আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০৪ জন কয়েদিকে ঈদ উপলক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং একটি নিছক গল্প।

[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/

একটা নিছক গল্প--- ছেলেটা গোবেচারাও ছিলনা ,উচ্ছৃংখলও ছিলনা। স্বাভাবিক ছিল, তবে মনে মনে অস্থির ছিল, বয়সটাই ওমন। মাত্র অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে ঢাকার কোন এক সেকেন্ড গ্রেড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। বয়স কত আর হবে, বড়জোড় আঠারো পেরিয়ে থাকবে। মনে নানান থ্রিলার আর অ্যাডভেঞ্চার ঘুরে ফিরে মুখ থুবড়ে পড়ে তার।

তারপর নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নিম্ন মধ্যবিত্ত বাস্তবতা আর একাকী ঢাকায় মেস জীবনের রূঢ়তার আলিঙ্গনে কেটে যায় সাধারণভাবেই দিন আর পড়াশোনা তার। হঠাৎ কোন এক বিশেষ দাবীদাওয়াতে কলেজের কোন এক অরাজনৈতিক সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা সেই দাবী যৌক্তিক ভেবে নিয়ে আন্দোলনে জীবনে প্রথম বারের মত হলেও যোগদেয়, সেই ছেলেটিও সেই দলের ছিল। কিন্তু বিষয়টি আর অরাজনৈতিক থাকেনি। ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটাও এক সময় রাজনৈতিক আবহর ঘোরটপে পড়ে যায় যদিও সেই ছাত্রদের কাছে তখনও সেটা সেই পরিচয়ে পরিচিত হয় নি।

রাস্তায় গাড়ী অবরোধ জাতীয় অপকর্ম টাইপ কর্মসূচির সময় অনেকের সাথে সেই ছেলেটিও পাওড়াও হয় পুলিশের কাছে। জামিন দেয়ার তাৎক্ষণিক কেউ না থাকায় একদিন পরেই কারাগারেও চালান হয়। তারপর ...সেখানে কাটে তার ১৩ টি দিবস। তার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে অনেক কষ্টে ১৩ দিন পর সক্ষম হয় জামিন আর মুক্তির সফলতায়, যা হয় আর কি বাস্তবতায়। কিন্তু ঐ যে ১৩ টি দিবসের শিক্ষা ঐ টাই আমার এই নিছক গল্পের উপজিব্য।

বিফলে যায়নি ১৩ দিন। মহাফল হয়েছিল পরবর্তীতে তার জন্য। মনে তো যোশ আর থ্রিল ভরপুর বয়সের কারনে তার তখন এমনেতেই। তারউপর ন্যায্য দাবীর জন্য এই কারাগারজাতীয় হয়রানী ও অপমানের এক আক্রোশ এর আগুন জ্বলছিল টীম টীম করে। প্রথম দিনেই জেলে তার সরলমুখ আর ভীত সন্ত্রস্ততা দেখে সেই কারাগারের বিগবস কয়েদী কয়েকজন যুবকের নজর পরে তার উপর।

সাদরেই তারা তাকে গ্রহন করে। জিজ্ঞেস করে কুশল আর শুরু হয় বাস্তব দুনিয়ার পজেটিভ সাইটার উপর নানান বিষদগাড়ন। অনেক অন্যয্য সুবিধাও তাকে তারা সেখানে পাইয়ে দিতে থাকে। যেমন ধ্বলা শামীম নামে এক খূনের সাজা প্রাপ্ত যুবক তাকে বলে দেয় সকালে বাথরুমের লাইনে দেরী হলে কেবল বলতে -- শামীম ভাইয়ের গেষ্ট...লাইন লাগবে না, লাগেও না। এরকম আরও কত।

সেই তের দিনে সে গঞ্জিকা সেবনের ও হাতে খড়ি পায় সেই কয়েদখানাতেই। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি তার মধ্যে পরিবর্তনের কালো ধ্বজা উত্তলন করে সেটা হলো জায়েদী নামে এক যুবকের সাথে কঠিণ রকম সখ্যতা আর তার শিষ্যতা গ্রহণ। ঐ জায়েদী কোন সাধারণ মূর্খ রাস্তার সন্ত্রাসী ছিল না। সেছিল বেশ বিত্তশালী পরিবারের ছেলে এমনকি এসএসসি ও এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করা ছাত্র। কিন্তু তার ভেতর ছিল দেশের দূর্বল রাজনৈতিক পরিবেশ আর অরাজকতার প্রতি এক নেতিবাচক বিদ্বেষ ভরা মন।

যার ছোঁয়া সে পাইয়ে দিয়েছিল ছেলেটির মনে। আলাদা একটা মর্যাদা ছিল জেলের ভেতর যায়েদীর। দাপট ছিল, অনেক বাড়তি সুবিধাও চিল ঈর্ষন্বীয়। আর ছিল বাইরের অন্ধকার দুনিয়ার সাথে এক গোপন যোগাযোগও। সেই যোগাযোগের এক সূত্র ১৩ দিনে ধরিয়ে দেয় ছেলেটিকে।

১৩ দিন পর মুক্তি পাওয়ার পরবর্তীকালে সেই সূত্র তাকে আর বিস্মৃত হতে দেয়নি সেই সব ১৩ দিনের শিক্ষা...ফলে আরেক ছোট কাট জায়েদী তৈরীর পক্রিয়া চলতেই থাকে এই ইটকাঠের পকা শহুরে জঙ্গলের আড়ালেই। --------------নিছক গল্পটা খুব অবাস্তব না হওয়ার পেছনে যথেষ্ট স্বাভাবিকতা বিরাজ করে আমারা বুঝি। তাই আজকের পত্রিকার খবরে যখন পড়ি “ ২০৪ জন কয়েদিকে ঈদ উপলক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ” তখন একদিকে যেমন সভ্যতার এই উৎকর্ষ তার প্রয়োগ আমাদের মননের আধুনিকতার জন্যগর্ব বোধ হয় ঠিক তখনই ভয় হয় ...এক এক অপরাধীর ২/৩ /৪ বছর জেল খাটায় অনার্স, ডিপ্লোমা বা ছোট খাট ট্রেনিং তো ভালই হয়ে থাকার কথা আর সাথে বেড়ে যাওয়ার কথা আক্রোশ। তারউপর এই মুক্তির ভেতর খুবই স্বাভাবিক ,ম্যানিপুলেশন হওয়ারটাও স্বাভাবিক।

হতে পারে বিশেষ অনেক কে ছেড়ে দেয়ারপ্রয়োজনীয়তার বাধ্যবাধকতা। আসলে আমারা এই দেশের মানুষ বারবার পিছল খাইতো তাই ...সবকিছুতেই আজকাল ভয় পাই বোধহয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।