আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পগল্প: নিউরোনেটিকস



রাত বারটা। কম্পিউটারের সামনে বসে আছি। অনেকক্ষন ধরেই মাথাটা ব্যথা করছে। এখনো অসহ্য হয়ে ওঠেনি বলে ওষুধ খেতে ইচ্ছে করছেনা। বুঝতে পারছি, এই দেরী করাটাই কাল হবে আমার জন্য।

কিন্তু সমস্যা হল, এখন যে কাজটা করছি, সেটা শেষ না করলে আমার ঘুম হবে না। প্রায় হাজার দশেক ব্রেন স্ক্যান আর ই.ই.জি আমার সামনে। এগুলোর অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে চমকে উঠছি বার বার। অনেকেই জানে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধীনে টুইনস বা জমজদের নিয়ে একটা গবেষনা করছি। জমজদের একটা ব্যাপার ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব অবাক করতো।

ওদের মধ্যে একজন অসুস্থ বা আহত হলে নাকি অন্যজনও একই ভাবে অসুস্থ বা আহতবোধ করে। অবশ্য সব জমজ নয়, শুধু আইডেন্টিকাল টুইনদের মাঝেই এটা দেখা যায়। আইডেন্টিকাল টুইনরা একটিমাত্র জাইগোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিকশিত হয়। তাদের জিনোম অভিন্ন। কিন্তু কিভাবে তারা দূর থেকে অনুভূতি শেয়ার করে?? কেউ জানে না।

আমি খুঁজে খুঁজে প্রায় দুই শত আইডেন্টিকাল টুইনের সাথে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে ১৫৬ জন আমার গবেষনায় সাহায্য করতে রাজি হয়েছে। গত একবছর ধরে আমি বিভিন্ন আবেগ বা অনুভূতিতে তাদের ব্রেনের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছি। সরকারী অনুদান পাওয়ায় কাজ এগিয়েছে দ্রুতই। মাথাটা এখন অসহ্য রকম ব্যথা করছে।

আর পারছিনা। কম্পিউটার শাটডাউন করলাম। মাইগ্রেনটা জরুরী সব কাজের সময়ই আমার শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। আলো নিভিয়ে বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ................................................................................................... ভোরবেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।

মনে হল, মেইন গেটে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। অবাক হলাম। আমার বাসায় খুব বেশি লোকজন আসেনা, তার উপর আবার এইরকম ভোরবেলায়। যাই হোক, কাপড় পরে দরজা খুলতে গেলাম। অপরিচিত একটা ছেলে।

২০/২৫ বছর বয়স হবে। বেশ ভদ্র চেহারা। দরজা খুলতেই সালাম দিল। আমার আবার মানুষের চেহারা তেমন মনে থাকে না। ভাবলাম, আমারই কোন পুরোনো ছাত্র।

ছেলেটাই কথা বলা শুরু করল। 'স্যার, আমি খুব জরুরী একটা কাজে এসেছি। কিন্তু আমার হাতে সময় খুব কম। ' 'কেন, পরীক্ষা আছে নাকি তোমার? আমি কিন্তু এখন খুব ব্যস্ত। ক্লাসও নিচ্ছিনা কোন ব্যাচের।

তোমাকে কোন হেল্প করতে পারব বলে মনে হয় না। ' 'স্যার, আমি আপনার ছাত্র নই, পরীক্ষারও কোন ব্যাপার নয়। আসল ব্যাপারটা মনে হয় আপনি বিশ্বাস করবেন না। ' বিরক্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় চমকে উঠলাম। 'আমি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি।

সাতশ বছরের পরের পৃথিবী থেকে। আমি একজন নিউরোনেটিক। ' আমি চুপ করে আছি। কেন যে ভোর বেলা দরজাটা খুলতে গেলাম! এখন এই পাগলের হাত থেকে কে আমাকে বাচাঁবে? 'আপনি আমাকে পাগল ভাবতেই পারেন। কিন্তু আপনার গবেষনার পরিনতিতেই আমি আজ এখানে।

আপনি আর পাঁচ বছর পর বিশ্বের প্রথম নিউরাল ট্রাকিওশন উদ্ভাবন করবেন। এখনকার ইন্টারনেটের মতই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে নিউরাল নেটওয়ার্ক। সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যুক্ত হবে এই নেটওয়ার্কে আরো একশ বছর পর। নিউরাল নেটওয়ার্কে যুক্ত মানুষদের আমরা বলি নিউরোনেটিকস। ' 'আমাদের ব্যক্তি আনন্দবেদনা আছে।

কিন্তু যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের সময় আমরা মনটাকে নিউরাল নেটওয়ার্কে উন্মুক্ত করে দেই। এক একটি সমস্যা সমাধানে লক্ষ, এমনকি কোটি মানুষ অংশ নেয়। সময় সমীকরণ সমাধানে অংশ নিয়েছিল পুরো বিশ বিলিয়ন মানুষ। এভাবে আমরা সাতশ বছরে যে অগ্রগতি এনেছি তা হয়তো অন্য ভাবে সাত হাজার বছরেও সম্ভব হতো না। ' 'আপনার এই প্রজেক্টে সাফল্যের সম্ভাবনা ৪৫%।

কিন্তু, ৫৫% ভাগ সম্ভাবনা আপনি সফল হবেন না। সে ক্ষেত্রে এই সময়কার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। ছোট দেশগুলো তেল বা পানির হিস্যা নিয়ে পার্শ্ববর্তী বড় দেশগুলোয় পারমানবিক বিস্ফোরন ঘটাবে। ধীরে ধীরে অন্য দেশগুলোও জড়িয়ে পড়বে। ফলে শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

একমাত্র আপনিই পারেন এই ভবিষ্যতটাকে বদলে দিতে। ' অনেকক্ষন চুপচাপ এই পাগলের প্রলাপ শুনছিলাম। অবশেষে মুখ খুললাম। 'দেখ ছেলে, আমি তোমাকে ভদ্র ছেলে ভেবে ঘরে ঢুকতে দিয়েছিলাম। তুমি আমার গবেষনা নিয়ে ভোরবেলা এমন ঠাট্টা তামাসা শুরু করলে কেন বলতো?' 'স্যার, আমি কিন্তু চাই আপনি সফল হন।

আপনাকে একটু সাহায্য করতে চাই। আপনার হয়তো একটু মাথা ব্যথা করবে। তবে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবেন। ' কথাটা শেষ হওয়ার আগেই তীব্র মাথা যন্ত্রনায় আমার মাথাটা ঝনঝন করে উঠল। অন্ধকার হয়ে এলো চারদিক।

........................................................................................ ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল সাতটা। বিশ্রি একটা স্বপ্ন দেখেছি এতোক্ষন। মাথাটা গরমই হয়ে গিয়েছিল কাল রাতে। অবশ্য এক হিসাবে হয়তো স্বপ্নটা তেমন খারাপ নয়।

আমার অবচেতন মনের এই কল্পনাগুলো কি একেবারেই অসম্ভব? কে জানে ভবিষ্যতে কি আছে?? অথবা...... কে জানে, এটা আদৌ স্বপ্ন ছিল কিনা???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।