আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

UIU স্মৃতিচারণ ও কয়েকটি আক্ষেপ

ও রে যাব না আজ ঘরে রে ভাই, যাব না আজ ঘরে । ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেবরে লুট ক'রে- যাব না আর ঘরে। শাখামৃগ অধম একটি প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র, কিন্তু ব্লগে অনেক প্রাইভেট ভার্সিটি বিদ্বেষী মেধাবী স্টুডেন্ট থাকায় নিজের ভার্সিটি সম্পর্কে কখনও লেখা হয়ে উঠে না। কারন নিজের ভার্সিটি সম্পর্কে আজে বাজে মন্তব্য সবার মত আমিও কাম্য করি না। তবুও আজ লিখবো, UIU বা ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে... ধানমন্ডিতে যত গুলো প্রাইভেট ভার্সিটি আছে তাদের ভেতর পড়াশুনার মান সবচেয়ে ভাল UIU-র।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভার্সিটি সুনাম অর্জন করেছে, তার পেছনের একটাই কারন - এই ভার্সিটির পড়ালেখার মান। উন্নত ফ্যাকাল্টিও এর কারন। এই ভার্সিটিতে আমি মাত্র একটি সেমিস্টার কমপ্লিট করেছিলাম। স্প্রিং সেমিস্টারে আমি ইউআইইউ-তে ভর্তি হয়েছিলাম, HSC তে ৫ না পাওয়ায় পাবলিকের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, আমার ফ্যামিলি আহামরি কোন বড়লোক না, অনেক কষ্টে ৫/৬ লাখ টাকা ম্যানেজ করে আমাকে প্রাইভেটে ভর্তি করিয়েছিল। বিবিএ করতে প্রথম চয়েজ ছিল ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, দ্বিতীয় ছিল ইউআইইউ।

কারন ইস্ট ওয়েস্টে বিবিএর খরচ ছিল ৪,৮১,০০০ যেটা ইউআইইউ-র খেকেও কম ছিল। কিন্তু প্রতিভাশুন্য হলে যা হয় আর কি, কোন পড়াশুনা না করেই ইস্ট ওয়েস্টে পরীক্ষা দিলাম এবং যথারীতি টিকলাম না, UIU তে টিকে গিয়েছিলাম কারন ওদের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্ন খুব সোজা করে। যাই হোক, সাত পাচ না ভেবে ভর্তি হয়ে গেলাম। বিবিএ-এর ক্লাস হত ধানমন্ডি ২৭ এর বিবিএ ক্যাম্পাসে, কিন্তু এই ক্যাম্পাস থেকে ১৫ নম্বরের মেইন ক্যাম্পাস অনেক সুন্দর। আমার বাসা খিলগাঁও-তে, খিলগাঁও থেকে ধানমন্ডি অনেক দূর, কিন্তু ভর্তি হবার সময় এটা মাথায় ছিল না ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিনই এর সুফল পেলাম, প্রথম ক্লাসেই ১৫ মিনিট দেরী করে ক্লাসে ঢুকলাম।

ঢুকে একদম সামনের রো তে বসলাম, অবাক হয়ে সুসজ্জিত প্রজেক্টরওয়ালা ঝকঝকে ক্লাসটা দেখলাম কিছুক্ষন, যিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন সেই স্যার সেইরকম স্মার্ট ছিলেন, তিনি আমার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট স্যার, সব স্যারদের লেকচার বোঝানোর ক্ষমতা সমান থাকে না, কিন্তু সেই স্যারের মাঝে এই ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশী ছিল। যাই হোক, ইউআইইউ-র ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা খুবই ভাল ও আন্তরিক ছিল। সিড়িতে ও ক্যান্টিনে আড্ডাটা ভালই জমতো, যদিও ক্লাসমেটদের অনেকেই সেইরকম ভাব নিত, কথাও তেমন বলত না, মোটকথা তেমন মিশুক ছিল না - এর কারন জানি না আমরা ৫ জনের একটা গ্রুপ ছিলাম ভার্সিটিতে, আমি বাদে ৪ জনের সবাই-ই ডাবল জিপিএ ৫ এর অধিকারি ছিল। দিন যেতে লাগলো, ক্লাসে স্যার/ম্যাডামরা সেইরকম প্রেসার দিতে থাকল, কুইজ গুলোয় ১০ এ ৭ পেলেই ব্যপক খুশি হয়ে যেতাম, তখনও বুঝতাম না এই মার্ক ১০০-র হিসাবে ৭০ - মানে সি গ্রেড। প্রথম মিডের কথা, অনেক পড়াশুনা করে গেলাম পরীক্ষা দিতে, কোশ্চেন পেপারের ইংলিশ কঠিন ছিল, কিছু শব্দের বাংলা মিনিং-ই জানতাম না।

