আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি কান পেতে রই........

আমি শুধু মধু থেকে নীলে ,নীল থেকে মধুর ভেতরে ছড়াচ্ছি নিজেকে.........

একজন প্রায় ভাঙ্গা একটা চেয়ারে বসে একটি এম.পি.থ্রি সিডির কভারের পেছনের দিকে,গানের লিস্টগুলো খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে। সামনে কম্পিউটারে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে একই রবীন্দ্র সংগীত বারবার বেজে চলছে,"কোন পুরাতন প্রানের টানে ছুটেছে মন......" লোকটির মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই গানটি তিনি উপভোগ করছেন নাকি বিরক্ত হচ্ছেন। অয়ন অনেক চেষ্টা করেও লোকটির সাইকোলজী বুঝতে পারলো না একটি সরকারী ভবনের ১০ তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অয়ন সিদ্ধান্ত নিল,যা থাকে,সরকারী চাকরীই করতে হবে। দুপুরবেলা কড়া ঝালের সালাদ দিয়ে গরুর মাংস আর ভাত খেয়ে আয়েশ করে কম্পিউটারে হালকা ভ্যলুমে রবীন্দ্রসংগীত ছেড়ে দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে যাব........ ঘুম থেকে উঠেই দেখব পি্যন এক কাপ গরম কফি ভর্তি মগ হাতে নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে। ঘুম পুরোপুরি ভাঙ্গার আগেই বলে বসবে, স্যার, কফিটা খেয়ে নিন।

স্যার একটা কথা বলব -হ্যা, বল স্যারের কি শরীর খারাপ লাগছে?তাহলে বাসায় চলে যান। আমি একটা রিক্সা ডেকে নিয়ে আসি। এ জাতীয় কথাবার্তা নিশ্চয় বলবে। সরকারী পিয়নদের স্বভাবই এরকম। একজন অফিসে প্রতিদিন ঘুমালেও তাকে মুখ কাচুমাচু করে এসে বলবে,"স্যার,আপনার কি শরীর খারাপ হয়েছে?" যেন জগতের সবচেয়ে অবুঝ বাসিন্দা।

অয়ন খুব দ্রুত নেমে চলছে। হঠাৎ দেখতে পেল এক জবুথুবু ধরনের বুড়ো মানুষ চা-বিড়ির ছোটখাটো পসরা সাজিয়ে বসে আছে রেলিং ঘেঁসে। অয়ন বুঝতে পারছিল না সে কোন তলায় আছে। ওর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল,তাই আবার উপরের তলায় উঠে গেল। অয়ন এখন ৩য় তলায়।

৪র্থ বা ৫ম তলায় হলে ভালো হতো। এক কাপ চা আর একটি সিগারেট খেয়ে,লোকটার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে বাকী পথটুকু নামা যেত। যাত্রাপথে ছোট্র বিরতি। দোতলা মানে তো নিচেই চলে এসেছি। অয়ন লোকটাকে কি নামে ডাকবে বুঝতে পারছে না।

সাধারনত এইবয়েসী লোককে "চাচা" ডাকাই উচিৎ। কিন্ত কেন যানি লোকটাকে ওর চাচা ডাকতে ইচ্ছে হলো না। চাচা ডাক নিশ্চয় লোকটা সবসময় শোনে। দাদাজান,দুধ-চিনি বেশি দিয়া এক কাপ চা আর একটা বেনসন দ্যান। অয়ন গলায় "খুব সম্মান করছি" একটা ভাব নিয়ে এসে কথাটা বলল।

দাদজান আপনি এখানে কটদিন ধরে আছেন? এই অন্ধকারের মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগে? দাদাজান ঢাকায় আপনি কোথায় থাকেন? প্রশ্নটা করেই অয়নের চোখ গেল এক অন্ধকার কোনায়। একটি তাল চিটচিটে বালিশ,আর একপাশেকম্বলখানা বিবর্ন একটি চাদর দিয়ে কোলবালিশ বানিয়ে রেখে দেয়া। দাদাজান সেই প্রথম থেকেই অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। লোকটার চোখ লালও না আবার হলুদও না। কেমন যেন ঘোরলাগা দৃষ্টি।

অয়ন তার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল। অয়ন এইমাত্র লক্ষ্য করল এখনও চুলোই ধরানো হ্য়নি। লোকটিও সেই একইরকমভাবে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছেন। অয়নের অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। সে প্রায় চলেই যাচ্ছিল, বাবা,অসুখে পইড়া সব ট্যাকা খরচ কইরা ফালাইছি।

চা পাতি,চিনি, কিনুম সেই ট্যাকাও নাই। অনেকে আসে,ফিরাইয়া দিই,কি করুম.....কিন্তু তোমারে ফিরাইতে মন সায় দিতাছে না। লোকটার কথা শুনে অয়ন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। লোকটাকে এখন কেমন মায়াবান মায়াবান মনে হতে লাগল অয়নের কাছে। অনেক মায়াবতী দেখেছে সে,কিন্তু মায়াবান বোধহয় সে এই প্রথম দেখল।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।