আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাত পাখির ডাক............সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...

১/ আমার ঠাকুমা এক বৃষ্টিডধোয়া আশ্বিনের সকালে পুজোর ঘরে বসেছিলেন বেলেপাথরে গড়া রাধামাধব মূর্তির সামনে হঠাৎ জবা নামে এক কিশোরী আর তার খেলার সাথী নীলোফার ঢুকে পড়ল সেই ঘরে, দুজনেরই বয়েস এগারো দুজনেই ডুরে শাড়ি পড়া, মাথায় একই রকম বিনুনি ঠাকুমার মুখের হাসি মুছে গিয়ে ফুটে উঠল ত্রাস জবাকে দেখলেন না, নীলফারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন আরে, কী সর্বনাশ, তুই এ ঘরে ঢুকে এলি, গেল, গেল, সব অনাছিষ্টি, অপবিত্র হয়ে গেল, দূর হ! দূর হ ছেমরি! জবা হতবাক! লজ্জায়, অপমানে পাঁশুটে হয়ে গেল নীলফারের মুখ সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে সেই সময় জানলা দিয়ে লাফিয়ে নেমে এল ঠাকুমার পোষা বেড়ালটা তার দু’পায়ে কাদা মাখা......... ঠাকুমা জেনে গেলেন না, তাঁরই জন্য একদিন এই দেশটা ভাগ হবে লক্ষ লক্ষ পরিবার তছনছ হয়ে যাবে, ধুলোয় গড়াবে অসংখ্য মানুষের লাশ ঠাকুমা জেনে গেলেন না, তিনি নিলোফারকে দূর হ বলেছিলেন হয়তো ক্রোধ বা ঘেন্নায় নয় খানিকটা স্নেহমিশ্রিত ভৎসনায় খানিকটা রক্তবাহিত সংস্কারে তার ফলেই সে কত দূরে চলে যাবে, তেপান্তরেরও ওপাশে জবা ও নীলোফারের সন্তান-সন্ততিদের কখনও দেখা হবেনা বেলে পাথরের মূর্তিদুটো আর বেড়াল্টা, তারাও কিছু বুঝল না নিঃশব্দে নিশ্চিনহ হয়ে গেল একদিন আমার অতি দয়াবতী, মহিমাময়ী ঠাকুমা শীতকালে কত কম্বল বিলি করতেন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে গরিব- দুঃখীদের তবু এতবড় সর্বনাশ হয়ে গেল ঠাকুরঘরের জন্য?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।