অথচ এইগুলোর উত্তর আমার জানা ছিল (পরে বুঝেছি) হুম, আমি জানি আমি গবেট, কিন্তু বিজনেসের কোন সাবজেক্টে কঠিন ইংলিশ শব্দ ইউজ করে কোশ্চেন বানিয়ে ফার্স্ট সেমিস্টারের কোন ছাত্রকে ঘায়েল করার মানে আমি দেখি না। কিন্তু যারা ইংলিশ মিডিয়ামের ছিল তারা ঠিকই ভাল পরীক্ষা দিত এবং হাইয়েস্ট তারাই পেত। UIU-তে একটা উদ্ভট নিয়ম আছে, যারা এত সহজ কোশ্চেনের ভর্তি পরীক্ষায় ইংলিশে খারাপ করে (কেমনে করে আল্লাহ মাবুদ জানে!) তাদের ১০০০০ টাকা দিয়ে প্রি-ইংলিশ নামক এক কোর্স করতে হয়, আর যারা ভাল করে তাদের বেসিক ইংলিশ নামক সাবজেক্ট দেওয়া হয়, আমি বেসিক ইংলিশই পেয়েছিলাম। এই বেসিক ইংলিশ সাবজেক্টে স্পোকেন ইংলিশ শিখানো হয় না, গ্রামাটিকাল এবং লিসেনিং শিখানো হয়। অন্য সব ভাল প্রাইভেট ভার্সিটির মত ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্যারকে কোন কোশ্চেন ইংলিশে করতে হয়, কিন্তু ইংলিশে স্পোকেন অ্যাবিলিটি না থাকায় আমরা বাংলা মিডিয়াম থেকে আসা বেশিরভাগ স্টুডেন্টই ক্লাসে কোশ্চেন করতে পারতাম না।

যাই হোক, আমরা গ্রুপের ৫ জন খুব করে পড়াশুনা করতে থাকলাম, এইবার রেসাল্ট ভাল করতেই হবে। কিন্তু কিসের কি, মিডে আবারো ধরা খেলাম। ম্যাথে গ্রুপ আসাইনমেন্ট করতে করতে জীবন তেজপাতা হয়ে গেল। প্রাইভেটে নাকি পড়াশুনা হয় না, স্টুডেন্টরা সবাই বড়লোক হয়, বাবার গাড়ি বাড়ী থাকে, ইয়াবা খায় আড্ডা মারে - এগুলা কতবড় ভুল সেটা বুঝতে পারলাম। বাসে ঝুলে বাসা থেকে ভার্সিটি আর ভার্সিটি থেকে বাসে বাদুরঝোলা হয়ে আবারো বাসায় আসতাম, কারন আমার বাপ জমি বিক্রি করে প্রাইভেটে ভর্তি করিয়েছিল - গাড়ি বা রিকশায় চড়ার সামর্থ্য ছিল না, এখনও নেই অবশ্য।

