দুই লেখা হবে কি না ঠিক শিওর না। না লেখা হলে নিজ গুণে সবাই ক্ষমা করিবেন। *** - অনীক আন্দালিব ২৯.৯.৯


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।