আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনু মুহাম্মদ ম্যানিয়া

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

আনু মুহাম্মদের উপরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদের সোচ্চার হয়েছেন সুশীলবৃন্দ, বিবৃতি, কলাম এবং পোশাকী প্রতিবাদ উঠছে চারপাশ থেকে। মূলত আনু মুহাম্মদের উপরে পুলিশী বর্বরতা একটি প্রশ্ন কিংবা আতঙ্কের বোধকে উস্কে দিয়েছে- হয়তো পরবর্তী লক্ষ্য আমি- যেকোনো অস্থিরতা ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং বোধের দরজায় আঘাত করবার আগে আমাদের টনক নড়ে না। সুতরাং আজ যারা আক্রান্ত বোধ করছেন, তারা ভাবছেন হয়তো পরবর্তীতে কোনো একদিন পুলিশ তাকেই রাস্তায় বেধরক পিটিয়ে দিবে এবং এ সময়ের নিরবতা সে সময়ে কাল হয়ে দেখা দিবে। হিসেবটা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার বাইরে সামান্য হলেও স্বজনাহত হওয়ার অনুভুতি। যারা নির্দিষ্ট একটি শ্রেণীতে ঘোরাফেরা করেন, বিভিন্ন সভা সমাবেশে, টক শো এবং গোল টেবিল বৈঠকে যাদের সাথে দেখা হয়, তার সবাই আদতে আমার সমপর্যায়ের মানুষ, তাদের যেকোনো একজনকে আহত করা মানে আমার আহত হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হওয়া।

এই স্বজাত্যবোধ কিংবা শ্রেণীসচেতনতার বাইরে বুদ্ধিজীবিয় চিৎকারের অন্য কোনো অর্থ নেই। পুলিশি বর্বরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়, এখানে বিনা বিচারে কিংবা সামান্য বিচারে গুরুদন্ড এবং প্রানসংহারের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত, রাষ্ট্র নিয়মিতই মানুষকে যেকোনো উপায়েই হোক নিষ্পেষিত করছে, একজন আনু মুহাম্মদ এর বাইরের কেউ নয়, অন্য সবার মতো একজন সাধারণ, পুলিশের দৃষ্টিতে তার এবং ছিনতাইকারীর ভেতরে তফাত কম। অবশ্য তার সাথে যারা নিয়মিত সভা সেমিনার যায় তাদের কাছে আনু মুহাম্মদ আলাদা চরিত্র, রাষ্ট্রের সাধরণ নাগরিক হয়েও একটি বিশেষ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত একজন, যে বিশেষ শ্রেণী রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহ ভরে পরামর্শ দিতে চায়। সুতরাং আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে যারা বিভিন্ন সময়ে উপদেশ দিয়েছেন তাদের সবাই এই আনু মুহাম্মদ ইস্যুতে বিবৃতির স্রোত বইয়ে দিচ্ছেন। একই সাথে পুলিশী নির্যাতনের অন্য ঘটনাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।

যদি রাষ্ট্র নিয়মিতই পুলিশকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আনু মুহাম্মদ এবং মুরগি মিলনের পরিণতি একই হবে, তারা একই ভাবি নির্যাতিত হবে রাষ্ট্রের হাতে, তবে মুরগি মিলনের জন্য কাঁদুনি গাইবার লোক কম, কিন্তু আনু মুহাম্মদের উপরে হামলায় বিবৃতি দেওয়ার মানুষের কমতি নেই, রাষ্ট্র শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছে বলে বিলাপ, রাষ্ট্র বিশ্ব মানবতার অধ্যাপকের হাতে হাত তুলেছে বলে বিলাপ, এবং আমাদের অতিভক্তিবাদী সাধারণ মানুষ, যারা অন্য সব উঁচু তলার মানুষদের সাধারণত চব্য-চুষ্য-পেয় এর ভাগ পেতে দেখেছেন, তারাও আনু মুহাম্মদের আহত হওয়ায় ভীষণ রকম আহত, অন্তত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পুলিশপেটা হয়েছেন, সেটা তাদের গর্বের, শ্লাঘার বিষয়, এবং একই সাথে আক্ষেপের বিষয়, পুলিশি চোদন খাওয়ার জন্য আমাদের হোগা ছিলোই, সম্মানিত অধ্যাপকের হোগা মারলো কেনো পুলিশ, এই নিয়া আক্ষেপ করবার মতো মানুষও আছে। একজন শিক্ষক এবং একজন মুদি দোকানীর ভেতরে কোনো তফাত নেই, একজন মাদক ব্যবসায়ী এবং আনু মুহাম্মদের মধ্যেও তফাত কম,মাদক ব্যবসায়ী নানাবিধ ক্ষমতা ও চাঁদাবাজীর চাপে মুফত মরে যাওয়ায় কোনো বিবৃতি আসে নি, এসেছে আনু মুহাম্মদের উপরে হামলার প্রতিবাদে- আমাদের বিভিন্ন কক্ষপথে ভাগ হয়ে থাকা সমাজের অন্তর্দন্দ্ব এবং উপেক্ষাগুলো প্রকাশিত হলো সেটাই হয়তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।