বাসা থেকে দেওয়া গোনা টাকায় দুপুরের খাবারের খরচও হত না। ৪ মাসে ভার্সিটির সামনের ধানমন্ডি লেকে মাত্র একদিন গিয়েছিলাম। ক্লাস, পড়াশুনার চাপে টিভি/নেটেও আসতাম না। ফাইনাল যথারীতি আসলো, দিলাম, ফাইনাল ভাল হয়েছিল কিন্তু আগের ২ মিডের বাজে রেসাল্টের কারনে সিজিপিএ সেইরকম খারাপ আসলো, উঠল মাত্র ২.৬। আমার বাকি ৪ ফ্রেন্ডের অবস্থা আমার থেকেও খারাপ ছিল, নাহ ওদের সিজিপিএ বলবো না এই লো সিজিপিএর জন্যই আমরা ৫ ফ্রেন্ড এক সাথে ইউআইইউ ছেড়ে দেই।

শুধু আমরা না, একটু খোঁজ নিলেই জানা যায় আমাদের মত অনেক স্টুডেন্টরাই ইউআইইউ ছেড়ে চলে যায় শুধুমাত্র সিজিপিএর জন্য। বলতে পারেন তারা সবাই আমার মত গবেট, অমেধাবী, কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে ইউআইইউ-এর যে কোন ভুমিকা নাই এটা বলতে পারবেন না। প্রেসার দিলেও সমস্যা ছিল না যদি না সিজিপিএ ভাল দিত, আমি এত খাটলাম তবুও আমি যে গ্রেড পাবার যোগ্য সেই গ্রেডও পাই নি, আমার ৪ ফ্রেন্ডও পায় নি। সিজিপিএ কম কম করে দেওয়ার ২ টা কারন থাকতে পারেঃ ১. UIU সিজিপিএ কম দিয়ে নর্থ-সাউথ, ব্র্যাক বা ইস্ট ওয়েস্টের মত হতে চাচ্ছে। ২. রিটেকে বাধ্য করে ইনকাম বাড়াতে চাচ্ছে।

আগে বিবিএ তে খরচ ছিল ৫৫৬০০০ আর এখন নাকি খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০০০০ এ.. শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা চলছে রীতিমত। মজার বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ প্রাইভেট ভার্সিটিই নাকি নন-প্রফিট, এ কারনে সরকারকে ইনকাম ট্যাক্সও দেওয়া লাগে না, অথচ তারা কিছুদিন পর পরই টিউশন ফি বাড়াচ্ছে। হয়ত বা, পারমানেন্ট ক্যাম্পাসের খরচ যোগাতেই টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। যাই হোক, প্রশ্ন উঠতে পারে, "আপনে ভাগছেন তো কি হইসে??? অন্যকেউ আর UIU দিয়া পাশ করে না? মজা নেন?" ভাই, পাশ করে ঠিকই, সব মানুষ সমান মেধা নিয়া দুনিয়ায় জন্মায় না। আমাদের মত গবেটদের জায়গা ইউআইইউ না, সত্যি, তবে এখন আমি যে ভার্সিটিতে পড়তিসি সেটা র‍্যাঙ্কিং- UIU থেকে অনেক ভাল অবস্থানে আছে, পড়াশুনার চাপও অনেক।

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমি এই ভার্সিটিতে যা গ্রেড পাবার যোগ্য সেটাই পাই, কম বা বেশী পাই না - যেটা UIU তে পাবা সম্ভব ছিল না। এখানেও পড়াশুনা অনেক করতে হয়, অনেক কষ্টে এখানে সিজিপিএ ৩ এর উপর তুলতে হয়, তবুও আমি খুশি কারন আমার খাটার ফল আমি এখন পাই, যেটা UIU তে পেতাম না। যাই হোক, অনেক আজে বাজে কথা বলে ফেললাম আমার X-ভার্সিটি নিয়ে। তবুও UIU তে সেই আড্ডা, স্যারদের আন্তরিকতা , বন্ধুদের সাথে সেই সময় গুলো অনেক সুন্দর ছিল, অনেক সুন্দর! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৯৭ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।